ডেস্পারেট_লেখিকা –Farhina Jannat ১১.

0
141

#ডেস্পারেট_লেখিকা
–Farhina Jannat

১১.
সময় তখন আনুমানিক চারটা। নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছিল ইজান। ঘুম ভাঙল রিংটোনের শব্দে। ঘুমের ঘোরে প্রথমে দেখতেও ইচ্ছে করল না কার ফোন। তারপর এক চোখ খুলে দেখতে গেল মানুষটা কে। মারজান তো জানে যে ও এখন ঘুমাবে, ওর তো ফোন দেয়ার কথা না।

স্ক্রিনে রাফায়েত ভাইয়ের নাম দেখেই তড়াক করে উঠে বসল ইজান। ঘুম টুম সব উড়ে গেল।
“জি ভাই, বলেন” সালাম দিয়ে বলল ইজান।

“আমার জীবনটা তো অলরেডি প্যাথেটিক ছিল রে। সেটাকে পাব্লিকলি হিউমিলিয়েট করার কি খুব দরকার ছিল? তোর বউ খুব ভালো লেখিকা আমি জানি। কিন্তু আমার লাইফটাকেও তার গল্প বানাতে হলো? আর এভাবে? আমি তোর থেকে অন্তত এটা আশা করিনি ইজান।“

“ভাই, কী বলছেন আপনি? আমি তো এসবের কিছুই জানিনা”
“ওহ! তোর বউয়ের পেইজ খুলে দেখ। তাহলেই জেনে যাবি।” ইজানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিল রাফায়েত।

হতভম্ব ইজান দ্রুতহাতে ‘মারজান’স নোটবুক’ ওপেন করল। সর্বশেষ গল্পটা পোস্ট করা হয়েছে আজকে ভোরে। ফজরের খানিক বাদে। সে সময় সে মারজানের বিছানাতেই অঘোরে ঘুমাচ্ছিল।

গল্পটা পড়তে পড়তে রাগে চোখমুখ লাল হয়ে উঠল ইজানের। মাথার শিরা দপদপ করে উঠল। গল্পের এন্ডিং দেখে আরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। রাফায়েত ভাইয়ের কাহিনীটাই হুবহু তুলে ধরা হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু সারবস্তু একই। বরং এখানে গল্পের নায়ককে একটা প্যাথেটিক লুজার মনে হচ্ছে। যেখানে রাফায়েত ভাই একজন ভিক্টিম!

মারজান, তার মারজান এরকম একটা জিনিস কীভাবে লিখল? এই প্রথমবার মারজানের লেখালেখির উপর বিরক্তি এলো ইজানের। আর মারজানের উপর এলো রাগ, প্রচন্ড রাগ।

সাথে সাথে কল করল ইজান।
“কী মনে করে তুমি এই কাজটা করলা? না, তুমি আমাকে বলো কার অনুমতি নিয়ে তুমি কাজটা করেছ? তুমি রাফায়েত ভাইয়ের কাহিনী গল্প বানিয়ে পোস্ট করে দিয়েছ, মিনিমাম কমনসেন্স নাই তোমার? একটা মানুষ কী পরিমাণ কষ্টে আছে, আমি তোমাকে সেটা বলেছি শুধু। আর তোমার তাকে নিয়েও গল্প লেখা লাগল? আমি জানতাম যে লেখালেখি তোমার লাইফের মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস। কিন্তু এটা জানতাম না যে তুমি এতটা ডেস্পারেট যে মানুষের আবেগ অনুভূতির কোনো দাম তোমার কাছে নাই। তোমার কাছে সবই গল্পের আইডিয়া, লেখার বিষয়বস্তু! ছি মারজান, ছি! আমি তোমাকে এতটা নীচ কখনো ভাবিনি।“

কলটা রিসিভ হতেই একটানে কথাগুলো বলে ফেলল ইজান। মারজান মাঝখানে বেশ কয়েকবার ওকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল, কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করল না ইজান। রাফায়েতের মতো ইজানও মারজানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল। ফোনটা সজোরে নিক্ষেপ করল বিছানার উপরে।

প্রায় সাথে সাথেই ফোনটা আবার বেজে উঠল। মারজান ব্যাক করেছে বুঝতে পেরেই ফোনের দিকে তাকালও না। পায়চারি করতে করতে ভাবছিল ইজান। রাফায়েত ভাইকে কীভাবে স্যরি বলবে ও। আসলেই কি কিছু বলার মুখ আছে ওর? ফোনের অনবরত রিংটোনে বিরক্ত হয়ে সুইচড অফ করার জন্য ফোনটা হাতে নিল ইজান। দেখল মারজান না, মাসুমের ফোন। কারও সাথে কথা বলারই এখন মুড নেই, তাও কী মনে করে যেন কলটা রিসিভ করল ইজান।

“দোস্ত, আমি তো রাতের ট্রেনে চিটাগং যাইতেসি।“ পরশুদিন চিটাগং ইউনিভার্সিটির এক্সাম আছে, মনে পড়ল ইজানের। ঢাবিতে চান্স না পেলে মাসুমের সাথে আজ রাতে ওকেও রওনা হতে হতো।

“ও আচ্ছা, যা দোস্ত। ইন শা আল্লাহ এক্সাম ভালো হবে। টেনশন করিস না।” ঢাবিতে চান্স পায়নি মাসুম।

“দোয়া করিস দোস্ত। এটাই আমার শেষ ভরসা” বিষন্ন কণ্ঠে বলল মাসুম। ইজান কিছু বলার আগেই বলে উঠল আবারও, “আচ্ছা, যেজন্য কল দিসিলাম, তোর জন্যেও তো টিকিট কাটসিলাম। তো তুই তো এক সময় বলতি যে চান্স যেখানেই হোক, তুই সব জায়গায় পরীক্ষা দিবি? তো আসলেই কি দিবি? যাবি আমার সাথে? নাকি তোর টিকিট আমি বিক্রি করে দিব? আজকে তো টিকিটের হেব্বি ডিমান্ড হবে”

এক পলকেই যেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেল ইজানের।
“না, বিক্রি করিস না। আমি যাব তোর সাথে”

“জিয়ো দোস্ত!” খুশিমনে ফোন রেখে দিল মাসুম।

***
কয়েক ঘন্টা পর। রাতের আঁধার কেটে নিজস্ব ছন্দে ছুটে চলেছে মহানগর এক্সপ্রেস। পাশের সিটে মাসুম এর মধ্যেই তলিয়ে গেছে গভীর ঘুমে। এখন অক্টোবরের শুরু। শীত ঢাকায় আসেনি ঠিকই। কিন্তু এখন এই নিরিবিলি প্রান্তর ঘেঁষে ছুটে চলা ট্রেনের জানালা দিয়ে যে হিম হিম বাতাস ঢুকছে, তাতে জানালা খুলে রাখা মুশকিল। মোটামুটি সবাইই জানালার কাঁচ নামিয়ে দিয়েছে। ঠান্ডা কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে ইজান। ওর চোখে ঘুম নেই, মাথাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

জানে না কাজটা কতটুকু ঠিক করেছে। মারজানের উপর ভয়াবহ রাগটা এখন কমে এসেছে, তবে পুরোপুরি চলে যায়নি। ওকে একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। ও এতদিন শুধু ইজানের ভালোবাসা দেখেছে, এবার রাগটাও দেখুক। রাফায়েত ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাবার উপায় রাখেনি। একটা গল্প না লিখলে কী এমন এসে যেত ওর?

শুধুমাত্র বাবা-মাকে জানিয়ে ট্রেনে উঠেছে ইজান। ঠিক করেছে, এই পুরো সফরে মারজানের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না, ওকেও করতে দিবে না। তারপর ফিরে গিয়ে শুনবে, ওর কী বলার আছে।

নিজের পরিকল্পনা মোতাবেকই চলল ইজান। সারা রাস্তা ফোন অফ ছিল। ভোরে শুধু ট্রেন থেকে নেমে ফোন অন করে বাবাকে জানিয়ে দিল যে ওরা পৌঁছেছে। তারপর আবারও ফোন অফ করে দিল। এটা এবার খুলবে শুধুই ঢাকায় যাবার পর।

মাসুমের এক চাচাতো ফুফার বাসায় উঠেছে ওরা। মাসুম সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে কাটাল। আর ইজান শুয়ে-বসে। একটা সময় বিরক্ত হয়ে গেলে একা একাই ঘুরতে গেল। পরদিন মাসুম পরীক্ষা দিতে গেলে বের হলো ইজানও। মাসুমকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে ইতিউতি এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে সময় পার করল।

এক্সাম প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ফিরতি পথে সেন্টারের দিকে হাঁটছে ইজান। ওর কাছে থাকা মাসুমের ফোনটা অনেকক্ষণ ধরেই বাজছে। কেয়ার করছে না ইজান। এক সময় বিরক্ত হয়ে ভাবল যে যে এতবার ফোন করছে, তাকে বলে যে মাসুম এক্সাম হলে। কিন্তু ফোনটা পকেট থেকে বের করেই হতভম্ব হয়ে গেল ইজান। ওর আব্বুর নাম্বার জ্বলজ্বল করছে স্ক্রিনে। কী জানি কেন বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল ইজানের। সাথে সাথে রিসিভ করল ইজান।

“মাসুম বাবা, ইজান কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না কেন? ওকে জরুরি দরকার। দিতে পারবা ওকে?”

ইজান কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে হড়বড় করে কথাগুলো বললেন হক সাহেব।

“বাবা, আমি বলছি, ইজান”

“তুই ফোন অফ করে রেখেছিস কেন নালায়েক?” চিৎকার করে বললেন হক সাহেব। ভয় পেয়ে গেল ইজান। বাবা প্রচন্ড রেগে আছেন। রাগের সময় ছাড়া তিনি কখনোই ছেলেদের সাথে তুই তোকারি করেন না।

“কী হয়েছে বাবা?” ভয়ে ভয়ে বলল ইজান।
“তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কী হয়েছে? মারজান স্যুইসাইড করেছে”
(চলবে)

এতদিন পর এত ছোটো পর্বের জন্য আমি খুব খুব স্যরি। আসলে আজকেও খুব ব্যস্ততায় পড়ে গিয়েছিলাম হঠাৎ। But a promise is a promise. তাই দেরি করে হলেও একটা ছোটো পর্ব দিয়ে দিলাম৷ ইন শা আল্লাহ পরবর্তী পর্ব স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here