তাসের ঘরে তুমি আমি পাঠ-১৫

#তাসের_ঘরে_তুমি_আমি
#পর্ব_১৫
#লেখক_আয়াশ

রুমের দরজা খুলেই যা দেখলো তাতে শানের মাথা ঘুরে গেলো। সে দেখলো রুমের ফ্লোরে তার বাবা পড়ে আছে আর তার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ে রুমের ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।

‘বাবা!!!!’ বলে শান চিৎকার দিয়ে উঠল। ছুটে গেল বাবার কাছে। বাবার মাথা কোলে নিল।

ততক্ষন নিচে থেকে মিথিলা আর শানের মা চলে এসেছে। তারাও শানের বাবার অবস্থা দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। শান তাদের দেখে নিজেকে একটু সামলে নিল।

হস্পিটালে বসে আছে শানের মা আর মিথিলা। শানও পাশেই বসে। সে যেন শোকে অয়াথর হয়ে গেছে। ডাক্তাররা বলেছেন তার বাবার মাথা থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা ক্রিটিকাল। রক্ত লাগবে এমারজেন্সি। একটু পর এসেই রক্তের গ্রুপ বলবে।

শানের মা জিজ্ঞেস করলো,’বাবা তুই উপরে কি করছিলি? আর তোর বাবা যে পড়ে ছিল সেটা দেখলি কিভাবে?’

‘আমি পানি খেতে গিয়ে উপরের রুম থেকে কিছুর আওয়াজ পাই। উপরে গিয়ে রুমের ভিতরে গেলেই পায়ে কারো স্পর্শ অনুভব করি। নিচে বসে হাত হাত দিলে টের পাই আমার বাবা শুয়ে রয়েছে। অনেক ডাকার পরও আমার ডাকে সাড়া না দিলে আর মাথায় হাত দিলে ভেজা ভেজা লাগায় বুঝতে পারলাম এটা রক্ত। তখনই তোমরা চিৎকারের আওয়াজ শুনেছো।’

‘কি হচ্ছে এসব বাবা? আমাদের উপর কে বদলা নিচ্ছে?’
‘জানি না মা, আমিও কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’
‘তোর বাবার আবার কিছু হবে না তো?’
‘মা এসব কথা বলো না। দেখো বাবা ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।’
শান আর শানের এতসময় কথা বললেও মিথিলা শানের বাবা যে রুমে আছে সেদিকে চেয়ে আছে। চোখে মুখে অস্থিরতা।’ শান আড়চোখে চশমার আড়ালে সেটা দেখেছে।

হঠাৎ মিথিলা তাদের দিকে তাকিয়ে কেদে উঠলো। শানের মা মিথিলাকে জড়িয়ে ধরল।
‘মা দেখেছো আমি অপয়া, নিজের বাবা মাকে হারালাম। আজ যে বাবা মাথায় হাত দিয়ে বলল সে আজ থেকে আমার বাবা, দিন না পেড়োতেই এত বড় বিপদ আসল। আমি আসলেই অলক্ষী!!’

‘না মা এমন বলতে নেই। কিচ্ছু হবে না তোর বাবার।’

তখনই ডাক্তার বের হল,’তাড়াতাড়ি এ পজিটিভ রক্তের ব্যবস্থা করুন দুই ব্যাগ। ইটস এমারজেন্সি। দেরি হলে পেশেন্টের অবস্থা আরো গুরুতর হবে।’

মিথিলা সাথে সাথে উঠে দাড়াল,’আমার রক্ত এ পজিটিভ। আমার থেকে নিন।’
‘আচ্ছা আসুন। কিন্তু দুই ব্যাগ লাগবে যে!!’
‘আমিই দিব। সমস্যা নেই।’

শানের মা বলে উঠল,’ না মা দুই ব্যাগ দিলে তুই নিজেই আরো অসুস্থ হয়ে পড়বি। এমনিতেই মাত্র জ্বর থেকে উঠলি। আমরা দেখছি। কি করা যায়।’

মিথিলাকে ডক্টর ভিতরে নিয়ে গেল রক্ত নিতে শানের মাও সাথে গেলো।

শান রিয়াদ ভাই আর তার বসের কাছে ফোন দিল রক্ত ম্যানেজ করার জন্য।

কিছু সময়ের ভিতরেই রিয়াদ ভাই আর তার বস চলে আসলো। সব শুনে সবাই অবাক হল। কিন্তু আশার খবর হল রিয়াদ ভাইয়েরও রক্ত এ পজিটিভ। তাই শানকে আর টেনশন করতে হল না।

এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ এসেছে শানের বাসায়। শানকেও ফোন করে নিয়ে আসা হয়েছে।

ডিআইজি সাহেব বললেন,’এটা কি হল শান! আজ আবার রি ইনভেস্টিগেশন হওয়ার কথা ছিল রুমে আরো কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাকি খুজতে আর তার আগেই এরকম টা হয়ে গেলো?

শান চুপ করে আছে। সেও কিছু বুঝতে পারছে না।
‘স্যার আমার পরিবারের উপর কার নজর লেগেছে, কেন করছে এসব সে কিছুই তো বুঝতে পারছি না!!’
‘তোমার বাবা উপরের রুমে কেন এসেছিল?’
‘সেটা তো আমিও জানি না স্যার।’
‘হুম, তার জ্ঞান ফিরলেই আমরা বুঝতে পারব হয়ত।’

শান অন্য ঘরে বসে বসে সব কিছু আবার মিলাচ্ছে, ওইদিকে তার রুমে ফরেন্সিক বিভাগ এসেছে আবার সকল কিছু খতিয়ে দেখতে।

শানের মাথায় একটাই কথা বারবার আসছে। যদি তার বাবাকে মাথায় আঘাত করা হবে তাহলে তখন তার বাবা ব্যাথায় চিৎকার করলো না কেনো? এই কথাটা সে বারবার ভাবছে। তাহলে কি পরিচিত কেউ?
এসবের উত্তর হয়ত তার বাবা সুস্থ হলেই পাওয়া যাবে।

রুমের সকল জিনিস আবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হল। অবশেষে দুইটা অবাক করা জিনিস পাওয়া গেল।

ফ্লোর থেকে পাওয়া গেল কিসের যেন একটা ছোট টুকরা। মনে হচ্ছে মানুষের হাতের যে হাড় থেকে তার আগার অংশ। সেই অংশ দেখে তো সবাই অবাক। কারন পুতুলের পিছ করা লাশ খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়েছিল। আর সেটা থাকলেও তো পোড়া অবস্থায় থাকবে, কিন্তু এটা তো একটু ভাঙা অংশ মনে হচ্ছে।
ফরেনসিক ডাক্তাররা ছিল সেখানে, তারা বলল এটা ফলস হাড়। অর্থাৎ মানুষের অরিজিনাল
হাড় নয়। বাজারে অনেক সৌখিন জিনিস পাওয়া যায় এমন৷ যেমন- কঙ্কালের হাত, মাথা; এটা সেরকমই একটা জিনিস।

আর দ্বিতীয় জিনিসটা আরো চাঞ্চল্যকর। কাপড়ের ছোট্ট একটা ছেড়া অংশ। অংশটা শাড়ির হবে হয়ত। ঘরের দরজার কোনায় ধারালো কিছু একটা অংশের সাথে লেগে ছিল।

শানকে সামনে বসিয়ে এসব জিনিসের নাম বলা হচ্ছে সে অন্ধ বলে। কিন্তু শান দুটোই চোখে দেখতে পাচ্ছে।

প্রথম কঙ্কালের হাড়ের টুকরা দেখে শান সিওর হল যে সেদিন সে সত্যি পুতুলকেই দেখেছিল। সেটা তার কোনো কল্পনা ছিল না। কিন্তু আসলেই পুতুল নাকি পুতুলের বেশ ধরে অন্য কেউ! সকল চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার৷
‘পুতুল হলে পালাবে কেনো? না সেটা পুতুল রুপী আর কেউ যে পুতুলের মৃত্যুর সুযোগ উঠাচ্ছে।’ এটাই ভাবতে বাধ্য হল শান।

দ্বিতীয় কাপড়ের টুকরাটা দেখা মাত্রই তার যেন শরীরে আগুন জ্বলে উঠল। কারণ এটা অন্য কারো নয়। মিথিলার শাড়ির!!!!

সেদিন এই একই রঙের শাড়ি পরিহিতা নববধূকেই শান বিয়ে করে এনেছিল। শানের বুঝতে বাকি রইলোনা মিথিলা সেদিন যে শাড়িটি পড়ে ছিল এই কাপড়ের টুকরা সেম সেই শাড়িটারই।

ডিআ’ইজি স্যারকে বলে সে হাসপাতালে ছুটল। তার আজ অনেক কিছু জানার আছে। কাকে রেখে কার উপর ভরসা করবে শান? সে কি জীবনে দ্বিতীয়বারের মত বি’শ্বাসঘাতকতার স্বীকার হল!!! এবারও একটা মেয়েকে বিশ্বাস করবে এই আশাটা যখনই মনে মনে ঠিক করেছিল, তার আগেই ভেঙে গেলো!!!!

চলবে,
আজকের প্রশ্নঃ মিথিলা কি আসলেই দোষী?
সামনের পর্বগুলোতে সবকিছু জানতে পারবেন। গল্প শেষের দিকে প্রায়। রাতের মধ্যে এক হাজার লাইক উঠলে বোনাস পার্ট পাবেন।। সবার গঠনমূলক মন্তব্যের আশায়।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here