তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২৫

0
452

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২৫

আরহা বিচরণ করছিল তার ভাবনার জগতে এমন সময় কোনো কথা বার্তা ছাড়াই দ্রুত গতিতে আরহার কাছে এসে আচমকা ওর কোলে শুয়ে পড়ল আভান। চোখ বন্ধ করে পরম নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে আরহার নরম কোলে আভান। আর এদিকে আরহা তো পুরোই ফ্রিজড্। হঠাৎ করে এমন আচমকা তার কোলে এভাবে শোয়াতে পুরোই শকড্ হয়ে গেল সে। আভান যে এমন করবে তা ভাবনারও বাইরে ছিল আরহার। আভান চোখ বন্ধ করেই ক্লান্ত কণ্ঠে বলল

– আরহা, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না। আমার না কিছু ভালো লাগছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে আমার। পারলে একটু মাথার চুল গুলো টেনে দিও।

আরহা কোনো কথা বলতে পারল না। ওর মুখ দিয়ে এখন একটা কথাও বের হচ্ছে না। কাপা কাপা হাতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল আভানের মাথায়। এতে আভান শত কষ্টের মাঝেও আলতো করে হাসল। আজ আভানকে দেখতে বেশ অন্য রকম লাগছে। আজ এতো দিন পর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আভানকে। এর আগে এতো কাছ থেকে কখনো দেখেনি ও। ঘন আখি পল্লব বিশিষ্ট মানবটির মুখশ্রীটা কি সুন্দরই না দেখাচ্ছে। বেশ মায়াবী লাগছে দেখতে, তবে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।

মাথার চুল গুলো টেনে দিতে দিতে আভানকে আরহা বলল

– আভান, একটা কথা বলি?

– হুম বলো।

– কাল রাতে আপনি তাড়াহুড়ো করে কোথায় গিয়েছিলেন?

আরহার এ কথা শুনে দ্রুত গতিতে উঠে বসল আভান। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল

– এসব তোমার না জানলেও চলবে আরহা।

– বললে কি সমস্যা? আমায় বললে কি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে?

– না তা না, বলাই যায় কিন্তু,

– কিন্তু কি?

– কিছু না।

– থাক আপনার বলতে হবে না আমায়। কে হই আমি আপনার যে আপনি আমায় বলবেন। আসলে আমার বেহায়ার মতো জিজ্ঞেস করাই উচিত হয়নি। আপনি যা ইচ্ছে করুন আমার কি তাতে।

বলেই চলে যাচ্ছিল আরহা আর তখনই হ্যাচকা টান দিয়ে মিশিয়ে নিল নিজের বুকের মাঝে। হঠাৎ এমন হওয়াতে চমকে উঠল আরহা। এবার আরহা আভানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল। আর এদিকে আভান হাসতে হাসতে শেষ আরহার কর্ম কাণ্ড দেখে। আরহার এবার রাগান্বিত সুরে বলল

– এসব কি, ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন আমায়।

– পারলে যাও, আমি কি আটকে রেখেছি তোমায়?

– আপনিই তো আটকে রেখেছেন আমায়। ছাড়ুন আমায়।

আভান এবার ছেড়ে দিল আরহাকে। বাঁকা হেসে বলল

– আজ ছেড়ে দিলাম। নেক্সট টাইম আর ছাড়ব না, মিষ্টি মুখ করেই ছাড়বো। মাইন্ড ইট।

আভানের এমন অসভ্য মার্কা কথা শুনে কান গরম হয়ে গেল আরহার। সেই সাথে মুখে লাল আভা ধারণ করল ওর।

আভানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে কিল ঘুষি মারতে লাগল, আর আভান হাসতে হাসতে শেষ। এবার আভান হাসতে হাসতে বলল

– আমার পেটে ব্যথা করছে হাসার কারণে। আর হাসিও না আমায় আরহা।

– করুক পেটে ব্যথা আপনাকে হাসতে বলেছে কে? আমি কি ফান করছি? অসভ্য মার্কা কথা বলেন শুধু।

– সে তুমি আমায় যা-ই বলো না কেন, বেশ অনেক দিন পর আজ মন খুলে হাসতে পারলাম।

এবার আরহার গালে হাত রেখে আভান বলল

– আমার আরুপাখিটার বুঝি ভীষণ অভিমান হয়েছে আমার প্রতি। আমি কাল রাতে একটা জরুরি কাজে বেরিয়েছিলাম। এমন একটা কাজ যেটা আমার প্রাণ নাশের কারণ হতে পারত, তবে সতর্ক থাকার কারণে বেচে ফিরেছি। শুধু এতো টুকু জেনে রাখো। এর থেকে বেশি জানতে হবে না। যখন জানার তখন আমি নিজ থেকেই তোমায় বলব।

– আপনার প্রাণ নাশ মানে? কি সব আজে বাজে কথা বলছেন আপনি?

– কেন আমি মরে গেলে তো তুমি মুক্তি পাবে।

আভানের কথা শুনে ওর মুখ চেপে ধরে অশ্রু সিক্ত নয়নে আরহা বলল

– আর একবারও আপনি এসব বলবেন না। এই আমি বলে দিলাম।

– তুমি নাকি আমায় বর হিসেবে মানো না, ইভেন বিয়েটাই মেনে নেও নি। আর আমাকে তো দু চোখে সহ্যও করতে পারো না। তাহলে কিসের এতো দরদ আমার প্রতি। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কি আমায় ভালোবাসো তাহলে?

– না বাসি না আপনাকে ভালো হয়েছে এবার।

– নিজের চেয়েও বেশি যাকে ভালোবাসি তার মুখ থেকে এমন কথা শোনার আগে তো মরাই ভালো।

আরহা রাগান্বিত সুরে আভানকে বলল

– আমি বলেছি না যে আপনি এসব কথা আর একবারও বলবেন না। কথা কি কানে যায় না নাকি। আর একটা বার যদি আপনি এসব কথা বলেন তাহলে আপনি আমার মরা মুখ দেখ…..

– খবদ্দার আরহা, এসব কথা মনের ভুলেও তুমি আমার সামনে বলবে না। বেশি বার বেরেছো না মেয়ে, তোমার পা ভেঙে রেখে দিব আমি। আমি যেন এসব আর না শুনি।

– হ্যাঁ তো আমি বললেও দোষ, নিজে বললে তো কিছুই না। পারেন তো খালি ধমকি ধামকি দিতে, আর মারতে। যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসতেন তাহলে আমার গায়ে কখনোই হাত তুলতে পারতেন না।

– কেন বোঝনা তুমি, আমি আমার লাইফে কাওকে আমার কোনো জিনিসের ভাগ দেইনি। আর সেটা যদি হয় আমার প্রিয় কোনো বস্তু তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তুমি হলে সে যাকে আমি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসি। তুমি আগা গোড়া আমারই, আর তোমাকে যদি কেউ আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে যায় তাহলে আমি কখনোই নিতে দিব না, তার জন্য যা করা লাগে করবো আমি। কিন্তু তোমার ভাগ আমি কাওকে দিব না। তুমি শুধু আমারই। সেদিন ঐ ছেলেটা তোমার হাত ধরেছিল বলে আমার মাথা আর ঠিক ছিল না তাই আমি তোমাকে যখন মেরেছিলাম তখন আমি আমার নিজের মাঝে ছিলাম না। পরে যখন বুঝতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। দ্রুত তোমায় নিয়ে হসপিটালে যাই। সেইদিনের পর থেকে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। আমায় পারলে মাফ করে দিও।

– না মাফ করবো না আপনায়, হুহ।

– তাই বুঝি? তাহলে ঠিক কি করলে মাফ করবে আমায়?

– কিছুই না, তবে মরার কথা আর মুখেতেও আনবেন না।

– ওকে ডান। মানলাম আপনার কথা মহারানি।

আভানের এই কথা শুনে মুচকি হেসে রুম থেকে প্রস্থান করছিল আরহা। যাওয়ার আগে আরহাকে উদ্দেশ্য করে আভান বলল

– আরুপাখি, পাওনা কিন্তু রয়েই গেল, মিষ্টি চাই মিষ্টি, মনে থাকে যেন।

এ কথা শুনে অস্ফুট স্বরে বলল

– অসভ্য একটা।

বলেই এক দৌড়ে চলে গেল সে। এদিকে আভান হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কাল সারা রাত ঘুম হয় নি। তাই শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সে।
.
.
.

এখন আরহা ইমির রুমের দিকে অগ্রসর হলো, ওর ইমির সাথে কিছু কথা আছে। ইমির রুমে নক করে দরজা দিয়ে উকি দিয়ে বলল

– আসবো ইমি?

– আরে আরহাপু সরি ভাবী আসো আসো। আমার রুমে ঢুকতে আবার পারমিশন নিতে হয় বুঝি?

– ভাবী?

– আমার ভাইয়ের বউ তো ভাবী বলবো না তো কি বলবো? আগেই চেয়েছিলাম ভাবী ডাকতে কিন্তু ভাইয়া নিষেধ করেছিল।

– আগেই চেয়েছিলা মানে? তুমি কি আমায় আগে থেকেই চিনতে?

– ইয়ে ম মানে ন না

– আমতা আমতা করছো কেন?

– আচ্ছা ভাবী, তুমি তো এখন এ বাড়ির বউ তাই না, এখন তোমায় সব বলাই যায়। আসলে হসপিটালে আমি সেদিন তোমায় মিথ্যে বলেছিলাম।

এটুকু বলে থামল ইমি। আরহা প্রশ্ন বিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে ইমির দিকে। এক ঢোক গিলে ইমি বলতে আরম্ভ করল

– আসলে ভাবী, আমি তোমায় কক্সবাজারে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন ভাইয়া তোমায় বাচিয়েছিল, তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। ভাইয়া তোমায় একবারের জন্য ছুয়েও পর্যন্ত দেখেনি কল করে আমায় ডেকেছিল, তারপর আমি তোমায় তোমার বাসায় পৌছে দিয়েছিলাম। সেই থেকে তোমায় চিনি আমি। আর ভাইয়া যে তোমায় পছন্দ করত আগে থেকে সেটাও আমার জানার বাইরে ছিল না। ভাইয়া আমার সাথে সব শেয়ার করে।

– এ কথা আগে বললে কি হো ইমি। তোমরা দু ভাইবোনই না কেমন যানি রহস্য টাইপ। তোমার ভাইটা বেশি।

ইমি ফিক করে হেসে ফেলল আরহার কথা শুনে। হাসতে হাসতে বলল

– একটা কথা কি জানো?

– কি?

– ভাইয়া না তোমার বাড়ির সামনে প্রতি রাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমায় দেখত। তুমি কখন বেলকনিতে আসবে আর ভাইয়া কখন তোমায় দেখতে পাবে সেই অপেক্ষায় থাকত। তুমি বুঝতেও পারতে না। হি হি।

আরহা মনে মনে বলল

– ওহ সব কিছুর পেছনেই তবে আভান ছিল। সেই দিন আভানই আরুপাখি বলে ডেকেছিল ওকে তার মানে।

– আচ্ছা ইমি আমি আসছি তাহলে বলেই….

#চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here