#তাসের_ঘরে_তুমি_আমি
#পর্ব_০৮
#লেখক_আয়াশ
‘এতদিন আমার সামনে থেকেও আমি বুঝিনি যে আপনিই আমার শান! কি পাগল আমি আপনার জন্য, আর আপনাকে চিনতেই পারলাম না!’
শানকে জড়িয়ে ধরে আছে মিথিলা আর উপরের কথাগুলো বলছে। পিছনে পুতুল রাগে ফেটে পড়ছে। কিন্তু চাইতেও কেন যেন শানের উপর অধিকার খাটাতে পারছে না পুতুল। অগত্যা রাগে সে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে।
শান সেটা দেখে মুচকি হেসে মিথিলা কে নিজের থেকে আলগা করলো,’ মিথিলা? তুমি!’
‘আপনি আগের দিন বলেন নি কেনো? আমি যে বললাম আমার কাছের মানুষ দুইজন আপনি আর শান। আপনি বলেন নি কেন? আমার সেই কাছের মানুষটা শুধু আপনি আর আপনি।’
‘মিথিলা, কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো?’
‘জানেন আপনাকে প্রতিদিন কে কল দেয় রাতে? আমি। জানেন আপনার কথা শুনতে আমি মামার ফোনটাও প্রতি রাতে চুপিসারে নিজের কাছে আনি। কেন জানেন?’
শান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কি বলছে মেয়েটি!
মিথিলা আবার বলল,’কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আগে তো দেখিও নি আপনাকে। কিন্তু কাল যখন রাতে জানলাম আপনিই সেই শান তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি বুঝেছি আমি ভুল মানুষকে মন দেইনি। এতদিনের আপনার ব্যবহার, আমাকে নিস্বার্থ ভাবে সাহায্য করা, এসবে আমি বুঝেছি আমি ভুল মানু্ষকে পছন্দ করিনি।’
‘হ্যা মিথিলা তুমি ভুল মানুষকেই পছন্দ করেছ। কি জানো তুমি আমার ব্যাপারে? কিছুই না। তাহলে?’
‘আপনি কি বলছেন?’
‘আগে বলো আমার পরিচয় কি করে পেলে?’
‘গতকাল রাতে মামার সাথে তার এক বন্ধু আসে, সে নাকি আপনার স্টুডিওর একটা পোস্টে চাকরি করে৷ সেই বলেছে, আর জে শান চোখে দেখে না, আর আমাদের পাশের বাড়িই থাকে।’
শান হতবাক হয়ে মিথিলার দিকে চেয়ে আছে।
‘শোনো মিথিলা, তুমি এখনো বুঝতে পারছো না। আমি তোমার জন্য ঠিক না।’
‘কেনো? কেনো এমন বলছেন? আমি কি খুব খারাপ? সারাজীবন কষ্ট পেয়ে এসেছি, আবার এখন জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টটা দিয়েন না প্লিজ।’
‘দেখো তুমি শুনিতে চাচ্ছো না আমার কথা। আমি অন্ধ আর তুমি,, ‘
‘আমার সেটায় কিচ্ছু যায় আসে না। আপনি অন্ধ কেনো আল্লাহ না করুক বোবা, কানা হলেও আমার কিছু আসে যায় না।’
‘ছেলেমানুষী করো না।’
‘আচ্ছা আমি এতিম তাই বলে কি এমন করছেন?’
‘মিথিলা!!’ চিল্লিয়ে উঠল শান।
শানের ধমক খেয়ে মিথিলা বসে পড়েছে ওখানেই। একটু পর ফুফানোর আওয়াজ আসছে। শান ভাবলো, নাহ এই পিচ্চিকে আগে সামলাতে হবে।
‘আচ্ছা দেখো, তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না। আমি সব তোমাকে বলব। তুমি এখন বাসায় যাও।’
‘কিন্তু,,,’
‘কালকে বলব, যাও তুমি বাসায়।’
‘আচ্ছা আপনার সাথে যে আসছিল সেই মহিলা কে? আর তিনি এভাবে চলে গেলো কেনো?’
‘বললাম তো সব কালকে বলব।’
বলে মিথিলাকে বাসার সামনে দিয়ে এসে শান কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বাসায় গেলো।
শান আসলে পুতুলের ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করছিল। ভেবেছিলো হয়ত পুতুলকে ঠিক একই যন্ত্রণা দেবে যা সে অন্যজনের কাছে গিয়ে শানকে দিয়েছে। তাই মিথিলা জড়িয়ে ধরার সঙ্গে সঙ্গেই ছাড়িয়ে নেয়নি। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো,’আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখলে না হয় রাগ হবে, আমি কি আদৌ পুতুলের ভালোবাসার মানুষ আছি!!’
বাসায় ঢুকতেই পুতুল ঠাট্টার ছলে বলল,’বাহ ভালোই তো চলছে।’ ভ্রু কুচকে গেলো শানের।
‘মানে?’
‘বাইরে যে রঙ তামাশা দেখলাম। কচি মেয়ে পেয়েছো ভালই।’
‘ছি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে কি বলছেন আপনি?’
‘লজ্জা করে না এসব নষ্টামি করতে?’
শান সাথে সাথে পুতুলকে একটা জোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
‘বেয়াদব মেয়ে, কোন মুখে এসব কথা বলছিস তুই? তোর মুখ আছে এসব বলার? নিজে কি করেছিস দেখ। তারপর বল। আরেহ মেয়েটা তো জানেও না আমি দেখতে পাই। আমার গলার আওয়াজ ভাল লেগেছে বিধায় হয়ত এমন করল। তোর মত নষ্টামি করিনি আমি, শুনেছিস?’
‘তোমার গলার আওয়াজ মানে? কি কাজ করো তুমি অফিসে?’
‘হাহাহ সেটাও জানার ইচ্ছা হয়নি তোর এতদিন? তুই এতই ভাল স্ত্রী। কারন তুই মত্ত ছিলি সাব্বিরে।’
পুতুল মাথা নিচু করে আছে।
‘ভেবে ছিলাম তোকে কষ্ট দিব, কিন্তু না তোর মত কালনাগিনীর সামনে থাকলে নিজেকেই কষ্ট দেয়া হবে। কালকে বাবা মা আসবে। আসলেই তোকে বিদায় করব।’
‘বিদায় করবে মানে?’
‘ডিভোর্স।’
‘কিহ?’
শান কোনো উত্তর দিল না। রুমের দিকে এগোলো।
‘শুনে যাও। কি বললে তুমি!’
পুতুল শানের পিছনের শার্ট ধরে ফেললো৷
‘ছাড় আমাকে, তোর ওই নোং’রা শরীর দিয়ে আমাকে অপবিত্র করার চেষ্টাও করবি না।’
পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে শান। পুতুল ওখানে বসেই কাদছে।
রাতে শান তাড়াতাড়িই অফিসে গেছে। পুতুলের সাথে একটা কথাও বলেনি। কিন্তু বাসার বাইরে বেড়িয়েই আড়চোখে পাশের মিথিলাদের বাড়ির দিকে চেয়েছে।
হ্যা, যা ভেবেছে তাই। মিথিলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার বাসার দিকেই তাকিয়ে আছে। শান লাঠির সাহায্যে যাওয়ার ভান করল। মহান বিপদে সে🇧, না চাইতেও এই বাচ্চা মেয়েটার মনে কি৷ তবে জায়গা করে নিল?
শান অফিসে যাওয়ার আধা ঘন্টার ভিতরে কলিং বেল বাজলো৷ পুতুল ভাবলো হয়ত শান আবার এসেছে, কিন্তু দরজা খুললেই তার সামনে দাড়িয়ে ছিল সাব্বির।
পুতুল খানিকটা আতংকিত হল।
‘একি তুমি?’
‘কি ভেবেছিস জেলে ভরে রাখবি? আর তোরা মজা করবি?’
‘কি বলছো,,’
আর কিছু বলতে না দিয়ে পুতুলের চুলের মু’ঠি ধরে ভিতরে নিয়ে আসলো সাব্বির।
এক প্রকার জো’ড়পূর্বক বিছানায় ফেলে দিল পুতুলকে।
‘আজ আমার সকল ক্ষোভ তোর উপর বের করবো ডাইনি। তোর স্বামী তো অন্ধ আরো বাসায় নেই। এখন তোকে কে বাচাবে? তোকে আজ মে’রেই ফেলব আমি।’
‘বিশ্বাস কর, আমি কিছু করিনি। সব করেছে,,’
আর কিছু বলার আগেই পুতুলের উপর ঝাপিয়ে পড়ল সাব্বির।
চলবে