#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ঐশী মুখে হাত দিয়ে ভয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে সামনে সাবান পানিতে গোসল করা শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।
দীপ,দীপ্তি, অথৈ,শান্ত, মৌ ভয়ে এক কোনায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।
শুভর সারা শরীর সাবান পানি দিয়ে চুবচুব হয়ে আছে।
ভার্সিটির মধ্যে এমন ঘটনা আর কখনো হয়নি। এই প্রথম কোনো স্যারের উপর পানি ঢালা হয়েছে আবার সাবান পানি।
শুভ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে। কার এত বড় সাহস যে ওর উপর পানি ঢালে। একবার সবার দিকে তাকিয়ে শুভ বলে উঠলো, ” কার এত বড় সাহস আমার গায়ে ময়লা পানি ঢেলেছো তারাতারি আমার সাথে দেখা করবে না হলে আমি সি সি ক্যামেরা দেখে বের করতে হলে কিন্তু এই ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
শক্ত গম্ভীর কন্ঠে এমন কথা শুনে এক একটার বুক কেঁপে উঠল। এখন কি হবে…???
শুভ চলে যেতেই অথৈ বলে উঠলো,’কি দরকার ছিলো ঐশী এখন আমার জান টাকে দিলি তো রাগিয়ে। এখন এই ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করলে আমি আমার জান কে দেখবো কেমনে..??
মৌ রেগে বললো,’ তুই এত লুচ্চা কেনো রে অথৈ! নিজের বান্ধবীর ক্রাশ এর দিকে নজর দিতে লজ্জা করে না।’
অথৈঃ দেখ মৌ সব সময় তুই আমার পছন্দের উপর নজর কেনো দেছ! তুই আসলে বন্ধু নামের শত্রু। বলে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
ঐশী বান্ধবীদের কথা শুনে খুব খুব করে কেশে উঠলো।
এই স্যারের জন্য ভার্সিটির অনেক মেয়েই পাগল। শ্যাম রঙের পুরুষটির প্রেমে যে কোনো নারী পরে যায়। বিশেষ করে শুভর হাসির উপর মেয়েরা ক্রাশ খায়। শুভ যে ঐশীর মামাতো ভাই কেউ জানেনা। কারন যেই মানুষ ওকে পছন্দ করে না তার পরিচয় বন্ধুদের কাছে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। আর এখন তো…
দীপ রেগে বললো,’ কি শুরু করেছিস তোরা। এমনি আছি সিরিয়াস অবস্থায়। স্যার যে এখন কি করে আল্লাহ জানে।’
শান্তঃ আমরা কি গিয়ে মাফ চেয়ে নিবো। সত্যি টা স্যার কে বলে না হয় মাফ চেয়ে নিবো। ‘
দীপ্তিঃ ঠিক বলছিস।
ঐশীঃ তোরা কেউ যেতে হবে না। চুপচাপ ক্লাসে যা আমি আসছি।
অথৈ রেগে বললো,’ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। স্যার খুব রাগী।যদি তোর গালে চার পাঁচটা লাগিয়ে দেয়।’
ঐশী ভয় পেলে ও ওদেরকে বুঝতে দিলো না।
ঐশীঃ দেখ সবাই গেলে স্যার সবাইকে শাস্তি দিবে। আর সবাইকে এমন হতে পারে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করে দিতে পারে। আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার এমনি তেও পড়াশোনা করার ইচ্ছে নাই।
শান্তঃ বেশি কথা বলবি না। চুপচাপ সবাই চল। আর ওই মদন কে একবার পাই শা*লার এমন অবস্থা করমু।
ঐশীঃ কিন্তু সবাইকে যদি…
আর কিছু বলার আগেই সবাই ওকে থামিয়ে দিয়ে চললো শুভর কাছে।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।
শুভ কাপড় চেঞ্জ করে চেয়ারে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভঃ আপনারা সবাই এখানে। গম্ভীর কন্ঠে বললো।
সবাই ভয়ে কেঁপে উঠলো।
শুভ আবার বললো,’ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি!! ‘
দীপ্তিঃ আ…স…লে স্যার।
শুভঃ ঠিক করে কথা বলুন। এই সব তুতলানু আমার পছন্দ না।
মৌ আর অথৈ হা করে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।
শান্তঃ সরি স্যার। আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা জানতাম না আপনি নিচে ছিলেন।
শুভঃ মুচকি হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকালো।
শুভর হাসি দেখে মৌ বলে উঠলো, ‘ আহ্ দুস্ত আমার ক্রাশ টার হাসি দেখে আমি তো পুরাই ফিদা।’
মৌ এর কথা শুনে সবাই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মৌ যখন বুঝলো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সাথে সাথে দুই হাত মুখে দিয়ে মাথা নিচু করে আছে।
শুভ রেগে বললো,’ তোমাদের শাস্তি হলো এই রোদের মধ্যে ভার্সিটি ছুটি হওয়ার আগ পর্যন্ত কানে ধরে এক পায়ে মাঠের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে থাকবে।’
ভার্সিটির মধ্যে ওদের চিনেনা এমন কেউ নেই। সবার সামনে কান ধরে কিভাবে ধারিয়ে থাকবে!
কাঁদো কাঁদো মুখ করে একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকালো।
অথৈঃ স্যার….
শুভঃ আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না। তারাতারি যাবে নাকি আমি অন্য ব্যাবস্থা নিবো।
ভয়ে সবাই মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আর আশেপাশে সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ হাসাহাসি করছে৷ রাগে ঐশীর সারা শরীর কাঁপছে। এই অসভ্য, অভদ্র লোক কিভাবে ওর স্বামী হতে পারে।
রাগে ঐশী শুভর বাড়িতে না গিয়ে নিজের বাড়িতে চলে এসেছে। পাক্কা তিন ঘন্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলো। দীপ্তি তো পুরাই অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।
ঐশীকে এমন অবস্থায় আসতে দেখে ওর আম্মু ওকে জড়িয়ে ধরলো।
ঐশী ওর আম্মুর সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো। শরীর খারাপ লাগছে। লম্বা একটা গোসল দিতে হবে।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা গোসল দিয়ে বের হয়ে বিথী আপুকে দেখে অবাক হয়ে গেলো ঐশী।
বিথী ঐশীর রুমে বসে আছে।
বিথীকে দেখে একটা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
ঐশীঃ কখন আসলে .??
বিথীঃ সকালে।
ঐশীঃ জিজু এসেছে..??
বিথীঃ হুম।
ঐশীঃ কয়দিন থাকবে..??
বিথীঃ উনি কাল চলে যাবে।
ঐশীঃ এত তারাতারি।
বিথীঃ হুম, অনেক কষ্টে করে রাজি করিয়ে এনেছি।
ঐশী এবার ভালো করে বিথীর দিকে তাকালো।
ঐশীঃ গালে দাগ টা কিসের..??
বিথী আমতা আমতা করে বললো,’ মশা বসে ছিলো থাপ্পড় মেরে ছিলাম।’
ঐশী গভীর ভাবে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা…’
বিথীঃ হুম।
ঐশী হাঁটু গেড়ে বিথীর সামনে বসে বললো,’ তুমি ভালো আছো তো আপু..??’
বিথী এদিক ওদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি আসি ঐশী উনি হয়তো আমাকে খুঁজছে। ‘
ঐশী বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ হুম যাও।’
বিথী দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যেনো সে পালিয়ে যাচ্ছে।
ঐশী বিথীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, ‘ গালের দাগ যে অন্য কথা বলে। এভাবে পালিয়ে যাওয়ার মানে কি..? তুমি ভালো নেই আপু ..? ওই বেইমান,প্রতারক তোমাকে ভালো রাখছে না। তোমার চোখে যে কষ্টের,লুকোচুরি দেখেছি। ‘
বিথী ঐশীর রুম থেকে বেরিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো। জীবন এত নিষ্ঠুর খেলা কেনো খেলছে..? সে যে ভালো নেই। যেখানে স্বামী, শশুর,শাশুড়ী কেউ ভালো নয়। ওকে কেউ মেনে নিচ্ছে না। সেখানে সংসার কিভাবে করবে..? একজন ভালো হলেও আঁকড়ে ধরে পরে থাকতো।
শুভ বাসায় এসে শুনলো ঐশী বাসায় আসেনি।
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ভার্সিটি ছুটি হয়েছে আরো তিন ঘন্টা আগে। এই মেয়ে এখনো বাসায় আসেনি কেনো। আবার কি বন্ধুদের সাথে বাইক নিয়ে ঘুরতে গেছে..? কিন্তু শাড়ি পড়ে তো আর বাইক নিয়ে ঘুরতে যাবে না।
শুভর নানু খুব খুশি। মনে মনে আল্লাহ কে অনেক বার ধন্যবাদ জানালো। আর এখন তো ভাবছে এই মেয়ে আর কোনো দিন যেনো না আসে।
পূর্ণা এসে বললো,’ আম্মু ভাবি ফুপিমণির বাসায় চলে গেছে। ‘
নীলা বেগমঃ না বলেই চলে গেলো..?
শুভ বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এই সব ফালতু ক্যারেক্টারলেস মেয়ের কথা ওর ভাবার সময় নেই।
নীলা বেগম ঐশীর আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে জানিয়ে দিলো রাতে শুভ যাবে।
ঐশী কফি খাচ্ছে আর উপন্যাসের বই পড়ছে।
তীব্র এসে বললো,’ আপু জিজু এসেছে ছোটো আম্মু বলেছে নিচে যেতে। ‘
ঐশীঃ জিজু..???
তীব্রঃ হুম।
ঐশীঃ আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
ঐশী নিচে গিয়ে দেখলো শুভ বসে আছে। সামনে বিভিন্ন আইটেমের নাস্তা দেওয়া নতুন জামাই বলে কথা। সাথে আকাশ ও বসে আছে।
আকাশ ঐশীকে দেখে তাকিয়ে আছে। যেনো কত বছর পর দেখছে।
ঐশী আকাশের দিকে তাকিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
শুভ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ও একদম আসতে চায়নি। ফুপিমণির কথা রাখতে এসেছে।
ঐশীঃ আম্মু উনি কি আজ থাকবে..?
~হুম।পূর্ণা এসেছে…
ঐশীঃওহ্হহ..কোথায়??
~ তীব্র নিজের রুমে নিয়ে গেছে।ওখানেই আছে মনে হয়।
ঐশীঃ ওহ্হহহ..
ঐশী রান্না ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে তাকিয়ে দেখে শুভ নেই। আকাশ রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী আকাশ কে দেখেও না দেখার মতো উপরে চলে গেলো। এই অসভ্য লোককে একটা শিক্ষা না দিলে ঠিক হবে না।
নিজের রুমের সামনে গিয়ে দেখলো বিথী শুভকে ওর রুমে বসিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। ওকে দেখে হাসি দিয়ে বললো, ‘ তোর স্বামী তো দেখি কয়েক ঘন্টা বউকে না দেখতে পেয়ে রাতেই বউয়ের কাছে চলে এসেছে।’
ঐশী মুখে জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। সে খুব ভালো করে জানে শুভ ওর জন্য কখনো আসেনি।
বিথী চলে যেতেই ঐশী নিজের রুমে পা বাড়ালো। হঠাৎ কাল রাতের দৃশ্য চোখের সামনে বেসে উঠলো। সোনিয়ার জড়িয়ে ধরে রাখা দৃশ্যটি যেনো ক্যামেরার মতো মনে গেতে গেছে। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে ঢুকলো।
শুভ ঐশীকে রুমে আসতে দেখে তাকালো।
শুভঃ তুমি কি এই রুমে থাকবে..?
ঐশী কাঠকাঠ কন্ঠে বলে উঠলো,’ এখানে কি সিনেমা হচ্ছে..? দেখুন নিজের বাড়িতে যেভাবেই থাকুন না কেনো। আমাদের বাসায় এমন ভাবে থাকতে হবে যেনো বাসার কেউ আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে ফাটল ধরে আছে তা যেনো না বুঝতে পারে। একটা স্বামী স্ত্রী যেভাবে নর্মাল ভাবে চলাফেরা করে ঠিক সেভাবে চলতে হবে। আমি চাই না আমার আম্মু আব্বু আবার কষ্ট পাক।
শুভঃ আমি তোমার কথা কেনো শুনবো..??
ঐশীঃ কেনো শুনবেন না শুনি… আমি আপনার স্ত্রী, বিয়ে করা বউ আমার এমন একটা দুইটা কথা শুনতে আপনি বাধ্য।
শুভঃ আচ্ছা আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখো তো তোমার মধ্যে বউয়ের কোনো লক্ষন আছে কি না। কি পড়ে আছো..?? চলাফেরা তো করো ছেলেদের মতো। শুধু ফুপিমণির মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করেছি।
ঐশীঃ হা হা হা আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতেন না তো কি সোনিয়া কে বিয়ে করতেন..??
শুভ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেঁসে বললো, ‘ তোমার থেকে অনেক ভালো, ভদ্র মেয়ে ও। ওকে বিয়ে করলে হয়তো আমি বেঁচে যেতাম।
শুভর এই কথাটা যেনো আগুনে ঘি ডালার মতো ছিলো।
রেগে বলে উঠলোঃ তো না করেছে কে..? যেখানে বিয়ের পর বউকে নিজের রুমে জায়গা দিতে পারেন না! মানুষের সামনে পরিচয় দিতে পারেন না। বউ থাকতে অন্য মেয়েকে নিজের রুমে জড়িয়ে ধরতে পারেন।আরো কি কি করেছেন সেটা আমি নাই বলি। আপনার মতো ক্যারেক্টারলেস পুরুষ আমি ডিজার্ভ করি না ওকে। পরিস্থিতির কারনে বিয়ে করেছি। সময় মতো ডিভোর্স পেপার ও পাঠিয়ে দিবো। বিয়ে করে নিয়েন আপনার ভালো, ভদ্র হাফবউ কে।
শুভ রেগে চিৎকার করে বলে উঠলোঃ ঐশী……
ঐশী শুভর কাছে গিয়ে নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,’হুসসসস চিৎকার করবেন না একদম। আমি কি একটাও মিথ্যা বলেছি..? আপনার এই কুকীর্তির কথা গুলো যদি বাহিরে বলি কি হবে ভাবতে পারছেন।
শুভ থমকে গেলো। আজ কিছু না করে সেই দোষী হয়ে গেলো।
ঐশী শুভর মুখের রিয়াকশন দেখে বাঁকা হেঁসে বললো,’ আমি কাউকে এখন কিছুই বলবো না শুভ আহমেদ আহনাফ আপনি শুধু আমার সর্ত গুলোর দিকে খেয়াল রাখলেই চলবে। বলে পিছনে ফিরতে গিয়ে পিছলে পড়ে যেতে নিলে শুভ সাথে সাথে কোমর জড়িয়ে ধরে পড়া থেকে আগলে নিলো।
এমন সময় পূর্ণা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে ঐশী আর শুভকে এমন অবস্থা দেখে সাথে সাথে চোখে হাত দিয়ে ঢেকে নিলো।
ঐশী প্রথম ভয় পেয়ে গেলেও তারাতারি নিজেকে সামলে শুভকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।
ঐশীঃ ভুলেও আমাকে স্পর্শ করবেন না।
শুভ রেগে বললো,’ তোমাকে স্পর্শ করার ইচ্ছে বিন্দু মাত্র আমার নেই। নিজেই পড়ে এখন কোমর ভাঙতে তাই ধরেছি।
ঐশীঃ আমি নিজেকে নিজে সামলে নিতে পারি।
শুভঃ তা তো দেখতেই পেলাম।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।