তনুশ্রী♥পর্ব_৮
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
ইশা জঙ্গলের সরু পথ বেয়ে হেটে যায়। মূল রাস্তা ধরলে যে সমস্যা হবে তা উনি ভালো মতনই জানেন। ইশয়াখের লোকের অভাব কখনোই হয়না। যেখানে সেখানে লোক লাগিয়ে রাখে। এখানে যে ইশা এসেছে তা যদি ইশয়াখ জানতে পারে তাহলে জ্যান্ত মাটিতে পুততেও এতটুকু বাধবে না। মাথায় মোটা করে ঘোমটা টানানো। তিনি লতিফার বাড়ির সামনে এসে ঘোমটা সরান। ভেতরে ডুকেই ডাকতে থাকেন,
– ননদ! আছো?
লতিফা দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। আজিদ কাজে গেছে। কাজ বলতে গোয়ালাদাপূরের ডাক্তারখানায়। লতিফা ইশাকে দেখে চমকালেন না। এটা যেন অহরহ ঘটে! লতিফা বাইরে আসতেই ইশা জড়িয়ে নেন লতিফাকে। কেঁদে ওঠেন উনি,
– ননদ গো পালাই যাও তোমরা। ইশয়াখ এবার তোমাদের সই করবে! ‘
লতিফা হোঁচট খাওয়ার ন্যায় পিলে চমকালেন। বললেন,
– ক্যান হঠাৎ?
– আজ বাড়িতে তূর আর মোড়ল আসছিলো। আপনাকে আর আজিদকে মারার কথা হইতাছে। পালান কোন একখানে! ‘
– সেদিন ওই ব্যা*র ছাওয়ালরে যদি মারতে পারতাম তাইলে বুকের আগুন কমতো! ‘
লতিফা স্বরন করে সেই রাত…
_____২২ শে নভেম্বরের সেই রাতে______
তনুর বিয়ে কালকে! আজিদ ছোটাছুটি করতে ব্যাস্ত! ইশা আর লতিফা গুদাম ঘরের বসেন। রাগে ইশার চোখ বেয়ে আগুম ঝড়ছে। কারন? কারনটা হলো ইশয়াখ! তার জন্য নিজের স্বামী কোথায় তা জানেন না ইশা। আদেও বেঁচে আছে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। রাতের পর রাত মোড়ল মইনুলের হাতে তাকে হতে হয় ধর্ষিতা! কতোই না কটু কথা শুনতে হয় তাকে। মইনুল মোড়ল প্রায়ই যান গোয়ালাদাপুর। ইশয়াখ কখনোই মইনুলকে আটকাননি! পারলে নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েছে। বিয়ের দিন লতিফার বাড়িতে এসে ইশা নিজেই সবটা বলতে লাগলেন লতিফাকে। যদিন ইশয়াখ তাকে লতিফার বাড়িতে তনুর বিয়ে উপলক্ষে আসতে দিলো সেদিনই ইশা সবটা খুলে বলেন লতিফাকে। সে কিভাবে তনুকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন,
কুরআন তেলাওয়াত করেই তনুকে মিথ্যে বলেন ইশা। বলেছিলো সে ইশয়াখকে ডাকতে যাচ্ছেন। এই বলে তিনি ইশয়াখের ঘরে যান। ইশয়াখ তখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তিনি ওই ঘুমন্ত ইশয়াখের মুখ দেখে একগাদা কটুক্তি করে গালি ছুড়ে মারে। কারন ওই রাতেই ইশয়াখ তনুর উপর হামলা করতে ওর ঘরে গিয়েছিলো। ইশা তনুর গায়ে চিমটি কেটে কেটে সজাগ রেখেছেন পুরো রাত। আর ইশা বেঘোরে ঘুমোনোর নাটক করেছে। পারলে ওই মুখে তিনি থুথু ছেটান! কু*র থেকেও অধম একটা! তিনি আসতে করে ইশয়াখের ঘরের আরেকটা বাইর হওয়া দরজা খুলে দেন। আর সামনে রাখেন মদের বোতল! তিনি জানেন ইশয়াখ মধ্যরাতেও মদ দেখলে ঘুম ছেরে খেতে শুরু করে দিবে। আর তো সকাল। তিনি ইশয়াখকে ডেকে চলে যান। তনু তখন তাবিজ চাচার সাথে কথা বলছিলো। ইশা রান্নাঘরে চলে যান রান্না করতে। যথানিয়মে নির্দিষ্ট টাইমে তনু ইশার কাছে চলে যায়। ইশাও বুদ্ধি করে তনুকে পাঠিয়ে দেয় ইশয়াখের রুমে। যদি এইবারে তনু পালিয়ে না যেতে পারে, তাহলে তাকে এখানে থাকলে কয়েকশ আর ধর্ষিতা হতে হবে। আর বাইর দিয়ে পাঠালে ইশার খুন নিশ্চিত! আর বাল্য বিবাহের একটা কারন তো আছেই! তনুকে পাঠানোর পর ভেসে আসে তনুর চিৎকার, ‘ মামী, মামী ‘ বলে শ খানেক ডাক কানে আসে ইশার। তিনি এগোয় না! দরজার বাইরে দাড়িয়ে শুধু চোখের পানি বির্সজন দিচ্ছিলেন উনি। কিছুক্ষণ পর থেমে যায় চিৎকার! ইশার বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিতেই দেখেন তনু খোলা দরজার সৎ ব্যাবহার করেছে। পালিয়ে গেছে তনু! ইশা হুমড়ি খেয়ে ঘরে ডোকে। ঘরে রক্তের ছাপ! ছোট্ট পায়ের ছাপে স্পষ্ট রক্তের ছাপ আর মেঝেতে রক্তমাখা কাঁচের টুকরো! তিনি ওই দরজা দিয়ে সোজা বাইরে চলে যান। খালি হাতে ইশয়াখকে ফিরতে দেখে তিনি প্রানভরে নিশ্বাস নেন। ইশয়াখের ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেই বাড়িতে মোড়ল সহ ওনার দলবল কে দেখে কলিজা কেপে ওঠে ইশার। ওরা সকলে ইশয়াখকে বলে চলে যায় মাঠ রাস্তায়! সবটা বলে দিয়েছিলো ইশয়াখ!
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন ইশা সহ লতিফা। হঠাৎ তিনি গুদাম ঘরের চকির নিচে রাখা রাম দা বের করে। ছুটে বাইরে চলে আসেন ইশা। জম্গলের পথ বেয়ে হাটা শুরু করে। লতিফা হকচকিয়ে ওঠেন ইশার এমন ব্যাবহারে। দামামা বাজছে ইশার মাথায়, খুন! তার মনে বাজছে যুদ্ধের দামামা। লতিফা পিছু ছোটে ইশার। মাঠ পেড়িয়ে তিনি বখরার মাঠে চলে যান। লতিফার হাজার ডাকেও তিনি থামেন না। ক্রোধ গেড়ে বসেছে ইশার মাথায়। ভাগ্যবসত ইশয়াখেরও দেখা পেয়ে যান তিনি। পেছন থেকে রাম দায়ের এক কোপ মারেন। মাথার চুল বেয়ে তা পাশ কাটে। ইশয়াখ ঘোর চোখে পেছনে তাকাতেই কপালে আরেক ঘা দেন ইশা। অন্ধকারে শুধু একটু অবময় দেখে ইশয়াখ ঠাওর করতে পারেনা কে এই লোক!
তখনি পেছন থেকে লতিফা ইশাকে টেনে নিয়ে আসেন। বখরার পুখুর থেকে মাথায় আঝড়ে পানি দেন ইশার। খ্যান্ত হয় ইশা। ইশয়াখ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। ক্ষন সময় বাদে তার দলবল খুজতে এসে নিয়ে যায় আবার তাকে ডাক্তারের কাছে। তাদেরই আস্তানায়! ইশাকে নিয়ে মাঠ দিয়ে চলে আসেন লতিফা। বাড়িতে এনে লতিফা চুপিসারে রাম দা তনুর বিছানার তলে রাখেন। রক্ত মাখা রামদা দেখে ফেলে তনু!
___________
লতিফার কথায় রেগে ওঠে ইশা,
– মারতে তো আমিও চাইছিলাম। আপনিই তো আটকালেন। নিয়ে আসলেন এখানে। যদি সেদিন ওরে মারতাম তাইলেই পড়ান জুরাতো! ‘
লতিফা মাথা নিচু করে নেয়। ইশা আম্বানি আবারো বলেন,
– ভালোয় ভালোয় বলছি চলে যান কোথাও। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। ‘
– আমি না ইশয়াখের বোন? ও আমারেরও মারতো?
– ওই নটির পুলা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনারা পালান! ‘
– কিন্তু.. ‘
– আমি কইতাছি পলান! আপনিই একমাত্র আমার ভরসা। এভারে মারতে দিবো না আমি আপনাকে। আজিদ থাকলে থাক আপনি পালান। পারলে তনুকে নিয়ে পালান! তূর একটুও ভালো না। ও আসছিলো ওই বাড়িত। তনুর বিপদ ঘনিয়ে এসেছে পালান আপনারা! ‘
চুপ থাকেন লতিফা। এভাবে পালাতে তিনি কখনোই চায়না। আর সমস্যা আজিদও। ইশা তাড়াহুড়োয় বলে,
– আমি আসি। ননদ গো পালাইও!
বলেই বেড়িয়ে পড়ে ইশা। সূর্য হেলে পড়েছে। যোহরের ওয়াক্ত শেষ! ছায়া দ্বীগুন হয়েছে। ইশার আজ যোহরের নামাজ হলো না। তিনি আক্ষেপে হেটে চলেন আম্বানি বাড়ির দিকে। নৌকা পেড়িয়ে চলে যান গোয়ালাদাপূর। ঘাট থেকে কয়েক ফুট দারেই আম্বানির বিশাল বাড়ি
‘আম্বানি’। তিনি ধিরে ভেতরে ডোকেন। বাড়ি কলাহল মুক্ত। এরমানে মোড়লবাড়ির সকলে চলে গেছে। ইশা আস্তে করে নিজ ঘরে চলে যায়। কিন্তু ঘরে যে ইশয়াখ বসে আছে তা কি করে জানবে ইশা? ইশয়াখ বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। বলে ওঠে,
– কোথায় গিয়েছিলে?
স্বরে রাগ স্পষ্ট। কেঁপে ওঠেন ইশা!
_____________
সন্ধার আগ মুহুর্ত! তনু জানালার বাইরে তাকিয়ে। সেই সকাল থেকে তার মনে কাটার মতন কিছু বিঁধছে। তূর তার সাথে এমন কেন করলো? সেতো কোন কিছুতে অবগত নয়! তাহলে কেন তাকে এভাবে ছুড়ে ফেললো? এই প্রশ্ন কটিই কারন বিষ কাঁটার। জানালার বাইরে তাকিয়ে রয় তনু। বট গাছের পাতার উপরে সূর্যের লালাট আভা পড়েছে। সবুজ লালের সংমিশ্রণে রঙ হয়েছে কেমন!
ঘারে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে ওঠে তনু। ঘার ঘুড়িয়ে দেখে তূর দাড়িয়ে পেছনে। তনু আবারো বাইরে তাকায়। তূর পেছন থেকে জড়িয়ে নেয় তনুকে। তূরের বুক তনুর পিঠে ঠেকানো।
– পিচ্চি বউটা বুঝি রাগ করেছে? ‘
তনুর চুপ থাকায় আবারো তূর বলে,
– আই’ম সরি তনু।
তনু অতি তারাতাড়ি পেছনে ফেরে। কোমড় জড়িয়ে নেয় তূর। অবাকে বলে তনু,
– সরি জিনিসডা আবার কি? আর আ..আ কি কইলেন? ‘
– সরি অর্থ হলো আমার ভুলটুকুটি মাফ করে দাও। আর আ আ কি জিনিস? আই এম! একসাথে বলে আই’ম! ‘
– এইটা ইংরাজি ভাষা তাইনা?
– ইংরাজি না ইংরেজি ওটা!
– ওই একই!
– একই হয় ক্যামনে?
– আপনিও তো দেখি আমার মতো কথা কন!
– আজ বললাম! তুমিতো আমার মতো বলার চেষ্টাও করো না। ‘
– আজ থেকে করবোনি।
– সত্যি?
অবাক ভাবে বলে তূর। তনু বলে,
– সত্যি সত্যি সত্যি!
তনুর মনে পড়ে সে রেগে ছিলো। মুখ বেজার মতো করে নিচু করে নেয় তনু। তূর তা বুঝতে পারে,
– তখন ওরকম রাগ দেখাতে চাইনি।
– তাইলে দেখাইলেন ক্যান?
– মাথা ঠিক ছিলো না।
তনুর কপালে চুমো দেয় তূর। তনুর পুরো শরীরে বয়ে যায় শিহরণ। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শীরা উপশীরা তাকে বুঝিয়ে তার স্বামী তাকে ছুঁয়েছে। তূর তনুকে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসে। ঘেমে গোছে তূর। তনু পাখা হাতে নিয়ে বাতাস করতে লাগে। কিছুক্ষণ কাটে নিরবতায়। মাগরিবের আজানও পড়ে আর তনুও নিরবতা কটিয়ে বলে ওঠে,
– একটা কথা বলবো?
তূর হেসে উত্তর দেয়,
– বলো!
– কাল সন্ধ্য জুঁই শাশুড়ীর ঘরে তির্থ ভাইকে…!
গলা আটকে আসে তনুর। মাথা নিচু করে রয় সে!
#চলবে..
কাল সারাদেশে নেট প্রবলেম ছিলো। তাই ফেসবুকে ডুকতেই পারিনি। ইচ্ছে থাকতেও লিখা হয়ে ওঠেনি। পুরো সকালটা লিখলাম। জানাবেন কেমন হলো!