জেদ পর্ব ৩৮

0
1448

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৮
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
চোখ খুলে নিজেকে রক্ত মাখা অবস্থায় মেঝেতে আবিষ্কার করলাম।আমি এখনো রুমের দরজার কাছে পড়ে আছি।অনেক কষ্টে উঠে বসলাম।ডাইনিং রুম থেকে মায়ের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে ।
-বাবা তুমি এই বারের মত আমার মেয়েটাকে মাফ করে দেও ।এইভাবে আমার মেয়েটার লাইফ নষ্ট করিও না বাবা।দোহাই লাগে তোমার।
-লাইভ কে কার নষ্ট করছে ভাবি তাতো দেখাই যাচ্ছে।আপনার কলঙ্কিনি মেয়েকে আমার সহজ সরল ছেলেটার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এখন কান্না দেখাচ্ছেন।
-দেখো বাবা ।আমি জানি তোমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা অন্যায় ।তোমার জায়গায় যেকেউ থাকলেই হয়তো এই কাজ করতো ।কিন্তু আমি বাবা হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করব এইবারের জন্যে আমার মেয়েকে মাফ করে দেও।আমি তোমার হাত ধরছি বাবা।
বাবার গলা ভারী হয়ে আসছে।
-এই রকম বলবেন না আংকেল।শুধু আপনি বলছেন বলে আমি ইনাকে মেনে নিচ্ছি নাহলে অই মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না ।আপনি প্লিজ বুঝান ওকে।
.
.
কিছুক্ষন পর বাবা মা দুইজনে আমার রুমে এলেন ।আমি জানি তারা কি বলবেন ।আমি আগে থেকেই নিজেকে শক্ত করে রেখেছি ।
-একটা সময় ছিল যখন তোমার জন্যে আমি গর্ব অনুভব করতাম কিন্তু আজকে তোমার জন্যে আমার মাথাটা কাটা যাচ্ছে লজ্জায় ।
বাবা খুব শীতল কন্ঠে কথা গুলো বললেন ।বাবা শেষ না করতেই মা বলে উঠলেন
-স্কুলে কলেজে তোর বান্ধুবিরা আজ এই ছেলে কালকে অই ছেলের সাথে ঘুরতে যেত।তখন খুব সাধুগিরি দেখাইছিলি ।আমার অইসব পছন্দ না ।আর আজকে কি করলি?ঘরে স্বামি রাখে পর পুরুষের সাথে ?ছি ছি ছি ।তোকে আমার মেয়ে বলে পরিচয় দিতেই ঘৃনা হচ্ছে।এই সব দেখার জন্যে তোকে নয় মাস পেটে ধরেছিলাম ?
-আমি আর কিছু বলব না।এতদিনে অনেক বলেছি অনেক শুনেছ ।তুমি বলেছ আমরা শুনেছি ।শেষ বারের মত একটা কথা শুনে রাখো আরাজ তোমার স্বামী।বিয়ের পর মেয়েদের বাপ মাও পর হয়ে যায় ।তার সব কিছুই তখন তার স্বামী হয়ে যায় ।যদি এরপর উলটা পালটা কিছু করো আর আরাজ তোমাকে ত্যাগ করে তাহলে ভুলেও কোন দিন আমাদের কাছে আসার কথা চিন্তাও করিও না ।আমরা ধরে নিব তুমি মারা গেছ।আমাদের কোন মেয়ে ছিল না।আর যদি চাও সবকিছু ঠিক ঠাক থাকে তাহলে সংসার টাকে ধরে রাখো ।একজন নারীর পূর্নতা যখন সে মা হয় ।নিজেকে কলংকিত না করে পূর্ন করো ।
কথাগুলো বলে বাবা মা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ।আজকে রাত তাদের নিউ ইয়র্কে শেষ রাত।কালকে বিকালে তাদের ফ্লাইট ।দেশে ফিরে যাচ্ছেন তারা।যদিও তাদের ইচ্ছা ছিল আরও সপ্তাহ খানেক থাকবেন কিন্তু পরিস্থিতি যেন সেই সহায় না ।
.
.
আরাজ আজ বাইরে থেকে এপার্টমেন্ট এ তালা দিয়ে গেছে।আমার জন্যে এই বাড়ির বাইরে যাওয়া সম্পূর্ন নিষেধ ।সকাল সকাল সবাই বের হয়ে গেছেন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।জ্যাম ঠেলে গন্তব্যে পৌছাতে বেশ কিছুক্ষন সময় লাগবে ।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এমন সময় আরাজ বাসায় এসে ঢুকল ।আমি তখনো সোফায় শুয়ে আছি।শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই যে উঠে দাড়াব।আরাজ আমার কাছে এসে থামল ।খানিক ক্ষন আমার দিকে চেয়ে হঠাত টান মেরে আমাকে টেনে তুলল ।ডান হাত দিয়ে আমার চোয়াল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলতে লাগল
-কি ভেবেছিস আমার হাত থেকে পালাবি ?এত সোজা ?তুই আমার সোনার মুরগী ।তোকে এত সহজে ছেড়ে দিব ?কি ভেবেছিস কাউকে জুটীয়ে এইখান থেকে পালাবি ?খুব তেজ না তোর ?আজকে তোর সব তেজ ছুটাব ।
কথাগুলো বলে আরাজ আমাকে বিছানায় ছুড়ে মারল ।আরাজের পুরো শরীর দিয়ে মদের গন্ধ আসছে ভুর ভুর করে।
-আরাজ প্লিজ তুমি যাও এইখান থেকে ।আমার শরীর খারাপ লাগছে ।
আমি কোন রকমে বলে উঠলাম ।
-শরীর ভালো করার ব্যবস্থা করছি এখনে ।
কথাটা বলেই আরাজ আমার উপর ঝাপিয়ে পরল। আমি ছুটে পালানোর চেস্টা করছি কিন্তু আমার শরীরে সে পরিমানে শক্তি নেই ।ধস্তাধস্তিতে আরাজ আমার কাপড় অনেকখানি ছিড়ে ফেলেছে ।আমি কোন রকমে আরাজকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পালিয়ে আসলাম ।রুম থেকে বের হতেই কারও একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলাম আমি।একজন স্যুট ব্যুট পরা লোক তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ঠোটে ঝুলছে জঘন্য নোংরা হাসি।আরাজও ততক্ষনে চলে এসেছে ।লোকটা আমাকে পয়েন্ট করে আরাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল
– is that her?
-yes .
লোকটা হাটু গেড়ে আমার সামনে বসল ।একটা হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরার চেস্টা করল কিন্তু আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম ।
-she is fucking beautiful.i’ll pay you double for her .
লোকটার কথা শুনে যেন আমি চমকে উঠলাম ।পে করবে মানে?আমি আরাজের দিকে ফিরে তাকালাম ।দেখলাম খুশিতে তার চোখ চকচক করছে ।
লোকটা একটা ব্যাগ এগিয়ে দিল আরাজের দিকে ।আরাজ কুকুরের মত লেলিয়ে গিয়ে ব্যাগটা নিল।ব্যাগ খুলতেই এক গাদা টাকা চোখে পরল।আরাজ সব কিছু ভুলে টাকা গুনতে শুরু করল।এইদিকে লোকটা আমার হাত ধরে টানছে।আমি আরাজের দিকে তাকিয়ে চিতকার করে উঠলাম
-আরাজ কি হচ্ছে এসব ?কে এই লোক?কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে আমাকে?
আরাজ টাকা থেকে মাথা ঘুরিয়ে আমার কাছে এসে দাড়াল ।
-এখনো বুঝিস নি কি হচ্ছে?পর পুরুষের সাথে কিভাবে থাকতে হবে সেটা তো ঠিকই বুঝিস ।আর এই সোজা জিনিস টা বুঝিস নি?তোকে আমি বিক্রি করে দিয়েছি ।
আরাজের কথা শুনে আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।
-কি ?অই ভাবে তাকায় আছিস কেন?ও সব ন্যাকা কান্না আমার কাছে চলবে না।তুই হইলি আমার সোনার মুরগী ।কি ভেবেছিলি তোকে বিয়ে করেছি সংসার করার জন্যে?নাহ।তোকে বিয়ে করেছি বিক্রি করার জন্যে ।এত দিন ঝামেলায় ছিলাম কিভাবে তোকে পাচার করব ।অনেক কষ্ট করে সব কিছু ফিক্স করলাম ।প্লান মোতাবেক যাচ্ছিল হঠাত করে তোর আমার বাপ মা এসে সব গন্ডগোল করে দিল ।আমিও সুযোগকে কাজে লাগালাম ।আমি জানতাম আমি বাসার বাইরে গেলেই তুই অই ছেলেরে বাসায় ডাকবি ।আমি অই জন্যে সবাইকে নিয়ে ইচ্ছা করে ঘুরতে গেলাম কিন্তু বেশিদূর যাইনি ।ব্যাস তারপর সোনায় সোহাগা ।তোর আর আমার বাপ মা নিজের চোখে সব দেখল ।আমার কাজ আরও সোজা হয়ে গেল ।আমাকে তোর বাপ মা জিজ্ঞেস করলে বলব তুই অই ছেলের সাথে পালিয়েছিস ।ব্যাস ঝামেলা শেষ ।কিচ্চা খতম পেয়সা হজম ।
আমি হা হয়ে আরাজের কথা শুনছি ।লোকটা আমার বাম হাত ধরে টানছে।আমি খপ করে আরাজের কলার চেপে ধরলাম ।
-কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার ?কেন এরকম করছ আমার সাথে তুমি ?
আরাজ বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে আমাকে জোরে একটা থাপ্পড় মারল ।ছিটকে গিয়ে মাটিতে পরলাম আমি ।আরাজ সেখান থেকে তুলে আরও কয়েকটা চড় বসালো আমার দুই গালে ।একহাতে আমার চুলের মুঠি আর আরেক হাতে গলা চিপে ধরে বলল
-ক্ষতি তুই করিস নি ।করেছে তোর বাপ।তোর বাপের ক্ষতির মাসুল তুই দিবি ।
কথাটা বলেই আরাজ আবার আমাকে আছাড় দিল আরেকটা ।বাম হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দিল আমার ।এবার যেন একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি ।চারদিকে কেন ঘোলা ঘোলা লাগছে।দুই কানে ভন ভন শব্দে জান যায় অবস্থা।চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে ।কেউ একজন আমার শরীর টাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।আমি কোন কিছুর বোধ পাচ্ছিনা ।শুধু অজানা একটা বেদনা গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে ।চোখ ফেটে কান্না আসতে চাচ্ছে।কিন্তু সেই বোধ টুকুও যেন হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ সময়ের সাথে।প্রতিটা সেকেন্ড যেন আমার কাছে অনন্ত কালের ব্যবধান মনে হচ্ছে।চোখের সামনে ভাসছে ছোটবেলাকার সব স্মৃতি ।বাবা মায়ের সাথে কাটানো দিন গুলো।আরদ্ধর এক বুক ভালোবাসা নিয়ে আমার পাশে থাকার মুহুর্তগুলো।কপালে আরদ্ধর ঠোটের উষ্ণতার কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠল।অজানা একটা আবেশে ছেয়ে গেল আমার পুরো শরীর ।আমি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি এক অজানা ঘোরে ।শুধু চোখের সামনে ভাসছে আরদ্ধর সেই হাসি মাখা নিষ্পাপ মুখখানির ছবি ………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here