#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
রাত বেশি নয় তবুও চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আকাশে চাঁদের কোনো দেখা নেই, তাঁরাও নেই। আকাশে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে । হয়তো যে কোনো সময় বৃষ্টি চলে আসতে পারে। ঠান্ডা এলোমেলো বাতাস বইছে। ঐশী চুল ছেড়ে দিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে । রুমে যেতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না। শুভকে দেখলেই রাগ হচ্ছে। এই পুরুষটি ওর উপর দয়া করেছে। ও কারো দয়া নিয়ে জীবন কাটাতে চায় না।
ওর পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকালো।অন্ধকারে আবছা একটা পুরুষের অবয়ন দেখা যাচ্ছে।
ঐশী কিছু বলার আগেই পুরুষটি বলে উঠলো,’ কেমন আছো ঐশী..?
কন্ঠটা শুনে আর বুঝতে বাকি নেই পুরুষটি কে। কিন্তু ঐশী তো অন্য কাউকে আশা করে ছিলো।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঐশী স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,’ আপনি..??
আকাশঃ নিজের বরকে আশা করে ছিলে..??
ঐশীঃ কা কে আশা করেছি। সেটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
আকাশঃ অন্ধকারে কি করছো..??বৃষ্টি আসতে পারে।
ঐশী এবার ঘুরে আকাশের দিকে তাকালো। কিছু না বলে চুপচাপ চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে হাঁটা ধরলো হঠাৎ হাতে টান অনুভব হতেই পিছন ফিরে হাতের দিকে তাকালো।
হাতের দিকে তাকিয়ে বিথীর গালের দাগটার কথা মনে পড়লো।একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অন্ধকারে শরীরে পুরোটা শক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসালো আকাশের গালে।
আকাশ হয়তো ভাবতেও পারেনি শুধু হাত ধরলে ঐশী ওকে থাপ্পড় বসাবে। একটা মেয়ের হাতে এত শক্তি কিভাবে আসতে পারে৷ মাথা ঝিমঝিম করছে। গালে হাতে দিয়ে অবাক হয়ে অন্ধকারে সামনে তাকিয়ে আছে।
ঐশীঃ প্রথম বার বলে শুধু থাপ্পড় পড়েছে দ্বিতীয় বার একি ভুল করলে আপনি ভাবতেও পারবেন না আমি এমন কিছু করবো। আমার আশেপাশে যেনো আপনাকে না দেখি। আর একটা কথা আমার বোন আমার জীবন, আমার বোনের গায়ে কেউ একটা টুকা দিলে আমি তার শরীরে বিন্দু মাত্র জায়গা বাদ রাখবো না আশা করি বুঝতে পেরেছেন। বলেই গটগট করে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
আকাশ ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুষ্ক ঢুক গিলে অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকালো। বিয়ের পরে এই দুই দিন কম হাত তুলেনি বিথীর গায়ে৷ একবার যদি ঐশী জানতে পারে ওর অবস্থা কি করবে ভাবতে ঘাম ছুটে গেলো। এই মেয়ে খুব ডেঞ্জারাস। গালটা খুব জ্বালা করছে। এটা মেয়ের হাত নাকি কোনো ডাইনীর,আচ্ছা চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো অন্ধকারে কোনো জ্বিন ভূত ভড় করেনি তো আবার। ভয়ে আকাশ তারাতারি ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে পর পর তিন বার উষ্ঠা খেলো।
ঐশী নিচে নেমে দেখে বিথী ওর আম্মুর সাথে টুকটাক কাজ করছে। ও গিয়ে সোফায় বসে টিভিতে কার্টুন দিলো। খুব মনযোগ দিয়ে হানি বানি দেখছে। মায়ের ডাকে বিরক্ত হয়ে রান্না ঘরে যেতেই হাতে কফির কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘ শুভকে দিয়ে আয়।’
ঐশীঃ আম্মু আমি কেনো..??
বিথীঃ তুই জাবি না তো কি আমি নিয়ে যাবো।
ঐশী আর কথা না বাড়িয়ে কফি নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
রুমে এসে দেখে শুভ কাউকে ফোনে বলছে দেখ আমি ওকে কখনো মেনে নিতে পারবো না। শুধু মাত্র আম্মুর কথা রাখার জন্য, ফুপিমণির কথা রাখার জন্য ওকে বিয়ে করেছি।
………..
শুভঃ তোর ওকে ভালো মেয়ে মনে হয় কিভাবে..?? ওর চলাফেরা দেখেছিস।
ঐশী আওয়াজ করে কাপটা টি-টেবিলের উপর রাখলো।
শুভ রুমে কিছুর আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
শুভঃ তোমার মধ্যে কোনো ভদ্রতার ছিটেফোঁটা ও নেই। কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয়। সেই কমনসেন্সটাও কি তোমার নেই।
ঐশী বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ রুম টা কার…?’
শুভ ভুলেই গিয়ে ছিলো সে এখন ঐশীর রুমে আছে।
ঐশী এগিয়ে গেলো শুভর কাছে। ঐশী এগিয়ে যেতেই শুভ কিছুটা পিছিয়ে গেলো।
ঐশী আবারও এগিয়ে গেলো শুভ পিছিয়ে যাচ্ছে আর ঐশী এগিয়ে। এক পর্যায়ে শুভ দেওয়ালের সাথে আঁটকে গেলো। পিছনে যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।
ঐশী শুভর একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এতটা কাছে দাঁড়ালো যে অদের মঝ খানে বিন্দু মাত্র জায়গা খালি নেই।
ঐশী নিজের এক হাত শুভর এক পাশে রেখে আসতে আসতে নিজের মুখ শুভর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। শুভ ভয়ে আল্লাহ কে ডাকতে ডাকতে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই মেয়ে কি করতে যাচ্ছে!!
ঐশী শুভর মুখের কাছে মুখ নিয়ে শুভর মুখের এক্সপেরিয়েন্স দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। শুভর মুখে ফুঁ দিয়ে দূরে সরে গেলো।
শুভ চোখ খোলে দেখে ঐশী ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
শুভঃ তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমার জীবনে আমি আর একটাও দেখিনি।
ঐশীঃ স্বামী লজ্জাবতী হলে বউতো একটুআধটু নির্লজ্জ হতেই হয়।
শুভ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ তোমার মতো মেয়ের কাছ থেকে এর থেকে ভালো কি এই বা আশা করা যায়।’
ঐশী বাঁকা হেঁসে শুভকে জড়িয়ে ধরলো।
শুভ প্রথম স্তব্ধ হয়ে গেলো। ঐশী ওকে জড়িয়ে ধরলো! আজ এই মেয়ের কি হয়েছে..? মাথা ঠিক আছে তো..?
ঐশী শুভির কানে ফিসফিস করে বললো, ” ভেবে ছিলাম তিন মাস পর আপনাকে মুক্ত করে দিবো। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত আমি পাল্টে ফেললাম। আমার মতো বাজে মেয়েকে নিয়ে আপনি সারাটি জীবন কাটাতে হবে। আপনি চাইলেও না চাইলে ও। বলেই শুভকে ছিটকে দূরে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
শুভ এখনো ঘোরে আঁটকে আছে। এটা কি হলো..? কি বলে গেলো..? সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।আর নিজেই জড়িয়ে ধরলো আবার নিজেই ছিটকে ফেলে দিলো!!…এটা কেমন মেয়ে।
ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে শান্তকে কল দিলো।
শান্তঃ কি হইছে??
ঐশীঃ তুই কই??
শান্তঃ রাস্তায়।
ঐশীঃ আমি আসছি।
শান্তঃ জামাই কই..??
ঐশী কিছু না বলে কল কেটে বাসা থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ঐশীর আম্মু, বড় আম্মু,বিথী সবাই রান্না নিয়ে ব্যাস্ত।কেউ খেয়াল করেনি ঐশীর যাওয়ার দিকে।
বিথীর রুমের বারান্দা দিয়ে আকাশ দেখলো ঐশী বাইক নিয়ে এই রাতে বেরিয়ে যাচ্ছে। শয়তানী মাথায় এক আগুনি বুদ্ধি আসলো। বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো ” আমার থাপ্পড় এর জবাব তো আমি নিবই ডিয়ার শালিকা”
ঐশীকে বাইক নিয়ে আসতে দেখে শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
শান্তর সামনে গিয়ে ঐশী বাইক থামিয়ে বললো,’ উঠে পর’
শান্তঃ এত রাতে তুই বাইক নিয়ে..তোর জামাই কই..?’
ঐশীঃ জামাই দিয়ে কি করবি..?
শান্তঃ না দেখতান শালার কোন বলদার সাথে তোর বিয়ে হইছে। এতরাতে বউকে রাস্তায় একা ছেড়ে দেয়।
ঐশী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ তুই উঠবি নাকি আমি একাই চলে যাবো।
শান্ত কথা না বাড়িয়ে বাইকে উঠে গেলো। আর দীপের কাছে মেসেজ পাঠালো দীপ্তিকে নিয়ে চলে আশার জন্য।
শান্তঃ কই যাইবেন খালাম্মা..?
ঐশীঃ শান্তর বাচ্চা চুপচাপ বসে থাক।
শান্তঃ কি হইছে সেটা তো বল..? কই যাইতেছিস..??
ঐশীঃ তোর বিয়ে না করা বউয়ের বিয়ে আটকাতে।
শান্তঃ কিইই!!
ঐশীঃ চুপ….
শুভ মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে।
আকাশ ঐশীর রুমে উঁকি দিয়ে বললো,’আসতে পারি ছোটো ভাই।
শুভ যদিও মনে মনে বিরক্ত হয়েছে আকাশকে দেখে৷ এই ছেলের জন্য আজ ওর জীবন উলটপালট হয়ে গেছে। না চাইতেও ঐশীর সাথে আজ সে আঁটকে গেছে।
শুভঃ আসেন।
আকাশ যেনো এই ছোটো একটা কথার আশায় ছিলো। শয়তানি বাঁকা হাসি দিয়ে রুমে ঢুকলো।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।