#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১৮
অল্প বয়সী একটি হাস্যজ্জ্বল চেহারার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহার কেবিনের দরজায়।আরহাকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি বলল
– আসবো আরহাপু?
কিছু একটা ভাবছিল আরহা এরই মধ্যে অপরিচিত কোনো মেয়ে কণ্ঠস্বর পেয়ে পিছন ফিরে তাকাল। মেয়েটিকে দেখে আর ওর কথা শুনে বেশ অবাক হলো আরহা।তাই কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে মেয়েটির উদ্দেশ্যে আরহা বলল
– কে তুমি? আর তুমি আমায় চিনলে কিভাবে? আমার নাম-ই বা জানলে কিভাবে?
– এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিই বলো তো আরহাপু?
– আচ্ছা তাহলে আগে তোমার নামটা বলো।
– আমার নাম ‘ইমশা রাহমান’। তবে সবাই আমাকে সংক্ষেপে ‘ইমি’ বলেই ডাকে। তুমিও আমাকে ‘ইমি’ বলে ডাকবে কেমন, আরহাপু।
– ইমশা, বাহ্ নামটা তো সুন্দর আর আনকমনও।
– হুম, দেখতে হবে না কার নাম। সুন্দর তো হবেই। তোমার নামটাও কিন্তু সুন্দর।
-আচ্ছা ঠিক আছে ইমি, সে নাহয় বুঝলাম তবে তুমি আমায় চিনো কিভাবে? সেটা বলো।
ইমি কোনো ভাবে উত্তরটা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিল। তবে আরহার জোড়াজুড়িতে কিছু একটা ভেবে বলল
– তোমায় আমি অনেক আগে থেকেই চিনি আরহাপু। তোমার কলেজের ওপোজিটে আমার কোচিং। প্রতিদিনই কোচিং-এ যাওয়ার সময় আমি তোমায় কলেজ যেতে দেখতাম। ভেবেছি কথা বলবো তবে কথা বলার সময়টা আর হয়ে উঠল না।
– আমরা তো রাস্তায় যেতে আসতে কতো জনকেই প্রতিদিন দেখি। কই তাদের রেখে তুমি আমায়…
আরহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ইমি বলল
– তোমার আচার – ব্যবহার আমার ভালো লেগেছে। আর তোমার বান্ধবীরা আমাকে তোমার নাম বলেছে।
– কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে আমি এখানে? কেউ তো জানে না।
– আরে আমার বাবা এই হসপিটালের একজন ডক্টর। আমি আজ এসেছিলাম এসেই দেখি এই কেবিনে তুমি। তাই চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে।
– ওহ্ আচ্ছা ভালো করেছো। তোমার বাবা-ই কি আমার ট্রিটমেন্ট করছেন?
– না আমার বাবা না , আরেক জন ডক্টর। কিন্তু কে সেইটা আমি বলতে পারবো না, আমি তো জানি না।
– ওহ আচ্ছা।
আরহা আর কোনো প্রশ্ন করল না। এতে যেন ইমি হাফ ছেড়ে বাঁচল।
– আচ্ছা আরহাপু আজ আসি তাহলে, আবার দেখা হবে। ভালো থেকো।
– আচ্ছা।
ইমি চলে গেল আরহার কেবিন থেকে। তবে একটা জিনিস কেমন জানি খটকা লাগল আরহার। আরহার কি হয়েছে এবং আরহার হাতে জায়গায় জায়গায় মারের দাগ, এটা দেখা সত্ত্বেও ইমি কিছুই জিজ্ঞেস করল না।যদিও ভালোভাবে মলম লাগানোর জন্য মারের দাগ ওভাবে তেমম বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু খুব ভালোভাবে কাছ থেকে খেয়াল করলে বোঝা যাবে। আর বারবার আরহাকে কিভাবে চিনে এটা এড়িয়ে যাওয়া, এসবই কেমন জানি খটকা লাগল আরহার কাছে। তবে আরহা বিষয়টা তেমন মাথা ঘামিয়ে দেখল না। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল সে এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনাগুলো।তবে ইমির দেওয়া ‘আরহাপু’ নামটা বেশ ভালো লাগল। সেই সাথে হাসিও পেল।
কেবিনের দরজায় খট করে শব্দ হওয়াতে আবারও দরজার দিকে তাকল আরহা। তাকিয়ে দেখল আরিশা হন্তদন্ত হয়ে চলে এসেছে আরহাকে দেখতে। তখন আভানের ফোনের লোকেশন অন থাকায় তা সহজেই ট্রাক করে আরহা যে হসপিটালে আছে সেখানে চলে এসেছে আরিশা।
আরহাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে দ্রুত দৌড়ে আরহার কাছে গিয়ে আরিশা কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল
– এই আরহা, কি হয়েছে রে তোর? আর তুই হসপিটালেই বা কেন? কালও তো ভালো ভাবেই বের হয়েছিলি তাহলে?
আরিশা কাছে চলে আসাতে ও যেন আরহার হাতে মারের দাগ দেখতে না পারে সেজন্য ওড়না দিয়ে নিজের হাতটা ঢেকে ফেলল আরহা। আর চায় না আরিশাকে কিছু বলতে। যদি কিছু বলে তাহলে আর সেইটা যদি কোনো ভাবে আভান জানতে পারে তাহলে ওর মা বাবা ভাইয়ের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে। এমনকি মেরেও ফেলবে হয়তোবা।
আরহাকে চুপ থাকতে দেখে আরিশা অস্থির কণ্ঠে আরহার উদ্দেশ্যে বলল
– তোকে কিছু বলেছি আমি আরহা। কি হলো কিছু বলছিস না কেন?
আরিশার কথার পরিপ্রেক্ষিতে যখনই আরহা কোনো কথা বলতে যাবে তখনই কেবিনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করল আভান। আরিশা এবং আরহাকে একসাথে দেখে রহস্যময় হাসি দিল সবার অগোচরে । আরহা যে আরিশাকে কিছু বলেনি তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আভান। ডক্টরের সাথে কথা বলে যখনই আরহার কেবিনে আসছিল আভান তখন আরিশাকে দেখল আরহার কেবিনে ঢুকতে। প্রথমে আরিশাকে এখানে দেখে অবাক হলেও পরে বুঝতে পারল আসল কাহিনী।
আরিশা আরহার উত্তরের অপেক্ষায় ছিল তখনই পেছন থেকে আভান আরিশার উদ্দেশ্যে বলল
– আর বলো না তো আরিশা, এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারি না।
– ভাইয়া আপনি এখানে?
– হ্যাঁ আমি, আমিই তো তোমার বান্ধবীকে হসপিটালে নিয়ে এলাম।
– কেন কি হয়েছে আরহার?
– কালকে তোমার বান্ধবীর সে কি সাজ আর বলো না আরিশা সেই কথা। পুরাই পেত্নির মতো লাগছিল ওকে দেখতে।
আভানের এমন কথা শুনে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল আরহা। এদিকে আরহার রাগী ফেস দেখে মিটিমিটি হাসছে আভান। ওদের এমন কাণ্ড কারখানা দেখে ফিক করে হেসে দিল আরিশা। ঠাট্টার সুরেই আরিশা বলল
– ভাইয়া আর বলেন না, আরহা রাগে ফুলে বাস্ট হয়ে যাবে তাহলে, দেখছেন না বেলুনের মতো কিভাবে ফুলছে।
আরিশার কথা শুনে স্বশব্দে হেসে উঠল আভান। এদিকে তো আরহা রেগে আগুন। আরিশা হাসি থামিয়ে এবার আভানের উদ্দেশ্যে বলল
– আচ্ছা তারপর কি হয়েছিল ভাইয়া?
আভান বেশ অনেকক্ষণ যাবত চুপ করে থাকে। আরিশা এখনো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আভানের দিকে। কিছু একটা ভেবে গম্ভীর কণ্ঠে আভান বলল
-আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, পরে আমি যখন আসলাম তখন তোমার বান্ধবী আমাকে দেখে দৌড়ে আসতে গিয়ে সবার সামনে রাস্তায় ভুট হয়ে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছে ভীষণ। কিছুটা হাতে আঘাত পেয়েছে। পিচ ঢালাই এর রাস্তায় পড়ে যাওয়ার কারণে হাতের কয়েক জায়গায় রক্ত জমাট বেধে গিয়েছে। তবে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসার কারণে।
– কি বলেন কি ভাইয়া। তুই দেখে চলতে পারিস না আরহা। কানিই রয়ে গেলি।
আরহা আভানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে হতভম্বের ন্যায় হা করে চেয়ে রয়। এতো বড় ডাহা মিথ্যা কথা বলতে পারল আভান? কি সহজেই সুন্দর করে গড়গড় করে এমন ভাবে মিথ্যা কথা বলল যে কেউ ধরতেই পারবে না আভান মিথ্যা বলছে। এ কোন আভানকে দেখছে আরহা? এ আভানকে তো চেনে না আরহা। আভান এতো খারাপ আর এতো নিচ মন মানসিকতার?
আরহা এসব ভাবছিল এমন সময় আরিশা বলল
– আচ্ছা ভাইয়া, এখন আরহাকে হসপিটাল দিয়ে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?
আরিশার এ কথা শুনে অনেকক্ষণ ধরে কিছু একটা ভাবল আভান। তারপর বলল
– আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাও। তবে সাবধানে যেও।
আভানের উত্তর পেয়ে আরিশা আরহাকে রেডি করে দিল। আরহা এখন অনেকটাই সুস্থ। যাওয়ার আগে আভানকে আরিশা বলল
– আচ্ছা আসি, ভাইয়া তাহলে।
– আচ্ছা।
আভান প্রতিত্তোরে শুধু এটুকুই বলল। আরিশা বিদায় জানিয়ে আরহাকে নিয়ে চলে গেল, তবে আরহা একবারের জন্যও ফিরে তাকাল না আভানের দিকে। চোখের অগোচরে হওয়া পর্যন্ত চেয়ে রইল আরহার চলে যাওয়ার দিকে।
এক বুক কষ্ট নিয়ে মনে মনে আভান বলল
– তুমি কেন বুঝনা আরহা, তুমি আমার মনের কতটুক জুড়ে আছো? ভালোবাসতে শিখিয়ে কেন ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছো? তুমি কেন বুঝনা, #তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#চলবে ~