‘তুই’ ‘তৃধা মোহিনী’ |পর্ব চার|

0
17

‘তুই’

‘তৃধা মোহিনী’

|পর্ব চার|

.
ছাদে বসে আছে মীরা হাটুর ভরে মাথা দিয়ে। কি থেকে কি হয়ে গেলো।জীবন টা নিমিষে বদলে গেলো।

ধ্রুভ ঘরে এসে দেখে মীরা নেই ঘরে।মীরাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ধ্রুভের মাথা খারাপ হয়ে গেলো।আবার পালালো কি না সেটাই ভাবছে সে।তাড়াহুড়ো করে বাহিরে আসলো তাও দেখতে পেলো না।দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো সেও দেখে নাই,মীরাকে বাহিরে আসতে।

এদিকে ধ্রুভের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে যে গেলো কোথায় সে।বাহিরে যায় নি তো কোথায় গেলো।

.
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হতে চললো তবুও মীরার খোজ পায় নি ধ্রুভ।ইব্রাহিম দাদু এরই মধ্যে দু’বার কল করে মীরাকে চেয়েছেন।বিভিন্ন বাহানা দিয়ে এড়িয়েছে সে ম্যাটারটা এখন কিভাবে এভোয়েড করবে?

বুকের বা’পাশ টা ভীষণ চিনচিন করছে।একবার মীরাকে হারিয়েছে।আজ যদি প্রত্যয়ের এক্সিডেন্ট না হতো মীরা ঠিকই এখন অন্য কারো ঘর করতো।অন্য কারো বউ হতো।মীরা অন্য কারো বউ হতো ভেবেই ধ্রুভের মেজাজ টা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।মীরাকে ভুলার জন্য লন্ডনে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করতো তারপরেও মীরার মোহ সে ভুলতে পারে নি।জীবন বিচিত্র।যখন সাথে থাকে তখন আমরা ঘুরে তাকাই না আর দূরে থাকলে কলিজা ফাটাই দি চেচিয়ে।

.
মীরা মাথা নিচু করে এতোইবেশি মগ্ন ছিলো নিজের ভাবনাতে যে এদিকে যে সকাল থেকে রাত হয়ে গেছে তার কোন হুশ নেই।মীরা টের পেলো মশার কামড়ে।হাজার হাজার মশা তাকে কামড়ে টের পাওয়াচ্ছে,’এই মীরা বাড়ি যা নয়তো আজ তোরে আমরা উঠিয়ে নিয়ে যাবো!’

মশার দেয়া কামড় গুলোতে মীরা চুলকাচ্ছে আর নিচে নামছে।তার মাথাতেও নাই ধ্রুভের কি অবস্থা আছে।মীরা যখন ঘরে গেলো দেখতে পেলো মাথা নিচু করে তার দুই হাতের উপর ভর দিয়ে আছে।ধ্রুভের এরকম লুক দেখে মীরার আত্নার পানি শুকিয়ে গেলো।হালকা শুকনো ঢোক গিললো সে।

কারো পায়ের শব্দে ধ্রুভ মাথা উচু করে তাকালো।দেখলো মীরা দাড়িয়ে আছে।মীরাকে দেখে ধ্রুভ খুশি হলেও পরক্ষনে তার মাথা খারাপ হয়ে গেলো মীরার গায়েব হওয়া নিয়ে।সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

‘কোথায় ছিলি?’

মীরা আমতা-আমতা করে জবাব দিলো,

‘ছাদে!’

মীরার মুখে কথা শুনে ধ্রুভ চিল্লিয়ে উঠলো এক প্রকারের,

‘তুই কি ভাবছিস তুই এরকম লুকোচুরি করবি আর আমি কুকুর হয়ে তোকে খুজবো?হ্যা তোকে আজকে সারাদিন আমি কুকুরের মতোই খুজেছি।আমাকে তো মানুষ মনে হয় না তোর।আমার তো অনুভূতি নাই।আমি তো রোবট না।বালের বিয়া আমার!’

ধ্রুভ এইসব কথা বলে মীরাকে ঝেড়ে ওখান থেকে চলে গেলো।মীরা থম মেরে দাড়িয়ে রইলো যে হলো টা কি?
.
‘দাদু কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে এই লোক গেলো টা কোথায় নিজের মোবাইল রেখে।’

মীরা বলছে।কারন,ধ্রুভে ইব্রাহিম খান বারবার ফোন দিচ্ছে।তার ফোন তো দাদু বিয়ের দিন ভেঙ্গে দিয়েছিলো প্রত্যয়কে কল দিবে বলে জোর করছিলো যখন।আবারো ফোন বাজছে।

মীরা রিসিভ করলো এইবার।ফোন ধরে কিছু বলতে যাবে তার আগে থেকে ওইপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠস্বরে কথা ভেসে উঠলো,

‘এতোক্ষন ধরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি তুমি ধরছিলেন না কেন?’

মীরা বুকে দুই তিনবার ফু দিয়ে নিলো।সে নরম স্বরে বললো,

‘দাদু উনি ফোন রেখে বাহিরে গেছেন।’

মীরার কন্ঠস্বর শুনে ইব্রাহিমের বুকটা খা খা করতে লাগলো।তিনি মোমের মতো পুতুলের গায়ে হাত তুলেছিলেন গতকালকে।তিনি বললেন,

‘তোমাদের হয়েছে টা কি?একজন পেলে আরেকজনকে পাওয়া যায় না?’

মীরা কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে থেমে বললো,

‘দাদু ও বাহির থেকে ফিরলে তোমাকে কল করতে বলবো।’

মীরা এই কথা বলে সালাম দিয়ে কল কেটে দিলো।ইব্রাহিম খান কে আর কিছু বলার সে সুযোগ দিলো না।মীরার এরকম ব্যবহার সম্পর্কে ইব্রাহিম খান অবগত।কারন,মীরা যখনি অভিমান করে পরিবারের কারো উপর তখনি সে সালাম দিয়ে ফোন কেটে দেয়।

ইব্রাহিম খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘কবে যে তুমি বুঝবে তোমার ভালোর জন্য করেছি সব’

.
রাত তিন টা বাজে কিন্তু ধ্রুভের আসার কোন নামগন্ধ নেই।এদিকে মীরা এতোক্ষন গায়েব ছিলো আর এখন ধ্রুভ।মীরা কেদেঁ কেদেঁ নাক মুখ ফুলিয়ে দিয়েছে একদম তারপরেও ধ্রুভের খোজ পাচ্ছে না

একটু হেলতে দুলতে ঘরে আসছে ধ্রুভ।দরজার সাথে ঠেস মেরে দাড়িয়ে রয়েছে।সে যে ওভারলোডেড তার হেলদোল দেখে বুঝা যাচ্ছে।

ধ্রুভ নিভু আওয়াজে ডাকলো,

‘মীরু?’

মীরাকে কখনো এই নামে ধ্রুভ ডাকে নি।মীরু বলাতে মীরা যখন চোখ তুলে উপরে তাকালো দেখলো ধ্রুভ দাড়িয়ে আছে দরজাতে হেলান দিয়ে।চোখ অসম্ভব লাল তার।

মীরা জিজ্ঞেস করলো ফুপিয়ে,

‘আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে।’

ধ্রুভ এগিয়ে এসে মীরার মুখ টা উচু করে ধরে তার ঠোটে শক্ত করে একটা চুমু খেয়ে বললো,

‘আমাকে মিস করছিলি?’

মীরা থমকে যাই।হ্যা,সে এখনো ধ্রুভ নামক মানুষটাকে ভালোবাসে।ভালোবাসা কখনো হারায় না,অবহেলা আর ফেলনাতে সব হারিয়ে ফেলে মানুষ।ভালোবাসার তীব্র যন্ত্রণা সবাই কমবেশি জানে।

মীরা ধীর আওয়াজে বললো,

‘তুমি ড্রাংক করেছো?’

ধ্রুভ ম্লান হাসলো। তারপর বললো,

‘তোর মাঝে নেশা করতে চাই।দিবি করতে একটু?’

ধ্রুভের এরকম কথা শুনে মীরার বুকে তোলপাড় লাগিয়ে দিলো।বুকের ভেতর ধুকপুক করে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার অতল সাগরে ভেসে যেতে।রক্তের কণাগুলো শিরশির করে সারা শরীত বয়ে যাচ্ছে।

মীরা সরে আসতে চাইলে ধ্রুভ তার কোমর আরেকটু কাছে টেনে বললো,

‘বল না মীরু তোর মাঝে একটু ডুব দিতে দিবি।প্রমিস সব টুকু দিয়ে দিব।’

মীরা বললো,

‘আপনি নেশার ঘোরে এইসব কি বলছেন।পরে ঘুম থেকে উঠে ঠিকই বলবেন যে,তুই আমার ইজ্জত লুটে নিয়েছিস।’

ধ্রুভ মীরাকে আরেকটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তার কানের কাছে মুখ নিয়ে যেয়ে বললো,

‘তোর নেশার ঘোরে পরেছি।এমনভাবে আছাড় খেয়েছি আর যে উঠতে পারছি না রে।চল না প্রেম প্রেম খেলি।’

চলবে

কেমন লাগছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here