তুইতেই আমি🏵পর্বঃ২৯

0
2800

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২৯

🍁🌼🍁

–আয় আগে নামাজটা পরে নি।আল্লাহর কাছে নতুন জীবনের জন্য অনেক কিছু চাওয়ার আছে।

ইচ্ছে মাথা নুয়িয়ে সম্মতি জানালো।

নামাজ আদায়ের পরও ইচ্ছে লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন?

— জানি নাহ

— মানে হাফ ডোজ তো কমপ্লিট তাও এতো লজ্জা পাচ্ছিস যে।

ইচ্ছে চুপ।

–সেদিন রাতে তোর কার্যকলাপ নিজের কার্যকলাপ সবটাই দেখেছি।

এবার ইচ্ছে মুখ খুললো।

— এমন ভাবে বলছেন মনে হয় যেন কেউ ভিডিও করে রেখেছে আর আপনি দেখেছেন।

–হু হু পয়েন্ট ইয হেয়ার। কাকতালীয় ভাবে আমার ফোন এ ভিভিডিও রেকর্ডিং অন ছিল। মদ খেয়েছি তোকে সেটা দেখানোর জন্য ভিডিও অপেন করে রেখেছিলাম এটুকুন আমার মনে ছিল। আর বাকিটা ফোন এই দেখেছি।ভাগ্য বলতে হবে ফোনের সেটিং টা দারুন ছিলো। তোর অকাজ কুকাজের অনেক ভিডিও আছে বুঝছি । সেগুলো দেখেই তো….. না আর কি…… ঐ… হেহে

আহানের হাসি ইচ্ছের চরম লজ্জা পাচ্ছে আর অসস্তি ও হচ্ছে।

— আহান আপনি খুব পঁচা

— হ্যা আমি পঁচা। এতো পঁচা যে গন্ধ ছুটে গেছে বুঝলি তো। পাশে কেউ টিকতে পারবে না।কিন্তু তোর ভাগ্য দ্যাখ থাকতেই হবে।তাতে যা হয়ে যাক

— আমি এমনিও থাকতাম আহান

— তুই একটাও কথা বলবি না। (ইচ্ছে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এমন কথায়)
থাকতে চাওয়ার নমুনা দেখেছি আমি,,,,এতোই থাকতে চেয়েছিস যে আমায় ছেড়ে বিদেশ চলে এসেছিস।

ইচ্ছে আর কথা বলতে পারলো না।আহান হঠাৎ বলে উঠলো

— ঐ শাড়ি খোল

আহানের এমন কথায় চমকে তাকালো ইচ্ছে।চোখ দুটো অনায়াসেই বড় বড় হয়ে গেলো । এটা আবার কেমন ধরনের কথা?

আহান ইচ্ছেকে বেশ কিছুক্ষন স্কান করলো । তারপর বললো
— এই এই নাহ থাক অনেক কাজ বাকি।

এরপর আহানের কাজ দেখা গেলো । নরম বিছানাটায় আস্তে করে বসালো। তারপর একটার পর একটা গয়না খুলে দিচ্ছে।এক একটা সাজে ব্যবহৃত জিনিস গুলো খুলছে আর বলছে…

— এতো প্যাচের সব জিনিস পত্র মেয়েরা পরে তাই মেয়েদের মনে এতো প্যাচ বুঝলি তো।

তারপর আবার নিজেই মনযোগ দিয়ে খুলছে।চুল খুলতে গিয়ে তো হাপিয়ে ঘামিয়ে একসাথ করে ফেলেছে এমন মুখো ভংগী। সব শেষে বলে ওঠে ” বাসর টা হোক কালই তোকে টাকলা করে দেবো দেখিস। চুল খোলা রাখতে পারলি না? এতো কাকরা ক্লিপ লাগে কি জন্য হুম?আরও কি কি দিয়েছিস নামও জানি না। জানিস না বাসর রাতে বর রা সব খুলে। না মানে ঐ সাজগোজ আর কি… তো কম কম সাজতে পারলি না ? কতো গুলো সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রে দ্যাখো ।হুহুহ এতোক্ষনে খেলা শুরু হয়ে যেতো। বুঝলি না পুরুষ মানুষকে তোদের মতো মেয়েরা বুঝলি না।বয়সে ছোট বলে আরও পেয়ে বসেছিস।দুধের বাচ্চার উপর অবিচার করিস। “একশ্বাসে কথা গুলো শেষ করে বললো ” ইচ্ছু এই
ক্লিপটা কেমনে খুলে বল নাহ।বল তাহলে তোকে আর টাকু করবো না প্রমিজ”।।। কি অসহায় সেই ভংগী আহানের। ইচ্ছের বেশ হাসি পেলো।।জামাই বাসর ঘরে এসব কথা বলে তার আদোও জানা ছিলো না।

— কিরে এটা কিভাবে খোলে দেখিয়ে দে না।আর সব পেরে গেছি তো।

আহানের কথায় নড়েচড়ে বসলাম।

— আপনি ছাড়ুন আমি খুলে দিচ্ছি

— ঐ না না।আমিই খুলবো। তুই দেখিয়ে দে

কি ত্যাড়ার ত্যাড়া রে বাবা।ইচ্ছে আর কিছু বললো না।আহানের কথা মতো দেখিয়ে দিলো।

ক্লিপটা খুলতে পেরে আহানের ভাবসাব এমন হয়ে গেলো যেনো সে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের একমাত্র বিজয়ী সৈনিক।

আহান আবার চেক করে নিলো ইচ্ছের আর কোনো গয়না গাটি খোলা বাদ পরেছে কিনা। “নাহ অল ইয অকে”

“এই এবার শাড়ি খোল ”

আহানের কথায় আবার চমকালো ইচ্ছে। শক্ত করে শাড়ির আচল চেপে ধরে।আরে বাবা বলে কয়ে এভাবে হয় নাকি হ্যা? মুড লাগে না একটা? তাহলেই না হয় অটো…ঐ আর কি যাই হোক । তা না সে এমন ভাবে বলছে মনে হচ্ছে যেনো “ইচ্ছু এক গ্লাস পানি আন তো” এতো সোজা নাকি? হ্যা?

ইচ্ছের আহানের প্রতি চরম রাগ হচ্ছে।এই জন্যই বয়সে ছোট ছেলে টেলে বিয়ে করা উচিত না।

— না মানে বলছিলাম যদি পেট থেকে আচল সরাতি।( আহান)

লজ্জা পাচ্ছি নাকি অন্য কিছু পাচ্ছি আমি জানি নাহ সত্যি জানি না।আচ্ছা লজ্জা কি আদোও পাওয়া উচিত?
ইচ্ছের এমন ভাবনায় আহান আবার বললো ” আমি সরিয়ে দি তুই একটু ধরে থাক যাতে আবার পরে না যায়।”

আহান আর থামে নি সে সাথে সাথে তার বলা কাজটা করে ফেললো । এসব কাজের কারণ বুঝতে পারছিলো না ইচ্ছে। তখনই কোমড়ে একটা স্বর্নের বিছা পরিয়ে দিলো।তারপর কিছুক্ষণ ঝিমমেরে পেটের দিক তাকিয়ে রইলো। তৎক্ষনাৎ একটা চুমু খেয়ে নিলো।

–তোর ডায়রিতে লেখা ছিলো এটা তোর সপ্ন।

এতোক্ষনের খুশি আহানের কথায় যেন চমকে পরিনত হলো ইচ্ছের কাছে।তিন চার বছর আগে ইচ্ছে তার ডায়েরিতে বাসর ঘরের ইচ্ছা সম্পর্কে লিখেছিলো। আর তাতে লিখেছিল বর কোমড়ের বিছা পরিয়ে দিলে সে অনেক বেশি খুশি হবে আর সেই লেখা আহান কিভাবে যেনো দেখে ফেলে।টানা ছয় মাস আহান ইচ্ছেকে পচাইছে এই কথা নিয়া। আর আজ আহানই কিনা বর।আর সপ্নটা আহানই পূরণ করেছে।ইচ্ছে নিজেই ভুলে গিয়েছিলো এই সপ্নের কথা কিন্তু আহানের এমন কাজে ইচ্ছের পৃথিবী খুশিতে ভরে গেল। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আহানকে।

— আহান আপনি আমার কাছে বেস্ট পাওয়া।আল্লাহর কাছে আপনাকে পেয়ে আমার শুকরিয়ার শেষ নেই।আমি সত্যি খুব খুশি হয়েছি।খুব খুশি হয়েছি।।

আহান এসব কথার আর উত্তর দেয় নি৷ উত্তর দেবে মানে ইচ্ছে কাদবে। আর তার শুভ কাজে দেরি হয়ে যাবে । সো কান্নাকাটি করতে দেয়াই যাবে না এই যুক্তিতেই আহান বহাল থাকলো। ।

–হুসসসস

ইচ্ছের ঠোঁটে হাত দিয়ে আহানের এমন কাজে ইচ্ছে অবাক হয়ে তাকালো। আহানের চোখের ভাষা বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু একটু পরেই চোখের নেশাক্ত চাওনি হারিয়ে গেলো আর আহানের কথায় মুখ হা হয়ে এলো ইচ্ছের

— এই ইচ্ছু পাখি আমার না লজ্জা করছে। লাইট টা অফ করে দি টেবিল ল্যাম্প টা জ্বলুক শুধু?

ইচ্ছের আর ভাষা নেই কিছু বলার। তবুও বললো

— আচ্ছা

লাইট টা অফ করে ইচ্ছের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরলো কিছুটা গভীরতার পরে হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। “আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন ইচ্ছুপাখি।টেবিল ল্যাম্প টাও কি অফ করে দিবো?

ইচ্ছের এবার হাসি পাচ্ছে।বাঘ থেকে বিড়ালের মতো কাহিনী হয়ে গেছে কিছুটা। ইচ্ছে বললো

— মন চাইলে টেবিল ল্যাম্প অফ করেন নয়তো ঘুমিয়ে পরেন

— এই না না তা কেন?তবে আজ আমার মনে হচ্ছে আমি তোর বয়সে ছোট তাই আমার এতো লজ্জা করছে। ফার্স্ট টাইম

এবার আহান বড় বড় দুইটা শ্বাস নিলো।

” নাহ লজ্জা শেষ আই আম এ ব্রেভ ম্যান।মেয়ে মানুষের সামনে এসব বিষয় ভয় লজ্জা খাটে না।আর তোর মতো পুচকির কাছে তো একদমই না আর তার উপর বাসর রাত।এইসব লজ্জা ভয় নট এলাউড।।।”

— নিজেকে সাহস দিচ্ছেন আহান?(হাসতে হাসতে)

— সাহসের কি আছে রে?

এবার আহান জোরে শব্দ করে বললো ” বিসমিল্লাহ শুরু করা যাক”
.
.
.
.
.

আবার কিছুক্ষণ পরে বললো “টেবিল ল্যাম্পটা অফ করবো? না থাক অনেক কিছু দেখার বাকি।অফ করা যাবে না।আর ইচ্ছু ছোট মানুষ ভুল ত্রুটি মাফ করে দিস।”

সেদিনই সর্বোচ্চ লজ্জা আর সেদিনই লজ্জার শেষ। সেদিন এক অন্য আহানকে দেখলাম।তার অস্থিরতা, তার ভালোবাসা সব কিছুই যেনো অতি সুন্দর আর গোছানো।আগের আহানের থেকে অনেক আলাদা।তার বাচ্চামিগুলো ভালো লাগার আর এক কারণ হয়ে দাড়ালো।এতো সুখের মাঝেও তাকে কিছু দিতে পারবো না ভেবে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।কান্নার আওয়াজ হয় নি নিশ্চিত কিন্তু আহান কিভাবে যেনো বুঝে গেলো আহান বললো। ” তুই কাদলে আমার মূল্যবান কাজে অসুবিধা হচ্ছে ফুছ ফুছ করবি না একদম” আহানের কথা শুনে ইচ্ছের মুখ আবার একরাশ হাসি তে ভরে গেলো ।

*****

গোসল সেরে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে গেলো।যখন ঘুম ভাংলো ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বেজে গেছে।আহানকে অনবরত ঠেলাঠেলি করছে ইচ্ছে

— আহান উঠুন না।আমার আজকের ক্লাসটা মিস হয়ে গেলো দেখলেন!!

আহান চোখ না খুলেই বলল
–এতো ক্লাস করে না বাবু।আয় বুকে আয় ঘুম পারিয়ে দি।

চোখ বন্ধ করেই দুই হাতে ইচ্ছেকে খুজছে বুকে জরিয়ে নিবে বলে। ইচ্ছে আহানের হাতর মধ্যে একটা বালিশ ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।।

আহান মুচকি হেসে আবার ঘুমিয়ে গেলো।

ইচ্ছে যখন রান্নার কাজে ব্যস্ত তখন আহান ড্রেনিলার সাথে বেশ কিছু বিষয় জেনে নিলো।ইচ্ছের অপারেশন করাবে কোথায় কি ভালো হবে এসব বিষয়ে বেশ ইনফরমেশন জোগার করলো।

******

আহান ইচ্ছেকে নিয়ে একবার বাংলাদেশে যায়।বিদেশে যাতে অনার্স শেষ করতে পারে তাই যা দরকার হয় সব কাজবাজ সেরে নিল ভার্সিটি থেকে দুই পরিবারের আনন্দে টইটম্বুর । বাসার মানুষের ইচ্ছাতেই আত্মীয়স্বজন ডেকে এনে বেশ ধুমধাম করে কাগজে কলমে বিয়ে হয় আবার।বন্ধুবান্ধব সবাই উপস্থিত হয়।এতো দিন পর পউশিকে পেয়ে ইচ্ছের খুশির শেষ নেই। বিদেশে বিয়ের কথা বলাতে সবাই হাসতে হাসতে শেষ ।

— শেষমেষ বাচ্চা ছেলেটাকেই বিয়ে করে নিলি(পউশি)

— দিদি আমি একদম বাচ্চা না।তোমার কাছে বাচ্চা হলেও ইচ্ছের কাছে একদম না।অনার্স ২য় বর্ষ একটু তো বড় বলতে পারো নাকি। আজ বিয়ে আমার অন্তত এই ভেবে
আহানের কথায় হেসে ফেলে সবাই।

— আচ্ছা আচ্ছা।

পাঁচ দিন পর আবার বিদেশে চলে এলো আহান ইচ্ছে।যাওয়ার আগে আহান ইচ্ছের রুম আর নিজের রুম তালা মেরে গেলো। আয়ান ইশালের এমন কেনো সুযোগ থাকা উচিত না যাতে বেপথে যায়। ওদের বয়স অনেক কম।ভুল হতেই পারে।নিজের বাবা মাকেও আয়ান ইশাল সম্পর্কে বুঝিয়ে এসেছে।ওদের মাথায় প্রেসার পরুক এমন কিছু যাতে না করে।কিন্তু পুরোপুরি স্বাধীনতা না পায় এইদিকেও খেয়াল রাখতে বলে এসেছে।

বিদেশে ফিরে বেশ কিছু দিন সময় নিয়ে ইচ্ছের অপারেশন করানো হলো। ইচ্ছের সুস্থ হতে দুই তিন মাস লেগে যায়।এ কয় মাসে ড্রেনিলা আহানকে অনেক হেল্প করেছে।সব কিছু নিয়ে এখন আহান ইচ্ছে নিজেদের টোনাটুনির সংসার।পড়াশোনা, সুযোগ পেলে ঘুরে আসা,কোমড় বেধে ঝগড়া করা আর বেলাশেষে প্রচুর ভালোবাসা।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here