ডেস্পারেট_লেখিকা –Farhina Jannat ৫.

0
140

#ডেস্পারেট_লেখিকা
–Farhina Jannat

৫.
বাসায় এসে রাতের খাবার খেয়ে বিছানার মধ্যেখানে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল ইজান। মাথার মধ্যে রাফায়েত ভাইয়ের কথাগুলো পোকার মতো কিলবিল করছে ।
মারজানের পছন্দ অপছন্দ কোথা থেকে জানব? ওর সাথে সময়ই বা কাটাব কীভাবে? ধুর! বড্ড অসময়ে বিয়ে করে ফেলেছি। এডমিশন টেস্টগুলো দেয়ার পর করলে ভালো হতো। তাহলে পড়ার টেনশন অন্তত থাকতো না। না না! তাতেও সমস্যা ছিল। যদি প্রিপারেশন খারাপ হওয়ার কারণে ঢাকার বাইরে চান্স পেতাম! যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। সবদিক ম্যানেজ করতে পারব এই বিশ্বাসেই নিশ্চয় বাবা বিয়েটা দিয়েছে। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমাকে রাখতেই হবে।

হঠাৎ মাথায় এল ইজানের, “কী বোকা আমি! মারজানের সবথেকে প্রিয় কাজটার কথাই তো জানা আছে আমার। আর সেদিকে নজর না দিয়ে অন্ধের মতো এদিক ওদিক হাতড়ে বেড়াচ্ছি”

যেই ভাবা সেই কাজ। ফোন হাতে নিয়ে ‘মারজান’স নোটবুক’ ওপেন করল ইজান। অ্যালবামে গল্পের লিস্ট থেকে “অসমাপ্ত কান্না” নামটা পছন্দ হলো ওর। বিশ পর্বের গল্প কিংবা উপন্যাসটা পড়তে শুরু করল ইজান। দুই ঘন্টা বাদে যখন সেটা শেষ হলো, ওর নিজের কান্না মোটেই অসমাপ্ত থাকেনি। চোখের পানি ফেলে বালিশ ভেজাচ্ছে কখন থেকে খেয়ালই নেই ওর।

ভেবেছিল একটা গল্প শেষ করে পড়তে বসবে। কিন্তু মনটা এত বিষন্ন হয়ে গেছে যে আর কিছুই ভালো লাগল না ইজানের। ফোনটা রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল ও। এদিকে মনের মধ্যে সদ্য শেষ করা গল্পের রেশ আর অজস্র চিন্তাভাবনা ঘুমকেও কাছে ভিড়তে দিচ্ছে না।

খানিক পর আবারও ফোনটা হাতে নিল ইজান। ভারী হয়ে যাওয়া মনটাকে হালকা করতে এবার পড়তে শুরু করে একটা রম্য গল্প “লুঙ্গি ড্যান্স”। গল্পটা পড়ে হাসতে হাসতে বিছানা থেকে গড়িয়ে যে মাটিতে পড়েনি, সে ওর ভাগ্য। এভাবেই পড়াশোনার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে কাটিয়ে দিল গোটা রাত। মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠ যখন ফজরের জানান দিল, তখন সে দ্বিতীয় উপন্যাসের শেষ পর্ব পড়ছে।

***
কলেজের বাইরে বের হয়ে রিক্সার জন্য অসহায়ের মতো এদিকওদিক তাকাচ্ছে মারজান। ওর সামনে দিয়ে অন্য মেয়েরা সব একটা একটা রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, ওকে যেন রিক্সাওয়ালা মামারা কেউ দেখতেই পাচ্ছে না। এমনিতে রিক্সা ঠিক করার কাজটা করে সায়মা। দুজনের বাসা একদিকেই, একসাথেই ফেরে। সায়মার বাসা অবশ্য আগে পড়ে। কিন্তু ও যে হঠাৎ কী কারণে রাগ করেছে, এক সপ্তাহ ধরে কথা বলছে না মারজানের সাথে। তাই বাধ্য হয়েই একা একা বাসায় ফিরতে হচ্ছে মারজানকে।

মারজান কয়েকবার জানার চেষ্টা করেছে রাগ করার কারণ। সায়মা কিছুই বলে না, খালি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সেই দৃষ্টির সামনে আর কিছুই করার থাকে না মারজানের। মারজানের জন্য হয়েছে বিশাল সমস্যা। এত বছরের ছাত্রজীবনে কোন কিছুই সে একা করতে অভ্যস্ত না। ওর মনে হচ্ছে যেন একটা হাত কিংবা পা সাথে নাই, বিকলাঙ্গ হয়ে ঘুরছে। এভাবে রাগ করে থাকলে চলে?

“এই রিক্সা, যাবে?” একটু দূরের রিক্সাটাকে জোরে ডাক দিতে না দিতেই একটা মোটরসাইকেল এসে দাঁড়াল মারজানের সামনে। চমকে পেছনে সরল ও। মোটরসাইকেল আরোহী হেলমেট টা খুলতেই বেরিয়ে এল ইজানের হাসিভরা মুখ।

“তুমি! এখানে? কী করছো?” বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠেছে মারজানের।

“তোমাকে নিতে আসলাম। চলো, কোথাও বসে কিছু খাই, তারপর তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি”

“ওকে। তার আগে দাঁড়াও, সায়মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই!” ওর থেকে একটু দূরেই সায়মা দাঁড়িয়ে থাকে রিক্সার জন্য, সেদিকে তাকাল মারজান। ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিল সায়মা। কিন্তু মারজানের চোখে চোখ পড়তেই চট করে সামনের রিক্সাটায় উঠে পড়ল, মারজানের ডাক উপেক্ষা করে হুডতোলা রিক্সা চলে গেল ওদের সামনে দিয়ে।

“কেমনটা লাগে? নিজেই কয়দিন আগে বলতে বলতে কান ব্যথা করে ফেলসে আমার, তোমাকে যেন ডাকি, ও ট্রিট নিবে। আর এখন কী করল দেখলা? কী যে হইসে ওর, আল্লাহ মালুম” কণ্ঠে একরাশ বিরক্তি আর হতাশা মারজানের।

“তো, তখন ডাকোনি কেন?”
“বারে! তুমি নিজেই তো এই টাইমে কোচিং করে টায়ার্ড হয়ে থাকো, এখানে আবার ঘোরাপথে আসতে যাবা কেন?”

“মারজান, মেরি জান! এই ঘোরাপথে এসে কারও চাঁদমুখ দেখে যে উল্টা আমার টায়ার্ডনেস হাওয়া হয়ে যেত, সেটা তোমাকে কে বুঝাবে? এখন কি উঠা হবে?” চোখ উঁচিয়ে বিশেষ কায়দায় কথাগুলো বলে নিজের পেছনদিকে ইশারা করল ইজান।

ইজানের মুখে “মেরি জান” শুনে মারজানের গালদুটো যে ওর নিজের অজান্তেই রাঙা হয়ে উঠেছে, নেকাবের আড়ালে থাকায় সে দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হল ইজান। মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে বসল মারজান। সেকেন্ড দুয়েকের জন্য ইতস্তত করে ইজানের কাঁধটা ধরে বলল, “একটু আস্তে চালিয়ো, প্লিজ!”

“কেন? ভয় পাও?” মাথায় হেলমেট পরতে পরতে বলল ইজান।

“না, হিজাবের পেছনে তো পিন দেয়া নাই। বাতাসে উড়ে চুল বের হয়ে যাবে। আমার কাছে এক্সট্রা পিনও নাই”

“আচ্ছা, কালকে থেকে পেছনে পিন লাগিয়ে আসবা। মোটরসাইকেল আস্তে চালিয়ে মজা নাই”

“কেন? তুমি কি রোজই আসবা নাকি?”
“আসলে সমস্যা আছে?”

কোনো উত্তর দিল না মারজান। সায়মার কথা ভাবছে ও। ইজানের সাথে ও চলে গেলে সায়মাকে তো রোজ একা ফিরতে হবে।

“রোজ হয়ত আসতে পারব না, কিন্তু হুট করে যেকোনো দিন এসে পড়তে পারি, রেডি থাকবা” মারজানের উত্তর না পেয়ে নিজের উত্তরটা দিয়ে দিল ইজান।

ফাস্টফুড শপটা বেশ বড়, তাও প্রচন্ড ভীড়। কাছেপিঠের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একসাথে ছুটি হওয়ার জন্যই বোধহয়। টু সিটার টেবিল ফাঁকা পেতে পাক্কা দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো ওদের। এর আগে এমন সময়ে কখনো এখানে আসেনি ইজান, তাই এতো ভীড় হওয়ার সম্ভাবনাটা মাথায় আসেনি ওর। তাই ভাবছিল মারজান যেহেতু বেশ ইন্ট্রোভার্ট, এত ভীড় দেখে না বিরক্ত হয়। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, মারজানকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। দুচোখে ফুটে ওঠা উজ্জ্বলতা সেটা জানান দিচ্ছে ভালোভাবেই। বেশ আনন্দ নিয়ে এদিকওদিক তাকাচ্ছে ও।

ঠিকই ভেবেছে ইজান। মারজান ভীড় দেখলে আগে প্রচন্ড বিরক্ত হতো, তবে এখন ওর ভালোই লাগে। এই যে এতগুলো ছেলেমেয়ে ফাস্টফুড খাচ্ছে, এদের পর্যবেক্ষণ করে বেশ মজা পাচ্ছে সে। একবার চোখ বুলিয়েই বুঝতে পেরেছে, সঙ্গ আর খাওয়ার থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাবারের ছবি আর নিজেদের সেলফি তোলার দিকেই বেশি মনযোগ সবার।

“এই! কী করছো তুমি! এভাবে মানুষের খাওয়া দেখে কেউ?” চাপা কণ্ঠে বলল ইজান।

“হি হি। মজা লাগছে কিন্তু দেখতে। তুমি খেয়াল করে দেখো” ইজানের রীতিমতো আফসোস হলো এত সুন্দর হাসিটা দেখতে পেল না বলে।

“হে খোদা, কোন যুগে এসে পড়লাম আমি!? বউ বরকে অনুমতি দিচ্ছে অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর জন্য। ইশ! কী কপাল আমার!”

ভ্রুকুটি করল মারজান। “আমি মোটেও সেটা বলিনি”
“তাহলে কী বলেছো মেরি জান?”
“কিছু না। হইসে, তোমার দেখা লাগবে না”
“আচ্ছা, আগে মেনু দেখো আর অর্ডার দাও” মুচকি হেসে বলল ইজান।

“তোমার যা ইচ্ছা দাও। আমি সবকিছুই খাই” মারজানের মন এখন মোটেই মেনুর দিকে নেই।
“এখানকার সাবটা বেশ মজার। দিব?”
“দাও। আরেকটা কিছুও দিও। মানে দুইজনের জন্য দুইটা আইটেম”

“কেন?” অবাক হয়েছে ইজান।
“দুইটা আইটেম টেস্ট করা হবে, তাই” এত সহজ জিনিসটা বুঝোনি, এমন একটা দৃষ্টি দিল মারজান।

অর্ডার দেয়ার পর মারজানের দৃষ্টি অনুসরণ করল ইজান। সদ্য প্রবেশ করা এক জুটির দিকে বর্তমান মনযোগ মারজানের, গভীর চোখ দিয়ে চলছে নিরীক্ষণ। দুজনের কারো বয়সই পঁচিশের বেশি হবেনা। ওদের সেম কালারের ড্রেস, কাপল ফোন কাভার আর জুয়েলারি যেন সদলবলে ঘোষণা দিচ্ছে, আমরা বিএফ-জিএফ বুঝেছো? আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ম্যাচিং এর মাত্রা পৌঁছেছে চুলেও। চুলের কিছু নির্দিষ্ট অংশে গ্রে কালার ডাই করেছে দুজনেই। অদ্ভুত! এই নতুন ফ্যাশনটা মাথায় ঢোকে না ইজানের। বুড়ো হয়ে চুল পাকলে সেগুলো আবার কালো করবে আর এখন জোয়ানকালে বুড়োদের মত সাদা করে রেখেছে! আল্লাহর দেয়া কোন কিছুই কি ভালো লাগে না মানুষের?

মারজানের কথামতো একটা সাব স্যান্ডউইচ আর একটা নাগা বার্গার অর্ডার দিয়েছে ইজান। ওর কথামতো অর্ধেক করে সার্ভ করেছে ওরা। খেতে খেতে ইজান আরও একবার মারজানের চকচকে চোখজোড়া খেয়াল করল।

“কী ব্যাপার বলোতো, খুব খুশি খুশি লাগছে তোমাকে?”

খেতে খেতে আরেকদফা চারদিকে চোখ বোলাচ্ছিল মারজান। মানুষ পর্যবেক্ষণ শেষে এবার সে দেখছে কে কী খাচ্ছে। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই সাব স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। ঠিকই বলেছে ইজান, এটাই এখানকার মোস্ট পপুলার আইটেম। কয়েকজন বার্গার আর হাতেগোনা এক দুইজন শর্মা। ইজানের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকাল মারজান, “কিছু বললা?”

“হুঁ! জায়গাটা পছন্দ হয়েছে তোমার?”

“খুউউব! আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য তোমাকে এত্তগুলা থ্যাংকস। সায়মা বেদ্দবটা এখন আমার সাথে কোথাও যেতে চায় না”

“তাই নাকি! ঠিক আছে, মাঝেমধ্যে এখানে আসা যাবে তাহলে”

“আরে না! আর লাগবে না। আমি মোটামুটি ডিটেইলসগুলো মাথায় নিয়ে নিয়েছি। এতেই হয়ে যাবে”

“মানে কী!” হতভম্ব দেখাচ্ছে ইজানকে।

“বুঝোনি? এই ফাস্টফুড শপটা দারুণ, ইয়াং ছেলেমেয়েদের কাছে বেশ পপুলারও। এই এরিয়া নিয়ে কোন কিছু লিখলে অনায়াসে এইখানে কাপল মিট করানো যাবে”

পাক্কা ত্রিশ সেকেন্ড মুখটা ঈষৎ হা করে মারজানের দিকে তাকিয়ে থাকল ইজান। চোখ পিটপিট করল বারকয়েক। তারপর হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে নিজের এসপ্রেসো ডাবল ডিলাইটের স্ট্রতে টান দিল ও। তুই একটা হোপলেস ইজান! এত দিনে তোর এইটুক বোঝা উচিত ছিল শালা!

চারিদিকের ডিটেইলস দেখা শেষ হলে মারজান মনযোগ দিল মেনুতে।

“এখানে কী দেখছো?” জিজ্ঞাসা না করে পারল না ইজান।
“খাবার আইটেমগুলোও দেখে রাখা দরকার। কোনো চরিত্রের এক্সট্রা অর্ডিনারী রুচি হতে পারে, এক্সেপশনাল খাবার অর্ডার করানো লাগতে পারে তার জন্য”

ও আচ্ছা, বুঝলাম! এমন ভঙ্গিতে উপর নিচে মাথা দোলাল ইজান। চোখ মুখের যায়গায় তিনটা লম্বা দাগ টানা ইমোজিটার মতো ফিলিং আবারও অনুভব করছে ও। কবে যে এই ইমোজির পরিবর্তন হবে আল্লাহ মালুম!

রাফায়েত ভাইয়ের বলা কথাগুলো মনে পড়ল ইজানের। হুমম, পরিবর্তনটা বরং নিজে থেকেই আনার চেষ্টা করা যাক।

“আমি তোমার ‘অসমাপ্ত কান্না’ পড়েছি কালকে”
“রিয়েলি? ওয়াও! কেমন লেগেছে?” চোখ তুলল মারজান, সেখানে উত্তেজনার আভাস।

“অনেক ভালো লেগেছে, একেবারে দশে দশ। কমেন্টগুলোও পড়েছি আমি। উফ! এত কষ্ট দাও কেন পাঠকদের? ভার্চুয়ালি বন্যা হওয়া সম্ভব হলে পাঠকদের চোখের পানিতে তোমার পেইজ খড়কুটোর মতো ভেসে যেতো। এখনও মনে পড়লে কষ্ট হচ্ছে আমার”

“হুমম, ওইটা আসলেই অনেক হার্টব্রেকিং ছিল। আমি নিজেও লেখার সময় কাঁদসিলাম”
“লেখকেরাও কাঁদে!?”
“কেন? কাঁদবে না কেন? তাদের মনে কি দয়ামায়া নাই নাকি?”
“কী জানি! আমি যাকে চিনি, তার মধ্যে আছে বলে তো মনে হয় না” বিড়বিড় করল ইজান।
“কী বললা?”
“না, কিছু না”
“উসামাকে কেমন লেগেছে?”
“অতি জঘন্য। খুন করতে মন চাচ্ছিল ব্যাটাকে”
“আচ্ছা! দ্যাটস গুড”

এরপর বাকি সময়টুকুতে উপন্যাসের আর কোন কোন জিনিস ভালো লেগেছে, কোন কোন জিনিস খারাপ লেগেছে, সেগুলো সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিল মারজান।

***
“আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবা”কলিংবেলে চাপ দিয়ে বলল মারজান।

“সেটাই ভেবেছিলাম আমিও। কিন্তু যেটা দেখতে গিয়েছিলাম, সেটা যে দেখতে পাইনি”

দরজাটা ভেতর থেকে খুলে গেলো এই সময়। পরিচারিকা ওদের দেখে ভেতরে চলে গেল।

“মানে?” ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল মারজান।
“তোমার ঘরে চলো, তারপর বলছি”

“আমার ঘরে যাওয়া লাগবে কেন? এখানেই বসো। এই ঘরটা ঠান্ডা বেশি। ঘেমে গেছো, আরাম লাগবে” ড্রয়িং রুমের ফ্যানের স্যুইচ অন করল মারজান।

“কই? এর আগে তো তোমার ঘরে গরম বেশি মনে হয়নি আমার”

“আমার থেকে বেশি জানো তুমি? চুপচাপ বসো। আমি আম্মুকে বলছি তুমি এসেছো, ঠান্ডা কিছু দিয়ে যেতে”
ইজানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে গেল মারজান। ব্যাপারটার আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকল না ইজানের, সেটা বলাই বাহুল্য। বউয়ের হুকুম বলে কথা, অগত্যা বসে পড়ল ইজান। পকেট থেকে ফোনটা বের করে আপাতত মনযোগ দিল তাতে।

এভাবেই আব্দুল মান্নান তালুকদারের অকপটে সত্যি কথা বলা কন্যা নিজের অজান্তে মনে এক আর মুখে আরেক কথা বলতে শুরু করে দিল।

ঘরে এসে তড়িঘড়ি করে দরজার দিকে তাকাতে তাকাতে বোরকা না খুলেই চেঞ্জ নিয়ে বাথরুমে দৌড় দিল মারজান। পাগলটাকে বিশ্বাস নেই, কথা না শুনে ঘরে চলেও আসতে পারে। এই গরমে বোরকার নিচে ঘেমে নেয়ে উঠেছে ও। ঘামে ভেজা মুখটা কালচে আর বিশ্রী দেখাচ্ছে। এই অবস্থায় ওর সামনে বোরকা খোলা যায়? ছি!

***
প্রায় বিশ মিনিট পর মারজান যখন ড্রয়িং রুমে ফিরে এলো, ইজান তখন শাশুড়ি মা’য়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। টি টেবিলের ওপর শরবতের খালি গ্লাস, ট্রেতে প্লেটের ওপর পিঠাগুলো স্পর্শ করা হয়নি।

ইজানের দৃষ্টি অবধারিত ভাবেই গিয়ে পড়ল মারজানের ওপর। মাত্র গোসল করা স্নিগ্ধ চেহারা, ভেজা চুলগুলোর কয়েকটা লেপ্টে আছে কপালে। মারজান এসে ইজানের সামনের সিঙ্গেল সোফাটায় বসতেই হাঁ হাঁ করে উঠলেন মনোয়ারা।

“দেখেছো বাবা, দেখেছো? সাধে বলছিলাম ওরে নিয়া পারি না আমি। এই এত্ত বড় হইসে, এখনো চুল মুছতে শিখেনাই। তুমি বসো বাবা, আমি একটা শুকনা গামছা নিয়ে আসি”

কথাটা ভুল বলেননি মনোয়ারা, আসলেই ভালো করে চুল না মুছে চলে এসেছে মারজান। ইজান ওর জন্য অপেক্ষা করছে, তাই খুব তাড়াতাড়ি গোসল সেরেছে ও।

“ডিসিশন ফাইনাল! এরপর তোমাকে নিতে গেলে অন্য কোথাও আর যাব না, ডিরেক্ট বাসায় চলে আসব। কিছু খেতে ইচ্ছে করলে ফুডপান্ডায় অর্ডার করে দিব, ব্যস!” ইজান নিজের সোফা ছেড়ে উঠে এসেছে পাশের সোফাটায়, মারজানের কাছাকাছি। বসতে বসতেই বলল কথাটা।

“না না প্লিজ, এমন কথা বইল না। আমি তোমার সাথে নতুন নতুন যায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম, সেগুলো তো মাঠে মারা যাবে” দুচোখে রাজ্যের হতাশা নিয়ে বলল মারজান।

“এঁহ! নিজের ইচ্ছা পূরণ করা খালি। আর আমি যে জন্য ছুটে আসি, সেটাই যে পূরণ হয় না, তার বেলা?”

“কী পূরণ হয় না? ওয়েট, বাসায় ঢুকার সময়ও তুমি এই কথা বলেছিলা। তখনও বলোনি এর মানে কি”

মারজানের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো ভাবে সরিয়ে দিল ইজান।

“অন্য কোথাও গেলে যে আমি আমার বউয়ের মুখ দেখতে পাই না”

রক্ত জমল মারজানের দুগাল সহ কানের উপরিভাগে। সেটা দেখে মুগ্ধ নয়নে মুচকি হাসল ইজান।

“আ-হা! তোমার লেখার ভাষায় একেই বুঝি বলে ‘লাজরাঙা চেহারা’?”
“তোমার মাথা” বলেই মুখ ঘুরিয়ে হাসি লুকাল মারজান।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here