তিনি আমার সৎমা শেষ পর্বঃ৮

0
1230

#তিনি_আমার_সৎমা

পর্বঃ৮ (শেষ পর্ব)

“নীরার মা মা*রা গেলো কীভাবে আফজাল?”
আমি দম আটকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি যেনো নিঃশ্বাস ছাড়লেই কেউ টের পেয়ে যাবে।
“মা মা মানে? জানো না তুমি রাত্রি আত্মহ*ত্যা করেছে?”
“ভয় পাচ্ছো কেনো আফজাল? হ্যা আমি জানি, কিন্তু তোমার মুখ থেকে একটু শুনি। কেনো আত্মহ*ত্যা করলো সে?”
“কেনো করেছে সে আমি কি জানি। মহিলা মানুষ, শেষের দিকে পাগল হয়ে গিয়েছিলো। আর পাগলে কি না করে।”
“আচ্ছা তাই নাকি? তবে আমি যতোদূর জানি, রাত্রি তো তার পরের দিনই তোমার আর তোমার ওই অসভ্য বন্ধু হাশেম ভাইয়ের মুখোশ টেনে ছিঁ*ড়ে দিতে যাচ্ছিলো। এর আগ পর্যন্ত তার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো না। তাই তোমাদের কোনো অপ*রাধ প্রমাণিত হয়নি। তোমরা জেল থেকে বেরিয়ে গিয়েছো। কিন্তু সেদিন সে এমন কিছু প্রমাণ হাতে পেয়েছিলো যার দ্বারা তোমাদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হতে পারতো। এতোদিন সে সব মুখ বুজে সহ্য করলো বাচ্চা দুইটার জন্য আর যখনই সে হাতে প্রমাণ পেলো তখনই সে আত্মহ*ত্যা করলো? এটা কি সত্যিই আত্মহ*ত্যা নাকি সুপরিকল্পিত মাথার হ*ত্যা?”
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। এসব সে কি শুনছি আমি হঠাৎ করে? আমার কেনো জানি মনে হলো আমারর এই মা ও হয়তো কোনো বিপদে পড়তে চলেছে, কারণ আফজাল লোকটা অত্যন্ত ধুরন্ধর। ও ওর স্বার্থের জন্য পারে না এমন কোনো কাজ নেই। আমি এখন কি করবো?
“কি বলছো এসব তুমি? রাত্রি এসব করেছে? আমি কিছু জানতাম না তো। আহা রে!”
একটু শব্দ করে হাসলো মা। এরপর বেশ চড়া গলায় বললো,”ও তাই নাকি? তুমি কিছুই জানতে না? কিন্তু তোমার মা তো জানতো। তাকে রাত্রি সবকিছু বলেছিলো। আচ্ছা এমন কি হয়েছিলো যে, তোমার মা তোমাকে জানিয়ে দেয় রাত্রির প্লান? তোমাকে ওকে থামাতে বলে আর তুমি চিরদিনের জন্য ওকে থামিয়ে দিলে?”
মা একটু থামলেন কথাটা শেষ করে। ওপাশ থেকে পিনপতন নীরবতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। আমার হাত পা অসাড় হয়ে গিয়েছে। হাতড়ে হাতড়ে চেয়ার ধরে দাঁড়াই। নাহলে মাথা ঘুরে পড়ে যাবো মনে হচ্ছে।
“এরমধ্যে আমার মা কেও টেনে এনেছো রুনা? আচ্ছা শুনলাম তো সব। আর কিছু বলার আছে তোমার? বলে বিদায় হও, আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“সবার ঘুম হারাম করে দিয়ে এতো শান্তির ঘুম তো তোমাকে ঘুমাতে দিবো না আফজাল সাহেব। তোমার আর তোমার মায়ের সব কীর্তি আমি ফাঁ*স করে দিবো।”
“কি করবে তুমি? কি করার ক্ষমতা আছে তোমার? তুমি রাত্রির মতো সুন্দরীও নও যে ওর সাথে যা করতে পারছি তোমার সাথেও পারবো। তোমাকে তো আমি ডিভোর্স দিয়ে এই বাড়ি ছাড়া করবো। নীরার কাছ থেকে সব সম্পত্তি হাতাবো। এরপর ওর মায়ের সাথে যা হয়েছে ওর সাথেও তাই হবে। আর বাড়াবাড়ি করলে ওর মায়ের মতো অবস্থা হবে।”
“রাত্রিকে কীভাবে মা*রলে আফজাল?”
“ওয়েল, সব যখন জেনেই গিয়েছো তখন বলতে কি সমস্যা। এমনিও তোমার কী বা করার ক্ষমতা আছে? কোনো প্রমাণ তো দেখাতে পারবে না। হ্যা আমি আর আমার মা মিলে রাত্রিকে মে*রেছি। রাত্রি বেশি চালাকি করতে গিয়েছিলো। দিনের পর দিন চুপ করে থাকার নাটক করে সব প্রমাণ যোগাড় করে। তাই তো ওকে থামিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। সেদিন রাতে নীরা আর রনি ঘুমিয়ে গেলে রাত্রিকে মা ডেকে আনেন ভালো কথা বলে। এরপর ওকে মেরে ফেলে ফ্যানে ঝু*লিয়ে দিই আমরা, যাতে করে এটা আত্মহ*ত্যা মনে হয়। আর হলো ও তাই। কেউ বুঝতে পারলো না। আমি আর মা কান্নার নাটক করে পোস্টম*র্টেম করতে বাধা দিই। ব্যস, কাহিনি শেষ। শুনলে সব? আর কিছু বলতে চাও? তোমাকে এই বাড়ি থেকে খুব তাড়াতাড়ি দূর করে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। নীরা বোকা, একটু রাগী কিন্তু ভীষণ বোকা। তার মনে তোমার জন্য সন্দেহের সৃষ্টি করবো, ও নিজেই চাইবে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে।”
আমি মেঝেতে বসে পড়লাম। এতোদিন আফজাল লোকটার জন্য আমার একরাশ ঘৃণা ছিলো। আমি জানতাম যে, ওর জন্য আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আজ আমি কি শুনলাম? ও আমার মা কে মে*রে ফেলেছে? আর দাদী? দাদী কীভাবে এই কাজ করলো? আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি। না না দাদী কীভাবে এই কাজ করবে? উনি তো অনেক ভালোবাসতেন আমার মা কে। কিন্তু নিজের কানকে অবিশ্বাস করবো কীভাবে?
“কে এই বাড়ি থেকে দূর হয় সে তো সময় বলবে আফজাল সাহেব। তোমার সময় হয়েছে তোমার বন্ধুর কাছে চলে যাওয়ার। সাথে তোমার মাকেও নিয়ে যাবে। এরপর তোমাদের শাস্তি নির্ধারণ করবে উচ্চ আদালত।”
ঘর কাঁপিয়ে হাসলো আফজাল। হাসির শব্দে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেলো। আমার এখন ইচ্ছা করছে ছুটে যেয়ে ওকে শেষ করে ফেলি। কিন্তু এখন আমাকে ওর হাত থেকে এই মা কে বাঁচাতে হবে। ও একটা খু*নী, ও সব কিছু করতে পারে। কিন্তু এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে আমি এখন ঢুকবো কীভাবে?

“কি করবে তুমি? কিচ্ছু করার ক্ষমতা তোমার নেই। সব খবর নিয়েই তো দেখছি এই বাড়ি এসেছো। তবে কি তুমি রাত্রির আত্মা? মেয়েকে বাঁচাতে নতুন রূপে এসেছো?”
ঘর কাঁপিয়ে হাসলো আবারও আফজাল। মনে হচ্ছে মায়ের কথায় খুব মজা পাচ্ছে সে।
“তাই নাকি? কিচ্ছু প্রমাণ নেই আমার কাছে? এইযে টেপ রেকর্ডার। এতোক্ষণ তুমি যা যা বলছো সব এখানে রেকর্ড করা আছে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করো। এরপর কাল সকালে কোথায় তোমরা যাও সেটা পুলিশ ঠিক করবে।”
আমি চমকে উঠে তাকালাম। মা এটা কি করলো? যদি সত্যিই এই সে সব রেকর্ড করে, সেটা এখন কেনো জানালো আফজালকে? বদ্ধ ঘরের মধ্যে তার কি বিপদ আসতে পারে এটা কি সে বুঝতে পারছে? না না, যেভাবে হোক মা কে বাঁচাতে হবে আমার।
“এটা কি রুনা? ওটা আমাকে দিয়ে দাও বলছি। এতো চালাক তুমি? রেকর্ড করছো আমার কথা? ওটা আমাকে দিয়ে দাও বলছি।” আফজালের গলায় ভীতি। মনে হয় ভাবতে পারেনি মা এমন কাজ করতে পারে।
“এতোদিন আমার কাছে অন্য প্রমাণ ছিলো তোমার বিরুদ্ধে। সেই প্রমাণ যা দিয়ে রাত্রি তোমাকে ফাঁ*সাতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই বাড়ি আসার পর আমার অন্য চিন্তা মাথায় আসে। এতো প্রমাণ যোগাড় করার পরেও সে কেনো তার বাচ্চাদের ফেলে রেখে আত্মহ*ত্যা করলো? সন্দেহ এখন সত্যতে পরিণত হলো। সব তো নিজের মুখেই স্বীকার করলে।”
“কে তুমি রুনা? তুমি কীভাবে রাত্রির প্রমাণ পেয়েছো?”
“আমি রাত্রির বান্ধবী। সেই ছোটবেলা থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ত্ব। ও আমার কাছে শুধু বান্ধবীই ছিলো না, ও ছিলো আমার একটা অংশ। তোমার এই কুৎসিত চেহারা ও দেখার আগ পর্যন্ত ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো। আস্তে আস্তে তুমি ওর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে, ওকে ঘরবন্দী করে দিলে। অনেকদিন ওর সাথে কথা না হওয়ায় আমার একটু দুশ্চিন্তা হয়। আমি আমার বাসার কাজের বুয়াকে পাঠাই এই বাড়ি। ও কাজ করতে আসতো আর রাত্রির কাছ থেকে সব কথা সংগ্রহ করে আমাকে জানাতো। যেদিন রাত্রি মা*রা যায় তার আগের দিন ও আমাকে সব জানায় চিঠিতে। আমি কথা দিই ওকে আমি সবরকম সাহায্য করবো। কিন্তু তার পরের দিনই শুনলাম ও আর নেই।”
ওপাশটা চুপচাপ। আমি পাগলের মতো এদিক ওদিক ছটফট করছি। এইটুকু জীবনে আমি আর কতো কিছু সহ্য করবো? আমার মা এতো কষ্ট করে পৃথিবী ছেড়েছে? আমি কেনো কিছু করতে পারলাম না মায়ের জন্য? তবে কি এই মা কে ও আমি বাঁচাতে পারবো এই নরপশুটার হাত থেকে?
“সেদিন রাতেই মনে হয় রাত্রি টের পেয়ে গিয়েছিলো কি হতে চলেছে ওর সাথে। মনে হয় সবটাই ধারণা করতে পেরেছিলো। তাই রাতেই ও সব প্রমাণ সহ আমার নামে একটা চিঠি লিখে চিলেকোঠার ঘরে রেখে আসে। যেখান থেকে বুয়া সব সংগ্রহ করতো আগেই। সেদিনও রাত্রি মারা যাবার পর ওসব এনে বুয়া আমার কাছে দেয়।”
“ওহ তুমি প্লান করেই এ বাড়ি এসেছো তাহলে?”
“তা বলতে পারো। রাত্রি একদিন আমার জীবন বাঁচিয়েছিলো। সেদিন আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম আমার জীবনের বিনিময়েও যদি হয় আমি ওকে সাহায্য করবো। কিন্তু আফসোস ওকে তো সাহায্য করতে পারলাম না। তবে ওর কলিজার টুকরো মেয়েটাকে আমি বাঁচাবো। যেভাবেই হোক আমি বাঁচাবো ওকে। এই নোংরা লোকগুলোর হাত থেকে ওকে বাঁচাবো আমি।”
“তুমি কি চাও রুনা? তুমি যা চাও তোমাকে আমি তাই দিবো। নীরার কাছ থেকে সব সম্পত্তি হাতানোর পর তোমাকে আমি অর্ধেক সম্পত্তি দিবো। কেউ কিচ্ছু জানবে না। তোমার কোনো ধারণাই নেই ওর নামে কতো কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। তুমি সব পাবে। তুমি কি ভেবেছো আমি জেলে চলে গেলে নীরা তোমাকে কানাকড়ি কিছু দেবে? নিজের জীবনটা কেনো নষ্ট করবে একটা এতিম মেয়ের জন্য? ভাবো রুনা ভাবো।”
আমি নিঃশ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে আছি। মা কি সিদ্ধান্ত নেবে? তবে কি মা কে আফজাল সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে? মা কি তাতে রাজি হবে? আর মা আমার মায়ের বান্ধবী। এতো কাছের বান্ধবী যে, নিজের জীবন বিপন্ন করে শুধুমাত্র আমাকে বাঁচাতে এখানে এসেছে?
“সম্পত্তির লোভ আমি কোনোদিন করিনা আফজাল। আমার কোনোদিন সন্তান হবে না তাই আমার প্রথম স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। এখানে এসে আমি সন্তান পেয়েছি। নীরা আর রনিকে পেয়েছি। আর কিচ্ছু চাইনা আমার।”
“কিন্তু আমার যে চাই রুনা। তুমি কি ভেবেছো সবকিছু এতোটাই সোজা? তুমি কি টেপ রেকর্ডারটা আমাকে দিয়ে দেবে নাকি এই ঘরেই নিজেকে শেষ করে দেবে যেটা রাত্রির সাথে হয়েছে?”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। কি করবে আফজাল? মা কে মে*রে ফেলবে? ওর দ্বারা কিচ্ছু অসম্ভব না। না না এভাবে বসে থাকা যাবে না। কিছু একটা আমাকে এখন করতেই হবে। আমি এদিক ওদিক করছি মা কে বাঁচানোর জন্য।
“ছাড়ো বলছি আফজাল আমাকে। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”
“চিৎকার করো। কেউ তোমাকে বাঁচাতে আসবে না। দোতলা থেকে চিৎকার নিচতলায় যাবে না। কোনো কাজের লোক আসবে না। মা ও কিছু করবে না। আর নীরা? ওর কিচ্ছু করার নেই।”
ভিতর থেকে ধ্বস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আমি কাকে ডেকে আনবো? আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। আমি কোনো কিছু না ভেবেই জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম। আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ভিতরের দৃশ্য দেখে।

মায়ের গলা আফজাল এক হাত দিয়ে টি*পে ধরে রেখেছে আরেক হাত দিয়ে টেপ রেকর্ডারটা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। মা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু আফজালের মতো একজন শক্তপোক্ত লোকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানো কি সহজ কথা? কিন্তু কোনোভাবেই মা টেপ রেকর্ডার টা হাতছাড়া করছে না। আমি চিৎকার করে ডাকতে গেলাম মা কে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম এখন আমি চিৎকার করলে আমাকেও এখানে বন্দী করে ফেলবে। দুইজনকেই মেরে ফেলবে। কেউ কাউকে বাঁচাতে পারবো না। তাই বাইরে থেকেই আমাকে যা করার তাই করতে হবে। কিন্তু কীভাবে কি করবো? ওদিকে মা ছটফট করছে বাঁচার জন্য।
“এটা দিয়ে দে রুনা। বাঁচতে চাস তো দিয়ে দে।”
মা কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু বলতে পারে না। মায়ের ফর্সামুখ বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরে পড়তে থাকে। অস্থির হয়ে যাই আমি মা কে বাঁচাতে।
আমি অস্থির হয়ে এদিকে ওদিকে তাকাই। হঠাৎ আমার চোখ যায় পাশেই ইনডোর প্লান্টের মাটির উপর রাখা পাথরের টুকরোর দিকে। এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে আমার ঠোঁটে। আল্লাহ সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস হাতের কাছে এনে দেন। দৌড়ে যেয়ে বেশ কয়েক টুকরো পাথর তুলে নিই হাতে। আবার ফিরে আসি জানালার কাছে। মায়ের অবস্থা তখন করুণ, কিন্তু কোনোভাবেই টেপ রেকর্ডারটা হাতছাড়া করেননি এখনো। আমি আর দেরি করলাম না। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাতের পাথরগুলো ছু*ড়তে লাগলাম আফজাল নামক নরপশুটার দিকে।

বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ হয়না। ওদিকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুইজন। কেউ ভাবতে পারেনি আমি এখানে আসবো। কপাল ফে*টে গলগল করে র*ক্ত পড়ছে আফজালের। সে মায়ের গলা ছেড়ে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার চোখে ভয় আর রাগ। বাঁধন আলগা হতেই মা খকখক করে কাশতে শুরু করলো।
আমি চিৎকার করে বললাম,”মা বেরিয়ে আসো। এক্ষুনি বেরিয়ে আসো। নাহলে ও শেষ করে দিবে তোমাকে।”
মা আর এক মুহুর্তও দেরি করলো না। দরজা খুলতে গেলেই আফজাল আবারও চে*পে ধরতে গেলো তাকে। মা এবার তার সর্বশক্তি দিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। বেরিয়েই বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি ছুটে যেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো এরপর দুই গালে আমাকে অজস্র চুমু দেওয়া শুরু করলো।
মা উপরের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বলতে লাগলো,” রাত্রিরে, তুই আমাকে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়ে গিয়েছিস। আমার মেয়ে, আমাকে আজ বাঁচিয়েছে। আমার আর কিচ্ছু চাইনা, কিচ্ছু না।”
আমি মা কে শক্ত করে চেপে ধরে রাখলাম। যেনো ছেড়ে দিলেই মা চলে যাবে। ওদিকে আফজাল জোরে জোরে শব্দ করছে দরজায়,”এই কে আছিস, খোল দরজা খোল। শেষ করে দিবো সবাইকে।”
তার চিৎকার এতোক্ষণে কানে যায় দাদীর। মহিলা ছুটে এসেছে ছেলেকে বাঁচাতে। দরজার সামনে আমার মায়ের রণমুর্তি দেখে ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায় সে, হয়তো বুঝতে পেরেছে তাদের সময় শেষ। আমি লাল টকটকে চোখে তাকাই তার দিকে। আজ এই মহিলার জন্য আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এতোদিন ভালো মানুষের মুখোশ পরে আমাদের সামনে ঘুরছিলো। আমি ছুটে যেয়ে উনার ঘর থেকে রনিকে তুলে কোলে নিয়ে আসি। এদের কাউকে আর বিশ্বাস করিনা আমি।

হাশেম আর আফজালের মায়ের দুইজনের বারো বছর করে সশ্রম কারা*দণ্ড হয়েছে আর আফজালের হয়েছে মৃ*ত্যুদণ্ড। কোর্টে চিৎকার করে কাঁদছে ও। আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সেই কান্না দেখে। আজ এতোদিনের করা অপরাধের শাস্তি ও পাবে। আমি একবার উপরের দিকে তাকাই আর একবার আমার মায়ের দিকে তাকাই। আজ সত্যি সত্যি আমার মনে হচ্ছে আমার মা-ই নতুন রূপে আমার কাছে এসেছে আমাকে বাঁচাতে। মা মিটিমিটি করে হাসছেন আমার দিকে তাকিয়ে। হাত বাড়িয়ে ডাকলো মা আমাকে। আমি তার বুকে যেয়ে ঝাপিয়ে পড়ি। না তিনি আমার সৎমা না, তিনি আমার মা, হ্যা আমার মা।

(সমাপ্ত)

[কিছু কথাঃ আমি জানি আপনারা সবাই অনেক রাগ করে আছেন যে পরের পর্ব দিতে এতো দেরি কেনো করছি। আসলে আমার দোষ ছিলো না। ফে*সবুক থেকে ডিলিট করে দেওয়া হচ্ছিলো, অনেক আগেই আমি পোস্ট করেছিলাম। চেষ্টা করেছি ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার। কিন্তু এখনো জানিনা এটাও ডিলিট হবে কিনা। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here