জ্বিনের ভালোবাসা পর্ব-৪

0
6031

জ্বিনের ভালোবাসা
#পর্ব_৪
লেখিকাঃ Mahiya Akter Priya
Story Credit : Mahiya Akter Priya

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বাসায় চলে এলো। খুব আনন্দ মজা করল। আবির ও ওদের সাথেই ছিলো। সবাই খুব মজা করছিল। রাতে রুমে গিয়ে দেখে একটা ছায়া তার ঘরের মধ্যে। তার বুঝতে বাকি রইল না এটা আদিল। সে লাইট না জ্বালিয়ে খাটে এসে বসল আর বলল, জানো আজকে কি হয়েছে? সে বলল, হুম জানি। তোমার ভাবি মা হতে চলেছে। প্রিয়া বলল, হুম। কিন্তু তোমাকে এত আপসেট লাগছে কেন? তুমি কি এতে খুশি না? সে বলল, হুম তবে? প্রিয়া বলল, তবে কি? আদিল বলল, তুমি ওই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরেছো আমি দেখেছি। প্রিয়া বলল, তাতে কি হয়েছে? সে বলল, আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে? প্রিয়া বলল, কী? সে বলল, তুমি কি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসো? প্রিয়া বলল, কি সব আবোল তাবোল বকছো? আমি ওকে কেন ভালোবাসব? আদিল বলল, না, তুমি ওকে ভালোবাস। প্রিয়া রেগে গিয়ে বলল, হ্যাঁ যদি ভালোবাসি তবে তোমার কি? যাও এখান থেকে ভালো লাগছে না আমার।

প্রিয়ার কথা শুনে আদিলের খুব রাগ হয়। আদিল চলে যাবে এমন সময়

আদিলঃ কী এমন বলেছি আমি যে আমাকে চলে যেতে বলছ? সত্যি টা বলেছি তাই খুব খারাপ লাগছে তাই না? আসলে সত্যি এটাই যে তুমি ওকে ভালোবাসো আর আমাকে ঘৃৃনা কর।

প্রিয়াঃ দেখ, ফালতু কথা বলো না। আমাদের মধ্যে তেমন কিছু নেই।

আদিলঃ তা তো খুব ভালো ভাবেই দেখতে পারছি।

প্রিয়াঃ ওকে ফাইন। আমাদের রিলেশন চলে। কিন্তু যদি চলে তো তোমার কি? তোমাকে আমার ফ্রেন্ড বানিয়েছি মানে এই না যে তুমি আমার লাইফের সিদ্ধান্ত নিবে। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করি। আজ পর্যন্ত আমাকে বাধা দেওয়ার কারোর সাহস হয় নি। আর তুমি এই 3 মাসে এত সাহস পেয়ে গেছো? চলে যাও আর কখনো আমার সামনে আসবে না।

আদিকঃ ওকে চলে যাচ্ছি তবে শুনে রাখ, তুমি যদি আবিরকে ভালোবাস তাহলে হয়ত তোমার ভালোবাসা পাবে কিন্তু সর্বোচ্চ ভালোবাসা পাবে না কারন আমার চেয়ে বেশি তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না।

প্রিয়াঃ মানে?

আদিলঃ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি প্রিয়া। অনেক বেশি। যেদিন প্রথমবার এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তোমাকে দেখি। এত রাতে একটা মেয়ে ছাদে বসে আছে। তোমার সাহসে আমি মুগ্ধ হই। প্রায় প্রতিদিন তোমাকে দেখি। কিন্তু কথা বলার সাহস হয় না। সেদিন বাতাসে যখন চুল গুলো উড়ছিল আর তুমি সরিয়ে দিচ্ছিলে সেটা পৃৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃৃশ্য ছিলো। কিছু বলতে চাই নি কারন তুমি ভয় পাবে। কিন্ত কথা টা না বলে থাকতে পারলাম না।

প্রিয়াঃ কি সব আবোল তাবোল বকছো? তুমি আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড।

আদিলঃ আমাকে শেষ করতে দাও প্লিস।

প্রিয়াঃ……..(চুপ)

আদিলঃ সেদিন যখন ভয় পেয়ে চলে গেলে খুব কষ্ট হয়েছিল। ভাবলাম হয়ত তোমাকে হারিয়ে ফেলব কিন্তু না। পরের দিন তুমি এলে। ভাবলাম এবার তোমার সাথে বন্ধুত্ব করব। ভালো না বাস কিন্তু সাথে তো থাকবে। সেদিন ও চলে গেলে। চাইলে তোমার ঘরে যেতে পারতাম। কিন্তু এতে তুমি অনেক ভয় পেতে। তাই কখনো তোমার রুমে যাই নি। কিন্তু বিশ্বাস কর প্রতিদিন ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম। কিন্তু তুমি আসলে না। কিন্তু ১ সপ্তাহ পরে আসলে আবিরের সাথে। ভাবলাম তোমার ভাই। কিন্তু কথা শুনে তা মনে হল না। সেদিন তোমার সাথে বন্ধুত্ব করলাম কিন্তু ওই আবিরের জন্য সব কথা তোমাকে বলতে পারি নি। আমাদের মাঝে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই আবির। তুমি আমার চেয়েও বেশি ওকে সময় দাও। আমার ভালোবাসা টা কখনো বোঝার চেষ্টা ও কর নি তুমি।

প্রিয়াঃ বাজে কথা বন্ধ কর।

আদিলঃ প্রিয়া, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

প্রিয়া রেগে গিয়ে ফুলদানি টা আদিলের দিকে ছুরে মারে। আদিল সরে যায়।

প্রিয়াঃ আর কখনো যদি আমার আশেপাশে দেখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না দেখে নিস।

এই কথা শুনে আদিল জানালা দিয়ে বের হয়ে গেলো। আর প্রিয়া ঘরে বসে কান্না করতে শুরু করল। হঠাৎই কেউ তার কাধে হাত রাখল। সে দেখল এটা আবির।

আবিরঃ কান্না করছ কেন প্রিয়া? একটু আগে তো খুব খুশি ছিলে।

প্রিয়াঃ কিছু না। আপনি এখানে কেন এসেছেন?

আবিরঃ কেন? আমার কি এখানে আসা মানা?

প্রিয়াঃ না, কিন্তু এত রাতে আমার রুমে আসার কোনো কারন তো থাকবে।

আবিরঃ না আসলে রুমের মধ্যে খুব আওয়াজ হচ্ছিলো তাই ভাবলাম তোমার কোনো প্রবলেম হয়েছে হয়ত

প্রিয়াঃ না কিছু হয় নি। আপনি এখন যান।

আবিরঃ প্রিয়া তোমার কি কিছু হয়েছে? আমাকে বলতে পার।

প্রিয়াঃ না কিছু না।

আবির ঘর থেকে চলে গেলো আর প্রিয়া ঘুমিয়ে পড়ল।2 দিন তেমন কিছু হলো না কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রিয়ার খুব আদিলের কথা মনে পড়ছে। প্রায় ১ সপ্তাহ হতে চলল। তাতে প্রিয়ার কি? এতে তো তার কোনো দোস নেই। জ্বিন হয়ে কিভাবে একটা মানুষকে ভালোবাসে? সে ভালোবাসলেও আমি পারব না। পরের দিন প্রিয়া যখন কলেজ থেকে ফিরছিলো তখন হঠাৎই তার সামনে একটা গাড়ি চলে আসে। সে ভাবল আগের বার যেমন আদিল বাচায়িছে এবারও কি বাচাতে পারবে? হঠাৎই তার হাত ধরে কেউ টান দেয় আর প্রিয়া তার উপর পড়ে যায়। চোখ খুলে দেখে এটা আবির।

আবিরঃ এবার কি উঠবে? নাকি আমার ভর্তা বানানোর পর উঠবে?

প্রিয়া আবিরের উপর থেকে উঠে গেলো। আর রেগে গিয়ে বলল,

প্রিয়াঃ আপনি এখানে কি করেন?

আবিরঃ বাহ, নিজের জীবন বাজি রেখে তোমাকে বাচালাম এখন আমার উপর রাগ দেখাচ্ছে। ভালো ভালো। যার যাই হোক তাতে আমার কি?

প্রিয়াঃ জীবন বাচানোর জন্য ধন্যবাদ।

এই বলে প্রিয়া চলে যাচ্ছিল। আবির পিছন থেকে হাত ধরে তার কাছে নিয়ে আসল।

আবিরঃ রেগে আছে নাকি আমার সুইটি?( প্রিয়া রাগ করলে আবির ওকে সুইটি ডাকে।)

প্রিয়া ঃ না। আমাকে একা থাকতে দিন।

আবিরঃ ১ সপ্তাহ ধরে তুমি আমাকে এভোয়েড করছ।

আদিল ওই কথা গুলো বলার পর থেকেই প্রিয়া ওকে এভোয়েড করছে। কিছুতেই ওর সাথে ফ্রি হচ্ছে না।

প্রিয়াঃ আমি বাসায় যাব। আপনি গেলে চলুন।

আবিরঃ ওকে।

ওরা বাসায় যায়। বাসায় যাওয়ার পর,

প্রিয়ার মাঃ প্রিয়া, আজ তোর খালার বাসায় যাবি। অনেক দিন ধরেই যেতে বলছে।

প্রিয়াঃ এত দুর একা যাব!

প্রিয়ার মাঃ যা না মা। এমন করিস না। তোর ভাইয়া টিকিট কেটে রেখেছে।,

প্রিয়াঃ ওকে।😔😔😔

আবিরঃ আন্টি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?

প্রিয়ার মাঃ কি আবার মনে করব? বলো।

আবিরঃ আমার এক মামা আছে। উনি অনেকদিন ধরেই যেতে বলছে। ইউনিভার্সিটি বন্ধ তাই ভাবছিলাম কাল ঘুরে আসি।

প্রিয়ার মাঃ ঠিক আছে। তবে তারা কোথায়?

আবিরঃ তেতুলিয়া।

প্রিয়ার মাঃ প্রিয়ার খালার বাড়িও সেখানে। তোমরা কিন্তু একসাথেই যেতে পার।

আবিরঃ আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে প্রিয়া মনে হয় যেতে চায় না।

প্রিয়ার মাঃ কেন? ও কেন যেতে চাইবো না? অবশ্যই যাবে।

প্রিয়া আর কিছু বলল না। মনে মনে আদিলের কথা ভাবছে। হঠাৎই জানালা দিয়ে একটা ছায়া আসল আর লাইট গুলো নিভে গেলো। প্রিয়ার বুঝতে বাকি রইল না এটা কে।

আদিলঃ আবিরের কথা ভাবছিলে?

প্রিয়াঃ সবসময় আবির আবির করবে না তো। ভালো লাগছে না।

আদিলঃ সরি। আমার কথা তো ভালো লাগবে না। তোমার তো ওকে ভালো লাগবে।

প্রিয়াঃ আদিল প্লিস চুপ কর। আমার এসব ভালো লাগছে না।

আদিলঃ…..(চুপ)

প্রিয়াঃ আমি তোমাকে দেখতে চাই।

আদিলঃ কেন?

প্রিয়াঃ আমার খুব ইচ্ছা জ্বিন দেখার।

আদিলঃ এত দিন তো দেখতে চাও নি। নাকি ওর সাথে ব্রেকআপ হয়েছে এখন আমাকে লাগবে🤣😂🤣

প্রিয়া ওর কথায় খুব রেগে যায় আর বলে

প্রিয়াঃ যদি সামনে আসতে না ইচ্ছা হয় তো চলে যাও।

আদিলঃ সরি। আজকে তুমি আমাকে দেখবে। লাইট টা অন হয়ে গেলো।

প্রিয়াঃ আবির আপনি?

আদিলঃ তুমি আবিরকে এতই ভালোবাস যে আমার মধ্যেই ওকে দেখছো?

প্রিয়া দেখল এটা আবির না। তবে চেহারার অনেক টা আবিরের সাথে মিলে। প্রথম বার যে কেউ কনফিউস হয়ে যাবে। হয়ত হবে না এটা ওর মনের ভুল।

আদিলঃ কি হলো?

প্রিয়াঃ কিছু না। আমি ঘুমাবো। তুমি প্লিস যাও।

আদিলঃ প্রিয়া, আমি তোমাকে ভালোবাসি

প্রিয়াঃ সবসময় এক কথা ভালো লাগে না। যাও এখান থেকে। আমরা শুধু ফ্রেন্ড ছিলাম। আর কিছু না।

আদিল বের হয়ে গেলো। তবে বোঝা গেলো খুব কষ্ট পেয়েছে। তাতে প্রিয়ার কি?

সে আর আবির তেতুলিয়ার উদ্দেশ্যে বাসে রওয়ানা হয়েছে। ১ ঘন্টা কোনো কথা বলে নি প্রিয়া। আবির ও বলে নি। তবে ১ ঘন্টা পর,

আবিরঃ কি হয়েছে টমেটো?

প্রিয়াঃ টমেটো আবার কে?

আবিরঃ তোমার নতুন নাম।

প্রিয়াঃ(চুপ)

আবিরঃপ্রিয়া তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছো?

প্রিয়াঃ কই না তো। এমনি কথা বলছি না।

আবিরঃ এভোয়েড করছ আমাকে।

প্রিয়াঃ তেমন কিছু না।

হঠাৎই ব্রেক লাগল আর সবাই ভয় পেয়ে গেলো। ড্রাইবার বলল, ট্রায়য়ার পাঞ্চার। সবাইকে এখনই নেমে যেতে হবে। সবাই খুব রেগে গেলো। সামনে জঙ্গল ছাড়া কিছুই নাই। এমন সময় গাড়ি নষ্ট খুব বিরক্তিকর ব্যাপার। সবাই ড্রাইভার কে গালি দিতে দিতে নেমে গেলো। আবির আর প্রিয়াও নামল। সবাই সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। প্রিয়া কিছু না খেয়ে এসেছে তার ওর খুব ক্ষুদা পেয়েছে কিন্তু আবিরকে লজ্জায় বলতে পারছে না।

আবিরঃ একটু বসো। আমি আসছি। কোথাও যেয়ো না।

প্রিয়াঃ হুম।

অনেক্ষণ ধরে বসে আছে। ওর আসার খবর নেই। যাত্রী রা সবাই চলে যাচ্ছে। আর একজনকেও দেখা যাচ্ছে না। ও কি আবার আমার কথা ভুলে গেলো নাকি? ভাবতে ভাবতে আবির চলে আসল। সাথে কিছু খাবার।

আবিরঃ এগুলোই পেলাম। খেয়ে নাও।

প্রিয়াঃ কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?

আবিরঃ এগুলো আনতে।

প্রিয়াঃ এতক্ষণ লাগে?

আবিরঃ হুম।

প্রিয়া আর আবির দুজনেই খেয়ে নেয়। পানির বোতল নিয়ে দেখে পানি নেই। আবার যায় পানি আনতে।

প্রিয়াঃ আল্লাহ ই জানে এখন আবার কতক্ষণ লাগাবে।

হঠাৎই পিছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরল আর প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে গেলো। চোখ খুলতেই দেখতে পায় তার সামনে আবির। না আবির না। আদিল এটা।

প্রিয়াঃ আমি এখানে কেন?

আদিলঃ কি ভেবেছিস তুই? আমার ভালোবাসা কে মুল্য না দিয়ে অন্য আরেকজনকে ভালোবাসবি আর আমি কিছুই বুঝবো না? আমাকে অবহেলা করে অন্য কাউকে ভালোবাসবি আর আমি চুপ করে থাকব? হাতে একটা ছুড়ি নিয়ে, তুই যদি আমার না হোস তাহলে আমি তোকে কারোর হতে দেব না। ওমনি একটা আওয়াজ শুনল। কেউ বলল, আচ্ছা, ও যদি তোর হয় তাহলে তুই সবার হতে দিবি আদিল? প্রিয়া তাকিয়ে দেখে আবির।

আদিলঃ তুই এখানে?(ভয় পেয়ে)

আবিরঃ তুই কি ভাবলি তুই ওকে নিয়ে আসলি আর আমি বুঝতেও পারব না?

আদিক উধাও হয়ে গেলো। আবির ওর পিছনে যেতে চেয়েও গেলো না। প্রিয়ার হাত বাধা ছিলো। ও খুলে দিলে ওকে জড়িয়ে ধরল। প্রিয়াও।

আবিরঃ চোখ বন্ধ কর।

প্রিয়াঃ কেন?

আবিরঃ করতে বলছি কর।

চোখ বন্ধ করার পরেই প্রিয়ার অদ্ভুত লাগছে। মনে হয় ও মাটির উপর নেই। চোখ খুলে দেখে আবির ওকে নিয়ে আকাশে উড়ছে। ও পরে যাবে এমন সময় আবির ওকে ধরে ফেলল।

আবিরঃ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এভাবে ধরে রাখব তোমায়।

প্রিয়াঃ কে আপনি। আর কেন আমাকে সারাজীবন ধরে রাখবেন?

আবিরঃ কারন তোমার কাছে আছে আমার মানে জ্বিনের ভালোবাসা।

( বানান ভুল হলে মাফ করবেন। আপনারা কি ভেবেছিলেন? গল্পের মেইন হিরো আদিল?😁😁 যারা এটা ভেবেছেন তারা সবাই ভুল। গল্পের মেইন হিরো আবির। আর আদিল ভিলেন। টুইস্ট টা কেমন লাগল জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here