#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:14
#Suraiya_Aayat
নূরের হাত ধরে বসে আছে আয়াশ, নূরের হাতের আঙুল গুলোকে মুঠিবদ্ধ করে রেখেছে৷ নূরের দিকে তাকিয়ে আছে আয়াশ এক পলকে ৷ আজ ওর একটু অসাবধানতায় নূরের এই অবস্থা ৷ কিছুখন আগের কথা আয়াশের বারবার মনে পড়ছে , মেয়েটা হাওয়াই মিঠাই খেতে চেয়েছিলো তাও হলো না ৷ যে এই কাজটা করেছে আয়াশ তাকে ছাড়বে না যেকোনো মূল্যে তকে সাজা পেতেই হবে ৷ নূরের কপালের কাটা অংশটার দিকে তাকালো আয়াশ, সেখানে সাদা পট্টি দিয়ে ব্যন্ডেড করা আর চার টে সেলাই পড়েছে সেখানে, প্রতিবার সুচ বিধাতেই নূরের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো, তবে একটা মুহুর্তর জন্যও আয়াশ ওর হাত ছাড়েনি ৷ কিন্তু আয়াশের এতো ভালোবাসার এক অংশও নূর না দেখতে পেয়েছে আর না অনুভব করতে পেরেছে ৷ নূরের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আয়াশের বাম চোখ থেকেই আচমকা টপ করে জল গড়িয়ে পড়তেই আয়াশ চমকে গেল ৷ আয়াশের জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আয়াশ কেবল একবার ই কেঁদেছিলো, যখন ওর মা মারা গিয়েছিলো সেই খবর শুনে আর আজ নূরের এই অবস্থা দেখে ওর চোখ থেকে জল গড়ালো ৷ আয়াশ চটপট জলটা মুছে নিলো , মনে মনে বলল
” কুল ডাউন আয়াশ সি ইজ ইউরস , ওনলি ইউরস ৷”
পাশ থেকে ডক্টরের কন্ঠস্বর ভেসে এলো
” মিস্টার আয়াশ আপনার ওয়াইফ মাথায় আর কোমরে আঘাত পেয়েছে ৷ ঠিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে, ওনাকে বেশি হাটাচলা করতে দেবেন না, আর ওনাকে দিয়ে কোন কাজ করাবেন না, আর মেন্টালি কোন প্রেশার দেবেন না , এন্ড নাও ইটস আপ টু ইউ ৷”
আয়াশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, আপাতত কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না ওর , তবুও মনে জোর নিয়ে বলল
” ওর জ্ঞান ফিরবে কখন?”
” জ্বি, ওনার আর এক দুই ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে ৷”
” আমি কি তাহলে এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারি ?”
” জ্বি অবশ্যই পারেন কিন্তু যা যা বললাম একটু খেয়াল রাখবেন ৷”
আয়াশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, আজ আয়াশ নূরের এই অজ্ঞানতায় যেন নিজেকে সবচেয়ে বেশী দূর্বল অনুভব করছে, নিজেকে আগে কখনো এতোটা লো ফিল হয়নি ৷ নূরের সাথে ভালো ব্যাবহার করুক আর না করুক নূর ওর সাথে থাকলে অদ্ভুত ভাবে ওর মনোবল বাড়ে ৷ আয়াশ নূরকে বেড থেকে তুলে কোলে নিলো , মেয়েটা সজ্ঞানে থাকলে হয়তো এতখনে ব্যাথায় কুঁকড়ে যেতো কথাটা ভাবতেই আয়াশের বুকের ভিতর ধুকধুক করছে ৷ ইফাও আয়াশ আর নূরের পিছন পিছন আসলো , ইফা এতখন বহু কান্নাকাটি করেছে , যতই হোক নূরকে ও নিজের বোনের মতো ভাবে ৷
আয়াশ নূরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বসলো, ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে, ইফা সামনের সিটে বসেছে আর আয়াশ ব্যাক সিটে নূরকে ওর কোলের মাঝে নিয়ে বসে আছে ৷ লাল রঙের শাড়িটায় ধুলো লেগে আছে, কিছু কিছু জায়গায় রক্তের ছাপ ৷ আয়াশ নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে যেন কোন বাচ্চাকে আগলে আগলে রাখছে ও ৷ নূরের দিকে তাকালেই বুকের ভিতর চিনচিন অনুভব করছে আয়াশ ৷
🎀
নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আয়াশ ৷ আশেপাশে সবাই ওকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ইফার চোখ কেঁদে কেঁদে ফুলে গেছে, আয়াশের খালাম্মু মানে ইফার মা নূরের পাশে বসে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ওনার চোখেও জল , মেয়েটাকে কে এমন ভাবে ধক্কা মারলো কেউ বুঝতে পারছে না, ইফা দেখেছিলো একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে যখন নূর মাটিতে পড়ে গেছে, তার মুখটা ঢাকা ছিলো তাই ইফা ওনার মুখটা দেখতে পাইনি ৷ আহান ও দূরে দাঁড়িয়ে আছে ৷অয়াশের বাবা তিনি আজ এতো বছর পর নূরের জন্য ঘর থেকে বার হয়ে এসেছেন ৷ উনি বসে আছেন সোফাতে, মেয়েটার প্রতি ওনার মনে মায়ার পাহাড় গড়ে উঠেছে, নূর প্রতিদিন সকাল বিকাল ওনার ঘরে গিয়ে ওনার খাবার দিয়ে আসত , খুব ব্যাস্ত না থাকলে মাঝেমাঝে ওনার সাথে গল্পও করতো ৷ উনিও কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছেন নূরের দিকে ৷ আয়াশ এখনো নূরের হাত ধরে আছে ৷ হঠাৎ আয়াশ কিছু বলতে যাবে তখনই আহান বলল
” ওই তো নূরের জ্ঞান ফিরেছে ৷ ”
কথাটা শুনে আয়াশ নূরের দিকে তাকালো, নূরের চোখ দুটো পিটপিট করছে ৷ আহান ছুটে যেতে গেলেও আয়াশের আফু সোনা ডাক শুনে পিছিয়ে গেল ৷ আয়াশ উত্তেজিত হয়ে বলল
” এই আফু সোনা ঠিক আছো তুমি ? আফু সোনা !”
নুর কিছুখন সবকিছু ঝাপসা দেখলো তারপর আস্তে আস্তে সবার মুখ ওর কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো, আয়াশের গলার আওয়াজ ওর কানের কাছে এসে বাজছে ৷ নূর কথা বলতে পারছে না চুপ করে আছে ৷ আয়াশ এবার নুরকে বিছানা থেকে তুলে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো , নূরের শরীরের তীব্র ব্যাথার কথা ওর হয়তো মনে নেই ৷ নূর আয়াশের বুকে মাথা রাখতেই আয়াশের হৃদস্পন্দন শুনতে পেল, মানুষের হৃদগতি যতো থাকে তার তুলনায় অতি দ্রুত হারে হৃদস্পন্দন চলছে ৷ হঠাৎ নূর শরীরে তীব্র ব্যাথার অনুভব করায় জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ৷
নূরের কান্নার আওয়াজ শুনে আয়াশের মনে হলো যে নূরের সমগ্র শরীর জুড়ে ব্যাথা তাই দ্রুত নুরকে বিছানায় শুইয়ে দিলো , নূর গলা ছেলে কাঁদছে , আয়াশ হয়তো ওর শরীরের যন্ত্রনাটাকে আরো দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷
নূরকে এমন কাঁদতে দেখে আহান বলে উঠলো
” কি করছিসটা কি ওর অবস্থা কি তুই ভুলে গেছিস ? এমনিই শরীরের অবস্থা খারাপ তার ওপর তুই !”
আহনের কথাটাএই মুহূর্তে যেন আয়াশের সহ্য হলো না, আয়াশ চিৎকার করে বললো
“ওর সাথে যা করার আমি করবো, ওর ক্ষতি করতে হলেও আমি করবো, ওর ভালো করতে হলেও আমি করবো, তোমরা আমাকে বোঝাতে এসো না, ও আমার বউ আমার দায়িত্ব ৷ যাও এখান থেকে, ওর অবস্থা আমাকে বুঝে নিতে দাও ৷”
আহানের গলা ধরে এলো, ও খুব সাধারন ভাবে বলেছিলো আর তাতে আয়াশ এভাবে রিয়্যাক্ট করবে তা ও ভাবেনি ৷ ইফার মা আহানের অছে এসে বলল
” আহান বাবা থেমে যা তুই তো জানিস আয়াশ তোকে কতোটা ভালোবাসে, আসলে নূরের অবস্থা খারপ বলে ওর মাথার ঠিক নেই , তুই রাগ করিস না,চল এখান থেকে, আমরা ওকে বরং কিছুখনের জন্য একা থকতে দিই ৷”
আহান হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ইফা বেরিয়ে যেতেই ইফার মা আয়াশের মা কে ডাকলেন
” ভাইজান ৷”
আয়াশের বাবার কোন সাড়া শব্দ নেই, উনি কিছু একটা ভাবছেন ৷ ওনার ভাবনা ভঙাতে উনি আবার বললেন
” ভাইজান ৷ এই যে ভাইজান , চলেন আমরা না হয় পরে আসি ৷”
আয়াশের বাবা যেন একটু চমকে উঠলেন হঠাৎ ডাক শোনায়, উনি অবাক হয়ে বললেন
” কিছু বললে ?”
” জ্বী, আয়াশ আর নূর না হয় একটু একা থাকুক আমরা পরে আসি ৷”
উনি উঠে বললেন
” হ্যাঁ , ঠিক বলেছ, তুমি যাও আমি আসছি ৷”
উনি নূরের দিকে তাকালেন, নূর কাঁদছে , আয়াশ নূরের হাতটা মুঠিবদ্ধ করে মাথা নীচু করে বসে আছে, আয়াশের চোখের কোনে জল জমা হয়ে আছে শুধু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা ৷উনি ওনার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে আয়াশকে বললেন
” আমার নূর মায়ের খেয়াল রাখিস বাবা ৷”
আয়াশ কেবলমাত্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানালো, কথা বলতে গেলেও একটু শক্তির প্রয়োজন হয় যা আয়াশের মাঝে নেই ৷
উনি বেরিয়ে গেলেন ৷ নূর এখন জোর জোরে কাঁদছে, থামার নাম নেই, ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ওর ওপর তীব্র অত্যাচার করা হয়েছে তাই এমন কান্না করছে ৷ আয়াশ মুখ উঠিয়ে নূরের দিকে তাকালো ,নূরের চোখের কোনা বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজছে ৷ আয়াশ হালকা কন্ঠ বলল
” এই আফু সোনা চুপ করো না প্লিজ , আমার বুকের মাঝে কেমন জানি হচ্ছে , তা তুমি কি বোঝোনা ৷”
নূরের কান্নার মাত্রা তীব্রতর হলো ৷ আয়াশ আর সহ্য না করতে পেরে জোরে ধমক দিয়ে বলল
” এই মেয়ে থামছো না কেন ! চুপ করতে বলেছি না ? আমার এই কান্না সহ্য হচ্ছে না তা কি বুঝতে পারছো না ? তখন থেকে বলছি না যে চুপ করো ! শুরূ করেছে তো থামার নাম নেই ৷”
নূর আয়াশের ধমক শুনে চুপ করে গেল ৷ অবাক চাহনিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ নূর থেকে যেতেই আয়াশ নূরের গলায় মুখ ডুবিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদে দিলো যার কোন সীমা নেই ৷নূর কখনো ভবেনি যে আয়াশ কখনো ওর জন্য কাঁদবে ৷ আয়াশের শরীরের কিছুটা ভার নূরের শরীরের ওপর পড়ছে ,নূর ব্যাথা অনুভব করলেও মুখ বুজে সহ্য করে নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে বলল,,,
” আপনি খুব খারাপ !”
” আমি তো জানি আমি খারপ, তোমাকে ভালো রাখতে পারি না, ভালোবাসতে পারি না, কেবল কষ্ট দিতে পারি , তাই তো আমি খারাপ আফু সোনা ৷”
আয়াশ কেঁদেই চলেছে যার থামার নাম নেই ৷
#চলবে,,,,