#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ঐশী আর শান্ত দাঁড়িয়ে আছে মৌ এর বাসার নিচে।
শান্তঃ এত রাতে ওর বাসার নিচে কি করবি..??
ঐশীঃ ওর কাকার সাথে একটা খেলা খেলমু ।
শান্তঃ মাতা ঠিক আছে তোর ঐশী। তুই জানিস ওই হিটলার বেডা কতটা খারাপ। এখন বাসায় গেলে কি হবে তুই ভালো করেই জানোস।
ঐশী বিরক্তকর দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভেতরে যা হচ্ছে দেখলে তোর নিজের মাথা ঠিক থাকবো না।’
শান্তঃ ওর কাকা কি আবার বিয়ে করছে না-কি..?? শা** তিনটা বউ দিয়ে হয়না।
ঐশীঃ চল ভেতর যাওয়া যাক।
শান্তঃ চল।
ঐশীঃ দাঁড়া।
শান্তঃ আবার কি??
ঐশীঃ বেশি পকপক করবি না।বলেই বাড়ির ভেতর চলে গেলো। পিছন পিছন শান্ত ও গেলো।
*********
আকাশ শয়তানী হাসি দিয়ে শুভর পাশে বসলো।
শুভ জোরপূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
আকাশ নানা রকম কথা শুভকে জিজ্ঞেস করছে। শুভ কিছু কথার উত্তর দিচ্ছে না হলে চুপ করে থাকছে।
হঠাৎ আকাশ বললো,’ঐশী কে কোথাও দেখছি না যে.??’
শুভ ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো। আমার বউ কোথায় সেটা যেনে তোর কাজ কি..? বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মনে আসলেও মুখ ফুটে বললো না।
আকাশ আবার বললো,’ ওকে দেখলাম বাইক নিয়ে এই রাতের বেলা সাজগোজ করে কোথায় গেলো।
শুভ শুনেও না শুনার মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, ওহ্হ ‘
আকাশ অবশ্য এমন উত্তর আশা করেনি।
আকাশ একটা হাসি দিয়ে বললো,’ বুঝলে ছোটো ভাই। আজ কাল কার কোনো মেয়েদের বিশ্বাস নাই।রাত বেড়াতে বাহিরে বাইক নিয়ে চলে যাওয়া ভালো লক্ষন না। চলাফেরাও তো দেখলাম ভালো ছেলে মেয়েদের সাথে না।যদি…
আর কিছু বলার আগেই শুভ বললো,’ ঐশী আমাকে বলে গেছে। আপনি ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি গিয়ে আপনার বউয়ের চারপাশে কয়েল জ্বালিয়ে পাহাড়া দেন। মশা ইদানীং আপনার বউয়ের চারপাশে ঘুরঘুর করছে বেশি। মশার থাপ্পড়ে গালে দাগও বসে গেছে।
আকাশ আমতাআমতা করে বললো,’ আমি এখন আসি। তুমিও নিচে আসো।’
শুভ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ঘার নেড়ে বুঝালো আচ্ছা।
আকাশ মুখটা কালো করে উঠে দাঁড়ালো। যেই আশা করে এসেছিলো তার কিছুই হলো না। উল্টো এই লোক ওকে ভয় দেখিয়ে দিলো। বউ জামাই দুইটাই ডেঞ্জারাস মুখ দেখেই বুঝে গেলো সব। তবে আমিও কম না। এবার প্লেন সাকসেস হয়নি তো কি হয়েছে আবার কোনো নতুন চাল চালবো মনে মনে আবার একটা শয়তানি বুদ্ধি ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
শুভ আকাশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আকারের উদ্দেশ্য কি ছিলো শুভ ভালো করেই বুঝেছে। কিছু মানুষ অন্যের সংসারে অশান্তি করার চিন্তায় থাকে। কিভাবে সংসারে ফাটল ধরানো যায় সেই কাজ করাই ওদের কাজ।
শুভ ভালো করেই জানে ঐশী এখন কোথায়।
শুভ যখন রুমে আসে।রুমে এসে দেখে ঐশীর মোবাইল বিছানার উপর। একটু পর টুংটুং করে কতগুলো মেসেজ আসে।
প্রথমে শুভ দেখবে না ভেবে ছিলো। কিন্তু কৌতুহল ধরে রাখতে পারেনি। কে মেসেজ দিলো। তাই মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো। মোবাইল লক দেওয়া না। তাই ওর জন্য আরো সহজ হয়ে গেলো।
মেসেজ গুলো দেখে সে অবাক হয়ে গিয়ে ছিলো। একটা মেয়ের মা-বাবা না থাকলে সে কিভাবে যুদ্ধ করে সমাজে বেঁচে থাকতে হয়। তা ওর এই প্রথম মনে হলো। সে আগের ওদের মেসেজ গুলো ও পড়লো। আপনা আপনি চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিলো।
*********
ঐশী মৌ এর বাসার কলিং বেল বাজাতেই একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো।
ঐশী উনাকে দেখে ভদ্র মেয়ের মতো সালাম দিলো।
শান্ত হা করে তাকিয়ে আছে।
ঐশী ওর দিকে তাকিয়ে হাতের কোনোই দিয়ে পেটে গুঁতো মারলো।
শান্তর ঘোর কাটলো।সেও মহিলাটিকে সালাম দিলো।
মহিলাটি জিজ্ঞেস করলো তোমরা কি ছেলের পক্ষের লোক।
শান্ত আবারও হা করে হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর মেয়ে যে দেখবে সেই তো ক্রাশ খাবে।
ঐশীঃ হুম।
মহিলাটি শান্তর দিকে মুচকি হাসি দিয়ে রুমে আসতে বললো।
শান্ত বেচারা খুশিতে গদোগদো হয়ে ঢুকে গেলো।
ঐশী মনে মনে ভাবছে, ‘একটু পর যখন ভালো মতো বাঁশ খাবি তখন যার-তার উপর ক্রাশ খাওয়া বের হবে।
ঐশী আর শান্তকে দেখে বাসার ভেতর বসে থাকা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারন বাসায় যারা আছে প্রায় সবাই ছেলে পক্ষ লোক। আর বাকি যারা আছে তারাও ওদের চিনে না।
মৌ এর কাকা ওর রুম থেকে বের হয়ে ঐশীকে দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এই মেয়ে এই সময় এখানে কেনো..? আর জানলো কিভাবে..?? উনার এত কষ্ট করে সাজানো প্লেন কি এভাবে ভেস্তে যাবে।
ঐশী মৌ এর কাকা হানিফ সরদার কে দেখে হেঁসে বললো, ‘ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। ‘
হানিফ সরদার ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে সালামের উওর দিয়ে বললো, ‘ ওখানে কেনো আসো আসো মৌ এর রুমে আসো।’
ঐশী ভ্রু কুঁচকে বললো,’ আমি এখানে বসতে আসিনি আঙ্কেল। ‘
হানিফ সরদারঃ তাহলে..??
ঐশী বাঁকা হেঁসে বললো, ‘ আমি তো মৌ কে নিতে এসেছি।’
হানিফ সরদারঃ ভেতরের রুমে আসো। ওখানে আমরা কথা বলি।
ঐশীঃ আপনার সাথে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে। মৌ কোথায় ওকে ঢাকুন!’
হানিফ সরদারঃ মৌ এত রাতে কোথাও যাবে না। আমাদের বাসায় সিনক্রিয়েট না করে। তুমি এখন আসতে পারো।
ঐশীঃ একা যাওয়ার জন্য তো আসিনি।
হানিফ সরদারঃ আমি ওর অবিভাবক। আমি যা বলবো তাই হবে। ভালো ভালো কথা বলেছি বলে ভেবোনা তোমার এই সব পাগলামি মেনে নিবো। এত রাতে কোনো ভালো মেয়ে তার অবিভাবক বাসা থেকে বের হতে দিবে।
ঐশীঃ আপনি অবিভাবকের কাতারে পরেন না আঙ্কেল। আমার মুখ যদি এখন খুলি তাহলে আপনি খুব ভালো করে জানেন কি হবে।
হানিফ সরদার রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি একটা ছেলে নিয়ে এসে আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।হাহা তুমি জানো চাইলে আমি এখন তোমাদের কি অবস্থা করতে পারি..?
“কি অবস্থা করবেন আঙ্কেল…?? ”
সবাই চমকে পিছন ফিরে দেখে দীপ্ত আর দীপ্তি বাঁকা হেঁসে দাঁড়িয়ে আছে।
হানিফ সরদারঃ ওহ্হ তাহলে সব ক’টা কে সাথে করে নিয়ে এসেছো। দেখো আমি ভালো করেই জানি তোমরা সব জেনে এসেছো। এখন কোনো ঝামেলা না করে বান্ধবীর বিয়ে খেয়ে আনন্দ করে যাও।
দীপ্তিঃ জামাই কোথায়..??
হানিফ সরদার আমতাআমতা করে বললো,’ পাগড়ি পড়াটা।’
দীপ্ত রেগে এগিয়ে গেলো হানিফ সরদারের দিকে শান্ত কোনো রকমে আটকালো।
দীপ্তঃ ছাড় শান্ত এই শা*লা কুত্তা *র বাচ্চার এমন অবস্থা করমু বিয়ে দেওয়ার স্বাদ ভালো মতো মিটে যাবে। লজ্জা থাকার দরকার দাদার সমান লোকের সাথে এই বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে দেয় কিভাবে। শা*লা হা***বিয়ের শখ আমি মিটাইতেছি এই বয়সে আসছে নাতনীর সমান মেয়েকে বিয়ে করতে।
শান্তঃ ঠান্ডা হ দীপ। আমি পুলিশ কে কল দিয়েছি।
পুলিশের কথা শুনে ভয়ে হানিফ সরদারের ঘাম ছুটে গেলো। যেই বুড়ো দাদা বিয়ে করতে এসেছিলো ভয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাই আমাকে মাফ করে দেন আমি আর কোনো দিন বিয়ে করতে আসমু না। বলেই আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় হানিফ সরদার কে বলে গেলো তিন লাক্ষ টাকা যেনো উনার ঘরে নিয়ে দিয়ে আসে।
ঐশী মৌ এর ঘরে গিয়ে দেখে ছলছল চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশীকে দেখেই গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
মৌ কে নিয়ে ওরা সবাই বেড়িয়ে আসলো।
মৌ কে দীপ্তি সাথে করে নিয়ে গেলো। বাকি যা হওয়ার কাল হবে। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে।
শান্ত ঐশী কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ঐশীর বাইক নিয়ে সে চলে গেলো।
ঐশী বাগানের পিছন দিয়ে গাছ বেয়ে নিজের ব্যালকনি দিয়ে রুমে ঢুকে গেলো।
যাক কেউ দেখেনি বলে সামনে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।