🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৬
🍁🌼🍁
উনি আমার মুখ তুলে কপালে চুমো আঁকলেন। আমি চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার অনুভূতিগুলোকে জমা করছি হৃদয়ের অন্তস্থলে।এখন শুধু মনে হচ্ছে অনুভুতিগুলো যতই ভারী হয়ে যাক এই অনুভূতির ভার যে আমাকে নিতেই হবে।ভালোবাসার মানুষের সংস্পর্শে এলে সব থেকে শান্তির ছোয়া হয় জড়িয়ে ধরা আর কপালে চুমু। এই ছোয়া কতটা শান্তির হয় তা যে এই অনুভূতির সাথে পরিচিত তার দারাই ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
আহান আমার কপাল থেকে ওষ্ঠদ্বয় এখনও সরায় নি।জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খাওয়ার অনুভূতি গ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার তাহলে হয়েই গেলো। রিতু প্রায়ই বলতো একটা সম্পর্ক শুরুর পরে যখন ভালোবাসার মানুষ জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দিবে বুঝতে পারবি তোর শরীরের মোহের থেকে মানুষটার তোর প্রতি মোহ অধিক।আহানও কি তাই?ভাবতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। চোখ বন্ধ করেই ভালোবাসি শব্দটা বারংবার বলছি।আজ মুখ থামবে না।
— এই ইচ্ছু প্রথমেই এভাবে বার বার এতোবার ভালোবাসি বলতে থাকলে আমার হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাবে রে।জিরিয়ে নে একটু
আবার বুকে হাত দিয়ে বললেন
–দ্যাখ দ্যাখ চিন চিন করছে।হ্যা হ্যা এখানটায় খুব।খুব ব্যাথা করছে রে ইচ্ছু খুব।কি শুনালি।এতো মিষ্টি করে ভালোবাসি বললে চিনি ভেবে খেয়ে ফেলবো তো।আমি কিন্তু পিঁপড়া। সাংঘাতিক পঁচা পিঁপড়া।
আমি তার কথায় বোকাবনে গেলাম মানুষ পিঁপড়া হয় নাকি?
— এই চিনি।
— কে চিনি?
— তুই চিনি।আমার চিনি। আর আমি সেই চিনি পাগল পিঁপড়াটা।
তার সেদিন আমাকে চিনি বলার কারণটা আজ স্পষ্ট আমার কাছে।
— আমার চিনি বউ।
ওনার মুখে বউ ডাক শুনে লজ্জাবতী পাতার মতো কুকড়ে গেলাম।
— পিপড়ার কিন্তু অলৌকিক শক্তি আছে।চিনি যেখানেই থাকে ঠিক খুঁজে বের করবেই।আমি সেই পিপড়া বুঝলি তো।আর ভুল করে না ইচ্ছুপাখি কেমন?দ্যাখ আজ আমি রেগে অনেক খারাপ করে ফেলেছি।আমার রাগ উঠাবি না।তুই বাবু টাইপ একটা মেয়ে। কি আদুরে দুইটা গাল তোর। যে কেউ টেনে নিয়ে যেতে চাইবে তো। আমার যে এই আদুরে গালের অধিকারী বউটাকে লুকিয়ে রাখতে মন চায়।কই লুকাই বলবি?
আমি মিষ্টি হেসে আবার ওনার বুকে মুখ লুকালাম।
— তোর উত্তর ঠিক।বুকেই লুকাবো তোকে।
এই বলে আহান খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ।
তারপর কোলে তুলে রুম পর্যন্ত আনলেন।কি নেশাক্ত চাওনি তার….
আমার বুকটার দুরু দুরু শব্দ নিজের কান পর্যন্ত এলো। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শিহরণ সারা শরীরে বয়ে গেলো। বিছানার সামনে চলে এসেছি।ওমনি ধপাশ করে বিছানায় ফেলে দিলেন।
— ওমাগো আহান আমার কোমর শেষ।। আল্লাহ গো
— চুপ কিচ্ছু হয় নি তোর।তুই রীতিমতো পিঁপড়াকে চক্ষু দৃষ্টি দিয়ে ঘায়েল করছিলি। বললাম না আমি সাংঘাতিক পঁচা পিপড়া? অনিষ্ট হয়ে যাবে…
–আমি কখন চক্ষু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম? আপনি কিভাবে তাকিয়ে আছেন আমি তো তাই দেখছিলাম।
— ফাজিল মেয়ে।বড় হয়ে যাচ্ছিস। বুঝেছি তোর জন্য বাচ্চার বাবা খুজতে হবে।
— বাচ্চার বাবা কেন? আপনি যে আমাকে প্রপোস করলেন।অন্য কেউ কেন? বিয়ে করবেন না বুঝি?ওই আরিয়া
— বেশি বকিশ।যে কারণে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিস তাতে তো বাচ্চার বাবাই হয়। বর হয় না।
মেকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন।কথা ভুলও বলেন নি।আমার শরীর কথা বলছিলো আমি বুঝতে পারছিলাম।কিন্তু মাত্র একটা কিস এর জন্য অন্য কিছু না তো।আর উনি বাচ্চার বাবায় চলে গেলেন।
—–
— আমি আর খেতে পারছি না আহান।সকাল সকাল কি শুরু করলেন।নিজে মাত্র একটা দুইটা রুটি খেলেন। আর আমাকে এই নিয়ে অাটটা।পেট ফেটে যাচ্ছে তো…
ধমক দিয়ে বললেন
— চুপ শক্তি ইয ঠু মাচ ইম্পর্ট্যান্ট ফর ইউ।
একে বুঝানো ইম্পসিবল । একে কথা বুঝানো আর পাগলকে বুঝানোর মধ্যে আমি কোনো তফাৎ পাই না।
মুখ ধুইয়ে মুছিয়ে গেলেন।কত্ত কেয়ারিং সে।আর এখন একবারে জামাইর মতো ।তবে আহান আগেই কেয়ারিং ছিলেন ধরা দিতেন না শুধু।এখন দিচ্ছেন হয়তো ভালোবাসা আদানপ্রদান হয়ে গেছে তাই।
— কলেজ যাবি না?
— হুম
— রেডি হয়ে আয়।
— অকে।
——–
ভার্সিটিতে এসেই দিপুকে দেখতে পেলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে।দিপুর সাথে রিতু, রিতুর বিএফ,পউশিও দাঁড়িয়ে। পউশি আমাকে দেখে দৌড়ে এলো।
— হ্যা রে আহান তুই বড় হয়ে গেছিস। বুড়ো মেয়েটাকে পাগল করে ফেললি।
আহান হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো
— আপনার বান্ধবী পিচ্চি একটা বাচ্চা আপু।ও সারা জীবন আমার ছোট ছিলো। ছোটই থাকবে।বরং আমিই বড়।
— তবুও বড় তো।তোকে দেখে কতো ক্রাশ খেলাম আর এই শয়তান মেয়েটা পটিয়ে ফেললো।
আমরা সবাই হেসে উঠলাম।আমি আর আহান বেশিই হাসছি।
— কিরে তোদের হাসি থামছে না কেন?
আহান বললো
— দিদি পিছনে তাকাও।
পউশি পিছনে ওর বিএফ সাদকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
সাদ বলে উঠল
— কি তুমি নাকি ক্রাশ খাও নি এ জীবনে?
— বিশ্বাস করো আমি জীবনে ক্রাশ খাই নাই।খাইতে কেমন লাগে তাও জানি না।তুমিই প্রথম ভালোবাসা আর তুমিই আমার শেষ।
পউশির ভ্যাবাচেকা খাওয়া উত্তরে আমি আহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি ।
— এই আহান কেমন আছো?
— জি দাদা ভালো। আপনি কেমন আছেন?
— হ্যা আছি এই। বড়ো মেয়ে পটিয়ে ফেলেছো। আর আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।(সাদ পউশির দুই বছরের বড়)
— সব গুলোই বাচ্চা দাদা । এটার তো বুদ্ধি হাটুতে।(ইচ্ছের মাথায় গাট্টা মেরে)
— ভরা সমাজেও মারবেন আহান?( ইচ্ছে)
–এই তোমাদের তুমি আপনি ডাকা টা পারসোনালি আমার কিন্তু দারুন লাগে।(সাদ)
— হ্যা হ্যা আমারও(পউশি)
— থ্যাঙ্কিউ দাদা(আহান)
আর ইচ্ছে বেশ লজ্জা পেলো।
— আহান তোমার প্লান কি? এডমিশন প্রিপারেশন কেমন?
–আগে থেকেই প্রিপারেশন নেয়া দাদা।আই গেস ভালোই হবে।
— হ্যা যেতেতু ইচ্ছে তোমার বড়। ভালো কিছু অবশ্যই করতে হবে।
— আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে সমস্যা নেই দাদা।ওর মা আমার মা বান্ধবী কিনা অল সেটেল।
— তাহলে তো ভালোই।চল ঘুরে আসি। বাইক রেখে দাও।রিকশা নেব দুইটা। আকাশ মেঘলা বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে।এই ওয়েদারের সাথে রিকশা মিস করবা না বুঝলে।তোমাদের নতুন প্রেম সুন্দর করতে তোমার দাদার পক্ষ থেকে এটা একটা টিপস মনে করবা কেমন?
পউশি আহান সাদ দাদা সবাই হাসছে।আর আমি বোঝার চেষ্টা করছি এক্সাক্ট কারণ টা ক?
আহান বাকা হেসে আমার হাত ধরে বললো চল।
রিকশায় বসার ৫ মিনিট পরেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। বাতাশ রিমিঝিমি বৃষ্টিতে মনটা বার বার আন্দোলিত হয়ে উঠছে।সামনের পলিথিনটা ফেলে দিলো আহান।রিকশা চলছে আপন গতিতে। দুজনের মধ্যে বিন্দু মাত্র ফাকা নেই।পায়ের দিক টা হালকা ভিজে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে বুঝি সব টাই ভালো লাগে।এই যে আমার মনে একরাশ সুখ দৌড়াদৌড়ি করছে।তখনকার কথা টা মনে পরে গেলো।
— আহান বৃষ্টিতে রিকশা মিস করতে নেই কেন?
— দেখতে চাস নাকি?
— হুম
পিছন থেকে হাত ঢুকিয়ে কোমর চেপে ধরলেন।এমন কাজে লাফিয়ে উঠলাম কিন্তু নড়তে পারলাম না।কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন
— দুষ্ট কাজ করে বুঝলি। একেবারে দুষ্ট কাজ।তুই করবি?এই যা করলাম তার থেকেও বেশি।
লজ্জাও পাচ্ছি কিন্তু গলা বড় করে বললাম
–না বাবা এসব করবো না।
— কেন করবি না?সাদ দাদা ক্লাস ফাকি দিয়ে হলেও টাইমটা মিস করলো না আর তুই???? পলিথিন সরিয়ে দেখ চিপকে আছে।
কৌতুহল থামাতে পারলাম না।ওদের রিকশা সামনে হওয়ায় রিকশার পিছনের ফাকা দিয়ে দেখলাম সত্যিই চিপকে আছে তারা।
— এই ছোট বাচ্চা ছেলেটাকে একটু আদর সোহাগ কর। কতো কতো মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছি তোর জন্য জানিস?
বলেই চোখ টিপলো
আমি ছোট ছোট করে বললাম।
— আমি বলেছি নাকি ফিরিয়ে দিতে?
— তুই তো বিরহে দেবদাসী হয়ে যেতি। আরিয়াকে দেখলে তোর মুখ কেমন হয় নিজে জানিস তা? আমি জানি
চোর ধরা খেলে কেমন মুখ হয় তেমন হয়ে আছে আমার।
কিন্তু আহানের মুখ থেমে নেই।
— কাল রাগের মাথায় যা করেছি তাতে ভালো এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে বুঝলি?দারুন
দারুণ বলে একটা মেকি হাসি দিলেন আমার বুকে তোলপার শুরু হয়ে গেলো।
এইবার আরও লজ্জা পেলাম।এতো কেন লজ্জা দেয় মানুষটা আমাকে?
পউশিদের রিকশা সামনে না দেখে ফোন দিলাম।কই নামবো কিছুই বলে নি তারা
— এই কই রে তুই?
— অসময়ে ডিসটার্ব করাটা তোর সভাব রে।( পউশি)
দাদা বার বার বলেই চলছে ফোন কাটো…আসো
— এই দোস্ত রাখলাম রে পরে কথা হবে।টুত টুত টুত….
আহান মুখ টিপে হেসেই চলছে।দেখলি বিএফ এর কথার কতো দাম।
–শুধু তুই দিলি না। এই কথাটা বলতেই আহানের মুখ ভোতা হয়ে গেলো।
আসলেই লজ্জাজনক।পউশির বাচ্চাকে পাই ওর রোম্যান্স বের করবো আমি।
আহান বলে উঠলো এখান থেকে রিকশায় করে বাসায় যেতে এক ঘন্টা লাগবে।
— হুম
— কি হুম?
— কিছু না।
— ওকে।
–দ্যাখ রিকশা আর বৃষ্টি একসাথে আমরা কবে পাবো জানি না…
— হুম হয়তো। ওয়েদার টা কি সুন্দর। দেখুন।একনাগারে বৃষ্টি…
— উহ থাম।
— কেন? বোকার মতো তাকিয়ে
— দ্যাখ মেঘ হবে হয়তো বৃষ্টি হবে না। বৃষ্টি হবে কিন্তু রিকশায় চড়ার সুযোগ পাবোনা।সো আমি সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই
— হ্যা সেটাই.. তাই ই তো মন দিয়েই সময়টা উপভোগ করছি।
— কই করছি?
আমার কোমরে জোরে চিমটি কেটে।
–উমাগো
— চুপ একদম চুপ। রিকশা মামা কি ভাব্বে
— তাই বলে এভাবে চিমটি দিবেন।
— এখন আরও দিব।
চিমটি কাটছে আর আমি দাত খিচিয়ে সহ্য করছি।
আর উনি হেসে হেসে বলছেন
— পিঁপড়া শুধু কামড় দিচ্ছে তাই না?
–হুম প্রচুর। আর আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি বুঝলেন?
— কর সহ্য কর।সহ্য শক্তি বৃদ্ধি করা অতি উত্তম কাজ।
বলেই তার কর্মহীন বাম হাত টা সচল হলো। আমার গাল চেপে ধরে গালে চপাশ চপাশ করে চুমু দিলেন কয়েকটা। এরপর লাগাতার চুমু দিচ্ছেন তো দিয়েই যাচ্ছেন থামাথমির নাম নেই।মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধে নেমেছেন।গুলি ছুরতেই হবে। থামলেই বিপদ। আজ আমার গালের ছাল তুলে নিবেন এমন লাগছে আমার।
কোনোমতে থুতিয়ে বল্লাম।
— রিকশা মামা শুনছে তো এত শব্দ করছেন কেন? দিবেন দিন আস্তে সুস্থে দিন।গালেন ছাল উঠে যাচ্ছে রে বাবা
— জামাই ডাক জামাই।
শুধু এটা বলে তিনি তার মহৎ কাজ করতে ব্যস্ত।আর আমি মুখ ভোতা করে বসে আছি।পাগল নাকি?
একপর্যায়ে গালের উপর হামলা শেষ হলো ।আমি জোরে একটা শ্বাস নিলাম।
— এটা প্রতিশোধ ছিলো বুঝলি?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম প্রতিশোধ?
–হুম ( বেশ গম্ভির কন্ঠে)
— কেন আমি কি করেছি?
আহান ফোন থেকে একটা ভিডিও অন করলো।আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।একটা পর্যায়ে তার পাশে বসে থাকা লজ্জার হয়ে গেলো। কি একটা অসস্থিকর অবস্থা। পারি তো রিকশা থেকে লাফ দি এমন একটা অবস্থা। তাকে জোর করে লিপকিস করছি। টাইম দেখলাম টানা এক দেড় ঘন্টা ধরে এই কাজ করেছি সেখানে সে ত্রিশ মিনিট।। আমি ঠোঁট চিবিয়েছি বলতে গেলে আর সে গালে চপাশ চপাশ চুমু।।প্রতিশোধ কম ই নিয়েছেন।
— দেখলি হাগুরানী সেদিন কি করেছিলি আমার? সাধ করে কি কেউ খাবার কম খায়?আর আপনি তো দারুন ঝাল রান্না করেন।
আমতা আমতা করে বললাম তার মানে সেদিন আমি আপনি যা বলেছিলেন তা করি নি তাই না?
— সন্দেহ আছে?নিজেই তো আমার ফোলা ঠোঁটে চেক করছিলি
বিনাবাক্যে তার ডান হাতটা নড়াচড়া শুরু করে দিলো।
— আহান সুরসুরি লাগছে তো
নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
–লাগুক।আমি আমার প্রতিশোধে পরিতৃপ্ত না।একদম না একদম না ইচ্ছু।পাখি…
ওনার মুখে পাখি ডাকটা আমার বুকের ভিতর শীতল এক অনুভূতির জন্ম দেয়।তার চোখ বলছে তার চাওয়া,,,,,কি জানি কি হলো নিজেই তার চাওয়া পূরনে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।