‘তুই’ ‘তৃধা মোহিনী’ |পর্ব তিন|

0
25

‘তুই’

‘তৃধা মোহিনী’

|পর্ব তিন|

.
‘তুমি মিথ্যা কথা বলছো তাই না?বলো না তুমি মিথ্যা বলছো’

এইসব বলতে বলতে মীরা ধ্রুভের পা ধরে বসে পরলো।আর পাগলের মতো বিলাপ করতে লাগলো।ধ্রুভের মায়া হচ্ছে সেই সাথে প্রচন্ড রাগে ফুলছে।ধ্রুভ তার দুই বাহু টেনে তুলে বললো,

‘এটাই সত্যি মীরা।ইউ হ্যাভ টু একসেপ্ট দিস।’

মীরা অঝোরে কাদঁতে লাগলো।কাদঁতে কাদঁতে বললো,

‘তুমি মিথ্যা বলছো আমি জানি।তুমি আমাকে সেই ছোট থেকে দেখতে পারো না।এইজন্য তুমি প্রত্যয়কে মেরে মেরেছো তাই না।’

ধ্রুভের মেজাজ টা চট করে খারাপ হয়ে গেলো।সে মীরাকে দেয়ালে ঠেসে ধরে বললো,

‘প্রত্যয়কে আমি মারি নি।তবে আজকের পর থেকে কেও যদি তোর আর আমার মাঝে আসার চেষ্টা করে আমি তাকে মেরে ফেলবো।কারন,তুই শুধু আমার।’

মীরার কানে ধ্রুভের বলা কোন কথা যাচ্ছে না।চারিদিক ঝাপসা দেখছে সে।মনে হচ্ছে অতল সাগরের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে।তারপর আর কিছু মনে নেই।’

ধ্রুভ ঘাবড়িয়ে গেছে।মীরা অতিরিক্ত শক পেলে সেন্স হারিয়ে ফেলে।তারপরেও এতোকিছু গেছে আজকে ওর উপর দিয়ে।ধ্রুভ মীরাকে কোলে নিয়ে শুইয়ে দিলো।ডাক্তারকে কল দিতে লাগলো ধ্রুভ।

ধ্রুভ অচেতন অবস্থায় মীরাকে দেখে বললো,

‘কেন তুই আগের মতো বুঝিস না যে আমি তোকে কতোটা চাই।’

মিনিট দশেক পর ডাক্তার এসে দেখে গেলো মীরাকে।অতিরিক্ত স্ট্রেস সহ্য করতে না পারার ফলে মীরার প্রেশার ফল করেছে যার কারনে সে সেন্সলেস হয়ে গেছে।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিলো মীরাকে।আজকে রাত টা আরাম পাক।সকাল হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে সে।

ডাক্তার যাওয়ার পর ধ্রুভ মীরার লেহেঙ্গা বদলিয়ে নরমাল ড্রেসাপ করিয়ে দিলো।

ধ্রুভ মীরাকে চেঞ্জ করিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আজ যদি তুই অন্য কাওকে বিয়ে করার কথা না বলতি আমার জন্য অপেক্ষা করতি তোকে আজকে আদরে ভরিয়ে দিতাম আমি মীরা।’

ধ্রুভ বেশকিছুক্ষন মীরার দিকে তাকিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকে গেলো ওয়াশরুমে।দেয়াল হাত দিয়ে উদাম গা দিয়ে পানি বেয়ে চলছে ধ্রুভের শরীরে।মাথায় চলছে নানান চিন্তা।কিভাবে কি করবে।কিভাবে সামাল দিবে এইসব।

ধ্রুভ দেয়ালে হাত শক্ত করে রেখেই বললো,

‘তুই শুধু আমার মীরা।আর কাওকে না আসতে দিব না তোকে যেতে দিব।’
.
সকালবেলা পাখির কিচিরমিচির ডাকে ধ্রুভের আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে উঠে দেখে মীরা এখনো উঠে নি।সকালবেলার স্নিগ্ধতা যেন মীরাকে আরো মোহনীয় করে তুলছে।এক ধ্যানে চেয়ে রয়েছে সে মীরার দিকে।মীরা নাক মুখ চোখ সব মনে হয় কেও অনেক যত্ন নিয়ে নকশা করে এঁকে দিয়েছে।

মীরার মুখের উপর চুল এসে পরেছে।ধ্রুভ তা আলতো করে সরিয়ে দিলো।গালটাকে একটু ছুয়ে দিলো।ইচ্ছা করছে সমস্ত আদর দিয়ে উজাড় করে মীরাকে ভালোবাসতে কিন্তু ধ্রুভের পরক্ষণেই মনে পরে গেলো,মীরা তাকে ছেড়ে ওই প্রত্যয়কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

ধ্রুভের কপালের রগটা ফুলে গেলো।এক লাফে নিচে নেমে পরলো বিছানা থেকে।ফ্রেশ হতে চললো ওয়াশরুমে।

.
মীরার ঘুম ভাঙলো বেলা এগারোটার দিকে।আড়মোড়া ভেঙ্গে এদিক সেদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে।

পর মুহূর্তে সে বুঝলো সে তাদের বাগানবাড়িতে আছে যা ধ্রুভ এনেছে তাকে গতকাল রাতে।ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় চোখ গেলো তার।

নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ দেখে মীরার চোখ কপালে।নিশ্চয় ধ্রুভ করেছে।খাট থেকে ধ্রুভ কোথায় আছে তা রেগেমেগে খুজতে গেলো মীরা।

ধ্রুভ নিচে বসে মোবাইলে টাইপিং করছে আর আরেক হাতে কফি খাচ্ছে।মীরা নিচে নেমে এসে ধ্রুভর কলার ধরে বললো,

‘আমার জামা কাপড় বদলোর অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?কে আপনি আমার’

ধ্রুভের এক তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে মীরা তার কলার ধরেছে তার উপর এইসব উদ্ভট কথা।ধ্রুভ উত্তর না দিয়ে মীরার চুলের মুঠি ধরে তার ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিলো।শুরু হলো অত্যাচার মীরার ঠোটের উপর।কামড় দিচ্ছে জিদে ধ্রুভ মীরার ঠোটে।চুলের মুঠিটাও শক্ত তার।

মীরার হাত দুটো বেকিয়ে রেখেছে ধ্রুভ।চোখের একপাশ দিয়ে পানি গড়ছে।এই চুমুটা তার বেস্ট চুমু হতো যদি ধ্রুভ তার ভালোবাসাকে গ্রহন করে বিয়ে করতো এতোদিনে।ধ্রুভ তো তাকে কখনো চায় নি সে।

চুমুটা জেদ করে দিলেও ধ্রুভের কাছে মীরার ঠোট টা ওয়াইনের থেকেও নেশাক্ত মনে হচ্ছে এখন।মীরাকে নিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো।সোফায় মীরাকে শুইয়ে সম্পূর্ণ ভর দিলো তার উপর ধ্রুভ।এতোক্ষন কামড় দিলেও এখন শুষে নিচ্ছে মীরার ঠোট ধ্রুভ।মীরার কোমর জুড়ে ধ্রুভের হাতের বিচরণ চলছে।

বেশকিছুক্ষন পর ঠোটের যুগলবন্দী থেকে মীরা মুক্তো পেলো।সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।সে কনফিউশনে আছে তাকে ভালোবেসে আদর করলো নাকি জেদে।

ধ্রুভ ফিসফিস করে বললো,

‘ভেবে এখন তুই আমার কে।’

মীরার চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই।ধ্রুভের বলা কোন জবাব তার কানের কাছে যাচ্ছে না।সে শুধু একটাই কথা ভাবছে,

‘ভালোবেসে কাছে না টেনে এখন সে আমাকে কি তবে জেদে বিয়ে করেছে?’

.
বুয়া এসে সকালে সব কাজ করে দিয়েছে।মীরা বসে বসে পরোটা মিস্টি গিলছে।বিয়ের চক্করে ঠিকঠাক খাওয়া হয়ে উঠে নি তার।

ধ্রুভ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মীরা খেতে খেতে বিষম খেলো।ধ্রুভ তাড়াহুড়ো করে পানি দিলো।

ধ্রুভ এক ধমক দিয়ে বললো,

‘খাবার তো পালিয়ে যাচ্ছে না।একটু আস্তেধীরে খেলেই হয়।’

মীরা আবারো মুখে পরোটা পুরে বললো,

‘নিজে তো ঠিকই খেয়েদেয়ে দিব্যি জিম করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।আমার খবর কি নিয়েছিলেন?’

ধ্রুভ ভ্রু নাচিয়ে বললো,

‘বিয়ের তালে তুই থাকলে সেখানে কি আমি না খেয়ে থাকবো?’

ধ্রুভের মুখে বিয়ে শব্দটা শুনে মীরার প্রত্যয়ের মুখটা ভেসে উঠলো।নাস্তা মনে হচ্ছে আর গলা দিয়ে নামবে না তার।কোনরকমে গ্লাসের পানি টুকু গলার ভিতরে ঠেলে দিয়ে ডাইনিং থেকে নিঃশব্দে উঠে পরলো সে।

ধ্রুভ বুঝতে পারলো না এতোক্ষন কি কারনে ও আপসেট হলো।বাট এখন একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।

চলবে

কেমন লাগছে জানাবেন।নেক্সট না বললে আপনাদের কি মনে হয় রাইটার রা নেক্সট দিবে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here