#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৫
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের জন্য কলেজে প্রবেশ করলো আভান। হাতে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রের ফাইল। দেরি হয়ে যাওয়ায় কিছুটা দ্রততার সাথেই পা চালাতে লাগল হেড টিচারের রুমের দিকে। এমন সময় পেছন দিক দিয়ে পরিচিত কোনো মেয়েলি কণ্ঠে ডাক দেওয়ায় পিছন ফিরে তাকাল আভান।
– এই যে শুনেন। আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।
– হুম।
– চিনতে পেরেছেন আমায়? ঐ যে কালকে….
– হুম, বুঝছি। কি বলবা তাড়াতাড়ি বললে ভালো হয়।
– এতো হেল্প করলেন আমাকে। অথচ আপনার নামটাই জানা হলো না। Anyways, আমার নাম আরহা। আচ্ছা এবার বলুন আপনার নাম কি?
– আমার নাম টা না জানলেও চলবে। আমি এমন কেউ না যে আমার নাম জানতে হবে।
– বলুন না প্লিজ।
– আভান চৌধুরী, আমার নাম। হয়েছে এবার। আশা করি আর কিছু জানতে চাওয়ার নেই আমার কাছে। আর আমার এখন কথা বলার সময় নেই। একটা ইমার্জেন্সি কারণে হেড টিচার আমায় ডেকেছেন, তাই এখনই আমাকে যেতে হবে।
– কি কারণে?
– সেইটা তোমার না জানলেও চলবে।
বলেই হেড টিচারের রুমের দিকে অগ্রসর হলো আভান।
আভানের এমন আচরণে কষ্ট পেল আরহা। আরহা ভাবতেও পারেনি যে আভান ওর সাথে তেমন একটা কথা বলবে না। মোটকথা পাত্তাই দিল না ওকে। কি হতো যদি তার সাথে একটু হাসি মুখে কথা বলতো আভান। এসব ভাবতে ভাবতেই বিষন্নতায় ছেয়ে গেল তার মন। তাই বিষন্ন মন নিয়েই ক্লাস রুমের দিকে পা চালালো আরহা। ক্লাস রুমে গিয়েই বিষন্ন মন নিয়ে আরিশার পাশে বসে পড়ল। আরহার এমন মন খারাপ দেখে আরিশা বলল
– কি রে মন খারাপ কেন তোর? কি হয়েছে বল আমায়?
– কিছু হয়নি আমার।
– আচ্ছা, ঐ ছেলেটার সাথে কথা হয়েছে তোর?
আরিশার কথা শুনে আরও বেশি মন খারাপ হয়ে গেল আরহার। মন খারাপ নিয়েই বলল
– আমি এমন কেউ না যে আমার সাথে সে কথা বলবে। আসলে সে তো অনেক ব্যস্ত মানুষ, আমার সাথে কথা বলার সময় কই তার।
– ওরে বইন। মন খারাপ করিস না তো। অবশ্যই কথা বলবে। হাজার বার কথা বলবে। তোর ক্রাশ বলে কথা। তোর সাথে কথা বলবে না তো কার সাথে কথা বলবে।
– মোটেও না। আমি কি একবারও বলেছি যে সে আমার ক্রাশ। শুধু বলেছি যে আমার সাথে তেমন একটা কথাও বললো না, ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গেল। এই জন্য একটু খারাপ লাগলো।
– হুম বুঝছি আমি যা বুঝার। দেখতেও কিন্তু খারাপ না, কি বলিস? সেই হ্যাণ্ডস্যাম দেখতে। তোর পছন্দ না হলেও আমার কিন্তু বেশ পছন্দ হয়েছে। ( আরহাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এ কথা বলল আরিশা)
– এই এই একদম, নজর দিবি না বলে দিলাম।
– হু হু, বান্ধবী, নিজের জালে নিজেই ফেসে গেছো তুমি।
আর কিছু বলল না, নিজের বোকামির জন্য নিজেকে নিজেরই মারতে মন চাচ্ছে আরহার। ইচ্ছে করছে মাটির নিচে চলে যেতে, কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। আর এদিকে আরহার এমন নাস্তানাবুদ মার্কা চেহারার অবস্থা দেখে আরিশা তো হেসে কুটি কুটি।
.
.
.
ক্যান্টিনে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে আরহা। আরিশা ওর ওমন অবস্থা দেখে হাসার কারণে ক্লাসে আরিশার সাথে একটা কথাও বলেনি। ভীষণ রাগ হয়েছে আরহার।আরহার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আরিশা সেই তখন থেকে আরহাকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু আরহা কোনো কথাই বলছে না আরিশার সাথে।
– আরহা, এই আরহা। প্লিজ দোস্ত কথা বল না আমার সাথে। আমার ভুল হয়েছে রে। আমি আর ফিরেও তাকাবো না তোর ক্রাশের দিকে। এবার তো কথা বল।
এবারও কথা বললো না আরিশার সাথে আরহা। আরিশা কিছু একটা ভেবে বলল
– ওহে ক্রাশখোর বালিকা রে। ঐ দেখ তোর ক্রাশ। আর তুই এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস।
এই বার আরহা সঙ্গে সঙ্গে ফিরে তাকাল। উঠে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। কিন্তু পেল না। শেষে যখন না পেয়ে ব্যর্থ হলো তখন আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– কই রে। কোথাও তো খুঁজে পেলাম না।
– তুই আমার সাথে কথা বলছিস না দেখে মজা করলাম, দোস্ত। Please, don’t mind.
– আচ্ছা। আমি যেন এসব আর না দেখি।
– ওকেই ওকেই।
দুই বান্ধবী মিলে বসে বসে তাদের পছন্দের খাবার খেতে লাগল এবং গল্প করতে লাগল। গল্পের এক পর্যায়ে আরহা এবং আরিশা দুজনেই হাসতে হাসতে বেহুশ হবার উপক্রম। এক জন আরেক জনের গায়ের উপর পড়তে লাগল হাসতে হাসতে।
হাসলে আরহার গালে টোল পড়ে। ভীষণ মিষ্টি লাগে ওকে তখন দেখতে।
দূর থেকে কেউ একজন আরহার হাসিমাখা মুখ খানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে দেখেই চলেছে তার প্রেয়সীকে। এ দেখা যে শেষ হওয়ার নয়। আজীবনের।
তবে এ দেখা দূর থেকে দেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিছু সম্পর্ক দূর থেকেই ভালো।কিছু মানুষের ভালোবাসা এমনই হয়। তেমনি তার ভালোবাসা টাও এমন। একেই বুঝি একপাক্ষিক ভালোবাসা বলে। সে চায় না তার অভিশপ্ত জীবনে কেউ আসুক। এটাও চায় না যে তার অভিশপ্ত জীবনে তার ভালোবাসার মানুষটা এসে নিজের জীবনটাকে অভিশপ্ত বানাক বা বিষাক্তময় বানিয়ে তুলুক।
———–
আরিশাকে বিদায় জানিয়ে কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় আরহার চোখ পড়ল গাছের নিচে বসে থাকা ৫-৬ জনের সাথে বসে থাকা আড্ডা দেওয়া ব্যক্তিটার দিকে। সেই ব্যক্তিটা আর কেউ নয়, সে আভান। যে কিনা আরহাকে দুই বার বাঁচিয়েছিল। আর আজ সকালে পাত্তাই দেয়নি। এবার আর আরহা কোনো কথা বলল না আভানের সাথে। ভীষণ রকম রাগ হলো আরহার। তাই কোনো কথা না বলে দ্রুতই পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে এলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।
আভানও দেখেছে আরহাকে তবে অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করল। পাত্তাও দিল না আরহাকে। যেন আভানের কাছে আরহা কোনো মূল্যহীন এক বস্তু। এসব ভাবা বাদ দিয়ে সে কনসার্নট্রেট করল বন্ধু দের আড্ডায়।
—————
বাসায় এসেই নিজের রুমে যেয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলল আরহা।
শাওয়ারের পানি পরছে অনবরত। কিন্তু আরহার কোনো খেয়াল নেই। সে ভাবছে আজ সকালের কথা। বেশ ঘণ্টা খানিক পর ফ্রেশ হয়ে বের হলো আরহা। এমন সময় আরহার মা আরহার রুমে এসে আরহাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– আরহা মা আমার, খেতে আয় তাড়াতাড়ি।
– না, আম্মু। আমার খিদে নেই। আমি খাবো না।
– দিব একটা মাইর। খাওয়া নিয়ে কোনো অবহেলা নয়, তাড়াতাড়ি খেতে আয়। বলেই তিনি নিচে চলে গেলেন। আরহাও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মায়ের বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের সাথে ডাইনিং রুমে খেতে গেল।
খাওয়া দাওয়া শেষের পর নিজের রুমে আসলো আরহা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না। তাই বেলকনিতে গেল মন ভালোর জন্য। এই জায়গাটাই আরহার প্রিয় জায়গার মধ্যে একটা। মন খারাপ যখনই থাকে তখনই আরহা বেলকনিতে চলে আসে মন ভালোর জন্য। মন মুগ্ধকর মুক্ত বাতাস, চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে লাগল মনোরম পরিবেশটা। বাতাসে উড়ে চলেছে আরহার চুল। এমন সময় কেউ একজন আরহাকে ডাক দিলো।
– আরুপাখি……….
#চলবে ~