গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ১১
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা
নিলয় আজ ড্রিংক করছে,,এবং খুব বাজে ভাবেই করছে।।এক ঘন্টায় তিন বোতল সাবার করেছে সে,,,তবু থামার কোনো নাম গন্ধ নাই বললেই চলে।।জীবনের প্রথম মদের বোতল হাতে নিয়েছে নিলয়।।এর আগে কখনো এসব ফালতু জিনিস ছোঁয়েও দেখে নি।।।নিলয় একটা সুনশান জায়গায় গাড়ির ডিকির উপর বসে আছে,,,আর তার ঠিক অপজিটে মোটামুটি “হা” করে অবাক দৃষ্টি নিয়ে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,,,তার নাম রেদুয়ান,,,নিলয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড।।।এর আগে নিলয়কে এসব ছাইপাস খেতে দেখে নি সে,,ইভেন ছোঁতেও দেখে নি,,,সেই নিলয় কিনা আজ ড্রিংক করছে,,ভাবতেই তার মুখ অটোমেটিক “হা” হয়ে যাচ্ছে।।।
।
নিলয় প্লিজ থামবি??পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই??(হাত থেকে মদের বোতলটা কেড়ে নিয়ে)
।
নিলয় অন্য একটি বোতল হাতে নিতেই রেদুওয়ান আবার কেড়ে নিলো,,,,
।
কি করছিস এসব???আর ইউ লস্টেট??(চিৎকার করে)
।
হ্যা,,পাগল হয়ে গেছি আমি,,,ওর জন্য পাগল হয়ে গেছি,,,নিলয় চৌধুরী সিম্পল একটা মেয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে,,,,(চিৎকার করে,,গাড়ির গ্লাসে আঘাত করে)
।
স্টপ ইট নিলয়,,,জাস্ট স্টপ ইট,,,মেয়ে মানে??কোন মেয়ে?কিসের মেয়ে??কিছুই তো বুঝতে পারছি না।।।কার কথা বলছিস তুই??(অবাক হয়ে)
।
নিশু,,
।
নিশু??এটা আবার কে??ওহহহো,,নিশি???(চেঁচিয়ে) নিরার ওই সুন্দরী বান্ধবী টা??
।
হুমমম(মন খারাপ করে)
।
ওরে,,,মাম্মা,,প্রেমে পড়ছো নাকি??(দাঁত কেলিয়ে)
।
অনেক আগেই,,,
।
ওহ,,,তাহলে প্রপোজ নিয়ে সমস্যা??আরে আমি আছি তো,,,কত্তো মাইয়াকে প্রপোজ করছি,,হেব্বি এক্সপেরিয়েন্স আছে,, দোস্ত(ভাব নিয়ে)
।
সাট আপ রোদ,,,ও অলরেডি জানে,,, আর ও নিজেও আমাকে ভালোবাসে,,,
।
কি কও মামা,,এত্তো আগায় গেছো??(অবাক হয়ে)আচ্ছা,,তা নই ঠিক আছে,, তাহলে প্রবলেম টা কি??তুই রাজি মাইয়া,,(নিলয় রাগী চোখে তাকাতেই)না,, ম,,মানে ভাবি রাজি,, এখন শুধু ডাকতে বাকি কাজি,,,এর মধ্যে তুই ছাগলের মতো ব্যা ব্যা করছিস কেন বুঝলাম না,,,
।
নিলয়কে চুপ করে থাকতে দেখে,, রেদুয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,
।
এই তোগোর লাভ স্টোরির মাঝে মিশা সওদাগর টাইপ কেউ আছে নাকি??(ভ্রু কুঁচকে)
।
নাহ,,,আপাতত নাই।।
।
তাহলে শালা প্রবলেমটা কি সেটাতো এটলিস্ট বল,,নয়তো সল্ব করবো কেমনে??
।
নিশির গায়ে আমি হাত তুলছি,,,(মাথা নিচু করে)
।
কিহহহহহহহ,,,(চিৎকার করে)তুইইইই,,,লাইক সিরিয়াসলি??যে নিলয়,,মেয়েদের সাথে কড়া গলায় কথা পর্যন্ত বলে না,,,,সেই নিলয় নাকি কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলছে,,তাও আবার গার্লফ্রেন্ড??এটা তুই আমাকে বিশ্বাস করতে বলিস??
।
যা সত্যি তাই বলছি,,,
।
কাহিনীটা খুলে বল তো,,,নিলয় রেদুয়ানকে সব খোলে বললো,,,
।
তুই কাজটা ঠিক করিস নাই,,,এটুকু বিশ্বাস তোর রাখা উচিত ছিলো।।
।
সেটা আমি জানি,,,এখন বল কি করা যায়,,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে দোস্ত,,,আমি জাস্ট নিতে পারছি না,,,তুই জানিস?ও আমার দিকে একবার তাকাইনি পর্যন্ত,,,সারাটিদিনে ও আমার সাথে একটা কথাও বলে নি,,নট আ সিংগেল ওয়ার্ড,,,ওকে আমার চাই,, যেকোনো মূল্যে ওকে আমার চাই,,,
।
কিছুক্ষণ ভেবে রিদোয়ান বলে উঠলো,,,”দোস্ত?আই হেভ আ প্ল্যান,,,এবার কথা না বলে যাবেটা কই,,”বলেই চোখ টিপে সবগুলো দাঁত বের করে হেসে দিলো।।
।
।
সকাল ১০ টা,,নিশি ক্যাম্পাসে বসে আছে,,,ওর মনটা বেশ খারাপ।।একে তো ফাহিনের ঝামেলা তার উপর নিলয়,,,,একটা বার রাতে ফোন দিয়ে সরি বলার প্রয়োজন মনে করলো না ও??দোষটা তো ওর ছিলো,,, নিশির রাগ করাটাই কি স্বাভাবিক নই?
।
এই নিশু,,,কই হারায় গেলি??চল ক্লাসে চল।।(হালকা ধাক্কা দিয়ে)
।
নাহ,,রে আজ আর ক্লাস করবো না।।তুই করলে কর আমি বাসায় যাবো,,,
।
মাত্র তো একটা ক্লাস করলি,,আর এখন তো রাহুল স্যারের ক্লাস,,,তুই রাহুল স্যারের ক্লাস মিস দিবি??(অবাক হয়ে)
।
হ্যা,,দিবো,,,তুই যাবি কি না বল?(বিরক্ত হয়ে)
।
আরে রাগিস কেন,,,ওকে চল,,, আমিও যাচ্ছি।।এই নিরাটা যে কবে ভার্সিটি আসবে,,জামাই পেয়ে সব ভুলে গেছে হুহ,,,
।
ফালতু কথা বাদ দিয়ে চল তো,,,
।
নিশি আর অানিকা রিকশায় বসে আছে,,,রিকশা নিজের মতো ছুটছে,,,,অনিকার মুখেও খই ফুটছে কিন্তু নিশির মুখে কোনো কথা নেই,,,,কোনো যেনো বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ,,,কিছুই ভালো লাগছে না ওর।।মনে হচ্ছে,, আশেপাশের সবকিছুতে বিরক্তি নামক কোনো পদার্থ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,,আর সেই তিক্ততায় সবকিছু বিরক্তিকর থেকে বিরক্তিকর হয়ে উঠছে।।হঠাৎই একটা গাড়ি এসে থামলো রাস্তার মাঝ বারাবর,,,নিশিদের রিকশার ঠিক সামনে আড়াআড়ি ভাবে দাড়িয়ে আছে গাড়িটি।।অানিকা আর নিশি উভয়ের মুখেই ভয়ের ছাপ।।আরেকটু হলেই বড় সড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতো।।গাড়িটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নিশি,,, গাড়ি থেকে নেমে আসলো নিলয়,,,নিলয়কে দেখেই নিশি আতঁকে উঠলো,,,নিলয়কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,,,রাতে চোখের পাতা এক করেনি সে,,,,চোখগুলো লাল,,,চুলগুলো অগোছালো,,এক হাতে ব্যান্ডেজ।।এই অবস্থাতেও ব্লু টি-শার্টটাতে কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে নিলয়কে,,,আনিকা তো বলেই উঠলো,,,
।
ওয়াহ,,দোস্ত হোয়াট আ পার্সোনালিটি,,,ইচ্ছা করে বারবার প্রেমে পড়ে যায়,,,দেখ দেখ আমাদের দিকেই আসছে,,,নিশ্চয় আমাকে প্রোপোজ করবে,,,(এক্সাইটেড হয়ে)
।
আনিকার কথা শুনে নিশির প্রচুর রাগ লাগছে,,ইচ্ছা করছে,,থাপড়াইয়া ওর দুটো গাল ফাঁটায় দিতে,,, অসভ্য মাইয়া,,অন্যের জিনিসে চোখ দিস।।কিন্তু নিশি কিছু বললো না শুধু ভ্রু কুচঁকে তাকালো,,,।
।
হেই গাইস,,
।
হাই নিলয়,,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
মুচকি হেসে হাই বলেই,,নিশির দিকে তাকালো,,
।
নিশু কাম উইথ মি,,
।
নিশি একটুও নড়লো না,,ঠাই বসে আছে,,সে নিলয়ের সাথে যাবে না,,,কিছুতেই না,,হুহ।।
।
কি হলো চলো?(হাত ধরে)
।
হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো নিশি,,নিলয়কে উদ্দেশ্য করে আনিকাকে বলে উঠলো,,
।
আনিকা,,,উনাকে বলে দে,, আমি কারো সাথে কোথাও যাবো না,,এই মামা,,,আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন চলুন।।(রাগী কন্ঠে)
।
নিলয় হালকা হেসে পকেটে হাত দিয়ে দাড়ালো,,,,
।
তাই??রিকশাটা এক ইঞ্চি এগোলে এই রিকশার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে,,,আর যেতে তো তোমাকে হবেই বেবি,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
এবার আনিকা চরম অবাক হলো,,,সব কিছু ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,,কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।।আর নিলয়ের মুখে “বেবি” ডাকটা শুনে সে তো রীতিমতো হতবাক।।।নিলয়কে এসব ওয়ার্ড ইউজ করতে দেখেনি কখনো।।ব্যাপারটা বুঝার জন্য আনিকা একবার নিলয় তো আবার নিশির দিকে তাকাচ্ছে ক্রমাগত।।।এবার নিশি রিকশা থেকে নেমে হাঁটা ধরলো,,কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না তার আগেই নিলয় টেনে কোলে তুলে নিলো।।নিশি আজও চুপচাপ আছে,,নিলয় সেদিকে তাকিয়ে হালকা হেসে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো,,যাওয়ার আগে আনিকাকে চোখ টিপে,, বলে গেলো,,,গুড বাই শালিকা।।।
আনিকা রিকশায় হ্যাং মেরে বসে আছে,,ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,,হচ্ছেটা কি এসব???
…………..
………………..
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……]
#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial