#তাসের_ঘরে_তুমি_আমি
#পর্ব_০৭
#লেখক_আয়াশ
শানের মুখ থেকে বলা কথাগুলো মাথায় নিতে পারছে না পুতুল। সে এমন অপরাধ করেছে যার কোনো ক্ষমা হয় না। কি করবে সে এখন সেটাই ভাবছে। কিছু ভাবতে না পেরে হঠাৎ বেডে শুয়ে থাকা শানের পা জড়িয়ে ধরলো।
হঠাৎ পায়ে কারো স্পর্শ পেয়ে সেদিকে তাকালো শান। দেখলো পুতুল পা জড়িয়ে কাদছে৷
এক ধাক্কা দিয়ে পা সড়িয়ে নিল শান।
‘এসব ন্যাকামির মানে কি?’ কড়া গলায় বলল সে।
‘আমি জানি তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো আমার কাজে। আসলে আমার মাথা ঠিক ছিল না। তোমাকেও কাছে পাচ্ছিলাম না। কি যে হয়েছিল আমার! তাই,,,’
‘তাই কি? নিজের স্বামীকে ভুলে অন্য পুরুষে মত্ত ছিলে? তাই কি? নিজের স্বামীর ভালোবাসা ভুলে অন্যের কাছে ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছো অনায়াসে?’
‘আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার ভুল হয়ে গেছে।’
‘কিছু কিছু ভুলের ক্ষমা হয় না পুতুল। সেটা কালকেই বুঝতে পারবে।’
‘মানে?’
‘আমার ক্লান্ত লাগছে, অফিসেও যাই নি তাই। সো নো মোর ওয়ার্ডস।’
পুতুলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শান পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। আর পুতুল বেডের পাশে নিচে বসে চোখের জল ফেলছে৷ আজ শান তাকে জন্মদিনের উপহার দিয়েছে, হোক সেটা অভিনয়৷ সে সত্যি সত্যি সব ভালোবাসার প্রাপ্য ভাগীদার ছিল কিন্তু নিজের ভুলে হয়ত সব হারালো।
————–
সকালে ঘুম থেকে উঠে পুতুলকে ওইভাবেই বসে থাকতে দেখলো শান। ভালো করে তাকাতে দেখলো পায়ের কাছে বেডে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। শান বিছানা থেকে উঠতে নড়াচড়ায় পুতুলেরও ঘুম ভেঙে গেলো।
‘আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব মিস পুতুল। তৈরি হয়ে নিন।’
শানের কথায় পুতুল চমকে উঠল।
‘আমাকে আপনি করে বলছ হটাৎ!’
‘আমি শুধু কাছের লোকদের তুমি বলি। আর আপনাকে আমি আমার জীবনে কোথায় জায়গা দিতে চাইনা আর।’
পুতুল কেদেই ফেললো। ‘কি বলছো এসব!!’
‘কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে আসুন।’
বলেই শান চলে গেলো তার বাবা মায়ের ওয়াশরুমে রেডি হতে।
রেডি হয়ে রুমে এসেছে শান। দেখে পুতুল বোরকা পড়ছে।
‘হাহাহা হাসালেন,এখনো বোরকা?’
পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকালো।
‘কেন, কি হয়েছে?’
‘পরপুরুষের ঘরে পর্দাহীন হয়ে এখন আবার পর্দা করার ঢং করছেন?’
‘তুমি!!’
‘চলুন আমি রেডি।’ বলে শান চশমা পড়ে আবার লাঠি হাতে নিলো।
শানের আবার অন্ধ সাজা দেখে পুতুল অবাক হল।
‘এখনো এসব পড়ছো যে?’
‘সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি? হ্যা আর একটা কথা, যদি কেউ আমার চোখ ভাল হওয়ার কথা জানতে পারে, আপনার জন্য বিষয়টি ভালো হবে না।’ পুতুল শুধু নিরব দর্শকের মত শুনছে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা সি এন জি নিয়েছে দুইজন। লক্ষ্য থানা। সেটা শুনেই পুতুল বলল,’,থানা কেনো?’
‘সেটা না হয় গেলেই দেখবেন।’
পুতুল খানিক বাদে শানের একটা হাতের উপরে নিজের হাত রাখলো।
শানের মুখ চোখ শক্ত হয়ে উঠলো। হাত ঝাকি দয়ে ছাড়ালো সঙ্গে সঙ্গে।
‘আচ্ছা আমরা কি আবার সব প্রথম থেকে শুরু করতে পারি না? আমি মানছি আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি হাত জোড় করে। আর জীবনেও এই ভুল করব না। একটা সুযোগ দাও।’
‘মিস পুতুল ভুল না অপরাধ করেছেন আপনি। সেটা কি সহজে ভুলার?’
পুতুল কিছু বলবে তখনই ড্রাইভার বলল ‘চলে এসেছি স্যার, নামেন।’
থানার ভিতরে যাচ্ছে দুজন। শান লাঠির সাহায্যে এগোচ্ছে। একটু পরই দুজন থানায় একটা লকাপের সামনে আসলো। ভিতরের মানুষটাকে দেখে তো পুতুলের চোখ কপালে।
‘সাব্বির!!! ও এখানে কেনো?’ পুতুল মনে মনে বলছে।
পুতুলকে দেখেই সাব্বির লকাপের সামনে চলে আসলো।
‘তুই!!!’
‘সাব্বির তুমি এখানে কিভাবে?’
‘তুই জানিস না নষ্টা বেহায়া মেয়ে? নিজে সব করেছিস, আর এখন সাধু সাজছিস? ওই অন্ধকে সাথে করেও এনেছিস?’
শান পিছনে দাড়িয়ে না শোনার ভান করে আছে।পুতুল অবাক হয়ে চেয়ে আছে সাব্বিরের দিকে।
‘কি বলছো এসব তুমি? আমার জন্য মানে?’
‘খুশি হোস না রে বেশি। আজ হোক কাল হোক আমি জামিন নিয়ে নেব। তারপর তোকে কে বাচাবে সেটাও আমি দেখে নেব। আমার জীবন নষ্ট করে কি মনে করেছিস? আমি তোকে শান্তিতে থাকতে দেব?’
‘আমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘চুপ কর কালনাগিনী। তোর সব অভিনয় আমার দেখা শেষ। টাকা হাতিয়েছিস আমার থেকে। এখন আমাকে আর দরকার হবে কেনো? তোকে সব কিছুর মাশুল দিতে হবে। দেখে নিস।’
পুতুল শানের উপস্থিতি ভুলেই সাব্বিরের সামনে গেল,’তুমি বিশ্বাস করো, আমি তো কিছুই করিনি।’
সাব্বির রেগে এবার পুতুলের গলা চেয়ে ধরল। পুতুল ছটফট করছে। শান পিছনে দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে।
‘তোকে আমি মে’রেই ফেলব নষ্টা মেয়ে।’
‘অফিসার, অফিসার আসুন এখানে, আমার ওয়াইফকে মেরে ফেললো।’ পুতুলের গোঙানিতে শান ন্যাকামি করে লাঠি এদিক ওদিক করছে আর সাহায্য চাইছে।
পুলি’শরা এসে অনেক কষ্টে পুতুলকে ছাড়ালো। সাব্বির ওরা যাওয়ার সময়ও পুতুলকে শাসিয়ে দিল।
‘এসব এর মানে কি? কি বলল সাব্বির?’ যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে বলল পুতুল।
‘হাহাহা।’ সব একে একে বলল শান, সে কি কি করেছে।
‘টিভিটা চালালে নিজেই বুঝে যেতেন। কিন্তু আপনার সাব্বিরের চিন্তায় সেটাও হয়ত মাথায় আসেনি আপনার। আচ্ছা মিস পুতুল অফিসে যাবেন না?’
পুতুল শানের প্রশ্নে থতমত খাচ্ছে।
‘না মানে,,,’
‘হাহাহাহা, জানি, সব জানি। কবে থেকে আমাকে ধোকা দিচ্ছেন সেটাও। মাত্র তো খেলা শুরু। আপনার নাগরকেই আপনার শত্রু বানিয়ে দিলাম।’
পুতুল পাশে বসে চোখের জল ফেলছে। কিন্তু তার একটাই আশা, শান হয়ত তাকে এখনো ভালোবাসে, নাহলে সাব্বিরের কাছে থেকে জেলে ওইভাবে বাচাতো না।
গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে হাটছে বাসার দিকে শান আর পিছনে পুতুল, হঠাৎ একজন এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শানকে। পুতুল তো পুরোই অবাক।
‘আপনি খুব খারাপ, কেনো বলেন নি আপনিই আমার আর যে শান?’ শানকে জড়িয়ে ধরে মৃদ্যু কন্ঠে বলছে মেয়েটি। পুতুল রাগে ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু,,,,,,,,
চলবে,
এখন থেকে প্রতিদিন গল্প দিব। জানি অনেকে রেগে আছেন লেট করার জন্য। কিন্তু কি করব বলুন আইডি নষ্ট হলে? সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।।। অগ্রিম ধন্যবাদ সবাইকে।।।