🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২৫
🍁🌼🍁
আহান অতি দ্রুত ইচ্ছেকে কোলে তুলে নিলো।ড্রেনিলার কাছে ইচ্ছের কোন রুম জানতে চাইলে আহানকে দেখিয়ে দেয়।
বিছানায় শুইয়ে ইচ্ছেকে পানির ছিটা দিতেই চোখ কুচকে ফেললো। জ্ঞান ফিরে আসতে আস্তে করে চোখ খুললো।আহান কে সামনে দেখে কি করবে সেটাই মাথায় আসছেনা।এতটা দিন দেখেনি মানুষ টাকে দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুন।আবার ভয়ও লাগছে কি অবস্থায় না রেখে এসেছিলো মানুষ টাকে।কোন মুখে কথা বলবে কোন মুখ নিয়ে তাকাবে? যাকে পিছু ছাড়ানোর জন্য সবার থেকে এতটা দূরে পারি জমালো সে কিনা আবার সামনে!!!!!সব কি জেনে গেল তাহলে ? কেন এসেছে আমার কাছে?
আহান কিছু বললো না ইচ্ছের মনের কথা, চিন্তা ভাবনা হয়তো বুঝতে পেরেছে।ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।সাওয়ার নিয়ে জার্নির ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করলো। তারপর ইচ্ছের রুম থেকে বের হয়ে সামনের রুমের সোফায় শুয়ে পরলো।কিছু সময় মানুষের এমন হয় যে প্রশ্নের শেষ নেই কিন্তু প্রত্যাশিত মানুষটা সামনে আসলে সব কথা, সব প্রশ্নরা মুখের মাঝেই হারিয়ে যায়।আহানেরও তাই।বলার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বলা যায় না বা প্রশ্নগুলোই অতলে হারিয়ে গেছে।
রাত ১০ঃ০৫ এর দিকে ড্রেনিলার ডাকে আহানের ঘুম ভেঙে যায়।
— হ্যালো হ্যালো। হেই হ্যান্ডসাম খাব্বে না?
— ইয়েস।হোয়ার ইজ শি?( ইচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করলো)
— স্ট্যানডিং বাই দা উইন্ডো। এভার সিন্স ইউ স্লিপ্ট।
— ওউ অকে।খেতে দাও
— ওহ ইয়াহ
— আই হাভ লার্ন্ড সাম বাঙ্গালি ওয়ার্ড দ্যাট ইচ্ছে সেস এভরি ডে।
— ইয়েস আই আন্ডার্স্ট্যান্ড।
আহানের ভাত খেতে গিয়ে মনে হলো ইচ্ছেও হয়তো খায় নি।তাই ড্রেনিলা কে জিজ্ঞেস করলো
— ইচ্ছে খেয়েছে?
— ওহ নো নো।খায় নি।আই টোট্যালি ফরগেট ইট।
আহান আর দেরি করে নি খাবার নিয়ে ইচ্ছের রুমে গেলো।
— কিরে নায়কের বিরহে শেষ পর্যন্ত জালনার গ্রিল বেছে নিলি?নায়ক সামনে আর গ্রিল ধরতে হবে না এদিকে আয়
আহানের কথা ইচ্ছে শুনেও দাঁড়িয়ে আছে আহানের দিকে ফিরে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছে না।কতটা কষ্ট দিয়েছে আহানকে।আর সে কতো ভালো ভাবে কথা বলছে।
— তোকে আসতে বলছি আমি??????
আহানের বড়োসরো ধমকে ইচ্ছে আহানের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে আহানের দিকে এগিয়ে এলো। আহান বিছানায় বসে ইচ্ছেকেও বসতে বললো। ইচ্ছে বসতেই আহান ইচ্ছের দিকে খাবারের লোকমা এগিয়ে দিল।ইচ্ছের চোখে তখন পানি টলমল। কার কাছ থেকে পালিয়েছে সে? সে ই এসে হাজির।এত সুখী তবুও মনে হয় কিছুই যেনো স্থায়ী হবে না।
— কি হলো মুখে নে
ইচ্ছে মুখে নিলো।চোখের অনাগত জল যেনো না দেখা দেয় সেই চেষ্টাই করছে।
আহান খাওয়াচ্ছে আর ইচ্ছে খাচ্ছে। অনেক দিন পর তৃপ্তির খাওয়া এটা তার।
কিছুক্ষণ পর আহান বললো
— আর দেব বা তোকে
আহানের এমন কথায় চমকে তাকালো ইচ্ছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে
— তুই সব একা খেয়ে ফেলছিস আমি খাচ্ছি না খেয়াল আছে?হাতির মতো খেতে পারিস তো শুকালি কেন এতো? খাও নাই?তবে ফরসা হয়েছিস আরও।
ইচ্ছে নিশ্চুপ।
— নেয়ে হাত ধুয়ে আয় আমাকে খাওয়াবি
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আহানের কথামতো আহানকে খাওয়ানো শুরু করলো।প্রথম লোকমা মুখে ধরতেই আহান ইচ্ছের আঙুল কামড়ে ধরলো।
ইচ্ছে বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না।প্রচুর ব্যাথা নিয়ে এবার কেদেই ওঠে। মুখ ফুটে বলে
— আহান আমার লাগছে ছাড়ুন
এতো দিন পর পরিচিত মানুষের অতি পরিচিত কথাটাও আজ আহানের কাছে খুব নতুন লাগছে।কতো দিন শুনে নি ইচ্ছের কথা। আহানের ধ্যান ফেরে ইচ্ছের কান্নাসিক্ত গলায়
— আহান আমার সত্যি লাগছে ছাড়ুন।
— তো কান্না আটকে রাখছিলি কেন? কেন?কাদ কাদার জন্যই কামড়েছি। লাগলে আরও কামড়াবো।পুরো তোকে কামড়ে ফালা ফালা করে দিব।
ইচ্ছে খাওয়ানোর পুরোটা সময় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না করলো। আর আহান তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে ইচ্ছের নাক টানার শব্দে।
হাত ধুয়ে বিছানায় বসে ইচ্ছে। আর আহান ব্যালকুনিতে গিয়ে সিগারেট ধরালো।কাচের গ্লাস দিয়ে আহানের কাজ স্পষ্ট দেখছে ইচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই সে ই দায়ী আহানের এই অবস্থার জন্য।
ইচ্ছে বিছানায় টান টান হয়ে পেটের উপর হাত রেখে শুয়ে পরে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ইচ্ছের মনে হয় তার মুখের উপর বিশ্রি গন্ধ ওয়ালা বাতাস বইছে।কোথা থেকে আসছে তাই দেখতেই চোখ খুলে বাম পাশে তাকায়।আহান কাত হয়ে শুয়ে মাথাটা হাত দিয়ে জাগিয়ে রেখে ইচ্ছের মুখ বরাবর ফু দিচ্ছে।আহানের মুখের সিগারেটের গন্ধ ছিলো ইচ্ছের আর বুঝতে কষ্ট হলো না।ইচ্ছে এই দৃশ্য দেখে আবার আগের মতো চোখ বুজে রইলো।
এরপর আহানের আক্রমনে ইচ্ছের এবার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। ইচ্ছের গায়ের উপর এক ঠ্যাং উঠিয়ে দিয়েছে আহান
ইচ্ছে আর চুপ থাকতে পারলো না।
— আহান কি হচ্ছে এতো বড় পা টা আমার পেটের উপর উঠিয়ে দিয়েছেন,, আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তো !!!! সরান
— অভ্যাস কর
আহান আর কোনো জবাব না দিয়ে আরও শক্ত করে পা দিয়ে চেপে ধরে কাধের কাছে জোরেসোরে কামড় বসায়।
— উহ মা কি হয়েছে কুত্তার মতো আজ কামড়াচ্ছেন কেন? কুকুরের রোগ হইছে নাকি?
— কতো বড় সাহস আমাকে কুকুর বলিস। দে হাত দে তোর হাত কামড়ে শেষ করে দি এখনই ।দে হাত দে। কুকুর কামড়ালে হয় জলাতঙ্ক আর তোর হবে মানুষাতঙ্ক বুঝলি।
এর সাথে কথা বাড়ানোর ফল মানে আন্ডা ইচ্ছে ভালোই বুঝেছে।তবুও আজ এতো মাস পরে বুকের কোথাও একটা বেশ শান্তি পাচ্ছে।গলা চেপে ধরা কষ্ট গুলো আজ আর নেই। শান্তি। মানসিক প্রশান্তি।
চলবে,