#তুই_হবি_আমার😎😎
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__২২
#Engagement_Ceremony
রোজ,, কুহু দুজনেই আজ ল্যাহেঙ্গা পড়েছে। কুহু পিংক কালারের আর রোজ ব্লু। কুহু সামনের চুলগুলো কার্ল করে বেধে রেখেছে আর রোজের সব চুল ছেড়ে দেওয়া।
কুহু : রোজ গরম লাগবে চুল বেঁধে রাখো। আর শোনো মেঘ বলছিলো
রোজ : ওনার কথা পরে শুনবো আমাকে এখুনি একটু যেতে হবে। এদিকটা সামলে নিও টাটা।
কুহু : সারাদিন ছোটাছুটি। এখন আবার কোথায় গেলো,,, মেঘ জিজ্ঞেস করলে কি বলবো.?
রোজ এতোক্ষন একটা জায়গায় থাকা কিছু মানুষদের কথা শুনছিলো ব্লুটুথের সাহায্যে। বাড়ির পেছনের গেটে একটা সাদা গাড়ি রাখা আছে। রোজেরই গাড়ি,, রোজ চুলগুলো হাত খোপা করে ব্লুটুথ বের করলো। তারপর ডিকি থেকে একটা কালো ব্যাগ বের করে গাড়িতে উঠলো ।
রোজ : আমাকে চিনতে তুমি সামান্য একটু ভুল করেছো মিস্টার ভিলেন। তুমি হয়তো জানো না যে গেমটা আসলে কে খেলছে। তুমি ভাবছো আমি তোমাকে ধরার চেষ্টা করছি কিন্তু না আমি তোমাকে কোথায় কিভাবে মারবো সেটা ভাবছি। তোমাকে তো লুকিয়ে চুরিয়ে মারা যাবে না। আবার সবার সামনেও মারা যাবে না। যদি তোমার হাতেই তোমাকে মারি.? বেশ হবে তাইনা.? তোমার তো আবার মানুষ মারতে হাত কাঁপে না। দেখে নিও এবারও কাঁপবে না।
রোজ ব্যাগের চেইন খুলে একটা গান বের করলো। তিনটা বুলেট ঢুকিয়ে ঠিক নিজের রুমের ফুলদানিতে শুট করলো। তারপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো নিজের গন্তব্যে।
।
।
মেঘ আর সোহরাব বসে নিজেদের প্লানিং করছে। বাড়িটার সমস্ত ফুটেজ চেক করেছে। সন্দেহজনক কাউকেই দেখা যায়নি।
সোহরাব : তোমাদের আন্ডারওয়াল্ডের টপ গ্যাংস্টারদের মধ্যে তোমার শত্রু কে হতে পারে.? আমি যতদূর শুনলাম তোমার কথা শুনলে ভয়ে কাঁপে সবাই। একমাত্র #AB ছাড়া। কিন্তু #AB তো কখনো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি। তুমিও তো ওর কোনো কাজে বাধা দাওনি।
মেঘ : দিয়েছি।
সোহরাব : মানে.? কবে আর কিভাবে.?
মেঘ : ও চেয়েছিলো আমাদের টিম বানাতে। আমাদের এক হওয়ানোর চেষ্টা আমার কারনে বিফল হয়েছে। ও শেয়ারে কাজ করতে চেয়েছিলো। আমি করিনি। তারপর আমার কিছু লোক ওদের হাতে মারা যায়। আমিও ওর কিছু লোককে মারি। তখন থেকেই এই ঝামেলার শুরু।
সোহরাব : তাহলে রোজের সাথে ওর কি.? শুধু তোমার জন্য.?
মেঘ : রোজের সাথে ওর কি সেটা অনুমান করতে পারছি। তবে ওর এসব করার পেছনে মূল কারন কি সেটা ধরতে পারছি না।
রোজ : সেটা ধরতে হবে না । তুমি শুধু একটা কাজ করে দাও।
মেঘ : তুই এখানে.?
রোজ : হ্যা। দুজনকে ধরে আচ্ছামতো পিটাবা আর আমাকে কেন মারতে চেয়েছিলো সেটা জানবা। আমি ধরার জন্য গেছিলাম কিন্তু ওরা এই বিল্ডিং এ এসে লুকিয়েছে।
সোহরাব : কারা..?
রোজ : আমাকে যে ট্রাক দিয়ে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, তার মালিক আর ড্রাইভার।
মেঘ : তুই বস আমরা দেখছি।
সোহরাব আর মেঘ রোজকে রেখে বেরিয়ে গেলো। আর কিছুক্ষন পরে দুজনকে ধরে আনলো।
মেঘ : এরা?
রোজ : হ্যা এরাই। ছাড়ো ওদের। আমি মারবো ওদের।
মেঘ ওদের ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসলো। রোজ লোকটার চুলের মুটি ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো
রোজ : আমাকে একঘন্টা ধরে দৌড় করিয়েছিস। এবার তোদের চুল একটা একটা করে ছিড়বো।
রোজ ওদের চুল টানছে আর একের পর এক থাপ্পড় দিচ্ছে। সোহরাব আর মেঘ কফি খাচ্ছে আর ফ্রিতে ফানি মুভি দেখছে। কিন্তু হঠাৎ রোজ গান বের করে পর পর শুট করলো। মেঘ সোরবাব দাড়িয়ে গেলো,,, রোজের পায়ের সামনে লাশদুটো পড়ে আছে। রোজ নিজের পা ওদের রক্তে ভিজিয়ে নিলো।
মেঘ : এটা কি করলি তুই.?
রোজ : কি করেছি.? ওদের ঠিক-ঠাক জায়গায় পাঠিয়ে দিলাম। যারা নিজের মেয়ের সম্মানে হাত দেয়,, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এরা বেঁচে থাকলে কোনো মেয়ের আর বাবাদের প্রতি বিশ্বাস থাকতো না। মাতাল জানোয়ার।
কারোর আর বুঝতে বাকি রইলো না রোজ কি বলতে চাচ্ছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে রোজকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো ওরা।
।
।
মেঘ : বাড়ির টবে গুলি করেছে কেউ। কিন্তু কেন.?
রোজ : কারন ওখানেও হিডেন ক্যামেরা ছিলো। যাদের মেরেছি তাদের বস ওখানে ক্যামেরা লাগিয়েছিলো। আর সেটা আমার ওপর নজর রাখার জন্য। তোমরা তো জানো এসব নজরদারি আমার ভালো লাগে না।
মেঘ : এসব খবর তুই পাস্ কিভাবে.?
রোজ : আমার সোর্স আছে। আমি তোমাদের মতো মাথা মোটা না। সোহরাব,, বেবি রিং কোথায়? দেখি তো কেমন রিং কিনেছো.?
সোহরাব রোজের কথায় ভীষম খেলো। মেঘ রেগে তাকালো রোজের দিকে। রোজ কাওকে পাত্তা না দিয়ে রিং এর বক্সটা খুলতে লাগলো। সোহরাব সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।
সোহরাব : বাড়িতে যখন বাইরের কেউ আসেনি তখন তোমাদের এনিমি তোমাদের বাড়ির মানুষই মেঘ। তাই বাইরে নজর না দিয়ে আমাদের উচিত বাড়ির মানুষদের ওপর নজর রাখা।
রোজ : সামনে বিয়ে এখন এসব না করলে হয় না.? সবাই বিয়েতে মনোযোগী হও।
মেঘ : তার মানে তোর সব প্লানিং করাই আছে
রোজ : হ্যা,,, না মানে না।
মেঘ : আমাকে মিথ্যা বলতে পারবি না তুই। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে তুই তাকেও জানিস। কে সে নাম বল।
রোজ : আমি কি জানি.?
মেঘ : নাম বল।
রোজ : আমি জানি না।
মেঘ : মানলাম। তাহলে ওদের মারার আগে তোকে মারার অর্ডার যে দিয়েছে তার নাম শুনলি না কেন.?
রোজ : ( এই ব্যাটা দেখি আগের ফর্মে চলে আসছে। চুপ করে যাবো.? নাকি বলে দিবো? নাহ বলবো না। পরে যদি আবেগে ভাইস্যা সব ভুলে যায়। ) আমি কিছু জানি না সত্যি।
সোহরাব : আচ্ছা ঠিক আছে। এবার ভেতরে চলো। রোজ রিংটা সামলে এনো ওটা মেঘ কিনেছে।
রোজ : পড়াবা তুমি। তাই তুমিই রাখো। আমি গেলাম।
।
।
স্টেজের ওপর কুহু আর রোজ দাড়িয়ে আছে। মেঘ ফুলের ডেকোরেশন দেখছে। বাকিরা যে যার কাজে ব্যস্ত।
কুহু : রোজ কোথায় গেছিলে.?
রোজ কুহুর কথা না শুনে স্টেজ থেকে নিচে নেমে মেঘের দিকে তাকালো,, দুতিনজন মেঘের চারপাশে ঘুরঘুর করছে। দেখতে টোটালি চোরের মতো,, রোজ কিছু একটা ভেবে কুহুর দিকে তাকাতেই দেখলো কুহুর পিঠে লাল লেজারের লাইট জ্বলছে,, রোজ তৎক্ষনাৎ পাশের বিল্ডিং এর দিকে তাকালো একটা মাস্ক পড়া লোক মেশিনগান সেট করে আছে কুহুর দিকে। রোজ দৌড়ে কুহুর কাছে গেলো।
রোজ : আপু সড়ো।
রোজ কুহুকে ধাক্কা দিয়ে স্টেজের কর্নারে ফেলে দিলো,, লোকটাও ঠিক তখনই ট্রিগার টানলো আর রোজের বাম হাতে বুলেট লাগলো। রোজ ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরলো,, ফোনের ম্যাসেজিং টিউন বেজে উঠলো,,
♥রোজ♥
কুহুকে তো বাঁচালে। মেঘের কি হবে.?
রোজ : কুহু আপু মেঘ ভাইয়া.?
সবাই চারপাশে তাকাতেই দেখলো মেঘ নেই। রোজ ভয়ে কেঁদে দিলো। কারন মেঘ এখন একা আর ওরা পুরো গ্যাং নিয়ে এসেছে। ব্যাথায় সেন্সলেস হয়ে যায় রোজ। কুহু,, আরাভ আর রাজকে সবটা জানিয়ে সম্রাটকে কল করে। সম্রাট রাজকে বলে বাড়ির সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সম্রাট : জ্ঞান ফিরে আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে।কিন্তু মেঘ কোথায়.? আলিজা সুমিকে ডেকে আনো তো।
সুমি : যে শুট করেছে তাকে পেয়ে গেছে সোহরাব।
সম্রাট : ওকে ঠিক টাইমে মেডিসিন দিবে আর সবার খেয়াল রাখো আমি আংকেলদের ম্যানেজ করি যেন তারা এখন এখানে না আসে। রোজের জ্ঞান ফিরলে আমাকে খবর দিও।
আলিজা : ওর কিছু হবে না তো.?
সম্রাট : তোমার বোন এতোটাও উইক না যে একটা বুলেটে কাহিল হয়ে যাবে। আর হাতে লেগেছে তাই সমস্যা নেই।
রওশন : এটা বিয়ে বাড়ি নাকি যুদ্ধের ময়দান বোঝা যাচ্ছে না। একের পর এক ঝামেলা। প্রথমে রোজ, তারপর মেঘ আর এখন আরাভ রাজ দুজনেরই ফোন সুইচ্ড অফ।
ঈশা : ভাগ্য ভালো আগেই সবাইকে ম্যানেজ করেছিলাম যেন বিয়েতে আমরা ছাড়া কেউ না থাকে। এসব দেখলে একটা প্যানিক ছড়িয়ে পড়তো।
বিকাল ৪টা,,, রোজের জ্ঞান ফিরতেই রোজ নিজেকে ওর রুমে আবিষ্কার করে। কোনরকমে ডান হাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো ও।
রোজ : মেঘরোদ্দুর..?? মেঘরোদ্দুর কোথায়.?
রোজ ছুটে বাইরে চলে আসলো। সববিছুই স্বাভাবিক। তবে কুহুদের মুখটা একটু ভারভার। তাহলে কি মেঘ এখনো ফেরেনি.? কথাটা ভাবতেই রোজের চোখ ভিজে আসে। রোজ কুহুর কাছে গিয়ে মেঘের কথা জিজ্ঞাসা করে,, কুহু কোনো উত্তর দেয়না। আশ্চর্য ফ্লোরে এখনো রোজের ফোনটা পড়ে আছে,, কেউ তোলেনি কেন.? রোজ ফোনটা তুলে ম্যাসেজ অপশন চেক করে,,,
♥রোজ♥
কিছুক্ষনের মধ্যে মেঘ শেষ হয়ে যাবে। তারপর তুমি শুধু আমার।
♥রোজ♥
সোহরাবের ব্যবস্থাও করে ফেলছি জান। তাই ওদের কথা ভাবা বাদ দাও। ওদের ডেডবডিটা পাঠিয়ে দিবো শেষবারের মতো দেখে মাটি দিতে বলো।
সবগুলো ম্যাসেজ ৩টার দিকে করা হয়েছে। এখন চারটা বাজে। রোজ হাটু গেড়ে বসে কেঁদে দিলো। কুহু ঈশা রোজের চোখের পানি মুছে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
রোজ : ওরা কোথায়..?? আমি ওদের কাছে যাবো। আমার মেঘরোদ্দুর..? ওরা ঠিক আছে তো। তোমরা এতো শান্ত থাকতে পারছো কিভাবে.? আমাকে ছাড়ো তোমরা আমি ওদের কাছে যাবো।
মেঘঃ
আমি এলাম নিয়ে আজ, এক রঙিলা মেজাজ।
কে আছিস কোথা ভাই,,চল বাজা রে শানাই
আজ দেখুক লোকে সব, আজ জানুক লোকে সব।
তুই আমার,,,, তুই আমার।
[ রোজ চোখ মেলে সামনে তাকালো,, রাোজের চেনা মুখগুলো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চৌধুরি পরিবারের সবার সাথে রুশানি ও এসেছে। মেঘ রুশানির সামনে থেকে আসছে। ]
চল উঠবো নেচে,,, আজ মন বলেছে। হবে খুনসুটি দশবার। হবে হাতে হাতে চার। X2
[ রোজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো মেঘ। রোজ মেঘের হাত ধরে উঠে দাড়ালো ]
তোর হলুদ হবে গা তুই আমার হয়ে যা। আমি সহজে না মেনে নেবো হার।
তুই হবি আমার ওওও তুই হবি আমার। X2
[ মেঘ রোজের চোখের পানি মুছে স্টেপ বাই স্টেপ নাচছে। ]
রাজঃ
তোর সাথে আয়,,মেতে উঠি বিয়ের খেলায়।
ভোর রাতে আয় চাঁদ হবো তারায় তারায়।
[কুহুকে স্টেজের সামনে টেনে নাচতে লাগলো রাজ। ]
আরাভঃ
কাউকে মানি না পরয়া করি না করে বসি মন যা চায়। X2
[ আলিজাকেও টেনে নিয়ে নাচতে লাগলো আরাভ]
মেঘঃ
চল উঠবো নেচে,,, আজ মন বলেছে। হবে খুনসুটি দশবার। হবে হাতে হাতে চার।
তোর হলুদ হবে গা তুই আমার হয়ে যা। আমি সহজে না মেনে নেবো হার।
তুই হবি আমার ওওও তুই হবি আমার। X2
রোজ চুপ করে দাড়িয়ে ওদের নাচ দেখছে। ওর খেয়ালই নেই যে ওর হাত দিয়ে আবার রক্ত পড়ছে। মেঘ রোজের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসলো,, রাজও কুহুর সামনে হাটু গেড়ে বসলো তারপর দুজন দুজনের ভালোবাসার মানুষকে রিং পড়িয়ে দিলো। মেঘ হ্যান্ড মাইক নিয়ে সামনে আসলো।
মেঘ : অনেকে ভাবছেন আমি কেন সাদিয়াকে রিং পড়ালাম.? তাদেরকে বলছি ও সাদিয়া না,, ও রোজ। আমার রোজ। রাজ আর সোহরাবের একটা মিশনের জন্য ও সাদিয়া সেজে ছিলো এতোদিন। আজ মিশন কমপ্লিট তাই আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে সবটা জানিয়ে দিলাম। আর একটা কথা রোজ এখন আমার হবু স্ত্রী তাই আমি চাইনা ও যাদের পছন্দ করেনা তারা ওরা আশেপাশেও আসুক। আশা করি চৌধুরি মহলের সবাই বুঝতে পেরেছেন। রোজ, রুমে চল তোর হাতের ব্যান্ডেজটা নতুন করে করতে হবে।
।
।
কুহু : রোজের পরিচয় এক্সপোজ করলি কেন.? আর সোহরাব কোথায়.?
মেঘ : হসপিটালে,,, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে ওর পেটে গুলি লেগেছে। নুরিন আর সৌরভ ওখানেই আছে।
কুহু : সেকি.? কি হয়েছিলো.? আর তোরা কোথায় ছিলি.? সোহরাব ঠিক হয়ে যাবে তো.?
মেঘ : নিজের গোডাউনে। কিভাবে গেলাম বুঝতেই পারছি না। মেবি ওরা ক্লোরোফম দিয়ে সেন্সলেস করে ফেলেছিলো আমাকে। সোহরাব আমাকে ফলো করে ওখানে পৌছায়। ওদের লোক বেশি ছিলো তাই মারামারি করতে গিয়ে এই হাল। আর কিছু না
রোজ : সোহরাবের কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছো কেন.?
মেঘ : বাঁচার সম্ভাবনা নেই ওর। প্রথমে ভেবেছিলাম পেটে গুলি লেগেছে পরে ডক্টর বললো হার্টে দুইটা গুলি লেগেছে। সম্রাট ভাইয়া গেছে একটু আগে।
রোজ : এতো বড় একটা কথা আর তুমি চুপ করে ছিলে.?
মেঘ : সম্রাট ভাইয়া তোকে এসব বলতে মানা করেছে। তাছাড়া বাড়িতে সবাই এসে গেছে,,, এখন সবাইকে নরমাল থাকতে হবে,, নরমাল বিহেভ করতে হবে। নাহলে সন্দেহ করবে সবাই। এতো মানুষ যদি আমাদের ভুলে কারোর কিছু হয়ে যায়.?
কুহু : যে এসব করছে তাকে পেলে,,
রোজ : কাল সঙ্গীত,, আশা করি বিয়ের আগেই তাকে পেয়ে যাবে। আর হ্যা সোহরাবকে বাঁচাতে হবে কারন সোহরাব সাদিয়ার শেষ স্বপ্ন ছিলো। সব কিছু শেষ হতে দেখেছি। এটা দেখতে পারবো না।
সম্রাট : সোহরাব ঠিক আছে বোন। ওকে নিয়ে চিন্তা করিস না। কুহু আমার সাথে চলো একটু।
রোজ : আমি আসছি।
সম্রাট : তোকে আসতে বলেছি.? মেঘের কাছে থাক। মেঘ রোজকে একা ছাড়বে না। সকালে একবার হাতে গুলি খেয়েছে,, পেট ভরে নি। পাঁজি মেয়ে।
মেঘ : জি,, ভাইয়া যা বলবে তাই তো করতে হবে। কুহু বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিস আর দেখিস তো তিন চার ঘন্টা যেন কেউ আমাদের বিরক্ত না করে।
রোজ : আআআমি সুম্পির কাছে যাবো।
রোজ কুহুর পেছন পেছন হাটতে শুরু করলো কিন্তু কুহু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে দরজা আটকে দিলো। রোজ দরজা ধাক্কালো কিছুক্ষন কিন্তু কেউ খুললো না। রোজ ক্লান্ত হয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ আধাশোয়া হয়ে শার্টের বোতাম খুলছে। রোজ চোখ বড় বড় করে ঢোক গিললো।
রোজ : তততুমমমি শশশার্টটট খখখুলললছোছছ ককেন.??
মেঘ : তাতে তোর কি.? গরম লাগছে তাই খুলছি।
রোজ বুকে ফু দিয়ে উঠে দাড়ালো তারপর কাবার্ডের দিকে গেলো। কাবার্ড খুলতেই ওর চেহারার অবস্থা বেহাল। কাবার্ডে কোনো জামা নেই খালি শাড়ি।
রোজ : একি আমার জামা কোথায়.?
মেঘ : কেন তুই জানিস না.? আয়াশকে বলেছিলি শুধু শাড়ি পড়বি। তাই তোর রুম থেকে স্যালোয়ার কামিজ, গাউন, ফ্রক টি-শার্ট প্যান্ট সবকিছু নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
রোজ : অদ্ভুদ,,, আমি ইভেন্টে শাড়ি পড়বো বলেছি,,, অলঅয়েজ পড়বো সেটা বলেছি নাকি.. এখন আমি কি পড়বো।
মেঘ : যা আছে তাই পড়। নাহলে কিছু পড়ার দরকার নাই। আমি ঘুমালাম। কোনো দরকার হলে আমাকে ডাকবি না নিজের কাজ নিজে করবি।
রোজ : বেদ্দব বজ্জাত। তোর কপালে বউ নাই। জীবনে বাচ্চার মুখ দেখতে পারবি না।
মেঘ : আচ্ছা.? বউ বাচ্চা লাগবে না। তুই ছোট আছিস আগে তোকে পেলেপুষে বাচ্চার শখ মেটাবো,, তারপর বড় হলে বউ এর।
রোজ : এই তোমার লজ্জাশরম কিছু নাই.?
মেঘ : ওসব মেয়েদের থাকে। আর বেশি লজ্জা পেলে আমার বউ সন্দেহ করবে। তোর জন্য আমি বউ হারাতে পারবো না,,
রোজ : বেহায়া বেশরম নির্লজ্জ পোলা। আমার রুম থেকে যাও।
মেঘ : কি বললি,,
মেঘ উঠে রোজের দিকে এগোতে লাগলো। রোজ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,, আর পালানোর রাস্তা খুজছে। কোনো রাস্তা না পেয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলো রোজ,, আর মেঘ পেছন থেকে ওর ল্যাহেঙ্গার ওরনা টেনে ধরলো। রোজ ওরনা খুলে দৌড় দিবে এমন সময় টের পেলো ওর পিঠে মেঘের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।
রোজ : সরি,,, আর বলবো না। তুমি ভদ্র শান্তশিষ্ট নরম মনের ইনোসেন্ট একটা ছেলে। আমাকে ছেড়ে দাও।
মেঘ : ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। এই সাত মাসের হিসাব আগে মেটাবো তারপর বাকি সব।
মেঘ রোজের পেটে হাত রাখতেই রোজ নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে জামা চেপে ধরে। পিঠের খোলা অংশটা মেঘের রোমশ বুকে ঠেকটেই কেঁপে উঠলো রোজ। মেঘ রোজের সব চুল ডান কাধে রেখে বাম কাধে ঠোট রাখলো। তারপর গভীরভাবে চুমু দিলো। মেঘের জিব্হা রোজের কাধ স্পর্শ করতেই রোজের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। মেঘ রোজকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দুহাতে রোজের গাল ধরে ঠোট দিয়ে ওর চোখের পানি শুষে নিলো।
মেঘ : আর কখনো ছেড়ে যাস্ না আমায়। খুব ভালোবাসি রে তোকে,,, এতোদিন তোর অপেক্ষাতে মরেও বেঁচে ছিলাম। আর আজ যখন নিজের জীবন ফিরে পেলাম তখন আবার আমার থেকে আমার জীবনটা কেড়ে নিতে চাচ্ছিস,, আমি কি মরে গেছি.? কেন আমাদের জন্য বারবার নিজেকে বিপদে ফেলিস.? আমাকে কেন বুঝতে চাস্ না.? মানছি তোকে কষ্ট দিয়েছিলাম তাই বলে এতো শাস্তি দিবি। আমি তোর কাছে আসলে তোর খারাপ লাগে.? তাহলে বল আমি আর কখনো তোর সামনে আসবো না। আমার কাছে তোর ভালোলাগা, ভালোথাকাটাই সব। চলে যাচ্ছি আমি।
মেঘ রোজের গাল থেকে হাত নামিয়ে পেছন ঘুরতেই রোজ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো,,
রোজ : আমি কি যেতে বলেছি.? তোমরা কেউ আমাকে বোঝো না। বুঝতে চাও না। আমি কি বলেছি তুমি আমার কাছে থাকলে আমার খারাপ লাগে.? তুমি না থাকলেই তো আমার বেশি কষ্ট হয়। যাও যাও সবাই আমাকে একা ফেলে চলে যাও। আমি একাই থাকবো।
মেঘ : তাহলে কাঁদছিলি কেন.?
রোজ : আমি কি জানি.? তুমি যখন কিস করলে তখন কারেন্টের মতো লাগলো। কান্না আসছিলো তাই কেঁদে দিসি।
নাক ডলতে ডলতে বললো রোজ। মেঘ রোজের নাক টেনে বললো,,,
মেঘ : রোম্যান্টিক মুডটাই কেঁদেকেটে খারাপ করে দিলি। কিস করলে কেউ কাঁদে এপর্যন্ত শুনেছিস.? আলিজা বা কুহুর কাছে শুনিস,, তোকে আগে বেবি ফিডার খাওয়াবে,,তারপর বোঝাবে।
রোজ : কুহু আপুকে আবার বলবো দেখো তোমার কি করে।
মেঘ : কি বলবি.? আমি তোকে কিস করেছি.? পেটে টাচ করেছি.?
রোজ : নাক ধরে টানছো ওটাই যথেষ্ট।
হঠাৎ রোজের চোখ মেঘের বুকের বা পাশে করা ট্যাটুটার ওপর পড়ে। পশমে ঢেকে আছে তবে স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে। রোজ হাত দিয়ে ট্যাটুটা স্পর্শ করতেই মেঘ দূরে সরে গেলো। জামাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেললো,, রোজ ভ্রু কুচকে তাকালো
রোজ : ওটা কি ছিলো,,,
মেঘ : কিছু না।
রোজ : শার্ট খোলো আমি দেখবো।
মেঘ : ছি! ছি! রোজ এসব কি বলিস। একটা নিরিহ ছেলেকে একা পেয়ে তুই তার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করবি.? এটা তোর থেকে আশা করিনি আমি।
রোজ : তুমি খুলবা নাকি ছিড়ে ফেলবো।
মেঘ : কি দিনকাল আসলো,, মেয়েরা জোর করে
রোজ : একদম উল্টা পাল্টা বলবা না। ধুররররর,, নিকুচি করি তোমার শার্টের।
রোজ মেঘের শার্টের কলার টেনে দুহাতে শার্ট চিড়ে ফেললো। তারপর ট্যাটুটা ভালো করে দেখলো।ওর নামের ট্যাটু।
রোজ : ট্যাটু কবে বানিয়েছো.? এখনো ক্ষত আছে।দেখি বসো আমি স্যাভলন লাগিয়ে দেই।
মেঘ : যেদিন প্রথম তোকে নিয়ে রিসোর্টে গিয়েছিলাম সেদিন। তারপর মানুষটার সাথে নামটাকেও মনে রাখার জন্য সর্বদা কাছে রাখার জন্য,, ট্যাটুটা সতেজ করে রেখেছি।
রোজ আঙ্গুল দিয়ে স্যাভলন লাগাচ্ছে আর ফু দিচ্ছে। মেঘ রোজের অস্থিরতা দেখে হাসছে।
রোজ : কেন করতে গেলে এসব.? এখন কষ্ট কে পাচ্ছে.? ব্যাথা কে পাচ্ছে.?ইশ কালো হয়ে গেছে।
মেঘ : তাই.? আমার তো মনে হচ্ছে ব্যাথা তুই পাচ্ছিস।আর আমার তো ভালোই লাগছে এসব,, সাথে এই নতুন রোজ টাকেও আগের থেকে বেশি কিউট, লাল টমেটোর মতো গালওয়ালি,, আর এমন বউ বউ ভাবের কেয়ারিং,, [ রোজ লজ্জা পেতে লাগলে মেঘ ওকে রাগানোর জন্য বলে উঠলো ] জানিস,? তুই যখন ছিলি না তখন কলেজে গেলে মেয়েরা আমার কতো খেয়াল রাখতো.? বিশেষ করে টিনা। তোর এই কেয়ারিং বউ এর স্বভাব আজীবন থাকলে ওদের অনেক মিস করবো।
রোজ উঠে পাশে থাকা একটা স্টান্ড হাতে নিয়ে রাগি রাগি লুকে তাকালো। তারপর স্টান্ড দিয়ে জোরে একটা বারি দিলো পায়ে
রোজ : মিস করাচ্ছি..? চোখ গেলে রেখে দেবো। তোর ফোন দেখছিলাম সেদিন,, আহা মেয়েদের ম্যাসেজের দোকান,, তোর হাত ভেঙে ফেলবো যে হাত দিয়ে চ্যাটিং করিস। তোকে তো।
মেঘ উঠে রুমের মধ্যে ছুটতে লাগলো,, ওর পিছনে রোজ স্টান্ড নিয়ে দৌড়াচ্ছে।
মেঘ : আরে মজা করতেছিলাম। আমি কাওকে মিস করি না। কারোর সাথে আর কথাও বলবো না। কারোর দিকে তাকাবো না। এবারের মতো মাফ করে দে। আল্লাহ গো কি বউ দিলা,, এখন কি বউ এর হাতে মার খেতে হবে.? দেশে পুরুষ নির্যাতনের আইন নেই কেন.? প্রশাসনকে তো বুঝতে হবে কিছু কিছু পুরুষের ঘরে বউ নামক মানুষরূপী ডাইনি থাকে।
রোজ : কি বললি আমি ডাইনি.? আজ তোকে হাতে পাই পানি ছাড়া গিলে খাবো,, ব্রাজিলের বিড়াল, নাহ তোকে খাবো না। তোকে তো টিকটিকির সুপ, তেলাপোকার জুস, ইদুরের রেজালা, সাপের কাবাব, আর যা যা আছে তাই খাওয়াবো।
কথাটা শুনতেই দাড়িয়ে যায় মেঘ। শরীর ঘিনঘিন করছে ওর। মেঘ রোজের সামনে বসে বললো,,
মেঘ :স্টান্ড দিয়ে মার,, লাঠি দিয়ে মার,, দরকার পড়লে কুহুদের ভাড়া করে এনে একসাথে মার তবুও এসব খাবারের নাম বলিস না। পেট মোড়াচ্ছে খাওয়ার সময় মনে পড়বে,, উফফ
মেঘ নাক সিটকাচ্ছে আর রোজ মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,, বেশ ভালো আইডিয়া মারার চেয়ে কথার প্যাচ বেশি। নেক্সট টাইম এগুলো বলেই মেঘের ১২টা বাজাবে। রোজ হাসতে হাসতে বললো,,
রোজ : বাকি গুলো বলা হয়নি,, কেঁচোর নুডুলস, টিকটিকির ডিম ভাজি,, জোঁকের ফ্রাই,, শুঁয়োপোকার চাটনি,,
মেঘকে আর পায় কে.? মেঘ ছুটে গিয়ে বেসিনের পাশে দাড়িয়ে বমি করতে লাগলো,, বরাবরই খাবারের বিষয়ে সেনসিটিভ ও,, না জানি বেচারার আজ কি হাল হয়।
চলবে,,
[ আজ বড় করে দিয়েছি গল্প। আর প্রতিদিন রাত ৮টায় গল্প দিবো,, যেদিন দেখবেন দেইনি সেদিন ধরে নিবেন গল্প দিবো না।
হ্যাপি রিডিং ]