বান্ধবীর মৃত বয়ফ্রেন্ড যখন আমাকে পাত্রী হিসাবে দেখতে এসছিলো আমি চমকে উঠেছিলাম দেখে।আমার কাছে প্রথমে মনে হচ্ছিলো হয়তো এক রকম দেখতে দুটো মানুষ আছে পৃথিবীতে। অনেক সময় মানুষের সাথে মানুষের অনেকটা মিল খুজে পাওয়া যায়।অর্নব কে দেখে আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো।
মানুষটা যে অর্ণব না আমি সেটা শিওর হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকি কিন্তু আমি যতবারই তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি ততবারই যেন চমকে উঠেছি। প্রথমত আমার মনে হয়েছিল যে এটা অর্ণব হতে পারে না কারণ যে মানুষটা মারা গিয়েছে দু’বছর আগে সে কিভাবে ফিরে আসবে পৃথিবীতে একই ফেস এর অনেক ধরনের মানুষই আছে। তবুও আমার মনের মাঝে কেমন যেনো করছিল তাই আমি বিভিন্নভাবে ট্রাই করার চেষ্টা করছিলাম। অর্নবের ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা কালো তিল ছিল। খুব অদ্ভুত ভাবে এই ছেলেটারও ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে। অর্নব এর সাথে হুবহু মিল একটা মানুষের একটা মানুষের এতটা মিল কিভাবে হতে পারে। পাত্র পক্ষের সামনে বসে থেকে আমি পুরোটা সময়ই অর্ণবকে দেখে গিয়েছি এটা কি সত্যিই সে নাকি আমার মনের ভুল। অর্ণব কি তাহলে কোন ভাবে বেঁচে গিয়েছিল কিভাবে বেঁচে যাবে আমার চোখের সামনে তো অর্নব কে দাফন করা হয়েছিল। অর্ণব মৃত্যুর কোন কারণই ছিল না তবুও অর্ণব কাউকে কিছু না বলে সুইসাইড করেছিলো। কিসের কষ্ট লুকিয়ে রেখেছিলো ওর মনের মাঝে সেটা কেউ আজও জানতে পারিনি। না পাওয়া গেছে কোন ক্লু, না চিরকুট লিখে গিয়েছে। কোন অভিযোগ পত্র না কাউকে দোষী করে গেছে। অর্ণব নিজের হাত কেটে তাসনিমের নাম লিখেছিলো, আমি অনেক সময় ধরে দেখার চেষ্টা করলাম দেখি অর্নবের বাম হাতে তাসনিমের নামটা লেখা আছে কিনা। আমি খেয়াল করে দেখলাম ছেলেটার হাতে সেই তাসনিম নামটা লেখা আছে। আমি শিওর হলাম এটাই অর্ণব এটা যদি অর্নব না হবে তাহলে এর হাতে তাসনিম লেখাটা কিভাবে এলো? তাছাড়া অর্নব বাইক এক্সিডেন্ট করেছিলাম অ্যাক্সিডেন্ট করে ওর বাম ভ্রু কেটে যায় ছেলেটার ও সেইম। এ সব কিছু দেখে আমার শরীর ঘামছিলো খুব।।
প্রায় ছ’মাস ধরে আমার বিয়ের কথা চলছে।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়েছে।এই ছয়টা মাস চুটিয়ে প্রেম করেছিলাম হবু বরের সাথে।কারণ দুজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং যাতে ঠিক থাকে তাই বাসা থেকে নাম্বার দিয়েছিলো দু’জনে যাতে কথা বলে সব ঠিক করে নিতে পারি।আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে হলো আমার বেষ্টু তাসনিম এর দেবর রেদওয়ান।তাসনিম আর আমি খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম।আমার পরিচয় আমার নাম মৌ।
“ফ্লাশব্যাক।
তাসনিম,আমি,অর্নব,একই সাথে লেখাপড়া করেছি।এ বছরে আমাদের গ্রাজুয়েশন শেষ হয়েছে।সব সময় বলতাম দুই বান্ধবী এক বাড়িতেই বিয়ে করবো কখনো আলাদা হবো না।তাই তাসনিম ওর দেবর রেদওয়ানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে।তারপর আমাকে দেখতে যাওয়ার একটা ডেট ফিক্সড করে।আর সেদিন আমার পৃথিবী উল্টা পাল্টা হয়ে যায় রেদওয়ানের জায়গা অর্নব কে দেখে।অর্নব ছিলো তাসনিমের বয়ফ্রেন্ড।আজ থেকে দু’বছর আগে খুব অদ্ভুত ভাবে সুইসাইড করে মারা গেছিলো অর্নব। অর্নব এর মৃত্যুর পর তাসনিম খুব ভেঙে পড়েছিলো।ভালবাসার মানুষ মারা গেলে জীবন টা এলোমেলো হয়ে যায় এটাই স্বাভাবিক। পরে পারিবারিক ভাবে তাসনিমের বিয়ে রেজওয়ানের সাথে দেওয়া হয়।”
সেদিন অর্ণব এর সাথে আমাকে আলাদা রুমে কথা বলতে দেওয়া হয়।ভয়ে আমার শরীর হীম হয়ে আসে।তখন ছিলো আরো রাত।ওরা আমাকে সন্ধ্যার দিকে দেখতে এসছিলো।সবাই নিচে বসার রুমে বসে গল্প করছে আর আমাকে একটা মৃত মানুষের সাথে দো’তলার একটা রুমে কথা বলতে দেওয়া হয়।
অর্নব রুমে প্রবেশ এর আগে দেখি আয়নায় রক্ত দিয়ে অর্নব এর নাম টা লেখা ওঠে তারপর ওটায় আগুন ধরে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।ভয়ে যখন আমার হাত পা অবস হয়ে যাচ্ছিলো আমি রুম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছিলাম তখন অর্নব পেছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত রাখে।আমি চাইলেও আর নড়তে পারছিলাম না।এত ভারী কোনো জিনিস আমার ঘাড়ে পড়েছিলো আমি চাইলেও আর সরতে পারছিলাম না।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি অর্নব এর লাশ টা ফ্যানের সাথে ঝুলছে।ঠিক সেদিনের মতো যেদিন অর্নবের সুইসাইড করা বডি টা ঝুলছিলো।রুমের দরজা জানালা কিছুই খুলতে পারছিলাম না।বাইরে সব জায়গা আলো থাকলেও আমার রুমে কোনো প্রকার কোনো আলো ছিলো না।রুমের লাইট টা এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছিলো।নিকশ কালো অন্ধকারে অর্নবের ঝুলন্ত লাশটা হাওয়ায় দোল খাচ্ছিলো আর আমার শরীরে এসে বারি লাগছিলো।বরফের ন্যায় ঠান্ডা সে শরীর।
আমি বন্ধ রুমে প্রচুর কাঁন্নাকাটি করছিলাম আমার প্রাণ যাবে যাবে এমন সময় কেউ দরজাটা খুলে দেই।দরজার কড়া নড়ার শব্দ টাও খুব ভয়ানক ছিলো।চারদিক কেমন যেনো ছমছম করছিলো।আমি কারো স্পর্শ অনুভব করতে পারি।খুব ই অচেনা কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ভয় পেও না আমি আছি।কন্ঠ টা যেনো খুব চেনা আমার।আমি ভয় ভয় কন্ঠে প্রশ্ন করেছিলাম কে আপনি? তখন সে উত্তর দেই ডার্ক হাউজ এ যার মৃত্যু হয়েছিলো আমি সে।আমি শিউরে উঠি তার কথা শুনে।খুব জোরে চিৎকার দেওয়ার পর দেখি আমার চারপাশে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমার সামনে রেদওয়ান নামক ছেলেটি বসে আছে।সে আমাকে বলে কি হলো মৌ কোনো পোকা দেখেছো।।
বাকিরা বলে এভাবে চিৎকার এর কারন কি।
আম্মু বলে যাও রেদওয়ানের সাথে আলাদা কথা বলে নাও তোমাদের বিয়ে এক সপ্তাহ বাদেই হবেই।
আমি যেনো আকাশ থেকে পড়ি এত সময় আমার সাথে যেগুলা হলো সেগুলা কি ছিলো।আমি তো সেখানেই বসে আছি।আমি রেদওয়ানের সাথে এখনো আলাদা কথা বলতে যায় নি।এটা কিভাবে সম্ভব? আমি এখনো এখানে কেনো? আমার ভয়ে তখন ও বুক কাঁপছিলো।আমার শরীরের পশম তখন ও শিউরে ছিলো। অথচ আমি সবার মাঝেই আছি।আর এই রেদওয়ানের জায়গা তো অর্নব ই ছিলো।
এটা কিছুতেই আমার কল্পনা হতে পারে না।এত সময় যা হয়েছিলো সব সত্যি হয়েছিলো।আমাকে দুঃচিন্তা করতে দেখে রেদওয়ান বলে মৌ এর হয়তো আনইজি লাগছে থাক আলাদা কথা না বললেও হবে।
যাওয়ার সময় রেদওয়ান খুব অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে, ওর এ চাওনি টা স্বাভাবিক লাগে নি আমার।
আমি দৌঁড়ে উপরে গেলাম।এগুলা যদি আমার মনের ভুল হয় তাহলে উপরের রুমে গেলেই বুঝতে পারবো।
দো’তলার রুমে গিয়ে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।ওটা সত্যি অর্ণব ছিলো।
আমি যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
চলবে….
ডার্ক_হাউজ
পর্ব_১
লেখিকা_মৌসুমি_আক্তার