তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২২ [নতুন জীবনের শুরু, বিবাহ স্পেশাল ]

0
442

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২২ [নতুন জীবনের শুরু, বিবাহ স্পেশাল ]

আজ জাঁকজমকভাবে সাজানো হয়েছে আরহাদের বাড়িটা। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো আরহার বিয়ের দিন। বাড়িতে সব মেহমানরা আসছেন যাচ্ছেন। এ বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। সকাল থেকেই আরহার মা বাবা, ভাই ইহসান খুবই ব্যস্ত। সবাই আনন্দে থাকলেও, আনন্দে নেই আরহা। সে তার রুমের এক কোণে চুপটি করে বসে আছে। জানালা দিয়ে আন মনা হয়ে বাহিরের আকাশ পানে চেয়ে আছে সে।

তখনই রুমে প্রবেশ করল আরিশা। আরহার বিয়ে শুনে আজ সকাল সকালই চলে এসেছিল আরিশা। রুমে এসে আরহাকে এমন আন মনা হয়ে থাকতে দেখে, ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল

– কি রে আরহা, এমন ভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন রে?

– ভালো লাগছে না রে কিছু।

– ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক, আমি জানি কেন তোর ভালো লাগছে না।

আরহা মুখ তুলে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল আরিশার দিকে। আরহার এমন চাহনি দেখে খুব খারাপ লাগছে আরিশার। কিন্তু এখানে তার কি করার আছে। এটা ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো আরিশার। শান্ত কণ্ঠে সে বলল

– আচ্ছা তুই না আভান ভাইয়াকে ভালোবাসতিস, তাহলে অন্য কাউকে কেন বিয়ে করছিস? আভান ভাইয়া জানে না এই ব্যাপারে?

– হুম জানে সব।

– তাহলে সব কিছু জেনেও কেন চুপ করে বসে আছে ভাইয়া? এখনও সময় আছে, সময় থাকতে কিছু একটা কর। কিছু একটা করতে বল ভাইয়াকে,

– দরকার নেই।

– দরকার নেই মানে নিশ্চয়ই তোদের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি কিছু হয়েছে, তাই এমন বলছিস তাই না? আচ্ছা ওয়েট আমিই ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলছি।

আরিশার কথা শুনে চরম ভাবে রেগে গেল আরহা। অত্যান্ত রাগী গলায় চিৎকার করে ঝাড়ি দিয়ে আরিশাকে বলল

– খবর্দার ফোন দিবি না ওকে তুই।

হঠাৎ আরহাকে এমন রেগে যেতে দেখে আর কোনো কারণ ছাড়া ঝাড়ি দিতে দেখে চমকে উঠল সে। তাই কিছুটা অবাক হয়ে বলল

– কিন্তু কেন…

আরিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরহা বলল

– বললাম তো কোনো দরকার নেই, ওর মতো মানুষ লাইফে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ওর সাথে আমার কোনো ঝামেলাও হয় নি। আমার ওকে বিয়ে করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তাই ওকে বিয়ে করছি না। আশা করি আর কিছু জানার নেই।

আরহার এমন কড়া কথায় বেশ অবাক হলো আরিশা। আরহা তো এমন মেয়ে নয়, তাহলে আজ আবার কি এমন হলো ওর। আরিশা আরহার সাথে এ নিয়ে আর কোনো কথা বাড়াল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

– আচ্ছা আরহা, আজ তোর বিয়ে আমার না বিশ্বাসই হচ্ছে না রে।

– তো বিশ্বাস করতে হবে না।

আরহাকে এমন ভাবে কথা বলতে দেখে আর ভালো লাগছে না আরিশার। তারপরও কিছু বুঝতে না দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

– জানিস, আমি যখন শুনেছিলাম তোর বিয়ে, তখন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম।

– ও আচ্ছা।

– আচ্ছা চল তোকে সাজিয়ে দেই, তোর বিয়ে বলে কথা।

– এখন সাজার কোনো মুড নেই আমার।

– তো কি না সেজে বাসার এই ক্ষ্যাত মার্কা ড্রেস পরবি?

– হুম তো? এনি প্রবলেম?

– না।

আরিশা আর কথা বাড়াল না, আরহার রুম দিয়ে বেরিয়ে এলো সে। আরহা আরিশার যাওয়ার পানে চেয়ে রইল কিছুক্ষন। একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো ওর। এসব বাদ দিয়ে ও তাকিয়ে রইল আকাশ পানে। জীবনের হিসেব মেলাচ্ছে সে। কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হচ্ছে তার সাথে। আচ্ছা একটা বিশ্বাস ঘাতককে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্য আরেকটা বিশ্বাস ঘাতকের সাথে বিয়ে হচ্ছে না তো তার? এসব ভাবতেই ভয়ে শিউরে উঠল আরহা।
.
.
.

আরহাকে আজ খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে। অন্য দিনের তুলনায় আজ যেন ওকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। আরিশা নিজের হাতেই সাজিয়েছে আরহাকে। আরহার পরনে লাল রঙের লেহেঙ্গা। সব কিছুই আরহার পছন্দ মতোই সাজানো হয়েছে। কিন্তু এসব কোনো কিছুতেই মন নেই আরহার। বেশ গভীর ভাবে কিছু একটা চিন্তা করছে সে। সবার সামনে মুখে জোর পূর্বক হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে সে মরে যাচ্ছে।

পাশে থাকা আরিশা আরহার মুখটা একটু উচু করে বলল

– উলি বাবা, আমার বান্ধবীটাকে কত্তো সুন্দর লাগছে রে, আমিই তো চোখ সরাতে পারছি না। দেখি দেখি আমার চোখের কাজল দিয়ে দেই, তা না হলে আবার নজর লেগে যাবে কারও।

আরিশার কথাতে মুচকি হাসল আরহা। যদিও এটা মন থেকে না, লোক দেখানো। এখন আরহা যা করছে সবই লোক দেখানোই কারণ আরহার ভেতরের আত্মাটা মরে গেছে। এখন সে যা করছে এটা একটা যন্ত্র চালিত পুতুলের ন্যায়।

– আচ্ছা আরহা তুই বস, আমি আসছি রে।

– আচ্ছা।

শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ করে বসে আছে আরহা। কিছুই ভালো লাগছে না ওর। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে একটু নিউজফিড স্ক্রোল করতে লাগল। এমন সময় আননোন নম্বর দিয়ে ফোন এলো আরহার ফোনে। এ সময় কেউ ফোন দেওয়াতে বেশ বিরক্ত হলো আরহা। এখন কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ওর। তাই ফোনটা কেটে দিল। আবারও ঐ নম্বর দিয়ে ফোন এলো, এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলল

– হ্যালো কে বলছেন?

মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে অপর পাশের লোকটি বলল

– হয়তো কেউ একজন যাকে তুমি চিনতে।

– মানে?

– ও তো মানে জানতে হবে না তোমায়। নিশ্চয়ই তুমি এখন বধু বেসে সেজে নিজের বরের জন্য অপেক্ষা করছো, তাই না? কি ঠিক বললাম তো?

– সত্যি করে বলুন তো কে আপনি? আপনি এতো কিছু জানলেনই বা কেমন করে?

– আমি কে সেটা তুমি ভালো করেই জানো।

অপর পাশে কথা বলার ব্যক্তিটার কণ্ঠটা একটু হলেও পরিচিত লাগল, কিন্তু ঠিক ধরতে পারছে না আসলে এটা কে। এটা আভান নয় তো? কিন্তু আভানের কন্ঠ এমন ভাঙা ভাঙা হলো কবে থেকে। না এটা আভান নয়, এটা অন্য কেউ। কিন্তু কে সে যে আরহার ব্যাপারে এতো কিছু জানে। হিসেব মেলাতে পারছে না।

আরহাকে চুপ থাকতে দেখে অপর পাশের ব্যক্তিটি বলল

– কি ব্যাপার আমার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলে বুঝি?

– কি এমন বলেছেন যে আমি অবাক হবো?

– “ভালোবাসি বলে দাও আমায় বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল তুমি শুধু আমারই হবে যদি করো মিষ্টি এ ভুল।”

– মানেহ্, এই এসব কি?

– এবার অবাক হয়ে গেলে বুঝি, বলেই ব্যক্তিটি অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল।

এমনিতেই আরহার মন মেজাজ খারাপ তার উপর এই ব্যক্তিটার অসভ্য মার্কা কথা শুনে রাগে আগুন হয়ে গেল আরহা। ধমকের সুরে বলল

– কি শুরু করেছেন কি, এভাবে একজনকে বলতে লজ্জা করে না, অভদ্র, অসভ্য কোথাকার। আপনি কে আমি জানি না, কিন্তু ফোন দিয়ে আর এভাবে কিছু বললে সাথে সাথে আমি আপনার নামে থানায় কেস করবো। বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে ব্লক লিস্টে ফেলে দিল নম্বরটা। রাগে খাটের উপর ছুড়ে ফেলল ফোনটা।

বাইরে অনেক শোরগোল শোনার যাচ্ছে। তাই বাইরের দিকে পা বাড়াতে নিলে আরিশা চলে এলো আরহার কাছে। এসে বলল

– ওহ তুই যাচ্ছিস, আয় আমার সাথে তোর হবু বর চলে এসেছে।

আরহা কোনো কথা বলল না ঘোমটা টেনে চলল আরিশার পিছপিছ।
.
.
.
বিয়ের আসরে প্রচুর লোকের সমাগম। বরযাত্রীও চলে এসেছে ইতো মধ্যে। যদিও এদের কাওকেই চিনে না আরহা। সবাই বলাতে আরহা গিয়ে বসল অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিটির পাশে। ঘোমটা টেনে রাখার কারণে সেই ব্যক্তিটার চেহারা ঠিক মতো দেখতে পেল না আরহা। অজানা আশঙ্কায় মনের মাঝে অসংখ্য ভয় বিরাজ করছে তার।

কিছুক্ষণ বাদেই কাজী সাহেব হাজির হলেন বিয়ের আসরে। তিনি এসে বিয়ে পড়ানো সুরু করলেন।

সুষ্ট ভাবে সম্পন্ন হলো আরহার বিয়ে। সূচনা হলো নতুন জীবনের অধ্যায়। বিয়ে শেষ হতেই এবার বিদায়ের পালা,,,

বিদায় বেলায় সবাই অনেক কাদলেন, একমাত্র মেয়ের বিয়ে, আজ সে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। আরহার মা বাবা, ভাই, আরিশা অঝোরে কেদে চলেছে। কিন্তু আরহার মাঝে এসব কিছু নেই, ও তো পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আরহার বাবা আরহার বরের হাত ধরে বললেন

– বাবা ও আমার একমাত্র মেয়ে, ওকে তুমি দেখে রেখো, কষ্ট পেতে দিও না ওকে। ও কিন্তু অনেক সেনসেটিভ। অল্পতেই অনেক কষ্ট পায়। যদি ও কখনো ভুল করে ওকে মাফ করে দিবা। আমি কিন্তু ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও পড়তে দেই নি। ও আমার কলিজার টুকরা, ওর গায়ে একটা আচর লাগলে সেটা আমার গায়ে লাগবে।আমার সেই কলিজার টুকরা মেয়েটাকে আজ তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি বাবা। কথা দাও তুমি ওকে ভালো রাখবে।

– জ্বি বাবা, কথা দিলাম। আমি ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও পরতে দিব না।

আরহার বাবা এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না হুহু করে কেদে উঠলেন তিনি। আরহার বাবাকে শান্ত করল আরহার হবু বর।

ইহসান আরহার কাছে এগিয়ে এসে ভাঙা গলায় বলল

– আমি আর তোকে জ্বালাব না রে, তুই যাস না রে, থেকে যা, তোর কি লাগবে শুধু বল আমায়। আমাদের ছেড়ে যাস না, বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে, প্লিজ থাক। বলতে বলতেই কেদে ফেলল ইহসান।

আরহাও নিজেকে ধরে রাখতে পারল না আর ডুকরে কেদে উঠল সে। ইহসান পরম যত্নে তা মুছে দিল।

অবশেষে সব কিছু ছেড়ে গাড়িতে উঠে পড়ল আরহা। গন্তব্য স্থল তার হবু শশুর বাড়ি।

————————–

এক হাত ঘোমটা টেনে ফুল সজ্জিত একটি বিছানায় বসে আছে আরহা। এ বাড়িতে এসেছে ঘন্টা দুয়েক। কিন্তু এখনও হবু বরের আসার নাম নেই। সেই তখন গাড়ি থেকে নামিয়েই যেন কোথায় হাওয়া হয়ে গেল ব্যক্তিটি। তারপর তো সেই ভদ্রমহিলা রুমে নিয়ে এলেন ওকে। কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেলেন তার কাজে।

কেউ আসছে না দেখে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল সে। এদিকে রাত হয়ে যাওয়ায় আর সারাদিন ধকল যাওয়ায় ঘুমে পড়ে যাচ্ছে আরহা, আর তখনই দরজায় খট করে একটি শব্দ হলো। এ শব্দে হকচকিয়ে উঠল আরহা, সব কিছু ঠিকঠাক করে নিল সে, শুধু ঘোমটা টানতে ভুলে গেল। দরজাটা খুলে প্রবেশ করল আরহার হবু বর। হবু বরকে দেখে থমকে গেল সে…..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here