#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:7
#Suraiya_Aayat
আয়াশের বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো নূর ৷ মানুষটাকে কখনো দেখিনি নূর ৷ সকাল বেলা ইফাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে ও ওনার ঘরে যেতে পারবে কি , ইফা ওকে বলেছিলো ” হ্যাঁ ভাবি যাও কোন সমস্যা নেই, আমি অবশ্য খুব একটা যাইনা, আম্মু ওনার খাবার দাবার দিয়ে আসে ,কোন দরকারি কথা থাকলে সেটা বলতে যাই, তাছাড়া ওনার ঘরে তেমন কেউ একটা যাই না তাছাড়া উনিও নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন বাইরে বার হননা ৷ কিন্তু তুমি যাও কেউ কিছু বলবে না , তাছাড়া তুমি গেলে উনি তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে ৷”
কথাটা মনে মনে আর একবার স্বরন করে নূর রুমের বাইরে পা বাড়ালো ৷ নূর চিনে গেছে ওনার ঘরটা কোথায় ৷ উনি থাকেন সবচেয়ে শেষের ঘরে, ঘরের অবস্থান শুনে এটা কল্পনা করা খুব একটা কঠিন নয় যে প্রয়োজন ছাড়া সচরাচর ওনার ঘরে কেউ তেমন একটা যান না ৷ওনার ঘরের সামনে যেতেই হঠাৎই কেউ একজন সেই ঘরের দরজা খুলে আচমকাই বেরিয়ে আসতেই নূর চমকে গেল, ভয় পেয়ে খানিকটা চমকে উঠলো ৷ সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো আহান ওর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আহানকে দেখে নুরের মনের মাঝে যে সফট কর্নার ছিলো তা ধীরে ধীরে পাথরে পরিনত হতে লাগলো , ওর মনে পড়ে , খুব করে মনে পড়ে ওর বিয়ের দিনের কথা সেদিন আহান সকলের সামনে ওকে প্রত্য৷ক্ষান করেছিলো আর যার দরুন আজ ও আয়াশের বউ৷ আহান কিছু বললো না নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাটা দিলো সেখান থেকে, নূর লক্ষ করলো আহানের মুখের ভাব ভঙ্গি ছিলো কঠোর ,খুব করে কোন কিছুর প্রতি চরম বিরক্তি ফুঁটে উঠলে যেমনটা হয় ঠিক তেমনটাই ৷নূর আহানকে আর বেশি গুরুত্ব না দিয়ে নরম কন্ঠে ডেকে উঠলো
” বাবা ! আসবো ৷”
ভিতর থেকে ওর কথার প্রতিউত্তর এলো না দেখে নূর একটু ঘাবড়ে গেল ৷ উনি কি ইচ্ছা করেই উত্তর দিচ্ছেন না নাকি উনি ওনার ছেলে ব্যাতিত কারোর সাথে কথা বলতে চান না কোনটা! কথাটা ভেবে আর একটা বার নূর ডেকে উঠলো
” আসবো ! বাবা !”
তখনই হঠাৎ কেউ তড়িঘড়ি কন্ঠে বলল
” কে ?”
নুর ওনার থেকে উত্তর শুনে একটা সস্তির নিশ্বাস নিলো ৷ তারপর বুকে বল আর একরাশ সাহস নিয়ে বলল ” বাবা আমি নূর ৷”
উনি ওনার হাস্সোজল কন্ঠে বললেন
” বৌমা ?”
” বৌমা ” শব্দটা শুনে নূর কিছুখন চুপ করে রইলো ৷ তারপর একটু থেমে বলল ” জ্বি ৷”
কথাটা বলার পর আর কোন উত্তর এলো না দেখে নূর বিভ্রান্ত হয়ে গেল যে ও ভিতরে যাবে কি যাবে না,তারপর ভিতরে যাওয়ার কথা ভাবতেই হঠাৎই দরজার প্যাচ প্যাচ শব্দে নূর আতকে উঠলো, বুঝতে পারলোনা হঠাৎ কি হলো, তবে বছর 50 এর একজন মধ্যবয়স্ক মানুষকে দেখে নূর বুঝতে পারলো যে সেটা আয়াশের বাবা ৷ আয়াশের বাবাকে দেখে নূর কিছুখন ওনার দিকেই তাকিয়ে রইলেন, তার শরীরের গঠন সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, গালে সাদা দাড়ি, মাথার চুলগুলোতে সাদা রঙ ধরেছে ৷ গায়ে সাদা শাল আর পরনে একটা সাদা পাঞ্জাবী ৷ নূর যতদূর জানে আয়াশরা উচবিত্ত খানদনী পরিবারের কিন্তু আয়াশের বাবাকে দেখলে বোঝা অসম্ভব যে তিনি সেই বংশের ছেলে, হয়তো সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকেও ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ৷ ওনার এমন চেহারার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ নূরের ঘোর ভাঙলো ৷ তখন মনে হলো যে উনি মুরব্বি মানুষ ওনাকে সালাম করা উচিত তাই নূর আর দেরি না করে মাথায় শাড়িটা বেশি করে টেনে দিয়ে ওনার পায়ে সালাম করতে গেলেই উনি সরে গেলেন ৷ নূর অবাক হলো , ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন
” জ্বি আমি কি কিছু ভুল করে ফেললাম বাবা ৷”
উনি মুচকি হেসে বললেন
” একদম না নূর মা, আমি চাইনা আমার পা ধরে কেউ সালাম করুক তাই তোমাকেও করতে দিলাম না ৷”
নূর ও এক চলতে হাসির রেখা ফোটালো ওর ঠোঁটে ৷উনি নূরকে বললেন
” ঘরে এসো মা ৷” কথাটা বলে উনিও ঘরের দিকে গেলেন ৷ নূর ওনার পিছুপিছু গেল ৷ পুরো ঘরটা একটা অন্ধকার কুঠুরির মতো , কিন্তু খুব পরিপাটি ৷ উনি গিয়ে চেয়ারে বসলেন ৷ ঘরের অন্ধকার দেখে নূর জানালার দিকে তাকালো, সেখানে পর্দা দিয়ে ঢাকা ৷ নূর কিছু না বলে পর্দাটা সরিয়ে জানালাটা খুলতে গেলে পারলো না, জানালাটা হয়তো বহু বছর ধরে খোলা হয়না তাই হয়তো সে তার নিজের জায়গাটা পোক্ত করে নিয়েছে ৷ তবুও নূর অনেক চেষ্টায় জানালাটা খুলতেই একরাশ আলো ঘরে ঢুকে ঘরটাকে আলোকিত করে দিলো ৷ আয়াশের বাবা তেহেরাত সাহেব উনি চোখ বন্ধ করে নিলেন, উনি নিজেই কতো বছর বাইরের আলোর মুখ দেখেননি ৷
নূর জানালা খুলে ওনার সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসলো ৷ উনি ওনার চোখ বন্ধ করে রেখে বললেন
” বাইরের আলো বড্ড চোখে লাগে নূর মা ৷তুমি নিজেই তো একটা নূর ৷”
নূর একটু আধো আধো গলায় প্রশ্ন করে উঠলো
” আমার নাম নূর আপনি কি করে জানলেন বাবা ৷”
উনি ভাঙা গলায় হেসে বললেন
” আয়াশ বলেছে ৷”
আয়াশ বলেছে কথাটা শুনে নূরের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরলো ৷ আর বেশি কৌতুহল না রেখে বলল
” বাবা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো আপনাকে ? বলবেন তার উত্তরটা ? আমি জানি আপনি উত্তর জানেন ৷”
উনি চোখটা খুলে বাইরের দিকে তাকালেন
” হমম বলো মা ৷”
” আয়াশ নামক মানুষটা আমার কাছে একটা গোলক ধাঁধার মতো, রহস্য বলতে পারেন , উনি এমন কেন? আর পাঁচ জনের এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেন না কেন? এতো রহস্য কেন ওনার মাঝে ? ওনার কি কোন অতীত আছে ? উনি কি কাউকে পছন্দ করতেন? আমাকে এভাবে বিয়ে করার কারন কি যখন সে আমাকে ভালোই বাসেনা ৷”
একনাগাড়ে সব প্রশ্ন করে ফেলল নূর ৷
উনি নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
” এতো প্রশ্ন নূর মা ?”
নূর ওনার দিকে মিনতির সুরে তাকিয়ে বলল
” আমি সত্যিই জানতে চাই বাবা, এভাবে একটা অস্বাভাবিক ব্যাবহারকারী মানুষের সাথে কীভাবে সংসার করা যাই আপনিই বলুন ৷”
উনি ওনার বিছানা থেকে নেমে নূরের মাথায় হাত দিয়ে বললেন
” তোমার এই প্রশ্নের একটাই উত্তর ৷”
নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” কি ?”
” একটা কথা সবসময় মনে রাখবে তুমি সর্বদা খুশি থাকলে আয়াশ মনোবল পাবে, সে খুশি থাকবে ৷”
নূর অবাক হয়ে বলল ” আমি মনে করি না যে তিনি আমাকে ভালোবাসেনা তাই আপনার উত্তর আমি মানতে পারছি না , প্লিজ আপনি তো জানেন তাহলে বলুন ৷”
” আমি যতটুকু জানি ততটুকুই বললাম মা বাকি ওর ভালোবাসা তোমাকেই বুঝে নিতে হবে ৷ আর আমার বড়ো ছেলের তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করেছে , তোমাকে বিয়ের আসর থেকে প্রত্যখান করেছে তাই ওর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি ৷ আসলে ও যা করেছে আয়াশের জন্য করেছে ৷ ”
নূর আর কিছু বললো না,আহানকে নিয়ে ওর শোনার ইচ্ছা নেই, তার প্রতি নূর মায়া ত্যাগ করেছে ৷
তেহেরাত সাহেব বললেন
” আহান পরশু ইউএসএ যাচ্ছে, আমি চাইনা ও এতো তাড়াতাড়ি যাক , ওকে বারন করলেও কোন কথা শুনলো না ৷”
নূর আহানের কথা শুনতে চাই না তাই কথা কাটানোর জন্য বলল
” বাবা আপনি সকালে খেয়েছেন?”
উনি মাথা নাড়িয়ে না জানালেন ৷ নূর সেই সুযোগে বলল
“আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনার খাবার আনছি , এবার থেকে আমি আপনার খাবার দিয়ে যাবো , সেই সুবাদে আপনার সাথে কথা বলাও হয়ে যাবে ৷”
নূর কথাটা বলে তাড়াহূড়ো করে বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশের বাবা ওনার চোখের কোনের জলটা মুখে বললেন
” শুনছো প্রিয়ন্তি তোমার বৌমা তোমার মতোই হয়েছে তাই ধৌর্য হারিয়োনা ৷”
❤
আয়াশের বাবার রুমে সকালের নাস্তা দিয়ে এসে নূর রুমে আসলো, যা বুঝলো এ বাসাতে ওকে শুয়ে বসেই কাটাতে হবে , কাজ করার কোন সুযোগ নেই ৷ ইফাও বাসাতে নেই যে মেয়েটার সাথে বসে গল্প করবে তাই রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলেই হঠাৎ রুমের ভিতর অদ্ভুত গন্ধ পেলে নূর, কেমন জানি পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে ৷ নূর অনেকখন ধরে গন্ধটা অনুভব করছে কিন্তু তা কোথা থেকে আসছে ও জানে না ৷ একবার ওর কলেজে ল্যাবে প্র্যাকটিক্যাল করার সময় ছোটখাটো একটা বিষ্ফোরন হয়েছিলো একটা মেয়ের অযথা পাকনামিতে তাই সেই দিনের কথা নুরের মনে পড়ে গেল ৷ গন্ধটা পুরো রুমময় ছড়াচ্ছে ৷ নূর ভয় পেয়ে গেল কিছু যদি হয়ে যাই, গন্ধটার উৎসটাও নূরের অজানা ৷ ভয়ে ভয়ে একপা দুপা করে রুম থেকে বেরোতে গেলেই হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা খেতেই নূর সামনের দিকে তাকালো , আয়াশের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ও ৷ আয়াশকে দেখে পিছনে সরে যেতেই আয়াশ নূরের কোমর ধরে ওর কাছে এনে ওর সাথে এক করে নিয়ে বলল
“পালাচ্ছো কেন আফুসোনা ?’
নূর একটু তোতলাতে তোতলাতে বলল
” দেখুন না কোথা থেকে একটা বাজে স্মেল আসছে মনে হচ্ছে কোন কিছু ব্লাস্ট করেছে ৷”
আয়াশ নূরকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে বলল
” কই না তো, আমি তো কোন গন্ধ পাচ্ছি না ৷ ”
নূর আয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” সত্যিই আপনি পাচ্ছেন না, কিন্তু আমি তো পাচ্ছি ৷”
কথাটা বলেই লম্বা শ্বাস নিয়ে দ্রুত নিশ্বাস ছাড়লো নূর,নাহ এখন তো ওউ আর গন্ধটা পাচ্ছে না, হঠাৎ করে কি হলো?
নূর অবাক হয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” বিশ্বাস করুন আমি গন্ধটা পাচ্ছিলাম ৷”
” তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছো আফু সোনা, পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে, এমনিতেই একটু আগে বউকে টরচার করার নিনজা টেকনিক শিখে আসলাম , কাজে লাগাতে হবে না ?”
নূর শুকনো ঢোক গিলে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই আয়াশ কোলে তুলে নিলো ৷
” আমার থেকে পালানোর বাহানা খোজো হমম, এখন পানিশমেন্ট নাও ৷”
নূর আর কিছু বলতে পারলো না, আয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকালো ৷ অদ্ভুত একজন !
#চলবে,,,,
গল্পটার রেসপন্স এতো কমে গেল কেন বুঝলাম না, এভাবে চললে কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি গল্পটা শেষ করে দেবো বলে দিলাম ৷