ডার্ক_হাউজ
পর্ব_৩
লেখিকা_মৌসুমি_আক্তার
অর্ণব এর কবর থেকে সাদা কিছু একটা উঠে আসছিলো।এতদিনে তো অর্ণব এর কবরে এমন কিছুই দেখি নি।কাল থেকে চারদিকে শুধু অর্ণব এর ছায়া দেখছি কেনো?সাদা ছায়ার মতো আকার আকৃতি বোঝা যাচ্ছে না ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।আমি খেয়াল করে দেখি দেয়াল টপকে আমাদের সীমানায় চলে আসলো ছায়া টা।তারপর ধীরে ধীরে ছায়া টা আমার রুমের বেলকুনিতে এসে বসে। প্রচন্ড ভয়ে আমার বুক দুরু দুরু করছিলো।আসলে ওটা কি আমি বুঝতে পারছিলাম না।যখন ওই ছায়াটা আমাকে বলে “আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ”।ভয়ে আমার গা ছমছম করছিলো।এরই মাঝে আম্মু আসে আমার রুমে। আম্মু আসার সাথেই ছায়াটা আবার আস্তে আস্তে অর্ণব এর কবরে গিয়ে সুয়ে পড়ে।সেদিন রাতে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম।
কেটে গেছে দু’দিন।আমাদের আরেকটা ক্লাস ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলে,” জানিস মৌ কাল আমি অর্নব কে দেখেছি।ও আমাকে দেখে হেসে দিয়েছিলো। আমার খুব সন্দেহ হচ্ছিলো কে এই মানুষ টা।আমাকে দেখে এমন ভাবে হাসছিলো যেনো ও আমাকে চিনে সেই ইশারা করলো। আমি ওর পিছ পিছ গেলাম।ও ধীরে ধীরে একটা বাগানের কাছে পৌছে যায়।বাগান এর মাঝ থেকে অর্ণব বিলীন হয়ে যায়।মৌ ওটা অর্নব ই ছিলো।” আমি হেসে বললাম ও মারা গেছে। কিন্তু আমার ফ্রেন্ড বললো অতৃপ্ত আত্মারা ফিরে আসে।আমি মনে মনে ভেবে যাচ্ছিলাম অর্ণব এর আত্মা কি তাহলে অতৃপ্ত হয়ে গেছে।আরো একদিন কেটে গেলো। আমার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি চুল এ চিরুনি দিচ্ছিলাম।কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ বুকের মাঝে কেমন একটা বাড়ি মেরে উঠলো।আমার পেছন থেকে একটা লম্বা হাত এসে আয়নায় লিখছে” আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ”। লেখাটা রক্ত দিয়ে লেখা।হাত টা দেখতে খুব ই ভয়ানক ছিলো।এমন ভয়ঙ্কর হাত আমি জীবনে দেখি নি।কেউ আমার ঘাড়ে চুম্বন দিলো।এত ঠান্ডা কিছু মনে হলো বরফ লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্ত ওটা চুম্বন ই ছিলো।আমি ভয়ে ঘাড় নাড়াতে পারছিলাম না সমস্ত শরীর অবস হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর আমি দেখি আমার ঘাড়ের পেছন থেকে আস্তে করে উঁকি দেই বিভৎস চেহারার কেউ।আমার পেছনে অমন বিভৎস চেহারার মানুষ আর আয়নায় অর্নব কে দেখলাম।আমি আবার ও ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
সেন্স আসার পর দেখি আমার চারপাশে মানুষ জন।ডাক্তার বাবু বললেন আমার শরীর দূর্বল হয়েছে।আসলে তো আমার অন্য সমস্যা আমি কাউকে বলতে পারছিলাম না।
সবাই রুম থেকে চলে গেলে আমি আম্মুকে বলি আম্মু অর্ণব।আম্মু বলে অর্ণব কে মিস করছিস মা তুই।কি আর করা ছোট বেলা তো তোদের বিয়ের কথা হইছিলো।তোর আর অর্ণব এর রিলেশন এর কথা আমরা সবাই জানতাম।তোমাদের মাঝে যে রিলেশন ছিলো সেটা অর্ণব আর আমাদের ফ্যামিলি উভয়ই জানতো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।আম্মু এটা কি বলছে।আমাদের মাঝে তো কোনো রিলেশন ছিলো না।আমি আম্মুকে বললাম আম্মু তোমার এমন কেন মনে হলো যে অর্ণব আর আমার মাঝে রিলেশন ছিলো।তখন আম্মু বললো অর্ণব যে তোকে না পেয়ে জিদে সুইসাইড করেছে এটাই ধারনা করে সবাই।অর্নব এর মা বাবা বলে সেদিন যদি ছেলের কথা মেনে নিতাম।তাহলে আর আজ এতকিছু ঘটতো না।আমি বললাম সেদিন কি হয়েছিলো আম্মু।আম্মু বলে অর্নব ওর বাড়িতে জানিয়েছিলো যে আমি মৌ কে এক্ষুণি বিয়ে করতে চাই।আমার হাতে বেশী টাইম নেই।যদি মৌ কে বিয়ে করতে পারি তাহলে হয়তো আমি বেঁচে থাকবো না হলে আমার হাতে সময় নেই।আমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই।একমাত্র মৌ পারে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে।অর্ণব এর মা বাবা বলেছিলো গরমের আভাস টা একটু কমে যাক তারপর বিয়ে দিবো।অর্নব বলেছিলো তোমরা আমাকে আর বাঁচাতে পারলে না তাহলে। তোমরা ভুল করলে।
আম্মুর কথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।অর্নব এগুলা বলেছিলো কই আমি তো জানিনা কিছু।অর্নব তো তাসনিম কে পাগলের মতো ভালবাসতো।কি এমন ঘটেছিলো অর্নব ওর ফ্যামিলিতে এগুলা বলেছিলো।অর্নব তার সুইসাইড এর ১৫ দিন আগেও বলেছিলো আমি একটা মারাত্মক ভুল করে ফেলছি মৌ।আমাকে এখুনি বিয়ে করতে হবে।আমাকে হেল্প কর প্লিজ।বিয়ের সম্পূর্ণ এরেজমেন্ট তোকেই করতে হবে।আমি বিয়ে না করলে তাসনিম সুইসাইড করবে।ওর খুব বিপদ।আমাকে আমার ভালবাসা তাসনিম কে বাঁচাতেই হবে।আমি জানতে চেয়েছিলাম এমন কি হয়েছে অর্নব যার জন্য এতটা চিন্তিত তুই।অর্নব আমাকে বলেছিলো কোনো প্রশ্ন করিস না প্লিজ।আমি পরশু তাসনিম কে বিয়ে করতে চাই।
আমার চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছিলো।বুকের মাঝে ভেঙে চুরে যাচ্ছিলো।আমার ছোটবেলার ভালবাসা অর্নব।সে আজ আমাকেই বলছে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।অন্যকে এভাবে ভালবাসার কথা বলছে আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।সারারাত কেঁদেছিলাম।জীবনে অনেক মিরাক্কেল ঘটে অর্নব যদি একবার বলতো মৌ আমি তোকেই চাই তাসনিম কে নয়।
পরের দিন আমি কাজী অফিসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।টাইম ওভার হয়ে গেছিলো কিন্তু অর্নব আর এলো না।অর্নব এর ফোন ও অফ পাচ্ছিলাম।আমাকে এত তাড়া দিচ্ছিলো অথচ সব রেডি করার পর অর্নব তাসনিম কেউ এলো না।
আমি অর্নব দের বাড়িতে গেলাম। অর্নব সেদিন বাড়িতে ছিলো না।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম অর্নব কে খুজে খুজে।পরের দিন বিকালে অর্নব আমাকে দেখা করতে বলে। তারপর থেকে অদ্ভুত মিরাক্কেল ঘটতে থাকে।
চলবে…….