ডার্ক_হাউজ পর্ব_৬

ডার্ক_হাউজ
পর্ব_৬
লেখা_মৌসুমি আক্তার

সিলিং ফ্যানটা খুব জোরে তাসনিম এর মাথার উপরে পড়বে এমন সময় তাসনিন কে সরিয়ে দেই আমি।ফ্যান টা খুব জোরে এসে ফ্লোরের মাঝ খানে পড়ে।তাসনিম আমাকে কিছু না বলে ওর রুমে চলে যায়।পরের দিন তাসনিম এর হ্যাজবেন্ড রেজওয়ানের সাথে ভয়ানক ঘটনা।রেজওয়ান অফিসে গিয়ে দেখে তার মতোই একজন রেজওয়ান পরিচয় দিয়ে অফিসে বসে আছে আর অফিসের কাজ কাম করছে।কি অদ্ভুত রেজওয়ান কে কেউ চিনছেই না।রেজওয়ান সবাই কে বলে ও কে এই টেবিল টা আমার।রেজওয়ানের মতো দেখতে ওই লোকটি হাসছে আর কোনো কোনো কথা বলছে না।রেজওয়ান তাকিয়ে দেখে ওই লোকটির কোনো পা ই নেই।এমন সময় রেজওয়ান চিৎকার দিয়ে ওঠে চারদিক থেকে সবাই এগিয়ে এসে বলে কি সমস্যা আপনার বেরোন এখান থেকে।অদ্ভুত লাগলো খুব রেজওয়ান কে কেউ চিনছেই না।সবাই তাড়িয়ে দিলো।রেজওয়ান অফিস থেকে বেরোনোর সময় দাঁরোয়ান বলে কেনো এসেছিলেন এখানে।রেজওয়ান বলে আরে মজিদ তুমি আমায় চিনছো না।দাঁরোয়ানের এমন হাসি দেখে চমকে যায় রেজওয়ান।মজিদ বিশ্রি ভাবে হাসছে মজিদের দুইটা পা নেই।রেজওয়ান বলে তোমার পা এ কি হয়েছে।এমন কথা বলার সাথে সাথেই মজিদ হাওয়া হয়ে যায়।

রেজওয়ানের কাছে ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল আজ এমন কেন হলো আর ওর মতো দেখতে কে ছিলো অফিসে। রেজওয়ান সেদিন বাসায় এসে ভীষণ অন্যমনস্কভাবে ছিল কেমন যেন সবকিছু অস্বাভাবিক লাগছে তার। তার মত দেখতে হুবহু আরেকজন মানুষ কিভাবে হতে পারে। বাড়িতে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে সারাদিন শুয়ে থাকে রেজওয়ান। তাসনিম বারবার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তোমার কি হয়েছে তোমার কোন কথার কোন উত্তর দেয় না। রাত দশটায় তাসনিম রান্না রেডি করে সবাইকে খাবার জন্য খেতে ডাকছে আমি এসে তাসনিম কে বলি তাসনিম তুই কি আমার উপর রেগে আছিস কেন কথা বলছিস না। তাসনিম বলে না রেগে থাকবো কেনো তুই মনে মনে অর্নব কে ভালোবেসে গেলি অথচ আমি কোনদিন জানতে পারলাম না। আমি বললাম আমাদের বন্ধু ছিল অর্নব বাদ দে না।যেখানে আছে সেখানেই ভালো থাকুক না। ভাইয়া কোথায়? জানিনা উনি আজ সকাল সকাল অফিস থেকে এসে শুয়ে আছেন রাত দশটা বাজে এখনো ওঠেনি তুই একটু দেখ না? আমি রেজওয়ানের রুমে গেলাম দেখলাম অচেতনভাবে সুয়ে আছে। আমি ডাক দিতেই বলে আমাকে বাঁচাও প্লিজ আমাকে বাঁচাও।আমি বললাম কি হয়েছে ভাইয়া।রেজওয়ান ভাইয়া আমাকে বলে এখানে ডার্ক হাউজ আছে মানে একটা অন্ধকার বাড়ি আছে।আমাকে ওখানে নিয়ে গেছিলো আমাকে মেরে ফেলবে বাঁচাও প্লিজ।

“এখানে আমি শুয়ে ছিলাম হঠাৎ করে দেখি ফ্যান এ একটা লাশ ঝুলছে। দেখে আমার শরীর কেমন একটা হিম হয়ে আসছিল এখানে কার লাশ ঝুলবে। তখন লাশটা আমার দিকে তাকিয়ে খুব জোরে হেসে দেয়। ওর হাসি দেখে আমার প্রাণ যাওয়ার মত অবস্থা,, তারপর আস্তে আস্তে নিচে নেমে ওর গলার ফাঁস বের করে আমার গলায় দড়ি দিয়ে আমাকে ঝুলিয়ে দেয়। আমি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম কিন্তু আমি মারা যাব যাব এমন একটা অবস্থায় গেলে আবার আমাকে ছেড়ে দিল। তারপর আমার গলার ফাঁস অবস্থায় টানতে টানতে আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে গেল। ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড খুব করে কাঁপছিল। নিকশ কালো অন্ধকার কোন অন্ধকার জায়গা দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল কিছুই জানিনা। একটা সময় সে আমাকে খুব অন্ধকার একটা বাড়িতে নিয়ে যায়। যে বাড়িটাতে কোথাও কোনো লাইট নেই আলো নেই ধূসর কালো অন্ধকার। অন্ধকারে কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না শুধু ঐ লোকটাকে দেখা যাচ্ছিল। আমি বললাম কি তুমি আমাকে কেন এখানে নিয়ে এলে তখন লোকটা বলে অন্ধকার এই ভয়ানক অন্ধকারে তোমাকে নিয়ে এসেছি।
এই বাড়িটা টা সব সময় এমন অন্ধকারে থাকে তাই ওর নাম আমি ডার্ক হাউজ বলেই ডাকি। তখন লোকটি আমাকে একটা সিলিং ফ্যান দেখিয়ে বলে এই যে এইখানে একদিন একজন সুইসাইড করে মারা গেছিল। এটা দেখো তোমার মৃত্যু এভাবেই হবে তাই আমি তোমাকে দেখাতে নিয়ে এলাম। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম আমাকে কেন মারতে চাও তখন সে বলে মৃত্যুর আগে কাউকে বারবার হুমকি দিলে কেমন লাগে সেটাই তোমাকে বোঝানোর ছিল। একটা মানুষকে অসহায় পেয়ে বারবার তার প্রাণ নেওয়ার হুমকি দিলে তার কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হয় সেটা জানো।তারপর যখন আমি লোকটার মুখ দেখলাম চমকে গেলাম।আমি বললাম যা করেছি সব তাসনিম করিয়েছে।আমার কোনো দোষ নেই।”

আমি ভাইয়া কে বলি কি করিয়েছে তাসনিম।ওই যে অর্নব।সাথে সাথে তাসনিম এসে বলে তোমাকে কি মেন্টাল হসপিটালে নিতে হবে।আজ সকাল থেকে উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছে।কি করিয়েছি আমি।রেজওয়ান ভাইয়া বলে কি করেছো মানে তোমার জন্যই তো অর্ণব এর সাথে এত কিছু করলাম। সবকিছু তো তুমি করেছিলে আজ তোমার জন্য অর্ণব আমার কাছে এসেছিল আমার সাথে দেখা করে ছিল ও আমাকে মেরে ফেলবে। তখন তাসনিম বলে তোমার মাথা সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেছে তোমাকে এখনই মেন্টাল হসপিটালে নিতে হবে মৌ রেডি হ ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। আমি স্পষ্ট খেয়াল করে দেখলাম তাসনিমের চোখেমুখে কোনোকিছুর ভয় জড়িয়ে আছে।

আমি তাসনিমের হাত ধরে শক্ত করে ধরলাম সত্যি করে বল কি করছিস তুই। কিছু না কিছু তো লুকাচ্ছিস সত্যি করে বল আমাকে খুলে বল সব।ও ভুলভাল বলছে তাই বিশ্বাস করছিস ওর মাথা ঠিক নেই। তাসনিম একটা হাসি দিয়ে বলে মরা মানুষ জীবিত হতে পারে নাকি।তাসনিম ভাইয়া কে হসপিটালে পাঠিয়ে দিলো।

বাড়িতে কেউ নেই। শুধু আছি আমি আর তাসনিম। তাসনিম ওর রুমে আমি আমার রুমে। কেমন যেন ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে কারেন্টের লাইট গুলো অটো জ্বলছে নিভছে রাত বারোটা হবে? তাসনিম কে কেউ গুটিশুটি মেরে জড়িয়ে ধরেছে।তাসনিম বলে কে কে আমাকে ধরেছে ছাড়ো। আমি পাশের রুম থেকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম তাসনিমের কথা। কে তুমি তোমার শরীর এত ঠান্ডা কেন ছাড়ো আমাকে আমার হাত-পা জমে যাচ্ছে? তাসনিম ফোনের আলো জ্বালিয়ে দেখে রেজওয়ান।

তুমি আমাকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিলে কি হবে আমি ওখান থেকে চলে এসেছি। ওখান থেকে চলে আসছো মানে তুমি যে এই ঘরে সেই ডাইরিটা লুকিয়ে রেখেছো সেটা কি কেউ জানে।তাসনিম বলে তোমার তো ডাইরির কথা জানার কথা নয় তুমি কিভাবে জানলে? ফোনটা তাসনিম এর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। একটা অদ্ভুত আলো এসে রেজওয়ানের মুখে পরে খেয়াল করে দেখে ওটা অর্ণব। তাসনিম বলে অর্ণব তুমি। অর্ণব হাহা করে হাসছে আর তাসনিমের পেটের কাপড় সরিয়ে দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দেয়। রক্তা গড়িয়ে পড়ে।কয়েকশ বার কেটে দেই তাসনিম যন্ত্রনায় ছটফট করে।আমি আমার রুম থেকে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ঝোড়ো হাওয়া বইছে।তাসনিম বিছানায় ছটফট করছে।

আমার পায়ের কাছে একটা ডায়রি এসে পড়ে। ডায়রির মলাটে লেখা মৌ কে অর্ণব।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here