টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে_পর্ব ২০

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দীপ্ত, দীপ্তি, শান্ত, অথৈ সব গুলো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।

ঐশী ওদের কিছু বলতে যাবে তখনি শান্ত বলে উঠলো,’ এতো বড় ধোঁকা!! একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করি নাই।

দীপ্তি শান্তর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’ দুস্ত চিমটি কাট তো। মনে হয় কাল রাতে যে ঘুম হয় নাই তাই এখন জাইগা জাইগা স্বপ্ন দেখতেছি।’

শান্ত দীপ্তির হাতে চিমটি কাটার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো দীপ্তি।

শান্তর পিঠে ডুম করে একটা কিল মেরে বললো,’ শালা এতো জুড়ে চিমটি দেয় কেউ। ‘

শান্ত রেগে বললো,’ তুই তো বললি।’

অথৈঃ থামবি তোরা…!

দীপ্তঃ ঐশী স্যার যেটা বলে গেলো সবটা কি সত্যি..?
ঐশী দুই হাত উপরে তুলে হামি দিয়ে বললো,’ তোর কি মনে হয়। ‘
অথৈঃ আমি আগেই এমন কিছু একটা ভাবছিলাম।

শান্তঃ যেই স্যার আমাদের কাউকে দেখতে পারে না উনি কিনা তোকে বিয়ে করছে কেমনে কি ভাই…?

ঐশী রেগে বললো,’ আমাকে বিয়ে করছে বলে এতো অবাক হওয়ার কি আছে। তোদের স্যারের কপাল ভালো আমার মতো সুন্দরী, স্মার্ট, হাসিখুশি, ভদ্র একটা বউ পেয়েছে।উনার মতো এমন গম্ভীর, আনরোমান্টিক , শক্ত মনের লোক কে কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চাইতো না।’

অথৈঃ আমার ক্রাশ কিনা বান্ধবীর জামাই হয়ে গেলো। আমাদের সাথে কেনো এমন হয়। বিয়ের দিন এক বান্ধবীর জামাই পালাই যায়। আর আমার ক্রাশ বান্ধবীর জামাই, ভাল্লাগে না কবে নিজের জামাইর দেখা পামু।
কথা শেষ করতে না করতেই অথৈর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
অথৈ রেগে মোবাইল আছাড় দিতে গিয়ে বন্ধ করে ব্যাগে রেখে দিলো৷
শান্ত অথৈর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তুই আবার কি লুকাস..? তোরা সব গুলা এতো হারামি কেন..
অথৈঃ ক… কি লোকামো কিছুই লুকাই নাই। আমার লুকানোর মতো কিছু নাই৷

দীপ্তি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর এখন বাড়ি যাওয়া দরকার। ‘
শান্ত দীপ্ত দিয়ে তাকিয়ে বললো,’ হ্ মামা নতুন বউ ঘরে রাইখা বেশি বাহিরে থাহন ভালা না। ঘরে যাও বলেই চোখ মারলো। ‘

দীপ্ত হাতের কলমটা ছুড়ে মারলো শান্তর উপর।
দীপ্তঃ শালা তুই আর ভালো হইবি না।
ঐশী দাঁড়িয়ে বললো, ‘ দীপ্ত আমি বিকেলে তোদের বাড়ি যাবো বাকি তোরা ও চলে আসিস। খুব জরুরি কথা আছে সবাই আসবি কিন্তু।

সবাই ভার্সিটির বাহিরে আসলো।
দীপ্তি আর দীপ্ত বাইক নিয়ে চলে গেছে।
শান্ত হাঁটা ধরেছে স্টুডেন্ট এর বাসার দিকে।
অথৈঃ একটা রিক্সায় উঠে ঐশীকে বললো বাসায় গিয়ে কল দেওয়ার জন্য।

ঐশী দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য । তখনি ওর সামনে বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো আদিত্য।

আদিত্য কে এই সময় এখানে দেখে অবাক হয়ে ঐশী বললো,’ আপনি এখন এখানে কেনো..?’

আদিত্য ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাইকে উঠে বসো। ‘
ঐশীঃ কেনো..?
আদিত্যঃ কিছু কথা ছিলো।
ঐশীঃ এখানে বলুন।
আদিত্যঃ সব জায়গায় সব কথা বলা জায় না।
ঐশীঃ এমন কি কথা যা সব জায়গায় বলা যাবে না..?
আদিত্যঃ প্লিজ ঐশী বেশি সময় নিবো না।
ঐশী আদিত্যর দিকে তাকিয়ে মানা করতে পারলো না। বাইকে উঠতে যাবে তখনি কোথায় থেকে শুভ এসে ঐশীর হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ ঐশী চলো আমার সাথে। ‘
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ কোথায়..? ‘
শুভ ঐশীর কথার উত্তর না দিয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুই এখানে কেনো…?’
আদিত্য আমতা আমতা করে বললো,’ ভাই আমার ঐশীর সাথে কিছু কথা ছিলো। ‘

শুভ আদিত্যর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ “ঐশী ” ডাকটা কেমন লাগে না..? সম্পর্কে তোর বড় ভাইয়ের বউ আশা করি পরের বার আর মনে করিয়ে দিতে হবে না।

আদিত্য জোর পূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো, ‘ জ্বি ভাই।’

শুভ ঐশীর হাতে ধরে হাঁটা ধরলো গাড়ির দিকে। ঐশী হাত মোচড়া মুচড়ি করছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ চুপচাপ হাঁটো না হলে সবার সামনে কোলে তুলে নিবো।

ঐশী রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে।

আদিত্য তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার দিকে। জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে মন দিয়ে ছিলো আর সেই মেয়েই কিনা বড় ভাইয়ের বউ। রাগে ফুল স্পিড দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো।

*****************

বিথী ক্লান্ত হয়ে বাসায় ঢুকেই সামনে আকাশ কে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

আকাশ বিথী কে দেখে একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে কাছে গিয়ে বললো,’ জান তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি। তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া একদিন ও থাকতে পারি না।’

বিথী স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
আকাশ ঘার কাত করে পিছনে তাকিয়ে বললো,’ শশুর আব্বা আপনি তো বললেন আপনার মেয়ে এখানে আসেনি। মিথ্যা বলে লাভ কি হলো৷ আমার জিনিস কিন্তু আমি ঠিক খুঁজে নিতে জানি।

বিথী ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা নিচু করে আছে৷ বিথী খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর আব্বু এখন প্রচুর রেগে আছে। উনি যখন রেগে থাকেন তখন নিচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

ঐশী গাড়িতে বসে রাগে গজগজ করতে করতে বললো,’ সমস্যা কি আপনার..? এমন কেনো করছেন..? নতুন করে আর কি তামাশা করার প্লেন করছেন..? আপনি তো এমন লোক নন তাহলে আজ কাল এমন আচরণ কেনো করছেন..?

শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সাথে সাথে ঐশী চোখ সরিয়ে নিলো।
এই পুরুষের মুচকি হাসি যে খুবই ডেঞ্জারাস হাজারো রাগ কে এক হাসিতে গলিয়ে দেয়।
শুভ বলে উঠলো,’ ঐশী তুমি আমার বিয়ে করা বউ। দশটা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বউ। আর সেই একটা মাত্র বউ কে আমি কিভাবে অন্য কারো বাইকে বসতে দেই। তোমার বাইকে ঘুরবার ইচ্ছে হলে আমাকে বলো আমি এক রাতের শহর ঘুরে দেখবো তোমাকে।

ঐশী বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে বাহিরে তাকিয়ে আছে।

বিথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আকাশ বাঁকা হেঁসে বিথীর গালে হাত রাখতে গেলে বিথী সরে যায়।
বিথীকে এভাবে সরে যেতে দেখে আকাশ শয়তানী হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ কি হয়েছে সোনা রাগ করেছো আমার উপর..? সরি চল আমার সাথে। বলেই বিথীর হাত ধরতে গেলে বিথী এক হাত দিয়ে আকাশ কে থামিয়ে দেয়। ঘর ভর্তি সবার দিকে তাকায়। বিথীর আম্মু ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। ওর ছোটো আম্মু কিছু হয়তো বলতে চাচ্ছেন । ওর আব্বু সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদের দিকে চলে যাচ্ছেন।

তীব্র এসে বিথীর হাত ধরে বললো,’ আপু জিজু আব্বুর কলার চেপে ধরে ছিলো। ‘

বিথী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তারপর..? ‘

তীব্রঃ আম্মুকে তোমার শাশুড়ী খুব বাজে বাজে কথা বলেছে।

বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো।

আকাশের সামনে গিয়ে শার্টেরকলার চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,’ খেলা তুমি প্রথম শুরু করেছো কিন্তু শেষ আমি করবো। নিজের এই আগুনের খেলায় নিজে পু*ড়বে,জ্ব*লবে, ছাই হবে শুধু অপেক্ষা করো এই দিন গুলোর। আমাকে যেভাবে একটু একটু করে ঠকিয়েছো আমিও ঠিক একি পদ্ধতিতে তোমাকে তিলে তিলে শে*ষ করবো। ভে*ঙে চু*রে চু*রমা*র করে দিবো তোমাকে। তোমার এই খেলার সমাপ্তি হবে খুব জলদি।তারপর ধাক্কা দিয়ে আকাশকে দূরে সরিয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে গালে ঠা*সস করে থা*প্পড় বসালো।
আকাশ ভাবতেও পারেনি বিথী ওর গায়ে হাত তুলবে।
বিথী বাঁকা হেঁসে বললো,’ এটা আমার মা’কে তোমার মায়ের করা অপমানের প্রতিশোধ।’

আকাশ অপমানে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে৷

বিথীঃ আব্বুর টা তুলা থাকলো।
আকাশ বিথীর গায়ে হাত দিতে নিলে বিথী আকাশের হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,’ ভুলে যেও না তুমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেটা আমার নিজের বাড়ি৷ এটা তোমার বাড়ি নয় যে ইচ্ছে হলো গায়ে হাত তুললে। আমি নিজে চাইলে এখন তোমার এই হাত ভে*ঙে মুচড়ে দিতে পারি।’

ক্লান্ত শরীর নিয়ে গিয়ে সোফায় বসলো বিথী তীব্রকে বলে উঠলো,’ যাকে তাকে বাসায় ঢুকতে দেয় কে..?’

আকাশ বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ একদম ভালো করলে না তুমি। আজ যা যা করেছো তার পরিবর্তে কি কি হয় শুধু তুমি দেখো। আমার পায়ে ধরতে হবে তোমাকে।’

বিথী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ এমন দিন আশার আগে আমার মৃত্যু হোক। আর আল্লাহ না করুক এমন দিন তোমার ও আসতে পারে। এক ফুটা সুখের জন্য, ভালোবাসার জন্য আমার কাছে এসে ভিক্ষে না চাওয়া লাগে।’

বিথীর আম্মু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের মেয়ের দিকে । এই তো তার প্রতিবাদী মেয়ে। অনেক দিন পর আগের বিথী ফিরে এসেছে। খুশিতে উনার চোখে পানি চলে আসলো।
বিথীর ছোটো আম্মু ওর জন্য শরবত নিয়ে আসলো।

আকাশ রাগী লুক এ বিথীর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।

ঐশী গাড়ি থেকে নেমেই সামনে আকাশ কে দেখে কিছুটা অবাক হলো।
আকাশ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নিজের গন্তব্যের দিকে।
ঐশী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের গাড়ির দিকে।

শুভ গাড়ি থেকে নেমে ঐশীকে ওই গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো,’ গাড়িটা কি বেশি পছন্দ হয়েছে..? ‘
ঐশী উত্তর না দিয়ে বাসার ভেতর চলে আসলো৷ পিছু পিছু শুভও আসলো।

ঐশী ড্রয়িং রুমে এসে দেখে বিথী বসে আছে।

শুভ কে ঐশীর পিছু পিছু আসতে দেখে বিথী কিছুটা হেঁসে দিলো।
শুভ বিথীর সাথে টুকটাক কথা বলে ঐশীর রুমে চলে গেছে।

বিথীর প্রথম প্রথম শুভকে ভালো না লাগলেও এখন খুব ভালো লাগে। ছেলেটা খুব মিশুক অন্য ছেলেদের থেকে অনেকটাই আলাদা।

বিথী ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর এখন সবটা ঠিক করে নেওয়া উচিৎ। ‘
ঐশী মুখ ভেংচি কেটে বললো,’ এতো সহজে না।’
বিথী হেঁসে বললো,’ তাহলে..?’
ঐশীঃ ঘুরতে থাকুক, মাত্র তো শুরু।
বিথী ঐশীকে নিজের কাছে টেনে নিলো।
ঐশী বিথীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ চাকরি হয়েছে..? ‘
বিথীঃ রাতে মেসেজ দিয়ে জানাবে।’
ঐশীঃ আপু কি হয়েছে জানো..??
বিথীঃ না বললে জানবো কিভাবে..
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’ মৌ এর জামাই পালিয়ে গেছে..!

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here