🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ৭
🍁🌼🍁
তার সামনে একটা চেয়ার টেনে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন।মাথায় হাত দিয়ে শান্ত হতে বললেন কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল এ আনতে পারছি না।আমাকে চমকে দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলেন।
আমি শান্ত হয়ে গেছি ,,,, ভয় আর নেই,,, কি জন্য ভয় পাচ্ছিলাম তাও ভুলে গেছি।শুধু ফিল করছি ফিল,,,,, পৃথিবী এতো কেন সুন্দর?
ভালোবাসলে বুঝি তার ছোয়া এতটা মধুর হয়?সুখ সুখ বাতাস বয়? এক বুক ভালোবাসা এসে মনের ভিতর টাকে শিতল করে দেয়?না আছে ভয় না আছে সংশয়। তাকে আরও শক্ত করে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরছি,, আরও আরও শক্ত করে,,,,,,দূরত্বের জড়িয়ে ধরা মনটা হয়তো মানতে পারছে না।আরও কাছে চাই।তার সাথে মিশে যেতে চাই।
— ইচ্ছে ইচ্ছে তুই কি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চাইছিস?
আহানের এমন কথা আমি প্রথমে বুঝতে পারলাম না।নিজের কৃৎ কাজের খেয়াল আসাতে খুবই লজ্জা পেলাম।কি ভাববেন আহান? ইস কি যে করি,,,, এমন লজ্জাজনক কাজ করলাম। তাড়াতাড়ি করে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম নিজেকে।কিন্তু ছাড়াতে পারলাম না আমি।আহান মোটা গলায় বললেন
–এতক্ষণ আমি ছাড়াতে পারছিলাম না।এখন আমিও তো ছাড়ব না।নে শক্ত করে জড়িয়ে ধর,,,ধর বলছি ধর।
কিছু বলছি না শুধু কাচুমাচু করছি।কিছু বলার মুখ আছে নাকি।এরপর থেকে আহান পাশে আসলে আমি খুব সাবধানে থাকব খুব।একদম তার মাঝে হারাবো না।আচ্ছা কেউ কি ইচ্ছায় হারায় নাকি?? হারিয়ে যাওয়ায় তো নিজের হাত থাকে না,,,,,,, থাকে মনের হাত।।আর এই পচা মন কারো কথা শুনে না,,, মাথারও না,,,,আমি তো অনেক দূরের কেউ।।।নাহ মন কে কনট্রোল করা যাবে না।তাহলে কি আহান এর পাশে আর আসব না? উহ মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে ।
–ভাবাভাবি শেষ হলে আসেন জরিয়ে ধরেন।আপনার মনোবাসনা পুরন করেন।
–আহান আপনি ভুল ভাবছেন।আমি,,,,,,,
— লজ্জাও পাস আমার কাছে?
এই বলেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তারপরে সামনের চুলগুলো দুহাত দিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলেন।কপালে হালকা ঠোঁটের ছোয়া পেলাম।মনে হলো সাথে সাথে সরিয়ে নিলেন ঠোঁট। আমি চোখ খুলে বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম।সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থুতিয়ে বলে উঠলেন,,,,
–কি জানো বলতে এসেছিস তুই,,,আর কি সব শুরু করলি। লজ্জাসরম বাজারে কতো দামে বেচে এসেছিস কে জানে,,, কি বলবি বল বল
নিজেও তো করলেন আর শুধু আমাকেই কথা শুনালো।মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর কখনও পাশে আসব না আপনার আহান।আপনাকেও আসতে দেব না। মন খারাপ নিজের ভেতরে রেখে ভার্সিটির ব্যাপার টা খুলে বললাম।
সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন।
–বাপরে বাপ তোর তো ভালই সাহস। অনায়াসেই শাবানার পদবী দেয়া যায় তোকে । আমার উপর রাগ না থাকলে নিশ্চয়ই প্রতি দিনের মতো গান শুনেই চলে যেতি তাই না?
–হ্যা তা হয়তো যেতাম।
আমার কাছে এসেই ঠাস করে গালে এক চড় লাগিয়ে দিলেন।তার চড় ক্লাস নাইন পর্যন্ত খেয়েছি। বড় হবার পরে আর মারেনি।হাতে পায় মাথায় মেরেছে কিন্তু গালে না। গালের চড়টা নিতান্তই লজ্জা জনক হয়।কিন্তু আমি কষ্ট পেলাম খুব কষ্ট পেলাম।তার মুখের উপর কিছু বলার সাহস নেই আমার । ফোনটা পকেটে ভরে হনহনিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় শুধু বললেন বাসায় চলে যেতে।
ওখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাদলাম। তারপরে রুম থেকে বেড়িয়ে ভালো মায়ের কাছে গিয়ে গলা জরিয়ে ধরলাম।
–কে আমার ইচ্ছু মা টা নাকি?
–কেন ভালো মা আমাকে বুঝি ভুলেই গেছ?
–না আপুনি তোমাকে আম্মু একদম ভুলে নি।আমার থেকে বেশি মনে করে হুম(ইশাল)
–ওরে বাবা তাই নাকি?আমার পিচ্চু বোনটার কি এই নিয়ে কোনো কষ্ট আছে?
আঙুল দিয়ে দেখালো একটু।যে একটুর পরিমাপ করার সাধ্য আমার নেই।
হেসেই বললাম
–বাবা এতো অনেক
–হুম্মম্মম(ইশাল)
–মা তুই কি খাস না ঠিক মতো। মিষ্টি একটা মেয়ে মরার মতো হয়ে যাচ্ছিস। আর গালে কিসের দাগ?
তোমার গুনধর ছেলে স্টাম্প মেরেছে। তার সাথে আমার আড়ি হুহ।
মুখে বললাম
–কিছু না ভালো মা,, চুলকে এমন করেছি।।(ওরনা দিয়ে ঢাকার বৃথা চেষ্টাও করলাম)
–ওহ আচ্ছা।ছোট বেলায় তো আহানের থাপ্পড় এ গাল ফুলাতি।দিনে দিনে তোরা কতো বড় হয়ে গেলি
(আর আজও )
–হুম ভালো মা এখন সে আর মারে না।আই লাভ ইউ ভালো মা আসি এখন
🍁🌼🍁
বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।মন খারাপের পরিমাণ এতো যে রীতি মতো ফ্লোরে গড়াগড়ি দিচ্ছি।তবুও কিছু কাজ হচ্ছে না।শুধু কানে থাপ্পড় এর শব্দ বাজতেছে।আয়ান একবার আমার রুম এ উকি দিয়ে গেলো। একটু পরে শুনছি চিল্লাচ্ছে আর বলছে আম্মু আপু পাগল হয়ে গেছে।
— শালা তোর বাপ পাগল হইছে।ওহ সরি ওর বাপ আমার বাপ এক বাপ
চুল ছিড়ব না কি করব।পাগল পাগল লাগছে।আমায় মারল? একদম ভালোবাসে না ভালোবাসলে মারতেই পারত না।
🍁🌼🍁
সন্ধা হতেই আজ জানালা, ব্যালকুনির দরজা বন্ধ করে দিলাম।এই প্রথম এমন করলাম।তবুও কষ্ট কমছে না।
রাত ১২ টা।ব্যালকুনির দরজা বন্ধ করে তার এপাশে দরজায় ঠেস দিয়ে বসে আছি। একটু আগে ধপাশ করে একটা শব্দ কানে এলো। মন খারাপের গভীরতা এতো ছিলো যে তা কানে কড়া নাড়লেও মাথা পর্যন্ত কড়া নাড়ল না।
❤
খসখস শব্দে নিচের দিকে তাকালাম।দরজার নিচ থেকে একটা কাগজ এসেছে। কাগজটা খুলে এটা কে দিয়েছে তা বুঝতে আমার আর ভাবতে হলো না।একটা সরি পর্যন্ত বলল না সোজা হুমকি।
[দরজা খোল নয়তো আরও এক হালি এক ডজন থাপ্পড় খাবি]
খুলব না আমি পেয়েছি কি,,,,খুলব না তো খুলবোই না
আরও কয়েকটা টোকা দিলেন দরজায়।তারপর একটা জোড়েসোড়ে লাথি দিলেন। তারপর সব নীরব। আর কোন শব্দ নেই। যা করে করুক আমার কি তাতে,,, অকারণে কেন মারবেন হু?আমার বুঝি কষ্ট হয় না এই বলেই আবার কেদে দিলাম।
🍁🌼🍁
আয়ান আহানকে ফোন দিলো আহান তখন হাতে একটা গ্লাস ধরেছে ভাঙার উদ্দেশ্যে। ঠিক তখনই ফোন করার কারণে আহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করল
–হ্যা আয়ান বল
–আহান ভাই কেমন আছো?
— কি ব্যাপার এতো ভালো হলি কিভাবে ভাবাই যায় না।।তুই আমার ভালো থাকার খবর নিচ্ছিস?তা কি কাজ বলে ফেল মাথা ঠিক নেই এমনিতেই
— এই এই তোমাদের হয়েছে কি হ্যা,, ইচ্ছে আপু চুল টানছে ফ্লোরে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর তোমার মাথা খারাপ। তা তোমার উপসর্গগুলো বলো তো মাথা খারাপ ছাড়াও আর কি কি করছে?
আহান ইচ্ছের কর্মকান্ড শুনে মনে মনে হাসল।আবার খারাপও লাগলো মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে।
–বাজে বকা থামা
–আচ্ছা,,ভাই আমার মনে হয় আপু প্রেমে পড়ছে।এগুল প্রেমের উপসর্গ না বলো?
— কি? তুই সিউর?
–আরে হ্যা আমারও এমন করতে মন চাচ্ছে তাই বুঝলাম
–তোর কার জন্য এমন মনে চাচ্ছে আবার?
–ওটা বাদ দাও। তোমার কি হয়েছে বলো
— কানের নিচে একটা দেব।,,,,দেখবি ডিরেক্ট হয়ে গেছে,,,,বল বলছি
–তুমি তো আমার শালা হবা কি আর বলবো,,,লজ্জা লাগে তো
–ওরে বাবা তুই জেনে গেছিস। নিশ্চয়ই গাধাটা ভুলে বলেছে
–তুমি জানতে ভাই? আর আমায় বললে না।এমন মীরজাফর এর মতো করতে পারলা?তোমার বোনের জামাই এতো গুলা মেয়ের পিছনে ঘুরে তুমি তো জানতে আমার বিষয়ে সব তাও বাধা দিলে না।
–কজ তুই সিরিয়াস না ফান করতি,,, শোন পিচ্চু এসএসসি দিক আমি ঠিক করে দেব তোদের সব,,, শুধু খেয়াল রাখবি ওর মাথায় অন্য কোনো ছেলে না ঢুকে।এইবার এর বদলে আমায় হেল্প কর।দরজা খোল আমি তোদের ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি
–ছাদ লাফিয়ে এসেছো এতো রাতে আমার কাছে? কোনো কাজ?
–না তোর বোনের কাছে।ভালো মা ভালো বাবা ঘুম না?
–হুম ঘুম
–তাহলে খোল।
–আসছি
❤
দরজা খুলে
–কাহিনি কি বলো তো ভাই,, এতো রাতে বোনের ঘরে ছেলে ঢুকতে দিব জিজ্ঞাসাবাদ করে নি
— পেকে গেছিস খুব। যা নিজের রুম এ যা
— তা ভাই কাহিনি এই,,,,এই জন্য এতো চুল টানাটানি?
–তুই এইবার মুখ থামা
আয়ান চিন্তিত ভাব নিয়ে বললো
— মেয়ে আর পেলে না অই বুড়ির উপর শেষমেষ
এই বলেই আয়ান গান গাইতে গাইতে আগেই দৌড় লাগালো।
🎶পাগল মন মনরে মন কেন এতো কথা বলে
আহান দৌড়ে আয়ানকে ধরে হাত মুচড়ে ধরে বলল এই কথা জানো তোর বোন ওই হাবাটা না জানে
–জানে না????(মুখ এত্তো বড় হা করে)
–না। ভালো মা ভালো বাবা ইশাল কাউকেই বলবি না।নইলে তোর লাইনের তার কেটে দিব আর জীবন এ সংযোগ প্রদান করবে না।
— কি যে বলো ভাই আমি অনেক ভালো ছেলে
এখন যা ইচ্ছের দরজায় কড়া নাড়।আমার গলা শুনলে দরজা খুলবে না
❤
–কে রে?
–আপু আমি বই রেখে গেছি নিতে আসছি
–হ্যা সব আমার রুমেই রাখ রাখ আর কাজ কি,,,,সবাই আমায় জ্বালা
দরজা খুলে আহানকে দেখে দরজা অফ করতে গেলে আহানের শক্তির সাথে পেরে উঠল না। আহান ঢুকেই দরজা আটকে দিলো।
ইচ্ছে ভয়ে ঢকঢক করছে।এরপর কি হবে ওর ধারণার বাইরে।
আহান এগোচ্ছে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। দরজার সাথে ধাক্কা খেলাম এর সোজা মানে হলো আমার পথ শেষ। আহান আমার একদম কাছে এসে হঠাৎ নুয়ে পড়লো।আমি লাফিয়ে উঠলাম।উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে হাতের কাগজের টুকরা গুলো দেখালেন। যেটাকে আমি নিজ হাতে টুকরো করেছি। ঠকঠক করে কাপছি। এতো কাপছি যে আহান হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
–কি হয়েছে এতো কেন কাপছিস?চোখের সামনে কি বাঘজাতীয় কিছু দেখছিস?( কাধ ঝাকিয়ে)
আমি নিশ্চুপ।আমার কাপাকাপি থামেনি। আরও বাড়ল বুঝি
–আমার চিঠি পরেছিস?
–আমি কোন চিঠি পাই নি আহান(আমতা আমতা করে)
–তাহলে ভুতে ছিড়েছে??
–হুম,,,, না না
–তাহলে?
–আমি বলেই কেদে উঠলাম
চলবে,