#তুই_হবি_আমার😎😎
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__০৯
রোজকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর গায়ের ওপর ব্লাংকেট টেনে দিলো মেঘ। তারপর এসি অন করে দিলো। আলিজারা সোফায় বসেছে। মেঘ কাবার্ড থেকে মেডিসিন বের করলো,, মেঘের এই রুমে সবকিছু পাওয়া যায়। কেউ বিষ খুজতে চাইলে হয়তো বিষ্ও পেয়ে যাবে। মেঘ রোজের মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কতটা।
আলিজা : ওর কি খুব জ্বর.?
মেঘ : নাহ হয়তো ব্যাথায় শরীর গরম হয়েছে। মেডিসিন দিচ্ছি কমে যাবে। তুমি রোজের পরের কাহিনি বলো।
আলিজা : এই জ্বরের মধ্যে ও একা হোস্টেলে থাকবে কিভাবে.? এই মেয়েটা আমার কাছেও থাকতে চায়না। অত্যন্ত একরোখা বজ্জাত
মেঘ : আমি থাকবো ওর সাথে। আর ও এখানেই থাকবে। ভয় পেয়ো না এই মেঘ কখনো কোনো মেয়ের অচেতনার সুযোগ নেয় না। তুমি রোজের কথা বলো।
আলিজা : ওর তখন পাঁচ বছর বয়স। স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ওর ব্রেইনটা অনেক শার্প ছিলো একবার পড়লেই সব মুখস্থ করে ফেলতো। কিন্তু একদিন স্কুলে আমার সাথে একটা ছেলের ঝগড়া হয় আর ছেলেটা আমাকে ক্লাসের সামনে ঘুসি মারে। সেটা ওই পিচ্চি রোজটা দেখে ওর নিশানাটা ছিলো অনেক তীক্ষ্ণ ও নিচ থেকে একটা ছোট ইটের টুকরো উঠিয়ে ছেলেটার দিকে মারতেই ওটা ছেলেটার কপালে গিয়ে লাগে আর কপাল কেটে রক্ত বের হতে লাগে। ছেলেটার গার্ডিয়ান বাড়ি এসে নালিশ করতেই মাম্মা ওকে ওরনা দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে ইচ্ছামতো মারে। এটা নাকি শাষন. সেদিন ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। রোজও স্বীকার করেনি কিছু।
একদিন কলির জাম খেতে ইচ্ছা করছিলো আমাদের বাড়ি অবশ্য জাম বাদে সব গাছই আছে। কলি জাম পারার জন্য রোজকে বলে,, রোজও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু গাছে ওঠার সময় মৌমাছির চাক খেয়াল করেনি ও। আর তখন ও ওটোটা বুঝতোও না ও ভুল করে মৌচাকের ওপর পা দিতেই মৌচাক ভেঙে যায়। আর মৌমাছিগুলো সব আমাদের ঘিরে ফেলে,, তবে আমাদের চেয়ে বেশি রোজকে হুল ফুটিয়েছেলো। ও শুধু কেঁদেছিলো। কিন্তু বাড়ি আসার পর মাম্মা ওকে আবার মারে। কারন ওর জন্য মৌমাছি আমাদের সবাইকে হুল ফুটিয়েছে। বাড়ি ফিরে বাবা যখন জানতে পারে তখন বাবাও ওকে বকেছিলো। আমরা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে পারিনি কারন সত্যি বললে তখন আমরা বকা শুনতাম।
এমন অনেক ছোট ছোট কারনে মাম্মা রোজকে মারতো। রোজ ছিলো অনেকটা অভিমানি আর রাগি টাইপের মেয়ে। কষ্ট চেপে রাখতে পটু। কখনো কারোর সাথে কথা বলতো না। হাসতো না। এতো মার খাওয়ার পরেও ওর চোখ দিয়ে কখনো পানি পড়তে দেখিনি । কখনো টুঁশব্দও করতো না। জানি না কিভাবে চুপ থাকতো। বাড়ির যে কোনো সমস্যা হলে তার জন্য রোজকে বলা হতো। ঘর থেকে একটা ভাতের দানা হারিয়ে গেলেও মাম্মা ওকে দোষি বানাতো।
মেঘ : নিজের মেয়ে না হোক আপুর মেয়ে হিসাবেও তো রোজের খেয়াল রাখতে পারে আন্টি।।।তাহলে.?
আলিজা : মাম্মা বড়মার ফুপাতো বোন। বড়মার আপন কোনো ভাইবোন ছিলো না। তাছাড়া আমার মাম্মা বড়মার সবচেয়ে কাছের মানুষ ও বন্ধু তবে নিজের বোন না, তখনই তো বললাম ।
হঠাৎ কলি দাড়িয়ে যায়। ওর হাতে একটা সুন্দর গোলাপের মলাটের ডায়েরি। কলি এতোক্ষন ওটাই পড়ছিলো যেটা কেউ খেয়াল করেনি। কলির হাতে ডায়েরি দেখে ভয় পেয়ে যায় মেঘ।
মেঘ : না বলে অন্যের জিনিস দেখা ঠিক না কলি। ডায়েরি রেখে দাও।
কলি : অসম্ভব। যেটা আমি জেনেছি সেটা সবার জানার দরকার। আজ যখন সবার জীবনের সব ঘটনা বলা হচ্ছে তখন এটা বাদ থাকবে কেন.?
আরাভ : কি ওটায়.?
কলি ডায়েরিটা টিটেবিলের ওপর রাখলো। ডায়েরির উপরে ডিজাইন করে ★★মেঘরোজ★★ লেখা। হ্যান্ডরাইটিং দেখেই আরাভ চিনে ফেলে এটা মেঘের লেখা। কলি প্রথম পৃষ্ঠা বের করে
♠♠ জানো ডায়েরি আজ আমার সাথে একটা পরির দেখা হয়েছে। সাদা গাউন পড়া, মাথায় সাদা ক্রাউন। দুইগাল গোলাপি আর ঠোট টা লাল অনেক সুন্দর জানো..? আর তার নাম জানো.? ওহ তুমি কি করে জানবে.? আমি তোমাকে বলছি।
আজ আমি কুশান আংকেলের মেয়ে আলিজার জন্মদিনে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে কত মেয়ে তুমি তো জানোই নাহ যে, আমার মেয়েদের ভালো লাগে না। তাই আমি ছাদে গিয়ে বসে ছিলাম। কিছুক্ষন যেতেই একটা মেয়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনি। বাবাহ কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম তবুও আমি ছেলে। আমাকে কি ভয় মানায়..? আমি পা টিপে টিপে হাসি যেদিকে হচ্ছে সেদিকে যেতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা সাদা জিনিস লাফ দিয়ে আমার সামনে পড়লো। ভয়ে পেছনে সরতেই দোলনায় গুতো খেয়ে নিচে পড়ে যাই। আর আমার পড়ে যাওয়া দেখে সে আবারও হাসতে লাগলো। এবার খেয়াল করলাম তাকে। ৫-৬বছরের বাচ্চা একটা মেয়ে সাদা গাউন পরে প্রিন্সেস সেজে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। এন্জেল টা চোখ বুজে হাসছে। গালদুটো অসম্ভব কিউট। কিন্তু আমাকে তো ভয় দেখিয়েছে তাই ও মোটেও কিউট না। আমি রেগে বললো,,
— এই মেয়ে হাসছিস কেন..? তুই জানিস আমি কে..? এখুনি তোকে নিচে নিয়ে ধরিয়ে দিবো দেখবি সবাই তোর কি করে। মেরে পিঠের ছাল তুলে দিবে।
আমার কথায় হয়তো মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। তাই হাসি থামিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে।
— সরি। বুঝতে পারিনি আমি তো টাংকির পানি দেখতে এসেছিলাম মাম্মা পাঠিয়েছে। আর নামার সিড়িটা মনে হয় কেউ নিয়ে গেছে তাই লাফ দিসি।
— তুই মানুষ নাকি.?
— হ্যা তো। জানো আমার নাম রোজ। রোজ মানে গোলাপ। তোমার নাম কি.?
— তুই দেখি অনেক কথা বলিস। যাই হোক আমি যাকে তাকে নাম বলি না। কিন্তু তুই যখন চাইছিস তখন বলবো।
— হুম হুম বলো।
— দাড়া আগে তোর গাল টানি।
— মোটেই না। আমার গাল টানলে লম্বা হয়ে যাবে। তুমি তোমার গাল টানো। আর আমাদের বাড়ির ছাদে তুমি কি করো.? এই তুমি চোর.?
— আমার নাম মেঘালয় আহমেদ রৌদ্র। মৃন্ময় আহমেদের ছেলে।
— ওহ তুমি বাপির বন্ধুর ছেলে। কিন্তু তোমার নাম না অনেক বড়। এতো বড় নাম রেখেছো কেন.? আমার নাম দেখো কতো ছোট আর ভালো।
— তুই আবার হাস তো।
— হাসবো..? কেন.? আমার তো হাসি পায়না সবসময়।
— তোকে নিচে দেখিনি কেন.? কেক কাটার সময় কোথায় ছিলি.?
— মাম্মা আমাকে নিচে যেতে মানা করেছে। আমি অনেক দুষ্টুমি করি তো তাই।
— ঠিক করেছে আন্টি। বাবাহ এখুনি ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলছিলি আমাকে। আর শোন সবাই আমাকে ছোট করে মেঘ ডাকে তুইও তাই ডাকবি।
— কেন.? আমি কি সবার মতো.? আপিলা বলে আমার সবার থেকে আলাদা।আমি নাকি এঞ্জেল। তাই আমি তোমাকে আলাদা নামে ডাকবো। আমি তোমাকে মেঘরোদ্লো নামে ডাকবো।
— তুই দেখি তোতলা।” র ” উচ্চারন করতে পারিস না ঠিক করে।
— পারি তো কিন্তু মাঝে মাঝে ভুল হয়। অনেক বড় নাম তো তাই। আচ্ছা আমি তোমাকে মেঘরোদ্দুর বলে ডাকবো। দেখো এবার উচ্চালন করতে পেরেছি।
— উচ্চালন না উচ্চারন। ভারি মজার মেয়ে তো তুই। চল গল্প করি। এমনিতেও তো তুই নিচে যাবি না। আর আমারও নিচে যেতে ভালো লাগে না।
— আমার সাথে তো কেউ মেশে না। আমি নাকি খারাপ। তুমি আমার সাথে মিশবে.? গল্প করবে.?
— হুম। চকলেট খাবি.? ডেইরি মিল্ক নরম টা।
— ডেইরি মিল্ক.? সিল্ক?
— তুই দেখি নামও জানিস। নে খা। তোর সিল্কি ডেইরি মিল্ক। আর শোন আজ থেকে আমরা বন্ধু। আমার ফোন আছে তোকে নাম্বার দিবো তুই ফোন দিবি।
— আমার তো ফোন নেই।।।
— আমারটা রাখ। আমি বাবার কাছ থেকে নতুন কিনে নিবো। আর আমি যখন ফোন দিবো তখন ধরবি। নাহলে এখানে এসে তোকে পিটাবো।
রোজ আমাকে ওর সব কথা বলে। কখন ঘুমায় কখন খেলে,, কি কি পড়ে। জানো আমাকে নেচেও দেখিয়েছে। পোয়েম শুনিয়েছে। মেয়েটা অনেক ভালো। আমার অনেক ভালো লাগে ওকে ওর জন্যই তোমাকে এনেছি আমি। দেখো তোমার মলাটে লিখেছি ★★মেঘরোজ★★। দারুন মানিয়েছে বলো.? আমি বড় হলে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। তুমি কি বলো আনবো..?
♥
♥
♥
ডায়েরি ডায়েরি জানো আজ কলির জন্মদিনে কি হয়েছে.? আজ আমি আবার গিয়েছিলাম রোজের কাছে। আমরা অনেকক্ষন গল্প করেছি। রোজ আমাকে ওর সব পুতুল দেখিয়েছে। আমরা আজ পুতুল খেলেছি। রোজ আর আমার পুতুলের বিয়ে দিয়েছি। ও বলে,,
— মেঘরোদ্দুর এটা তোমার বর পুতুল আর এটা আমার বউপুতুল। আমি আর আপিলা প্রতিদিন এদের সাজিয়ে বিয়ে দেই। চলো আজ তুমি ওকে সাজাও আমি আমার পুতুল সাজাই।
— ঠিক আছে। কিন্তু সাজাবো কিভাবে.?
— আরে বুদ্ধু ওকে পাঞ্জাবি পড়াবে পাগড়ি পড়াবে। আর হ্যা আমার বিছানায় আপুর সেন্ট আছে ওটা মাখাবে।
— আর তুই কি করবি.?
— আমি একে ল্যাহেঙ্গা পড়াবো নেলপলিস দিবো। লিবস্টিক দিবো।
— গাধি ওটা লিবস্টিক না লিপস্টিক। লিপ মানে ঠোট।
— তুমি সবসময় মন্টু স্যারের মতো ভুল ধরো। ভালো লাগে না। চুপচাপ নিজের কাজ করো তো।
— নে হয়ে গেছে।
— আমারও হয়ে গেছে এবার আপিলার মতো করে কবুল বলো।আমিও বলবো
— কবুল বললে তো তোর সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।
— কেন.? আমি তো ছোট।আমার তো বিয়ে হবে না। জানো আপিলা বলেছে বড় হলে আমারও বিয়ে হবে। একটা সুন্দর রাজকুমার এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি বউ সাজবো, তার কাছে থাকবো। আমাকে কখনো কষ্ট দেবে না সে। তুমি তখন চেয়ে চেয়ে দেখবা। হুহ।
— কি বললি তুই.? তুই আরেকজনের কাছে থাকবি..? তোর এতোবড় সাহস.? তুই আমার কাছে থাকবি,, আমার জন্য বউ সাজবি,, আমার হবি তুই। মনে থাকবে কথাগুলো.? ( রেগে রোজের গাল চেপে ধরলাম। তারপর কথাগুলো বলে চলে আসলাম। )
আমার মনে হয় রোজ মনে হয় কষ্ট পেয়েছে,, পেলে পাক, আমার কি দোষ্.? ও বললো কেন ও আরেকজনের কাছে থাকবে.? আমি কি ওকে কখনো কষ্ট দেই.? আমি তো ওকে খুব ভালোবাসি তাও শুধু শুধু এমন করে আমার সাথে। থাকুক ও দুইদিন কথা বলবো না। কান্নাকাটি করলে তারপর যাবো। এমনিতেও ও একদিনও আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না। পাগলি মেয়ে।
♥
♥
♥
আজ দুই বছর পর আবার ডায়েরি খুললাম।হ্যা রোজের কথাই লিখবো। রোজকে ছেড়ে চলে এসেছি আমি। আজ চলে আসলাম ওকে ছেড়ে। কেন জানো.? আজ মায়ের কথা জেনেছি আমি। বাবা বলেছে আমাকে। আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। রোজও যদি চলে যায়..? কাউকে না পেয়ে হারালে কষ্টটা কম হবে। আর যদি পেয়ে হারাই তাহলে কষ্টটা দ্বিগুন হবে। আমি কি করবো.? ছোটবেলায় জানতাম মা মরে গেছে। অভিমানে কোনো মেয়ের কাছে যেতাম না। রাগ হতো মেয়েদের ওপর। আর এখন ঘৃনা হয়। কিন্তু রোজ ও তো বলেছে,,
— আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না মেঘরোদ্দুর। আমার কোনো বন্ধু নেই। তুমি চলে গেলে আমার কি হবে.? আমার সাথে কে কথা বলবে.? কে খেলবে.? প্লিজ যেও না। আমাকে একা রেখে কেন চলে যাচ্ছো
— আমি তোকে পছন্দ করিনা।আর এখন তো সহ্যই করতে পারছি না। এখানে আসতেও আমার ভালো লাগে না। আমি আসলে তোকে রাগ করবো মারবো সেটা ভালো হবে না। তুই এখানে থাক। ভালো থাকবি।
— আমি এখানে ভালো থাকি না। আচ্ছা তোমার এখানে আসতে হবে না। আমাকে তুমি তোমার সাথে নিয়ে চলো। আমি তোমার সাথে থাকবো তোমার কাছে থাকবো। এখানে কেউ আমাকে পছন্দ করে না। কেউ আমাকে ভালোবাসে না। সবাই মারে,,, বকা দেয়।
— মিথ্যা বলবি না একদম। তুই এবাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে সবার আদরের। সবাই তোকে অনেক ভালোবাসে। তোর জীবনে আমার কোনো প্রয়োজন নেই।
— কেন এমন করছো.? তুমিই তো বলেছিলে আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে। তোমার কাছে রাখবে। আমাকে বিয়ে করবে,,, তোমার জন্য বউ সাজবো আমি। তবুও কেন আমাকে ফেলে যাচ্ছো। যেও না প্লিজ মরে যাবো আমি।
— ভুলে গেছি সব।
রোজের কান্না আরো বেড়ে গেলো। এই প্রথম রোজকে এভাবে কাঁদতে দেখেছি। ডান হাত দিয়ে বাম হাতে খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে রাগে। নখের আঁচড়ে চামড়া কেটে গেছে। তবুও কান্না থামাচ্ছে না। একভাবে বলছে “আমাকে নিয়ে যাও। আমি তোমার কাছে থাকবো। মেঘরোদ্দুর যেও না। আমি যাবো তোমার সাথে ” কি করবো বলো আমি যে আর কষ্ট পেতে চাইনা আমি। কাউকে বিশ্বাস করতে চাইনা । আজ থেকে এই ডায়েরিও বন্ধ থাকবে আজীবনের জন্য। লিখবো না কোনো কিছু। ভাববো না রোজের কথা। মন থেকে মুছে ফেলবো রোজ নামক ভালোবাসার মানুষটিকে। ♠♠
আলিজা : তাহলে তোমার জন্যই রোজ টানা তিনদিন না খেয়ে ছিলো একসপ্তাহ কেঁদেছিলো। কেন করলে এমন.?
আরাভ : এটা তো ১০বছর আগের ডায়েরি ২০১০ সালের। তারমানে তুই রোজের জন্যই কোনো মেয়ের দিকে তাকাস্ না। এমনকি Ragging করার সময়ও আমাদের বাঁধা দিয়েছিলো। আর এতো কনসার্ন সব রোজের প্রতি তোর ভালোবাসার। এতোকিছু সবার থেকে লুকিয়ে গেলি.?
মেঘ : বাবা জানতো। সবার আগে বাবাই বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু আবেগের বশে সবটা শেষ করে দিলাম। তখন যদি রোজের কথা শুনতাম তাহলে আজ রোজ আমার কাছে ভালো থাকতো।
কলি : তুমি চলে যাওয়ার একবছর পর রোজের জীবনে রওশন ভাইয়া আসে।
রওশন নামটা শুনতেই চমকে যায় আরাভ। ওদের কলেজের টিচার রোজের জীবনে..?
আরাভ : রওশন স্যার.?
কলি : হুম। ঈশাপুর Bf। রোজকে বোনের মতো ভালোবাসে। রোজও রওশন ভাইয়াকে বড় ভাই মনে করতো ভালোবাসতো কিন্তু হঠাৎ ৫বছর আগে জানতে পারি রোজের সাথে রওশন ভাইয়ার সম্পর্ক আছে। ঈশাপু রেগে সবাইকে কথাটা বলতেই বড়চাচ্চু নিজে রোজকে মারে। রোজের পিঠে সেই লাঠির দাগ এখনো আছে। রওশন ভাইয়া রোজকে মারার জন্য রেগে যায় অনেক। আমাদের বাড়ি এসে বাবাকে অনেক কথা শোনায়। আর রোজের সম্মানের জন্য লন্ডন চলে যায়।
আলিজা : সেদিন রোজের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি ওকে নিয়ে হসপিটালে যাই আর সেখানে দেখা হয় ডক্টর মীরার সাথে। একজন গাইনিকোলজিস্ট। তিনি রোজের অবস্থা দেখে কেঁদে দিয়েছিলো। কান্নার কারনটা বুঝতে পারিনি আমরা।তাই ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি। তাতে উনি যে উত্তর দিয়েছিলো তাতে আমাদের সারা দুনিয়া অন্ধকারে ঘিরে গেছিলো। আমার মাম্মার কন্সপিরেসিতে ডক্টর বড়মাকে হার্টের মেডিসিনের সাথে পিল দিয়ে রেখেছিলো যার কারনে বড়মা কনসিভ করতে পারতো না। হয়তো দীর্ঘদিন মেডিসিন না নেওয়ার জন্য বড়মা কনসিভ করেছিলো। আর যেদিন রোজ হলো সেদিন সকালেও নাকি মাম্মা গিয়েছিলো ওনার কাছে এবং বেবি মেরে ফেলার মেডিসিন নিতে। কিন্তু উনি দেন নি। মাম্মা ফার্মেসি থেকে অন্য ডক্টরের সাজেস্ট করা মেডিসিন দিয়েছিলো বড়মাকে। আর সে মেডিসিনের প্রতিক্রিয়া রোজের ওপর না পড়লেও বড়মার ওপর ইফেক্ট করে। আমার মাম্মার জন্য রোজ কখনো নিজের মায়ের আদর পায়নি,, কারোর কাছ থেকে ভালোবাসা পায়নি। আর সবচেয়ে বড়কথা বড়মা নাকি সবটাই জানতো। তবুও চুপ করে ছিলো। সেদিনই রোজ সবার সাথে সব সম্পর্ক নষ্ট করে চলে আসে। বড়মার নামে কিছু জায়গা ছিলো সেগুলো বিক্রি করে দেয় ও আর NgO টা খোলে। নিজের জমানো টাকা দিয়ে স্কুলে পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকে রোজ অনেকটা পাল্টে যায়। পড়াশোনায়ও তেমন মন দেয় না। সবসময় এটা ওটা নিয়ে ভাবে। আর এই পাঁচবছরে বাপিকে একবারও বাপি বলে ডাকেনি। বাপি অনেক মাফ চেয়েছে কিন্তু শোনেনি। বলতে গেলে বাপির নিজেরই দোষ্। সে সবসময় তার দুই মেয়েকে দুই চোখে দেখেছে। কেউ বললেও শোনে নি। তারই ফল ভোগ করছে এখন।
আরাভ : আমি শুধু শুধু রোজকে ভুল বুঝেছি। এটা কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি একটা মেয়ে কিভাবে এমন হতে পারে। আমারই অন্যায় ছিলো কিন্তু তবুও হিয়ার ওপর রেগে রোজের ওপর সব দোষ চাপিয়ে নানাভাবে ওকে হ্যারাস করেছি।
আলিজা : রোজ এসবে কিছু মনে করেনি। তাই বাদ দাও এসব। বুলসিট এতো কথার মাঝে আমরা তো সময়টাই ভুলে গেছি। অনেক রাত হয়ে গেছে আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে তো।
আরাভ : হুম চলো তোমাদের পৌছে দেই। কাল রোজকে সরি বলে দিবো।
আলিজা : কিন্তু রোজ.? ওর কি হবে.? এখানে থাকবে.?
কলি : সমস্যা কি.? যার কাছে থাকতে চেয়েছিলো তার কাছেই আছে। আর এসময় ওর মেঘরোদ্দুরের চেয়ে আর কেউ ওর ঠিকভাবে টেক কেয়ার করতে পারবে না। সবকিছু কি সবাই করতে পারে..? তাছাড়া সব অতিত যখন ক্লিয়ার তখন বর্তমান আর ভবিষ্যৎ টা ওদের নিজেদের মতোই গুছিয়ে নিতে দে। চল।
আলিজা : খেয়াল রেখো আমার বোনটার।
আলিজার কথায় কিছু বললো না মেঘ। আলিজারা চলে যেতেই ও এসে রুমের দরজা লক করে দেয়। তারপর রোজের পাশে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসে। রোজ ঘুমের মধ্যে পাশবালিশ ভেবে মেঘের পেটের ওপর পা উঠিয়ে দিয়ে পা টানতে লাগলো। মেঘ রোজের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে রোজ কি চায়.?
চলবে,,