তুইতেই আমি🏵পর্বঃ১৭

0
2481

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৭

🍁🌼🍁

তিনদিন পরে বাসার লোকজন চলে এলো। এই তিনটা দিন আমার কাছে সপ্নের মতো ছিলো। আহানের আকাশচুম্বি শেয়ারিং কেয়ারিং ভালোবাসায় আমার ভালোবাসার ডানা আকাশে উড়ছিলো অবিরাম। জন্মের পর এতো খুশি এতো সুখ কিছুতেই মনে হয় নি আমার। একেই বলে হয়তো পৃথিবীর সর্গীয় সুখ।

বাসায় মানুষজন আসায় মন খারাপ হয়েছে বটে কারণ তার সাথে একান্ত সময়গুলো পাবো না।এক ঘরে থাকা হবে না। ইশ আজই যদি তার সাথে বিয়ে হয়ে যেতো!!!!

দিনে দিনে আহানের পড়াশুনার চাপ বাড়ছে। কিন্তু তার কেয়ারিং আদোও কমে নি।আমাকে ভার্সিটি দিয়ে নিজে কোচিং এ যাবে। বাসায় এসে আমাকে টাইম দিবে।রাতের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে আমার হাত ধরেছাদে হাটবে।তখন কতশত গল্প জুড়ে বসবে,মাঝে মাঝে আবার কোলে নিয়ে হাটবে।সুযোগ পেলে গলায় মুখ ডুবিয়ে আমাকে ফ্রিজড বানিয়ে দিবে।তার জানালাটা এখন খোলাই থাকে। টেবিলের সামনেই জানালা।সেখান থেকে সারা রাত আমাকে দেখবে আর পড়াশুনা করবে।রাত দিন এক করে ছেলেটা পড়াশুনা করছে।আল্লাহর কাছে দোয়া করি ভালো কিছু হোক।

এমন না যে আমি দেখি না সুযোগ পেলে আমিও তাকিয়ে থাকি। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তাকেই দেখি।কিন্তু এক পর্যায় বলে উঠেন “এই তুই তাকাবি না আমার তাকানোতে ডিসটার্ব হয়। একদম চোখ বুঝে থাকবি চোখ বোঝ বোঝ”। আহানের ধমকেই আমার চোখ বুঝে যেত।আর তারপর ঘুম… এটা রোজকার নিয়ম।

তার যাতনায় মাঝে মাঝে আমাকে নাচতেও হয়।রাতের বেলা বলবে ” পাখি নাচ তো একটু, আমার ঘুম পাচ্ছে। পড়া মাথায় ঢুকছে না নাচ তো নাচ”

আবার রাতে ঘুমিয়ে গেছি তিনটা চারটায় ফোন দিয়ে উঠিয়ে বলবে “এই নাচ তো আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।অনেক পড়া বাকি পাঁচটার আগে ঘুমানো যাবে না”
সেই রাতে অগত্যা বাধ্য হয়েই আমাকে নাচতে হতো।
একদিন তো নাচতে নাচতেই ঘুম।পরের দিন আমার ঘুমের ব্যাখ্যা দিতে দিতে তার কি হাসি।

মেয়েদের হাসিতে নাকি মুক্ত ঝরে কিন্তু আমার মনে হয় আমার এই মানুষটার মধ্যে সব ধরনের সৌন্দর্য আছে। সারাদিন আমার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে চোখ সরানো দায় হয়ে পরে।।

আহানের কারণেই আমি স্কুল কলেজ ফাংশনে কখনও নাচতে পারি নি।আর আহানকে আমার আগেও প্রায়ই নেচে দেখাতে হতো।
বলতো “বাসায় টিচার রেখে নাচ শিখিয়েছি আমায় নাচ দেখাতে বাইরের মানুষকে নয়”

একবার না জানিয়ে দলীয় নৃত্য করেছিলাম কি জানি কিভাবে খবর পেয়েছিলেন। বাসায় এসে ওর থাপ্পড় থেকে আব্বু আম্মুও বাঁচাতে পারে নি।

রাতের বেলায় দোলনায় তার কাধে মাথা রেখে এক মগে কফি খাওয়াটা আলাদা এক সুখ আমার কাছে।কি জানি কয়জনের সত্যিকারের ভালোবাসার ভাগ্য আছে কিন্তু আমার ভালোবাসার ভাগ্যে আমি অনেক খুশি।অনেক।

কিন্তু সমস্যা একটাই আহানের দিন দিন বডি ফিটনেস ব্যাপক নজরকারা হচ্ছে।কি সুন্দর তার আঁকা ঠোঁট।নগ্ন পায়ের ভিজে পশম আলাদা এক ভালোলাগার জন্ম দেয়।তাকে আজকাল লুকিয়ে রাখতে মন চায়। খুব ভয় লাগে কেউ কেড়ে নেয় যদি?

——-

এডমিশন রেজাল্টে আহানের বুয়েটে ভালো সাব্জেক্টেই চান্স হয়ে গেলো। কিন্তু সেটা বাসা থেকে দূরে হয়ে যায় যার কারণে তাকে হোস্টেলে থাকতে হবে।কিন্তু তিনি তাতে নারাজ। সে প্রতি দিন বাইক নিয়ে এতোটা রাস্তা পাড়ি দিবে।নয়তো ওখানে বাসা ভাড়া নিবে আমাকেও গিয়ে থাকতে হবে।

— না আহান আব্বু আম্মু ভালো মা ভালো বাবা এটা কিছুতেই মেনে নিবে না।আর আপনার ভার্সিটি এখান থেকে কতো দূরে। রেগুলার বাইক নিয়ে আসা যাওয়া আমার কাছে ভয়ের…

— কিসের ভয়? আমি তোকে ছাড়া দূরে থাকতে পারবো না।ব্যাস

— পাগলামি করলে হয়?

এইবার রীতিমতো আমার দিকে ধমক ছুড়ে দিলেন। মাথা ঠান্ডা করে নিজেই আবার ক্ষমা চাচ্ছেন।
আমার গাল দুইটা ধরে
–সরি ইচ্ছু পাখি আম সরি। তোকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব না। একদিনও না ।তুই বুঝিস না? আমাদের একসাথে থাকতে দিলে আমি ভার্সিটির পাশেই বাসা রাখবো। আর ওখানেই থাকবো

— সেটা কি মেনে নেয় বলুন? আর আমার ভার্সিটি থেকেও তিনগুন দূরে আপনার ভার্সিটি।আর একসাথে থাকতে দেয় ছেলে মেয়েদের একা?

— কেন সেবার যে ছিলাম?

— সেবার আর এবার এক হলো? আচ্ছা বুঝলাম আমি থাকবো আপনার সাথে।ভার্সিটিও লাগলে চেন্জ করলাম।কিন্তু ফ্যামিলিকে কি বলবেন আমি ইচ্ছেকে ছাড়া থাকতে পারব না তাই ইচ্ছেকে আমার সাথে থাকতে হবে?সেটা কে মানবে? তখন যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে এমন কি সম্পর্ক যাতে ইচ্ছেকে ছাড়া থাকা যাবে না?তাহলে কি বলবেন? তাছাড়াও বিয়ে ছাড়া এই সমাজ কি বলবে?

–তার থেকে বাসায় বলে দি আমরা বিয়ে করবো।তাহলেই তো মিটমাট।তাই না? সেই কয়দিন না হয় আমি বাসা থেকে বাইকে করেই ভার্সিটি গেলাম?

— আহান আপনার ফিউচার আছে পাগলামি করবেন না।এই বয়সে বিয়ে কেন করবেন?

— তাহলে তোকে পাবো টা কি করেএএএএ?????????????

এতো জোরে চিল্লানিতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে তার ।তাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারবো না কিন্তু তার মতো অবুঝ হলেও তো চলবে না।

আমি ভয় পেয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরলাম।জানি এবার সে শান্ত হতে বাধ্য।

আহানের করুণ গলায় বুকটা থেমে গেলো।
“” পাখি রে তোকে ছাড়া আমি সত্যি থাকতে পারবো না। ভাবতে পারি না তোকে ছাড়া কিছু… একদিন না দেখলে পাগল পাগল লাগে আমার।এই দুরত্ব সম্ভব না আমার দাড়া বুঝিস না তুই?””

এরপরেই সারা মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিলেন।তার চপাশ চপাশ চুমুর শব্দটা আজকাল আমার কাছে বেস্ট টিউন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেদিন সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দিলাম দোলনায়। আহান আমার কোলে মাথা রেখে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পরলেন।আমি কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে দেখছি।কি মায়া তার চোখে মুখে।ভালোবাসাটা অসুখ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

কপালে চুমু দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রিমলাইটের লাল নীল আলোয় তার মুখখানাই এখন আমার নিকট শ্রেষ্ঠ দর্শণীয় স্থান।

🎶ভালোবাসা বুঝি তাকেই বলে
যার মুখ দেখলে বুক ধুকবুক করে

আহানের ঘুমে চোখ লেগে এসেছিলো কিন্তু ইচ্ছের বলা ছন্দে ঘুম ছুটে গেলো। মিষ্টি হেসে বললো

–আবার বল তো পাখি

— আপনি ঘুমান নি?

— যা বলতে বলেছি তাই বল

–আরে মাথায় এলো মুখ দিয়ে বলে ফেললাম

— জানতে চেয়েছি?বলতে বলেছি বল

🎶ভালোবাসা বুঝি তাকেই বলে
যার মুখ দেখলে বুক ধুকবুক করে

আমার বলা শেষ হতে না হতেই আহান মাথা ঘুরিয়ে আমার পেটে মুখ গুজে বললেন

— কি বুক ধুকবুক করে?

আহানের কাজে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।নিষেধ করলেও শুনবেন না জানি। তবুও শেষ চেষ্টা করতে পারি

— আহান সুরসুরি লাগছে আহান

— তাই নাকি যা লাগছে তা সুরসুরি?

— যা ই হোক লাগছে কিছু একটা

— তো সহ্য কর

আমার কিছু বলার নেই।কারণ কথা শোনার মানুষ নন তিনি।

— আহান এটা আর একবারও করবেন না।পেটে চুমু দেবেন না বলছি

— তোর সহ্য শক্তি এতো কম? আমি পুরুষ মানুষ হয়েও তোর থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা বেশি রাখি। ( ভাব নিয়ে)

— হ্যা তা তো দেখতেই পাচ্ছি।অকাজ কে করছে আমি নাকি আপনি হ্যা?

— আমি… কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবি না সেই ভয়ে আমাকে বাধা দিচ্ছিস তুই।দুষ্ট মেয়ে খালি পঁচা পঁচা চিন্তা মনে তাই না? তাই তো নিষেধ করছিস।

— আমি পাগল হয়েই যাব

-যা… বলেই পেটে এক কামড় দিলো।

আমি এতো ব্যাথা পেলাম যে কেদেই দিলাম।

— কাঁদবি না। একদম কাঁদবি না।ট্যাটু করে দিলাম বুঝলি তো।ডেইলি এক একটা কামড় দিবো যাতে দাগটা স্থায়ি হয়ে যায়।

নাক টানতে টানতে বললাম চাই না এমন ট্যাটু আমার।আল্লাহ বত্রিশটা দাঁতই বসাই দিছেন।

— তুই সিওর বত্রিশটা?আমার দাঁত তো আঠাশটা।তোর কথাও ফালানো যায় না।কই জামা উঠা তো দেখি কয়টা দাত বসেছে!!! চেক করে দেখি বত্রিশ বাকি আঠাশ।

এতক্ষণে ওনার ইননোসেন্ট ফেস করে কথাগুলো বলার মানে বুঝতে পেলাম।কি দুষ্ট বুদ্ধি বাবা

— নাহ আপনার বত্রিশ দাত দেখতে হবে না। কোল থেকে মাথা উঠান

— আমার মুখে মুখে তর্ক??? সাহস তো কম না তোর।( একটু ধমক দিয়ে)

কিন্তু ওনার চালাকির ধমকাধুমকি তে আমার কথার নড়চড় হলো না।

— না দাঁত আপনার যে কয়টা সে কয়টাই বসেছে এতে সন্দেহ নেই।তার থেকে বরং আপনি আপনার দাঁত কয়টা গুনে আবার সিওর হয়ে নিন।

— দিনে দিনে তুই খুব চালাক হয়ে যাচ্ছিস ইচ্ছু।

— আপনার গার্লফ্রেন্ড বলে কথা (একটু ভাব নিয়ে)

— দে না দেখতে ইচ্ছু পাখি।একবার দেখবো বেশি না।মাত্র একবার। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।শুধু তো পেটে কামড়ের জায়গাটুকু… প্লিজ পাখি

— না হবেই না।

— প্লিজ পাখি। আমি চোখ বন্ধ করে দেখবো প্রমিজ

–তাহলে দেখবেন টা কি?

— এক ফাকে চোখ খুলে এক ঝলক ঝটাপট দেখে নিবো।তুই টের পাবি না।হিহি

ওনার কথায় হাসতে হাসতে আমার দুই গাল ধরে গেছে।

–হাস তুই… দেখাতে হবে না। ( অভিমান দেখিয়ে)

তার কাছে হেরে গেলাম প্রত্যেক বারের মতো।

আমতা আমতা করে বললাম
— ঝটপট করে দেখে নিন।আপনি দেখেছেন আমি যেন না দেখি

আমার কথায় হেসে বললেন একদম দেখবি না শুধু অনুভব করবি।

তারপরে নিজেই জামা সরিয়ে দেখতে গিয়ে থেমে গেলেন।কি হলো বুঝতে পারলাম না

–আমার লজ্জা করছে ইচ্ছু

— তাহলে বরং থাক ( হেসে হেসে)

— না মানে তুই দেখিয়ে দে না।আমি তো জানি না কোথায় কামড় দিয়েছি।দেখা গেলো কামড়ের জায়গা দেখতে গিয়ে অন্য কিছু দেখে ফেললাম।অনর্থ হয়ে যাবে না?বাই অন গেট অন ফ্রি টাইপ ব্যাপার স্যাপার হয়ে যাবে তখন বুঝলি।বলেই মেকি হাসলেন

এই মুখ কাটা মানুষের নাকি লজ্জাও লাগে বাপরে।

জামা সরিয়ে কামড়ের অংশ দেখালাম।এরপর শুরু হয়ে গেলো তার কথার ইতিহাস।

প্রথমে কতক্ষণ মুখ হা করে চোখ বড় বড় করে দেখলেন তারপর একটার পর একটা কথার ঝুড়ি।

— হ্যা রে বত্রিশটা দাত বসে নি দেখেছিস।শুধু সামনের কয়টা বসেছে।

— ইচ্ছু তোর পেট এতো ফরসা কেন? এতো ফরসা হয় পেট?

কি জানি এর উত্তর পেলাম না আমি।

–ইচ্ছু একটা চুমু দি?প্রশ্ন করতে দেরি হয়েছিলো চুমু খেতে দেরি হয় নি আমার পারমিশনের অপেক্ষাও করেন নি

— ইচ্ছু দ্যাখ অনেক লাল হয়ে গেছে কামড়ের দাগের জায়গাটা।

— ইচ্ছু এরপরে তো আমাকে দেখে দেখেই কামড় দিতে হবে।
দ্যাখ বড় দাঁত গুলোর জায়গায় বড় দাঁত গুলো আমি না দেখে বসাই কিভাবে? এরপরে জামা জাগিয়ে দেখে দেখে কামড় দেব কেমন? ( ইননোসেন্ট ফেস করে)

— ভয় পাস না এরপর আর এতো জোরে কামড় দেব না। ডেইলি না দিলে দাগ স্থায়ি হবে না তাই তো কামড় দিতে হবে।আমার দোষ কি বল?

— ইচ্ছু শরীরে কি লাগাস রে? এতো নরম কেন? (আঙুল দিয়ে টিপে)

— অনেক সুন্দর।

— আর কিছু দেখার অনুমতি চাই না। কিন্তু কেন জানি না প্রচুর দেখতে ইচ্ছে করছে।তাই আমি এখনি স্থান ত্যাগ করতে চাই।

তার এতো কমপ্লিমেন্ট আর কথার মাঝে আমি হা হয়ে ছিলাম, লজ্জা পাচ্ছিলাম,অবাক হচ্ছিলাম।সবশেষ কথায় লজ্জায় আমার নাক কাটা যাচ্ছিল। হ্যা তিনি চলে গেছেন। ছটফট করছি আমি।সেও তার ছটফটানি দেখাতে চায় না বলেই হয়তো তারাতাড়ি করে চলে গেছেন।

এই পাগল আসলেই থাকতে পারবেন না আমাকে ছাড়া। আরে পাগলামি ছাড়া ভালোবাসা হয় নাকি?অজান্তেই বলে উঠলাম ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসিইইইইইইইইইই।

তিনি তার রুম থেকে চিল্লিয়ে বললেন “আস্তে বল তোর বাপ চলে আসবে রে মা”

এতক্ষণ বউয়ের অধিকার খাটিয়ে এখন মা? এ কেমন বিচার?
আসলে সব আমার বানানো ছন্দের দোষ।নইলে এই পেট কামরাকামরি পর্যন্ত যেত না।হুহ

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here