গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ১২
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা
নিলয় নিশিকে খুব সাবধানে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো,,,,নিশি চুপচাপ মুখ গোমড়া করে বসে আছে।।।নিশির এমন চুপচাপ ভাবে নিলয়ের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেলেও শুকনা একটা হাসি দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।।প্রায় একঘন্টা পর গাড়ি থামলো।।নিশি চারপাশে তাকিয়ে গাড়ি ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে না,,,,গাড়িগুলো ব্যস্ত গতিতে ছুটে চলছে শুধু।।এখানে তো কোনো কাজ থাকতে পারে না,,,আশেপাশে রেস্টুরেন্টও দেখতে পাচ্ছে না নিশি,,তাহলে এখানে গাড়ি থামানোর কারন কি??নিলয় গাড়ি সাইড করে দাঁড় করিয়ে নিশির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো,,,,নিশির কপালে চিন্তার ভাঁজ আর শুকনো মুখটা দেখেই নিলয়ের বুকে চিনচিনে একটা ব্যাথার শিহরণ খেলে গেল,,,,
।
নিশু??(নিশির ডানহাতটা আলতো করে ধরে)একটাবার কি মাফ করা যায় না??শুধু একটাবার,,প্লিজজ(করুণ কন্ঠে)
।
কিন্তু নিশির ভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না,,,ওকে দেখে মনে হচ্ছে নিলয়ের কথাগুলো ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেই না।।
।
এই নিশু??একটু আমার দিকে তাকাও না প্লিজ,,,আমার সাথে একটু কথা বলো,,,দেখো আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি,,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নিশু,,,প্লিজজ,,নিশু।।।
।
নিশি তবু কিছু বলছে না,,চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,,,যেনো তার কিছুই বলার নেই,,কিচ্ছুটি না।।নিলয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,,
।
বলবে না তো কথা??ওকে,,বেশ বলো না।।।আমিও দেখি কতোক্ষন কথা না বলে থাকতে পারো,,,
।
কথাটা বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো নিলয়,,,,নিশি আগের মতোই বসে আছে,,নিলয় কোথায় গেলো সেটা জানা বা দেখার চেষ্টা করার মতো ইচ্ছাও তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।।হঠাৎ কিছু মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি তে নিশি ড্রাইভিং সিটের কাছে বসে বাইরে উঁকি দিলো,,তারপর যা দেখলো তাতে নিশির আত্মা কেঁপে উঠলো,,,হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,,,প্রিয় কিছু হারানোর ভয়ে চোখটা বুঁজে গেলো।।হঠাৎ কি ভেবে ঝট করে চোখ খুলে গাড়ি থেকে নামতে নিলো,,,কিন্তু গাড়ির দরজা খুলছে না,,,কিছুক্ষণ টানাটানি করেও যখন খুললো না তখন নিশি “নিলয়” বলে চিৎকার করে উঠলো,,,
।
নিলয়???নিলয়?কি করছেন আপনি??প্লিজ সরে দাড়ান,,,প্লিজজজ(কাঁদো কন্ঠে)
।
ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত রাস্তার মাঝ বরাবর নিলয় দাড়িয়ে আছে।।।তার মধ্যে সরার কোনো লক্ষন না দেখে নিশি এবার কেঁদেই দিলো,,,নিলয়কে পাশ কাটিয়ে গাড়িগুলো তীব্র বেগে ছুটে যাচ্ছে।।।চারপাশের মানুষরাও আতংকে নিলয়কে বারবার ফিরে আসতে বলছে,,,,
।
প্লিজ,,নিলয়,,প্লিজ চলে আসো প্লিজ,,,(কাদঁতে কাঁদতে চিৎকার করে)
।
নিশু,,,তুমি যদি আমাকে মাফ না করো,,তাহলে আমি যাবো না,,,তারপর যা হওয়ার হোক আই ডোন্ট কেয়ার,,(চিৎকার করে)
।
না,, না নিলয়,,,আমি আপনাকে ক্ষমা করেছি,,,প্লিজ গাড়িতে আসুন,,প্লিজ,,আমার বড্ড ভয় লাগছে নিলয়,,,প্লিজ আসুন,,
।
না নিশু,,,তুমি মন থেকে ক্ষমা করো নি,,আর তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য,এটা আমার প্রাপ্য,,,আর এটাই আমার নিয়তি।।
।
এই সময়ই নিশির চোখে পড়লো একটা বাস,,,যে কিনা নিলয়ের দিকে ধেয়ে আসছে,,,নিশির এবার গলা শুকিয়ে আসছে,,ওর মনে হচ্ছে চোখ খুলে রাখার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে সে,,,,,কোনরকম চোখ বুঝে চিৎকার দিয়ে উঠলো নিশি,,,
।
নিলললয়য়য়য়,,,প্লিজ কাম,,আই কান্ট লিভ উইথআউট ইউ,,,প্লিজ কাম,,,প্লিজজজজ,,আমি আপনার প্রতি রেগে নেই নিলয়,,,(হেঁচকি দিতে দিতে)
।
চারপাশে নিঃশব্দ নীরবতা,,,নিশি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না,,,চারপাশের মানুষদের মধ্যেও অস্বস্তিকর নীরবতা।।।নিশির মনে হচ্ছে চোখ খুললেই চোখের সামনে
ওর সব শেষ হয়ে যেতে দেখবে,,,, তা দেখার সাহস যে তার মধ্যে নেই,,তিল পরিমানেও নেই।।কিছুক্ষণ পর কিছুটা সাহস নিয়ে চোখদুটো মিটমিট করে খুললো নিশি,,সামনের দিকে তাকিয়েই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো নিশি,,,চোখের অশ্রুও বাধ মানছে না আজ,,,নিলয় গাড়ির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে,,,নিশির মনে হচ্ছে,,,জীবনের মূল্যবান জিনিসটা হারাতে হারাতে ফিরে পেয়েছে সে।।।নিলয় দরজা খুলে গাড়িতে বসার সাথে সাথেই,,, নিশি নিলয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো,,,কান্নার তেজে আর ভয়ে নিশির শরীর থরথর করে কাপঁছে,,,,নিলয় নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তবু নিশির কাঁপুনি কিছুতেই কমছে না।।।।নিশি যে এতোটা ভয় পাবে নিলয় তা বুঝতে পারে নি।।নিলয় নিশিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,, পারলে নিশিকে বুকের মাঝেই ডুকিয়ে নিতো নিলয়।।।নিশিও নিলয়কে আকড়ে ধরে আছে শক্ত করে,,যেনো ছাড়লেই হারিয়ে যাবে,,,কিন্তু নিশি কিছুতেই হারাতে দিবে না,,,কোনো কিছুর মূল্যেও না,,
।
নিশু??এই নিশু,,দেখো আমি একদম ঠিক আছি,,কিচ্ছু হয় নি আমার,,,
।
নিশির কান্নার বেগ এবার দ্বিগুন বেড়ে গেলো,,,নিলয় কিছুতেই নিশিকে শান্ত করতে পারছে না।।।
।
নিশু স্টপ ক্রায়িং,,,তোমার কান্না আমার মোটেও সহ্য হয় না,,,তুমি তো জানো,,তবু কেনো কাঁদছো??প্লিজ একটু শান্ত হও,,
।
আ,,,,প,,,,,নি খু,,,ব বাজে।।।যদি কিছু হয়ে যেতো,,,তাহলে আমার কি হতো?? একবারও ভেবেছেন আমার কথা??(নিলয়ের বুকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি দিতে দিতে কান্নাজড়িত কন্ঠে)
।
আউচ,,,আরে মারছো কেনো??কিছু হয় নি তো বাবা,,,
।
যদি কিছু হয়ে যেতো তখন??মাথার মধ্যে সেন্স নাই আপনার??
।
বেবি,,তোমার প্রেমে তো সেন্সলেস হয়ে গেছে গো,,সেন্স কেমনে থাকবে?(চোখ টিপে)
।
আপনি এখনও মজা করছেন??আরেকটু হলে আমি নিজেই সেন্সলেস হয়ে যেতাম,,,হাউ কুড ইউ??
।
নিশু,,আমার কিচ্ছু হতো না।।।আশেপাশের যতো গাড়ি দেখছো,,, সব আমার রিজার্ভ করা,,,
।
হোয়াট???আর ইউ কিডিং উইথ মি??(ভ্রু কুচঁকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে)
।
নোহ,,জান আম সিরিয়াস,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
এটা কিভাবে সম্ভব??(অবাক হয়ে)
।
এভরিথিং ইজ পসিবল বেবি,,,(দাঁত কেলিয়ে)আমরা যেখানে আছি ঠিক এই জায়গা থেকে এক কিলোমিটার দূরে রাস্তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে আর আশেপাশে যতো গাড়ি দেখছো,,,সবগুলোই এই একঘন্টার জন্য রিজার্ভড,,, আর একঘন্টা পর রাস্তাও ফ্রি করে দেওয়া হবে।।সিম্পল,,,
।
এটা সিম্পল??(চোখ বড় বড় করে)
।
সিম্পলই তো,,একটু টাকা খাওয়াতে হয়েছে আর তাতেই সব কাজ হয়ে গেছে,,,(কপালে আসা চুলগুলো আলতো হাতে নিশির কানে গুজে দিতে দিতে)
।
এত্তো কিচ্ছু করার কি দরকার ছিলো??(রাগী কন্ঠে)
।
তোমার একটা কথা শুনার জন্য এর থেকেও বেশি কিছু করতে পারি আমি নিশু,,,(শান্ত কন্ঠে নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে)
।
আপনি??জাস্ট বিরক্তিকর,,, আমি ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম,,মনে হচ্ছিলো আমার জীবনটাই কেউ কেড়ে নিচ্ছে আর আপনি???
।
বেবি,,,আমি এতো বোকা নই গো,,,আমার নিশু রাণীকে বিয়ে না করে,,তাকে আমার প্রিন্সেসের মা না বানিয়ে,,,আমি মরছি না গো(চোখ টিপে)
।
আবার বাজে কথা?(নাক ফুলিয়ে)যান এবার আর কথায় বলবো না,,,হুহ
।
তাহলে এবার দাড়াবো,,,এবার কিন্তু নাটক না,,,(বলে যেতে নিলেই)
।
খবরদার খুন করে ফেলবো,,,,
।
তাই??(বাকা হাসি দিয়ে)আমি তো চারপায়ে রাজি,,,
।
ধেৎ,, চারপায়ে কিভাবে রাজি হয়?(ভ্রু কুঁচকে),
।
আরে দুপা আর দুহাত,,,,হামাগুড়ি দিলেই হয়ে গেলো চারপা,, কি হলো না???আচ্ছা ওসব বাদ দাও,,এবার বলো তো,,,কাহিনীটা কি?
।
কিসের কাহিনী?(ভ্রু কুচকে)
।
ওই যে রেস্টুরেন্টের ওই বলদ টা কে ছিলো??আর বিয়ে নিয়ে কি বলছিলে??
।
রাগ করবেন না তো?(করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
।
না,,করবো না রাগ,,,তোমার উপর কি রাগ করতে পারি সোনা??(নিশির গালে হাত দিয়ে)
।
মিথ্যা বলবেন না,,,ওলওয়েজ উল্টা কথা,,আপনি শুধু আমার উপরই রাগ করেন,,,আর সবার কাছে তো আইসক্রিমের মতো ঠান্ডা,,হুহ(মুখ গোমড়া করে)
।
আচ্ছা মহারানী করবো না রাগ,,,এবার তো বলো,,৷
।
এবার নিশি ভয়ে ভয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুলে বললো,,সম্পূর্ণটা শুনে নিলয় রাগী চোখে তাকালো,,,
।
এই যে,,,এই তো রেগে যাচ্ছেন,,,,আপনি বলেছিলেন রাগ করবেন না,,আর এখন দেখুন ঠিকই রেগে যাচ্ছেন।।।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
।
নিশির কথা শুনে নিলয় নিজেকে শান্ত করে নিশির দিকে তাকালো,,,,
।
ওই হারামজাদার সাহস কেমনে হয়,, তোমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার।।।ইডিয়ট টা নিলয় চৌধুরীকে চিনে না,,,এবার ওকে চিনাবো নিলয় চৌধুরী কি জিনিস,,,,শরীরে একটা হাড্ডিও বাকি থাকবে না,,,সবকটা ভেঙে টুকরো টুকরো করবো।।
।
এই না না,,,ওকে মারবেন না…
।
কেনো??ওর জন্য খুব দরদ??তাহলে ওকেই বিয়ে করে নাও(দাঁতে দাঁতে চেপে)
।
হুহ,,,আপনাকে ভালো না বাসলে তাই করতাম(বিরবির করে)
।
কি বললা??অন্য কারো কথা মনে আনলেও খুন করে ফেলবো,,মাইন্ড ইট।।।(নিশির হাত চেপে ধরে)
।
এইতো এগ্রেসিভ মোডে চলে গেছেন,,,আপনার এই বিহেভটার জন্যই দেখবেন বাবা আমাদের বিয়ে হতে দিবে না।।
।
কেনো??আমি কি তোমার হিটলার বাপকে মারছি নাকি??
।
রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন,,,বাবাকে মারতে হবে না,,আপনি ফাহিনকে মারবেন,,আর আমি সিউর ওকে ভর্তা বানাবেন আপনি,,,তারপর ও আমাকে বিয়ে করতে মানা করে দিবে,,,আর ফাহিনের এই অবস্থার কারন জেনে বাবা আপনার আর আমার বিয়ে দিতে মানা করে দিবেন,,,সিম্পল,,(হাত উল্টে)
।
তো,,,তুমি কি করতে বলো??ওই হারামিটাকে আমি এমনি ছেড়ে দিবো??আমার জিনিসে হাত দেওয়ার পরিনাম তো ওকে দেখাতে হবে,,
।
সাট আপ,,হোয়াট ডু ইউ মিন বাই জিনিস??আমাকে জিনিস বলে মনে হয় আপনার???(রাগী চোখে,)
।
না,,মানে,,বলছিলাম যে,, আমার কলিজায় হাত দেওয়ার পরিনাম,,,
।
হয়ছে কথা ঘুরাতে হবে না।।কি করবেন জানি না,,,তবে ফাহিনের গায়ে হাত না দিয়ে বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করুন ব্যস,,,, আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে,,,ওকে ফুল ফ্যামেলি মিলে পিটানো যাবে,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
ওক্কে জান,,,গিভ মি জাস্ট টুয়েল্ভ আওয়ারস,,,ও নিজে বিয়ে কেন্সেল করবে,,,(শয়তানী হাসি দিয়ে)
…………..
………………..
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……]
#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial