#তাসের_ঘরে_তুমি_আমি
#পর্ব_০৬
#লেখক_আয়াশ
সাব্বিরের ফোনে লাগাতার কল করেই যাচ্ছে পুতুল। কিন্তু ঢুকছে না। খুব টেনশনে আছে সে।
৫২ তম বারের সময়ও যখন কল ঢুকলো না তখন ফোনটা বিছানায় আছাড় দিল সে।
মাত্রই বাসায় ফিরেছে শান। ঘরে ঢুকতে যাবে এসময় এই দৃশ্য দেখে মনের অভ্যন্তরীণ খুশিটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল। এত ভালোবাসার পরও যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সেই কালনাগিনীকে জীবনে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে চায় না শান।
কিন্তু খেলা তো শেষ নয়। এখন মানসিকভাবেও ভেঙে দিতে হবে পুতুলকে। তাকে যোগ্য শাস্তি দিয়ে তারপর ছেড়ে দেবে।
লাঠি ঠুকাতে ঠুকাতে ঘরে ঢোকার অভিনয় করতে লাগলো সে। তা দেখেই পুতুল সতর্ক হয়ে গেল। কিন্তু শানের সাথে কথা না বলে চুপচাপ রইল। শানও সেদিকে নজর দিল না।
———-
বিকেলে শান তার মা বাবা আর পুতুলের সাথে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। শানের মা বাবার ব্যাগ রেডি, যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। পুতুল সেখানে থাকলেও তার মন তো অন্য চিন্তায়।
‘বাবা, মা এই নাও।’
শান হাতের টাকাটা সামনে এগিয়ে দিল। তার মা সেটা নিয়ে বলল,
‘বাবা এত টাকা?’
‘মা স্যার বলেছে এখানে ১০ হাজার আছে। আসলে মাসের অর্ধেক বাকি তো। বাকি টাকা……’
‘না বাবা আমরা বলছি এত টাকা তো আমাদের লাগবেই না। এত টাকা দিচ্ছিস কেনো?’ শানের মা বলল।
‘মা নাও না। কখন কি দরকার লাগে।’
‘নাও শানের মা, টাকা বেশি হলে না হয় তুমি ৫০০০ রাখো, বাকি টাকা আমাকে দাও, ছেলে দিয়েছে একটু হাত খরচ করবো না!!’
‘তুমি এক টাকাও পাবে না। যা লাগবে আমার থেকে নেবে। বুড়ো বেটার আবার কিসের হাত খরচ!!’
‘বাবা দেখলি! বুড়োকালেও আমার জেলখানা থেকে মুক্তি মিললো না।’
‘কি বললে!!’
‘ক কি কি? কোথায় বললাম?’
‘হাহাহা, মা ঝগড়া না করে চলো যাই, এগিয়ে দেই তোমাদের।’
‘বাবা নিজের খেয়াল রাখিস।’
‘আরেহ মা পুতুল আছে না?’
‘হু সেটা হলে তো নিশ্চিন্ত হয়েই যেতাম।’ পুতুলের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য সহকারে বলল শানের মা।
পুতুলের মেজাজ এমনিতেও খারাপ ছিল। শানের মার ত্যাড়া কথা শুনে বলল,’শান তুমি তাদের এগিয়ে দিয়ে এস। আমার মাথা ব্যাথা করছে। আমি রুমে যাই।’ বলে এক সেকেন্ড দেরি না করে চলে গেলো।
‘দেখলে শানের বাবা, কিরকম করলো?’
‘আমরাই হয়ত এর জন্য দায়ী। জেনে বুঝে নিজের ছেলের জীবনটা শেষ করলাম।
‘বাবা মা এখন বাদ দাও এসব। চলো তো। দেড়ি হয়ে যাবে।’
শানের নিষেধ স্বত্তেও তাকে দুই হাজার টাকা ফেরত দিল তার মা। তার হাত খরচ আর চলার জন্য। শান বাবা মাকে সামনের মোড় পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে এমন সময় কারো কান্নার আওয়াজ পেলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো মিথু রাস্তার সাথের ম্যানহোলের পাশে হাটু গেড়ে বসে নিচে কি যেন দেখছে আর চোখের জল ফেলছে।
লাঠির সাহায্যে তার কাছে গিয়ে বলল,’ এই কাঁদছে কে এখানে?কে?’
‘আ আমি মিথিলা।’ ফুফাতে ফুফাতেই বলল মেয়েটি।
‘ওহ তুমি! কি হয়েছে তোমার? বলো আমাকে।’
‘কিছুনা।’
‘দেখো আমি আজ অন্ধ বলে হয়ত বলছোনা।’
‘না নাহ এ কি বলছেন আপনি! সেদিন আপনি না থাকলে আমার কি হত!’
‘তাহলে বলো।’
‘আমাকে এই সামনের মুদি দোকানটা থেকে বাজার আনতে দিয়েছিলো মামী। টাকাটা হাতে নিয়েই আসছিলাম। হঠাৎ সামনে থেকে কুকুরের শব্দ পেয়ে চমকে উঠে হাতের টাকাটা নিচে ম্যানহোলের ছিদ্র দিয়ে পড়ে গেছে। এবার কি হবে? আগের দিন ভাঙা ডিম নিয়ে গেছিলাম জন্য মেরে রাতের খাবারও দেয়নি কিন্তু আজ কি হবে? কি বলব? মামী এসব বিশ্বাস করবে না। বলবে টাকা চুরি করেছি আমি।’ বলে আবার ফোফাতে লাগলো মিথিলা।
শান তো এ কথা শুনে অবাক। কতটা নির্দয় হলে এই মেয়েটির উপর এরকম করতে পারে। সে বলল,
‘আচ্ছা আমি তোমাকে হেল্প করতে চাইলে হেল নেবে তো?’
‘মানে?’
‘টাকাটা যদি আমি দেই?’
‘কিন্তু আপনি কেনো দেবেন?’
‘দেখো সেদিন কিন্তু আমার কারণেই ডিম ভেঙেছিলো। আজ না হয় বন্ধু হিসেবে তোমাকে হেল্প করলাম। কি নেবে না এই বন্ধুর হেল্প?’
‘ক কিন্তু!!’
‘না আর কোনো কথা নয়। কত টাকা দিয়েছিলো?’
‘৫০০ টাকা।’
শান এবার মেয়েটিকে একটু পরীক্ষা করতে চাইলো। পকেটের দুইটা একহাজারের নোটের একটা দিয়ে বলল, ‘নাও ৫০০ টাকা।’
‘এটা তো এক হাজার টাকার নোট!’
শান মিথুর কথায় বুঝল মেয়েটি আসলেই সরল।
‘আচ্ছা চলো।’
‘কোথায়?’
‘আজ একজনের জন্মদিন। তার জন্য কেক কিনতে হবে।’
‘কে ভাবী নিশ্চয়ই!’
‘না এক সর্বনাশিনী।’
‘কিহ!!’
‘আরে আমার কেউ নেই ভালোবাসার। অন্ধকে কে ভালোবাসবে?’
‘ভালোবাসতে অন্ধ পঙ্গু না, লাগে মন। আর আপনার মত মনের মানুষকে কে না ভালোবাসবে!’
‘আচ্ছা চলো।’
দুজনে খুশি মনে আগে মিথিলার মুদি বাজার করল তারপর শানের একটা কেক কিনে মিথিলার সাথেই বাসার উদ্দেশ্যে ফিরল।
মিথিলা বাসায় যাওয়ার আগে বলল,’আপনি আমাকে সাহায্য করেই যাচ্ছেন। আমি জীবনেও ভুলব না আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা।’
‘আমরা তো বন্ধু। আমাদের মাঝে আবার কৃতজ্ঞতা কি?’
শানের কথায় মেয়েটির চোখে মুখে খুশির আভা দেখা দিল।
‘আজ থেকে আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় দুইটি মানুষের মধ্যে একজন।’
‘আরেকজন কে শুনি?’ শান হেসে বলল।
‘আর জে শান। নাম শুনেছেন? আমার মনে শুধুই সে।’
মিথিলার কথা শুনে শানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
‘আচ্ছা আপনার নামটা তো জানা হল না?’
‘হাহাহা, সেটা আরেকদিন বলব, আচ্ছা আসি। রাত হয়ে গেছে।’
‘আচ্ছা।’
মিথিলার থেকে বিদায় নিল শান। সে এখন আর এসব নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না। তার সামনে বড় কাজ, অনেক বড়।
——-
বাসায় ঢুকে দেখলো পুতুল এখনো মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। গাধাটার মাথায় এটুকুও বুদ্ধি আসেনি যে টিভি চালালেই সব জেনে যেত।
শান মুচকি হেসে রুমে ঢুকলো।
‘পুতুল পুতুল?’
‘কি হল চেচাচ্ছো কেনো?’
‘আসো দেখো কি এনেছি।’
‘পুতুল বলল,’পরে আমি বিজি আছি।’
‘আরেহ দেখোই না।’
‘উফফ, আচ্ছা দেখি।’
শানের হাত থেকে প্যাকেট খুলে দেখলো একটা ছোট কেক। উপরে হ্যাপি বার্থডে লেখা৷’
পুতুল অবাক হল। কারো মনে না থাকলেও শানের মনে আছে। আজ তার জন্মদিন বলেই সাব্বিরের জন্য এত কিছু রান্না করে নিয়ে গেছিল সে।
‘তোমার মনে আছে?’
‘তোমার জন্মদিন আমি ভুলতে পারি?’
‘কিন্তু নাম কই কেকের উপরে?’
‘আমার বউয়ের নাম অন্যকেউ লিখবে কেনো? তাই লিখতে দেইনি। এই নাও ক্রিম পেন। তুমিই লিখ।’
আগের পুতুল হলে হয়ত শানকে জড়িয়ে ধরতো। এই পুতুলের ফেস দেখে মনে হল শানের সব কাজ তার কাছে ঢং লাগছে।
দুজন কেক কেটে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় বসেছে। শান হঠাৎ বলল,
‘তোমার একটা গিফটও আছে। দেখো একটা ব্যাগ রেখেছি অফিস থেকে এসে। ওইটায়।’
শানের কথা শুনে পুতুল শানের ব্যাগটা নিয়ে আসলো।
শান বলল,’খোলো এটার ভিতরে একটা প্যাকেটে আছে।
পুতুল ব্যাগের ভিতরে একটা প্যাকেট দেখলো। কিন্তু খুলে যা দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তারই বোরকা যেটা পড়ে সাব্বিরের কাছে গেছিলো সে।
পুতুল অবাক হয়ে শানের দিকে তাকালো৷ শান শুয়ে উপরের সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে।
‘ত তু তুমি এ এটা!!’
‘হাহাহা সাব্বিরের রুমেই ফেলে এসেছিলে তাই নিয়ে এসেছি।’
পুতুলের ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে তার সাথে! কি বলছে শান!!!
‘তুমি কিভাবে জা জা জান ল লে?’
শান এবার হঠাৎ পাশের দেয়ালে লাগানো ঘড়ির দিকে ফিরল। বলল,’রাত ১১ টা ২৫ বেজে গেছে। শুয়ে পড়। কাল কথা হবে।’
পুতুল শানের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে দেখলো ঘড়িতে ঠিক ১১ টা ২৫ ই বাজে।
‘তার মানে!!! তার মানে শান চ চোখে দেখতে পারে?’ পুতুলের মনের মাঝে উথান পাথান শুরু হয়েছে। এক নিমিষে তার সব কিছু উলটা পালটা লাগছে।
চলবে,
আসলে আপনাদের ভাবীকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেছিলাম। তাই লেট হল গল্প দিতে। বাসে বসে লিখে আপলোড দিচ্ছি। রিচেকও দেয়ার সময় পাইনি। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।