তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২৪

0
437

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২৪

সেই যে মাঝ রাতে আভান হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়েছিল এখনও আসার নাম নেই ওর।এখন সকাল ৮:৪৫ বাজে, চারিদিকে আলোয় আলোকিত। আজ যেন প্রখর কিরণ দিচ্ছে সূর্য। এদিকে নানা চিন্তার কারণে আর দু চোখের পাতা এক করতে পারল না আরহা। শত চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারেনি সে। এদিকে যে সকাল হয়ে গেছে তা খেয়াল নেই ওর। সে যে বিচরণ করছে তার ভাবনার জগতে।

কিছু তো একটা হয়েছেই সেটা তখনকার আভানের অবস্থা দেখেই বুঝতে পেরেছে আরহা। কিন্তু কি হয়েছে তা জানা নেই আরহার। কেন জানি না আরহার মনে হচ্ছে আভান কিছু একটা লুকাচ্ছে আরহার কাছ থেকে। চিন্তার পাহাড় জমেছে আরহার মাথাতে। চিন্তায় রুমের চারিদিক পায়চারি করতে লাগল সে। মাঝে মধ্যে বেলকনিতে গিয়ে উকি দিয়ে দেখছে আভান এসেছে কি-না।

আরহা এসব ভাবছিল আর পায়চারি করছিল, তখনই দরজায় কড়া নারার শব্দে ধ্যান ভাঙল আরহার। দ্রুত গিয়ে খুলে দিল দরজাটা। দরজা খুলেই দেখতে পেল দরজার ওপারে দাড়িয়ে আছেন এক মধ্য বয়সী মহিলা। এ তো সেই ভদ্রমহিলা যে কিনা আরহাকে পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু ইনি আভানের কি হন তা জানে না আরহা। ইনি তো আভানের মা নন, কারণ আভানের মা তো ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছিলেন, আভান বলেছিল আরহাকে। তাহলে ইনি কে হতে পারে, তবে কি আভানের চাচী নাকি?

আরহাকে অন্য মনস্ক হয়ে থাকতে দেখে তিনি আরহার গালে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন

– কি এতো ভাবছো মা?

ওনার কথাতে ধ্যান ভাঙল আরহার। আরহা সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে বিনয়ের সুরে বলল

– আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?

– ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এবার বলো কি ভাবছিলে এতো?

– না মানে কিছু না।

– কিছু তো একটা ভাবছিলেই দেখলে বোঝা যাচ্ছে।

আরহা আর কিছু না ভেবে মনের মাঝে ঘুরপাক করতে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলল কোনো ভঙিতা ছাড়া।

– আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? আপনি রাগ করবেন না তো?

– আরে না, আমায় বলবে না তো কাকে বলবে। তুমি নির্দিধায় আমায় বলতে পারো আমাকে। কি বলবে বলো মা?

– আচ্ছা আপনি কে হন আভানের?

– ওহ এই ব্যাপার। আমি আভানের খালামণি হই। ওর তো মা- বাবা কেউ নেই এই পৃথিবীতে, আমিই ওর সব। ও আমায় মামণি বলে ডাকে।

– ওহ তাহলে আমিও আপনাকে মামণি বলে ডাকি?

– হুম তুমি যা ইচ্ছে তাই বলে আমায় ডাকতে পারো কোনো সমস্যা নেই।

– আচ্ছা মামনি।

আরহার মুখে মামনি ডাক শুনে ভীষণ খুশি হলেন তিনি। এবার তিনি আরহার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বললেন

– জানো ছেলেটা ছোটবেলা থেকে কতো কষ্টে বড় হয়েছে। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে ওকে অল্প বয়সে। ওর মা মারা যাবার পর ওর বাবা অফিসের কাজে বেরিয়ে যেত, বাসায় ও, ওর চাচা, চাচি থাকত। ওর চাচি ওকে সহ্য করতে পারত না। ওকে প্রচুর মারধোর করত। এমনকি ওর সাথে আমাদের দেখা পর্যন্তও করতে দিত না। ও ভয়ে ওর বাবাকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারত না। জানো ওর একটা বোনের খুব শখ ছিল,একটা বোন হয়েছিলও কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। মা মেয়ে দুজনেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করল। রেখে গেল আভানের মতো নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে। তবে ওকে দেখে একবারের জন্যও মায়া হলো না আভানের চাচির। নির্দয়ের মতো আচরণ করতো ওর সাথে। পান থেকে চুন খসলেই মার খেতে হতো ওকে। এমনকি ওকে ঠিক মতো খেতেও পর্যন্ত দিত না। শৈশবটা ওর এমনই কেটেছে। আমি চাইলেও ওর জন্য কিচ্ছুটি করতে পারিনি। এভাবে বড় হওয়ার কারণে সেই থেকে ছেলেটা আমার বদরাগী আর বদমেজাজীতে পরিণত হলো। ও কয়েক বছর মানসিক ট্রমার ভিতরে ছিল। এই ট্রমা ছাড়াতে ওর অনেক সময় লেগেছে। এখনো সেই ট্রমাতে আছে। তবে ওর একটা ভালো গুন যাকে একবার ভালোবাসে তাকে তার সবটুকু উজার করে ভালোবাসে। আর সেই ভালোবাসার ভাগ কাওকে দিতে চায় না ও।

এটুকু বলে থামলেন তিনি। তিনি বলতে গিয়ে তার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।আভানের এমন করুণ অবস্থা শুনে খারাপ লাগল আরহার। আরহার চোখও পানিতে টলমল করছে। তার মানে এতো কষ্ট পেয়ে বড় হয়েছে আভান। আভান বলেছিল,কিন্তু এতো কিছু বলেনি ওকে। এই কারণেই আভান আরহার সাথে এমন বিহেভ করেছিল। আভান সহ্য করতে পারেনি আরহাকে অন্য কারও সাথে দেখে। এখন সবটাই কিলিয়ার আরহার কাছে।

অতি আগ্রহের সহিত আরহা বলল

– তারপর কি হয়েছিল মামনি? তারপর আপনারা পেলেন কিভাবে আভানকে? আর ওনার চাচা চাচি কই থাকেন?

– সে অনেক কথা, পরে না-হয় কোনো একদিন সময় পেলে বলবো। তুমি তো আর কোথাও চলে যাচ্ছো না। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। যাই রান্নাঘরে যাই।

– আমিও আপনার সাথে যাব মামনি?

– যাবে তুমি? আজ এই বাড়িতে প্রথম দিন তোমার। কষ্ট করে যেতে হবে না, এরপর থেকে না-হয় তুমিই সামলিও।

– আমি কি পর?

– তুমি কেন পর হতে যাবে? তুমি তো আমার মেয়ের মতোই।

– তাহলে মেয়ে মাকে সাহায্য করতে পারেনা? আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।

– হুম। আচ্ছা চলো তাহলে।
.
.
.
আভানের খালামণির সাথে রান্নাঘরের দিকে গেল আরহা। যাওয়ার সময় হঠাৎই চোখ পড়ল ড্রয়িং রুমের সোফা বসে থাকা মেয়েটির দিকে। মেয়েটিকে বেশ ভালো করেই চেনে সে। এ তো সেই মেয়েটা যে আরহাকে হসপিটালে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু ও এখানে কি করছে?

আরহাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভানের খালামণি ওকে দেখে বুঝতে পারলেন, তাই তিনি হেসে বললেন

– ঐ যে সোফায় যাকে দেখছ ও আমার মেয়ে ইমি। মানে আভানের খালাতো বোন।

আরহা বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওনার দিকে। ইমি আরহাকে দেখে আলতো করে হাসল। তারপর আরহার দিকে এগিয়ে এসে বলল

– আরহাপু কেমন আছো? কতোদিন পর দেখা হলো তোমার সাথে।

আরহাও মুচকি হেসে বলল

– এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমার কি খবর ইমি?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

ওরা গল্প করতে করতে চলে গেল রান্নাঘরে।এসবের মাঝে আরহা একপ্রকার ভুলেই গেল আভানের কথা।

——————–

কাজ শেষে যখনই আরহা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রুমের দিকে অগ্রসর হতে যাবে তখনই কলিংবেলের আওয়াজ হলো। আরহা গিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখতে পেল আভান দাঁড়িয়ে আছে বিধস্ত অবস্থায়। আভানকে এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরহার মনের মাঝে অসংখ্য অজানা আশঙ্কার দানা বাধল। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল তার। বিচলিত কণ্ঠে সে বলল

– কি হয়েছে কি আপনার? আপনাকে এমন বিধস্ত দেখাচ্ছে কেন?

প্রতিত্তোরে আভান আরহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। আভান যাওয়ার সময় আরহা একটা জিনিস বেশ ভালো ভাবে খেয়াল করল আভান কিছুটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। আভান চলে যেতেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো ওর।

আভান চলে যাচ্ছিল এমন সময় পেছন ফিরে আরহার দিকে ফিরে ভাঙা গলায় বলল

– আরহা।

– হুম।

– আমার সাথে রুমে চলো।

আভানের কথা মতো আরহা ওর পিছন পিছন গেল। রুমে গিয়েই আভান রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আর কোনো কথা না বলে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

আভান কি করছে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। হঠাৎ কাওকে কিছু না বলে আভানের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া। এতোক্ষণ পর আবার ফিরে আসা, তাও আবার এমন বিধস্ত অবস্থায়। সব কেমন জানি রহস্য রহস্য লাগছে আরহার কাছে। আসলে কি হয়েছে আভানের। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আভানকে যতই গভীর ভাবে চেনার চেষ্টা করছে ততই যেন অচেনা মনে হচ্ছে ওকে। আভান এতো রহস্যময় কেন। বিছানায় বসে বসে এসব ভাবছিল আরহা এমন সময় আভান দ্রুত গতিতে আরহার কাছে এসে…….ত

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here