[নিজ দায়িত্বে পর্বটি পড়বার অনুরোধ রইলো]
তনুশ্রী♥পর্ব_১০
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
অন্ধকার রাত! নিশীথের অন্ধকারে মোড়লপারা নিরব নিস্তব্ধ! লতিফার ঘুম ভেঙে যায়। গুদাম ঘরের টিনের বেরায় কেউ খুব লাঠিপেটা করছে। তার ঝনঝনে আওয়াজ ভেসে আসে লতিফার কানে। তিনি হকচকিয়ে বিছানা ছাড়েন। মাথা ভিরমি খায়। অনেকটা ঘুমের ঘোরেই তিনি উঠেছেন। তাই মাথা ঘুরে ওঠে। মাথা ধরেই এগোয় দরজার দিকে। দরজার কিঞ্চিৎ খুলে বাইরে উঁকি দেন লতিফা। মোটা চামরার চিকন,মোটা বেশ কয়েকটা লোক! বুকে হাত গুজে দরজা বন্ধ করে দেন লতিফা। দরজা খোটখোটের শব্দ কানে আসে মুগির। ঘেঁটু ভাঙচুর করছে! মুগি এগোয় ঘরের দিকে। কথামতন শব্দতেই বেড়িয়ে আসা উচিত লতিফা। কিন্তু আজ লতিফা ভয়ক্লিষ্ট! বারবার তনুর চাউনি মনে পড়ছে তার। কলিজা শুকিয়ে কাঠ! ভয়ে আকৃষ্ট ব্যাক্তি আর যাই হোক লড়াইয়ে নামতে পারে না। লতিফা দরজার বা পাশে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ায়। বুক কোন মেশিনের মতো ওঠা নামা করছে। মনে পড়ছে ইশার সতর্কবার্তা! মগি দরজায় লাঠির আঘাত করে। লতিফা পিলে চমকানো মুখ নিয়ে তাকান দরজায়। হাত পা কেমন থরথর করে কাপছে। তিনি ছুটে যান পাশের ঘরে। বিছানার নিচ থেকে ছুড়ি আর বের করেন রাম দা। রামদা তোলার শক্তি হারিয়েছেন লতিফা। নিজের সবটা দিয়েও আঁকড়ে ধরে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে। ছুড়ি ফেলে দু হাতে রামদা তোলার চেষ্টা করেন লতিফা। এ ঘরে চলে আসেন। মুগি এলোপাতাড়ি পিটিয়েই যাচ্ছে দরজায়। দরজা প্রায় ভাঙ ভাঙ অবস্থা। এই বুঝি ভাঙে এমন। লতিফা ঘরের বিদ্যুৎতিক লাইট নিভিয়ে দেয়। তিন মাস হলো মোড়লপাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে! মাথার ঘোমটা বেশ করে নামিয়ে দরজায় একপাশে দাড়িয়ে থাকেন। বাইরে মগির আওয়াজ,
– ওস্তাদ! এই ন*টি তো বেরোয় না।
স্তব্ধ হয় আজিদের কদম ঘেরা বাড়ি। ঘেঁটু দলবলের হাটার আওয়াজ ভেসে আসে শব্দ করে। লতিফা নিজের বুক খামচে ধরে। বরংবার শুকনো ডোক গিলছেন তিনি। বাড়ির বাইরে কদমের গুল ছিলো! মুগি সেখান থেকে গিয়ে সবাইকে গুল ধরতে বলে। ঘেঁটু পিছিয়ে যায়। গুল নিয়ে সকলে দৌড়ে দরজায় ভারি আঘাত করে। বিকট শব্দ কানে বাজে! লতিফা বুক ধরফর করছে। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে রামদা তোলেন। পরপর দুবার এমন করে ওরা। লতিফার মন গাইছে,এই বুঝি ভেঙে গেলো। তৃতীয় বারে ভেঙে যায় দরজা। সকলে হুমড়ি খেয়ে গুলসমেত ঘরে পড়ে যায়। লতিফা রাম দায়ের ব্যাবহার ভুলে বাইরে ছুট দেন। ঘেঁটু জোরে বলে ওঠে,
– ধর ওরে।
লতিফা উঠোন পেড়িয়ে নিরুপায়। আর যাওয়া সম্ভব নয়। কারন দরজা লাগানো। সদর দরজা দিয়ে সকলে বেড়িয়ে আসে। লতিফা শুকনো ঠোক গিলে আবারো সোজা করে রামদা। দলবল সোজা এসেই আক্রমণ করে লতিফাকে। হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই পেটাতে থাকে বেধোরে! লতিফা গলাফাটা চিৎকার ছুড়ে গ্রামবাসীকে।’ বাচাও বাচাও’ চিৎকারের লহুড়ি খেলতে থাকে আজিদের কুটুরি। সাথে হাঁক ছাড়ে বাড়ির মুরগীও। এই লড়াইয়ে বোধহর তারাও যোগদান করেছে। লতিফার সাথে তারাও চেঁচাতে ব্যাস্ত। একের পর এক লাঠির আঘাতে শরীরে মাংস রক্তাক্ত লাল হয়ে ওঠে লতিফার! ঝুলে পড়েছে কিছু অংশ! নিকৃষ্ট হৃদয়হীন ঘেঁটু আর মুগি থামে না। একজন একলা মহিলাকে পেটাতে থাকে কাপুরুষের মতোন!
রাম দা হাতখুলে পড়ে যায়। ঘেঁটু জোরে আঘাত করে লতিফার মাথায়। লতিফা শেয়ালের ন্যায় হাঁক ছোড়ে ‘বাচাও’! গ্রামের কেউ এগোয় না। তারা আজ থেকে নয়, বরং তিথির মৃত্যুর পর থেকে এ বাড়িকে দশের কেউ বলেই মানেনা। আর মোড়লবাড়িতে মেয়ের বিয়ে হয়েছে শুনে তো আরও তাদের হিংসা,রাগ বেড়েছে!
আজিদ টিনের দরজার উপর থেকে ঝাপ দেয়। ছুটে আসায় সে ক্লান্ত! লাফ দেয়ার সময় টিনে বেধে পায়ের গোসতো খোশে পড়ে। টিনের আঘাতে কেটে যায় অনেকটা যায়গা। চামড়ার অংশ আটকে থাকে ধারালো টিনের মাথায়।
তিনি ক্ষত পা নিয়ে নিজের পিঠ এগিয়ে দেন। কয়েকটা বাড়ি এসে পড়ে আজিদের পিঠে। লতিফা রক্তাক্ত মুখ নিয়ে তাকায় আজিদের দিকে। মুচকি একটা হাসি হেসেই হেলিয়ে নেয় মুখ! সে হাসিতে হয়তো ঘৃনা ঝড়ছিলো। ঘেঁটু আজিদকে লক্ষ করতেই থেমে যায়। সাথে বাকি সবাই! শেষ সুযোগের ন্যায় মুগি বলে,
– আজিদ ওঠো নইলে…
কথা শেষ হওয়ার আগেই পড়ে থাকা রামদা তুলে আজিদ এক কোপ বসিয়ে দেয় মুগির মাথায়। দূরে ছিটকে পড়ে মুগি। কানের কয়েক ইঞ্চি উপরেই গেড়ে গেছে বিশাল রামদা। গলগলে তাজা রক্ত কান বেয়ে পড়ে। আজিদের আঙিনা রক্তে ভিজে ওঠে। মুগি গালি দিতে দিতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। ঘেঁটু অগ্নিমূর্তি ধারন করে এগিয়ে যায়। নিরস্ত্র আজিদকে এক লাথি দিয়ে ফলে দেয় দূরে। লতিফা একবার তাকান চারপাশে। শরীর ব্যথায় নিমজ্জিত! উঠে দাড়িয়ে পা ভাঙার মতন হেটে দরজার সামনে চলে যায়। যেখানে মুগিরা অস্ত্র রেখেছিলো সেখান থেকে তুলে দেয় ছুড়ি। অন্ধকারে কারো নজরে পড়ে না। ঘেঁটুসহ এখনো দুজন এলোপাতাড়ি ভাবে পেটাচ্ছে আজিদকে। লতিফা পেছন থেকে সিদবিধ ঘেঁটুর পেটে ছুড়ি বসিয়ে দেয়। বুক চিড়ে রক্ত গড়ে পরে পেট বেয়ে। মুখ দিয়ে গ্যা গ্যা জাতিয় কিছু উচ্চারণ করে ঘেঁটু। হাত অবস হয়ে আসে লতিফার। ঝনঝন আওয়াজ তুলে মাটিতে পড়ে যায় ছুড়ি। ঘেঁটু পাশ ফিরে লতিফাকে নানাভাবে আঘাত করতে থাকে। বাকি দুজনের একজন মুগির ভাই ছুড়ি তুলে আজিদের বুকে দেয় গেড়ে! রক্তাক্ত হয়ে ওঠে আজিদও। ছুরি সোজা হৃৎপিণ্ড বরাবর লাগে। মুহুর্তেই আজিদ আজরাইল সম্মুখে নিজ চোখে প্রদক্ষিণ করে। লতিফার পুরো শরীর অবশ! হাত পা অদ্ভুতভাবে কাপঁছে। মাথা পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে লতিফার। চোখ ক্রমশ ঘোলাটে রুপ নিচ্ছে। ঘেঁটু শেষ আঘাত ঘারে করে মাটতে পড়ে যায়। লতিফার পুরো উঠান হয়ে ওঠে লাল! তরল লাল রঙ যেন সবে করা হলো এমন। রক্তের মাঝেই বসে পড়েন লতিফা। মুগির ভাই ছুড়ি ফেলে ধেয়ে আসে ঘেঁটুর কাছে৷ ‘ভাই,ওস্তাদ বলে ডাকে হাজারোবার। অথচ কিছুক্ষণ আগেই তার নিজ ভাই দুনিয়া ত্যাগ করেছে। ঘেঁটু মরার আগে খুব ছটফট করেছে। লতিফার বড়বড় কালো চুল মাটিতে গড়ছে। রক্তে চুবে রয়েছে চুলের মাথা। মুগির ভাই রাগ নিয়ে উঠে দাড়ায়। আরেকজন এক কোনায় দাড়িয়ে। হাতে ছুড়ি, লতিফার অবময় দেখে এগোয় মুগির ভাই। শক্তহাতে মুঠো করে নেয় চুল! কোন প্রতিক্রিয়া হয়না লতিফার। সে আজ বোবা বোনেছে! জ্ঞানশূন্য মানব লতিফা। ছেলেটি খুব বাজেভাবে লতিফার হাতের চামড়া ছিড়ে নেয়। হাতের পুরো অংশ হয়ে ওঠে লাল। লতিফার তবুও কোন প্রতিক্রিয়া নেই! ছেলেটি অসংখ্য আঘাত হানে লতিফার পিঠে। চাঁদের উঁকি তখনি! আলো কিছুটা পরছে চারিদিকে। কোমরের চামরা চিটকে দূরে পড়ে যায়। মৃত্যু হয় নৃশংস লতিফার! শুধু মুখ দিয়ে একটি বাক্যই উচ্চারণ করেছিলেন সময়ের শেষ পথে,
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ! ‘
শেষ নিঃশ্বাস বেরোতেই রক্তের নদীতে ঢলে পড়ে লতিফা! রক্তে মেখে যায় পুরো শরীরে!
সকালের আলো ফুটেছে। বইছে হিমেল হাওয়া! আকাশে মেঘ কালোরুপ ধারন করেছে। “গ্রীষ্মের দিন শেষ,বর্ষার বাংলাদেশ” তা প্রথম থেকেই টের পাওয়াতে গভির ব্যাস্ত মোড়লপাড়ার আকাশ। কালো মেঘ সা সা বাতাসে উড়ছে! রক্তাক্ত লাল রং গাঢ় খয়ারিতে জমাট বেধেছে। যেন খয়ারি রঙা মেঝে বানিয়েছে আজিদ উঠানে। মরদেহ হিম শীতল! একধ্যানে সবগুলি তাকিয়ে কোন না কোন দিকে। আশেপাশের মানুষের এখন আর অভাব নেই। সৌজন্যে নিয়ে দাড়িয়ে পাড়াপ্রতিবেশী। রাতের চিৎকার যেন কারো কানেই যায়নি। রাতে মুগির ভাই সহ ছেলেটি দরজা খুলে যায়। আর ভোর হতেই ভির জমান এনারা। লোক পাঠানো হয়েছে মোড়লবাড়িতে! আর পুলিশ স্টেশনে গেছে কিছু লোক। সবাই উল্টাপাল্টা কথা বলছে। দোষ চাপানো হচ্ছে আজিদের উপর। কারন,আজিদ আর আর ঘেঁটুর ভালো মিল ছিলো। আচ্ছা, তনু এসব সইতে পারবে তো?
#চলবে…
প্রথমত,আজ কারেন্ট নাই! ফোনেও চার্জ নাই।কাল বড় করে দেবার চেষ্টা করবো। আর এই মোড় থেকেই শুরু হবে রহস্যের সমাধান।