তুমি আছো তাই পর্ব – ২১ (শেষ)

গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ২১ (শেষ)
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা

আজ নিশির বিয়ে,,,বুকের ভেতর অজানা এক অনূভুতি দানা বেঁধে চলেছে ক্রমাগত।।চারপাশে চেঁচামেচি হৈচৈ,, সবই যে তাকেই কেন্দ্র করে ভাবতেই অবাক লাগছে নিশির।।।ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পেতে চলেছে আজ,,,,হাজারো স্বপ্নগুলো আজ ডানা মেলবে আকাশে,,,এতো আনন্দের মধ্যেও চাপা কষ্ট আর ভয়,যেনো আকড়ে ধরছে নিশিকে,,কি হতে চলেছে তার জীবনে,,,জীবনটা কোন পর্যায়ে পৌছাবে কে জানে??বাবার রাজকন্যাটি থেকে অন্যের বাড়ির বউ হয়ে যাচ্ছে সে,,,সব গল্প,,রাগ,,অভিমানের সাথী বাবাকে ফেলে যেতে হবে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে,,,তবু তো যেতে হবে এটাই যে নিয়ম,,,এটাই যে বাস্তবতা,,,,নিলয়ের গাঁজাখুরি যুক্তি আর প্ল্যান,,, তারিকুল রহমান বেশ বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন,,,ফাহিম তারিকুল রহমানকে ফোন করে আগেই সবটায় বলেছিলো,,,প্রথমে রাগ হলেও মেয়ের খুশির জন্য নিজের রাগে মাটি চাপা দিয়েছেন,,,,সবকিছু জানার পরও,,এতো ড্রামা শুধু তার মেয়ের রিয়েকশনটা দেখার জন্য,,,,কিন্তু অবশেষে ছেলেমেয়েদের অস্বস্তিতে না ফেলে চেপে গেছেন বিষয়টা,,,মেয়ে তার কথা লুকোতে শিখে গেছে,,,কারো জন্য ভালোবাসাটা আগলে রাখতে শিখে গেছে,,,ভেবে শুধু মুচকি হেসে ছিলেন তিনি।।। নিলয়কে আর কোনো ফালতু যুক্তি দেখানোর সুযোগ না দিয়েই বিয়ের ব্যাপারটা সেড়ে নিয়েছেন তিনি,,,মেয়ের ভালো থাকার উপর আর কিচ্ছু হতে পারে না কিচ্ছুটি না,,,

নিলয় ঘরে ক্রমাগত পায়চারী করছে,,,বর বেশে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে,,,কিন্তু সেদিকে মশাইয়ের খেয়াল থাকলে তো,,,তার খেয়াল তো আটকে আছে কখন নিশির কাছে যাবে তার উপর,,,,তার ভালোবাসাটাকে আজ নিজের করে পেতে চলেছে,,,ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠছে নিলয়ের,,,এই মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য কতো কিছুই না করেছে সে,,,কখনো জোকারদের মতো আচরন তো কখনো হিরোগিরি,,,,সবকিছু তো আজকের দিনটার জন্যই,,,

বাসর ঘরে বসে আছে নিশি,,,বিয়েটা হয়েই গেলো শেষ পর্যন্ত,,,বিয়েতে নিলয় যে তারদিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো তা নিশি না তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে,,,আর নিলয়ের বন্ধুদের পিঞ্চ করে বলা কথাগুলোও কানে এসেছে নিশির,,,লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলো সে,,,নিলয়কে দেখার অদম্য ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিলয়ের বন্ধু আর নিশির বান্ধবীদের জন্য সে ইচ্ছে দমন করতে হয়েছে তাকে,,,,একটু পরই দরজা খোলে নিলয় ঘরে পা রাখলো,,,নিলয়ের পায়ের শব্দেই নিশি লজ্জা,,অজানা ভয়,, আনন্দে যেন কুঁকড়ে গেলো,,কি অদ্ভুত ফিলিংস,,,নিলয় নিশির পাশে বসেই বলে উঠলো,,,

নিশু??শাড়িটা চেঞ্জ করে হালকা কোনো শাড়ি পড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও,,গো,,

নিলয়ের কথায় নিশি হালকা মাথা নেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো,,,,সত্যিই সে অনেক টায়ার্ড,,এই ভাড়ি শাড়ি পড়ে ওর জীবনটা বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,শাড়ি নাকি আস্ত পাহাড় কে জানে,,,নিশি ড্রেসটা চেঞ্জ করে একদম শাওয়ার নিয়েই বের হলো,,,শরীরটা কেমন হালকা লাগছে এখন,,ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাইরে পা রাখতেই,,একটানে নিশিকে কোলে তোলে নিলো নিলয়,,,,নিশি প্রথম ধফায় ভয় পেয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো,,,এতোক্ষণে নিলয়ও ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে,,,নীল রঙের একটা হালকা সুতি পাঞ্জাবী তার পড়নে,,,ফরসা গায়ে যেনো নীল রঙটা খেলে গেছে,,,নিশিকে কোলে নিয়েই সোফায় বসে পড়লো নিলয়,,,নিশির দৃষ্টি শুধু নিলয়ের মুখের উপর,,,আশেপাশে কি হচ্ছে তাতে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই,,,শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে,,নিলয়ের ডাকে নিশির ঘোর কাটলো,,,একটু নড়েচড়ে বসে আবারো নিলয়ের দিকে তাকালো,,,

কি হলো হা করো,,,

হা কেনো করবো??(ভ্রু কুচকে)

ম্যাডাম খেতে হলে হা তো করতেই হবে,,,

এতোক্ষণে নিশি খেয়াল করে দেখলো,,,ট্রি টেবিলে খাবার রাখা,,,খাবার দেখেই মনে পড়লো,,আজ সারাদিন সে কিছু খায়নি,,আসলে টেনশনেই খেতে পারে নি,,,এতো টেনশনে খাওয়া,যায় নাকি,??

কি হলো হা করো,,,

আপনি কি করে জানলেন আমার ক্ষুধা লেগেছে,,(খাবার মুখে নিতে নিতে)

কারন আমি আমার বউকে খুব ভালো করে চিনি,,,সে যে আজ খেতে পারবে না তাও আমার জানা,,,এবার ঝটপট খেয়ে নাও,,,রাত তো চলেই গেলো বেবি,,,লুক ১২ঃ৩০ টা বাজে,,,,,ফাস্ট ফাস্ট,,,তোমাকে আরো অনেক কিছু খাওয়ানোর বাকি,,,(চোখ টিপে,,বাঁকা হাসি দিয়ে)

আপনি চুপ করুন তো,,,যত্তোসব বাজে কথা,,,আচ্ছা,,আপনি খেয়েছেন তো??

জী ম্যাম আমি খেয়েছি,,আপনার বর আমার না খেয়ে থাকতে পারে না,,,,

নিলয়ের মুখে “বর” কথাটা যেনো নিশির বুকে দোলা দিয়ে গেলো,,হ্যা এই কিউট করে ছেলেটা ওর স্বামী,,,ভাবা যায়??হাজারটা মেয়ে যার জন্য পাগল আজ সেই ছেলেটা ওর নিজস্ব সম্পত্তি,,,শুধুই তার,,,শুধু এবং শুধুই তার,,,নিলয়ের কোলে বসে বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে নিশি আর নিলয় মুচকি মুচকি হাসছে,,

হাসছেন কেনো??(ভ্রু কুচকে)

না ভাবছি,,,আমার বাচ্চাদের মা হিসেবে তোমাকে কেমন দেখাবে,,,এমনি তো তোমাকেই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে,,,হট এন্ড সেক্সি বাচ্চা,,,

আপনি??(বুকে থাপ্পর দিয়ে)বাচ্চারা মানে??কয় বাচ্চার কথা ভাবছেন আপনি??

বেশি না,,,এইতো ১০/১২ টা,,,তুমি বললে এর থেকে বেশিও নিতে পারি,,আই হেব নো প্রবলেম,,,,(মন ভুলানো হাসি দিয়ে)

নিলয়ের কথাটা কানে আসতেই নিশি যেনো বিশম খেলো,,,

ক,,কি??১২ টা??পাগল নাকি?

হুম,,,একদম পাগল,,,,তোমার প্রেমে পাগলামীর লাস্ট স্টেজে চলে গেছি গো,,,(পানি এগিয়ে দিতে দিতে)

খাওয়ানো শেষ করে,,,নিশির মুখ মুছে দিয়ে প্লেট টা সরিয়ে রেখে আবারো নিশির সামনে এসে দাঁড়ালো,,,

এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন??(অবাক হয়ে)

কথাটা শুনে মুচকি হেসে নিশিকে আবারো কোলে তুলে নিলো নিলয়,,, কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,,,”বাংলাদেশের প্রোডাকশনটা আরেকটু বাড়িয়ে দিই কি বলো??” আজ ওদের ভালোবাসার পূর্নতা পাবে,,,হাজারো টেনশনের পাহাড়কে দূরে সরিয়ে আজ ভাসবে ভালোবাসার গহীন সাগরে,,,,বেঁচে থাকুক ভালোবাসাগুলো এভাবেই,,,,,ওরা ওদের কাজ করুক,,,আমরা বিদেয় হই,,,কি দরকার কাবাবে হাড্ডি হওয়ার??

—(সমাপ্ত)—

#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here