#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
আজ সবাই ট্যুর থেকে বাসায় ফিরছে। রাতের জার্নি হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পৃথা ফোনে তখনও কথা বলছিল। সারাদিন কেমন ঘুরেছে কেমন কেটেছে ট্যুর সেগুলো বলছিল পৃথার ভালোবাসার মানুষ আকাশকে। ফাহাদ ফিসফিস করে বললো,
“পৃথা তুমি কি আমার সিটে আসবে?”
পৃথা ফোনটা একটু দূরে সরিয়ে বললো,
“কেন স্যার?”
“ইয়ে…মানে!”
পৃথা ফাহাদের ইয়ে মানের ভাষা বুঝে গেছে। ফাহাদ যে প্রিয়ার সাথে বসার জন্য পৃথাকে নিজের সিটে যেতে বলেছে সেটা পৃথা ভালোই বুঝেছে। তবুও একটু মজা নেওয়ার জন্য বললো,
“কিন্তু স্যার, প্রিয়া তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। আমি গেলে তো ও পড়ে যাবে।”
“আরে না, না পড়বে কেন? আমি তোমার সিটে যাবো আর তুমি আমার সিটে। এক কথায় যাকে বলে অদল-বদল।”
পৃথা হাসলো। বললো,
“ঠিক আছে।”
পৃথা খুব সাবধানে প্রিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ফাহাদ পৃথার জায়গায় এসে বসলো। প্রিয়া ঘুমের ঘোরে মাথাটা ফাহাদের কাঁধে রাখলো। ফাহাদ মুচকি হাসলো। মনে মনে বললো,
“সারাজীবন যদি এভাবেই পাশে পাই তোমায়, তাহলে এই দুনিয়ার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছু নেই।”
প্রিয়া শুধু ফাহাদের কাঁধে মাথাই রাখলো না বরং ফাহাদের বাম হাতটা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলো যেমনটা পৃথাকে ধরেছিলো। ফাহাদ ফিসফিসিয়ে বললো,
“তোমার কোলবালিশটা অনেক লাকি। কবে যে কোলবালিশের জায়গায় আমি থাকবো।”
বলেই হাসলো ফাহাদ। প্রিয়া তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ফাহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর গ্যালারিতে গিয়ে ছবিগুলো দেখছে আর বলছে,
“ইশ! কি লাগছে। মনে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী হানিমুনে যাচ্ছি।”
ছবিগুলোর ওপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ফাহাদ। ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাস্তবে তো তোমায় এভাবে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার এখনো পাইনি তাই ছবিতেই দিলাম। যখন অধিকার পাবো তখন চুমু দিতে দিতেই বিরক্ত করে ফেলবো তোমায়।”
ওদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। গাড়ি পৌঁছানোর আগেই ফাহাদ ওখান থেকে সরে গিয়ে পৃথাকে বসিয়ে দেয় আবার। প্রিয়া ঘুম থেকে উঠেই আড়মোড়া ভাঙ্গে। পৃথার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। উত্তরে পৃথাও হাসে। পাশের সিট থেকেই ফাহাদ সেটা খেয়াল করে। নিজের সিট ছেড়ে ওদের সিটের সামনে এসে পৃথাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“বুঝলে পৃথা তোমার,আমার ডায়াবেটিস হতে বেশি সময় লাগবে না।”
ফাহাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না পৃথা আর প্রিয়া। উৎসুক দৃষ্টিতে দুজনই ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“কি বুঝলে না?”
পৃথা বললো,
“না।”
“সকাল সকাল তোমার ফ্রেন্ড যেই মিষ্টি হাসি দিলো তাতে তোমার ডায়াবেটিস না হলেও আমার হয়ে যাবে।”
পৃথা এবার হা হা করে হেসে দিলো। প্রিয়া লজ্জা পেলেও সেটা প্রকাশ না করে চুপ করে রইলো। ফাহাদ আবার বললো,
“জানো পৃথা এমন মিষ্টি হাসি দেখলে কি করতে ইচ্ছে করে?”
“কি?”
“ইচ্ছে করে তোমার বান্ধবীকে টুপ করে মিষ্টির মত খেয়ে ফেলি।”
এবার পৃথা একটু লজ্জা পেলো। প্রিয়া চোখমুখ কুঁচকে বললো,
“নির্লজ্জ!”
ফাহাদ আবারও ডান হাত বুকের বাম পাশে রেখে বললো,
“দেখেছো পৃথা দেখেছো তোমার বান্ধবী কিভাবে আমাকে তার প্রেমে ফেলে? এভাবে নির্লজ্জ বললে যে আমি প্রেমে পড়ে যাবো সেটা জেনেও বারবার বলে। কেন বলে সেটা আমি বুঝিনা ভেবেছো?”
প্রিয়া উত্তর দিলো,
“আপনি কচু বুঝেন। আর আপনি সবসময় এমন মজা করেন কেন বলেন তো?”
“বারে! আমি কখন মজা করলাম?”
“কখন না করেন? বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি রাগের বদলে এখন কেমন কেমন জানি করেন।”
ফাহাদ চোখ দুইটা বড় বড় করে বললো,
“ছিঃ ছিঃ কি বলো এসব! প্লিজ এসব বলো না। আমার হবু বউ জানলে আমায় খুন করে ফেলবে।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“আমি কি কিছু বলেছি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“কিছু বলতে চাও বুঝি?”
“মোটেও না।”
“আরে বলো, বলো। আমি কিছু মনে করবো না। আমরা আমরাই তো!”
“আমরা আমরাই কি হ্যাঁ? আপনি আমার বস আর আমি আপনার কর্মচারী। অনেক তফাৎ আমাদের মধ্যে।”
“ওহ আচ্ছা। তার মানে তুমি এই সম্পর্ককে নতুন রূপ দিতে চাইছো?”
“এমন কখন বললাম আমি?”
“ওমা বলতে হবে কেন? আমি কি বুঝিনা? তাছাড়া মেয়েদের যে বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না সেটা তো আমি জানিই।”
“আপনি একটু বেশিই জানেন।”
“কম জানলে বউকে কব্জা করবো কিভাবে?”
“সেটা আমি কি জানি।”
“তুমি জানো না বলছো?”
“না, জানিনা।”
“কেন জানোনা?”
“উফফ! বড্ড বেশি প্রশ্ন করেন আপনি। এভাবে জ্বালাচ্ছেন কেন বলেন তো?”
“বউকে না জ্বালালে কাকে জ্বালাবো?”
“কিহ্?”
“না মানে, বউকে কিভাবে জ্বালাবো সেটার প্র্যাকটিস করছি আরকি!”
“পাগল।”
“সে তো তোমারই জন্য আমার পরী।”
“মানে কি?”
“কথায় কথায় এত মানে কি মানে কি করো কেন হ্যাঁ? তোমায় বলেছি ভেবেছো? তোমায় কেন বলবো? আমি তো আমার পরীর জন্য পাগল।”
“আমি কখন বললাম আপনি আমার জন্য পাগল?”
“তুমি বললেই হবো নাকি। তুমি আমায় পাবে আমার মন পাবেনা বুঝছো! আমার মন তো পরী সেদিনই নিয়ে নিয়েছে।”
“উফফ! আল্লাহ্ বাঁচাও আমায়।”
“আমায় তোমার করে নাও বেঁচে যাবে।”
“এই আপনার সমস্যা কি বলেন তো? ভালোটালো বাসেন নাকি? এমন কিছু হলে খবরদার বলে দিচ্ছি, একদম এসব ভাববেন না।”
“হুম বাসিতো! আমার পরীকে ভালোবাসি। তুমি না সেদিন বললে, দূর থেকে কোনো মেয়েকে ফলো করলে নাকি মেয়েটা বুঝতে পারে যে কোনো ছেলে তাকে ফলো করছে। তাহলে এত কাছ থেকে দেখে তোমার কি মনে হয় আমায়?”
“আমার মনে হয় আপনি একটা উন্মাদ, পাগল। আর আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।”
বলেই প্রিয়া বাস থেকে নেমে যায়। ফাহাদ মুচকি হেসো বলে,
“এই পাগলের ট্রিটমেন্ট করতে পারলে একমাত্র তুমিই পারবে প্রিয়া।”
পৃথা বললো,
“স্যার বেশি সময় না নিয়ে এবার তো ভালোবাসার কথাটা ওকে জানিয়ে দেন। নয়তো দেখবেন অন্য কারো হয়ে যাবে।”
“চুপ! প্রিয়া শুধু আমার। আমার ভালোবাসা। ভালোবাসার কথা বলবো তো অবশ্যই। আগে ইশারায় তো বুঝাই, দেখি ম্যামের কি রিয়াকশন।”
“যদি রিজেক্ট করে দেয়?”
“তাহলে আঠার মত লেগে থাকবো। ওকে আমি ছাড়ছি না। তাছাড়া আমি কি রিজেক্ট করার মত ছেলে?”
“তা নয়। কিন্তু ও যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে?”
“প্রিয়া অন্য কাউকে ভালোবাসে না।”
“কি করে জানলেন?”
“কাউকে ভালোবাসলে অবশ্যই তোমায় বলতো। আর তুমিও আমায় জানাতে।”
“এমনও তো হতে পারে প্রিয়া কাউকে ভালোবাসে কিন্তু আমায় বলেনি। বা আমায় বলেছে ঠিকই কিন্তু আমি আপনাকে বলিনি।”
“দুটোর একটাও না।”
“কেন এমন মনে হলো?”
“তুমি কাউকে ভালোবাসো?”
“হ্যাঁ।”
“প্রিয়া জানে?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি জানিয়েছো তাই না?”
“হুম।”
“কেন বলেছো?”
“কারণ ও আমায় সব শেয়ার করে। আর আমিও করি। তাছাড়া খুব ভালোবাসি ওকে। প্রিয়াও ভালোবাসে আমায়। বেষ্টফ্রেন্ডের থেকে কোনো অংশে কম নই আমরা।”
“আশা করি তোমার প্রথম কথার উত্তর তুমি পেয়ে গিয়েছো। আর দ্বিতীয়ত তুমি আমায় নাই বলতে পারো তাই না? যদি প্রিয়া অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে আর সেটা তুমি জানতে তাহলে তুমি কি চাইতে না প্রিয়া তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে সুখী হোক?”
“অবশ্যই।”
ফাহাদ হাসলো। বললো,
“তাহলে যেদিন আমি তোমার সাহায্য চাইলাম সেদিনই তুমি জানিয়ে দিতে প্রিয়া কাউকে ভালোবাসে। আশা করি এবার দ্বিতীয় উত্তরও পেয়ে গিয়েছো।”
“কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।”
“একটা কথা জানো পৃথা, কাউকে ভালোবাসার আগে তাকে বিশ্বাস করতে হয়। জানতে হয়, বুঝতে হয়। আর আমি সেটাই আগে রপ্ত করেছি।”
“আপনি সত্যিই অসাধারণ স্যার। আমি দোয়া করি আপনি আপনার ভালোবাসাকে পান আর প্রিয়া পাক সত্যিকারের একজন ভালোবাসার মানুষ।”
.
.
মিটিং শেষ করে বসে আছে মৃন্ময়। কাঁচ ভেদ করে বাহিরের পরিষ্কার আকাশ দেখছে চুপচাপ। দুইজন দুইপ্রান্তে। কিন্তু মনটা এখনো বাংলাদেশেই। ফোনের ওয়ালপেপারে প্রিয়ার ছবি দেখছিলো। অনেকদিন ফেসবুকে যাওয়া হয়না মৃন্ময়ের। তাই একটু ফেসবুকে গেলো। ম্যাসেঞ্জারে টুংটাং আওয়াজে রিমির ম্যাসেজ ভেসে আসলো। ম্যাসেজগুলো এমন,
“কোথায় তুমি মৃন্ময়?
তোমাকে অনেক মিস করি। প্লিজ ফিরে আসো জান।
তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না?
তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।”
আরো অনেক অনেক ম্যাসেজ। মৃন্ময় ম্যাসেজগুলো দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এরপর ডাটা অফ করে অনলাইন থেকে বেড়িয়ে গেলো।
পরেরদিন অফিসে যেতেই প্রিয়ার ডাক পড়লো ফাহাদের রুমে। বিরক্ত লাগা সত্ত্বেও প্রিয়া গেলো। হাজার হোক বস বলে কথা! যাওয়ার পথে প্রিয়ার মেয়ে কলিগরা পথ আঁটকে ধরে। ওরা সবাই ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কি মামা কি চলে?”
“কি চলে মানে?”
“সেটাই তো বলি কি চলে? তলে তলে টেম্পু চালাও?”
“কি আজগুবি কথা বলছিস তোরা?”
“ইশ! এখন এগুলো আজগুবি কথা তাই না? ঘনঘন এত স্যারের রুমে কি হুম?”
“মানে কি? স্যার আমায় কাজের জন্য ডাকে। সে আমার বস সেটা মনে হয় তোরা ভুলে যাচ্ছিস।”
ফাহাদের ওপর সবেচেয়ে বেশি ক্রাশিত প্রিয়ার যেই কলিগ, হিমি বললো,
“কি কপাল রে ভাই তোর! তুই স্যারকে দেখতে পারিস না আর স্যার তোকেই সবসময় ডেকে পাঠায়। আমাকে তো স্যারের চোখেই পড়েনা।”
বলেই ন্যাকা ন্যাকা স্বরে নাক টানা শুরু করে হিমি। আরেক কলিগ বলে ওঠে,
“তোর ন্যাকামি বন্ধ করতো! আমার দিকেই তো তাকায় না। তুই আর এমনকি?”
এক কথায় দুই কথায় ওদের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগে যায়। প্রিয়া শুধু চুপচাপ কাণ্ডকারখানা দেখছে।
ঐদিকে এতক্ষণেও প্রিয়া আসছেনা দেখে ফাহাদই আসে। আর এসে দেখে এখানে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে। ফাহাদ ধমক দিয়ে বলে,
“কি হচ্ছে এখানে? এটা অফিস নাকি মাছের বাজার? কারো কাজের দিকে কোনো মন নেই।”
ধমক খেয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়। প্রিয়া একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আরে স্যার আপনি ওদের বকছেন কেন? ওরা তো আপনাকে নি….”
পুরো কথা বলতে পারলো না প্রিয়া। তার আগেই হিমি প্রিয়ার মুখ চেপে ধরলো। জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বললো,
“স্যরি স্যরি স্যার। আসলে আমরা একটা বিষয় নিয়ে ডিসকাস করছিলাম।”
প্রিয়া জোর করে হিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। দম নিয়ে বললো,
“সত্যিটা বলতে দিচ্ছিস না কেন? তারও তো জানা দরকার তোরা যে স্যারকে পছন্দ করিস।”
হিমি কান চুলকে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আরে বাপ! তোর মুখটা বন্ধ কর। নয়তো চাকরীই চলে যাবে আমাদের।”
ফাহাদ আবারও ধমক দিয়ে বললো,
“এইসব ফিসফিসানি বাদ দিয়ে যে যার কাজে যান। আর প্রিয়া, তোমাকে না আমি ডেকেছিলাম?”
“জ্বী স্যার আসছি।”
সবাই যে যার কাজে লেগে পড়লো। ফাহাদ চলে গেলো। পিছু পিছু প্রিয়াও যাচ্ছে। ফাহাদ চেয়ারে বসে বললো,
“তুমি কি আমার বউ?”
“মানে?”
“সোজা বাংলা ভাষায় বললাম তাও বুঝোনি? বলেছি তুমি কি আমার বউ?”
“আমি আপনার বউ হতে যাবো কেন আজব!”
“তাহলে সুরসুর করে যে আমার পিছু পিছু চলে এলে? স্যারের রুমে ঢুকতে হলে যে পারমিশন লাগে জানো না? তবে বউ হলে আলাদা বিষয়।”
প্রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফাহাদ চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও!”
এটা বলেই প্রিয়ার সামনে গিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“আমার বউ হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”
প্রিয়া দুই হাত দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এহ্! আপনার বউ হবো আমি? এটা স্বপ্নেও ভাবিনা আমি।”
“অফিসের কতশত মেয়ে আমার জন্য পাগল। ইভেন বাহিরেও কত মেয়ের ক্রাশ আমি। আর তুমি আমায় ইগনোর করো?”
“এটাই তো স্যার। সমস্যাটা তো এখানে। পাগলই তো পাগলের জন্য পাগল হবে। স্যরি কথাটা হবে, পাগলীই তো পাগলের জন্য পাগল হবে। আপনি এক পাগল আর যারা আপনাকে পছন্দ করে, ক্রাশ খায় ওরা হচ্ছে আরেক পাগল। পাগল আর পাগলী একদম পার্ফেক্ট জুটি। আমি তো বাবা কোনো পাগল টাগল নইযে আপনার উপর ক্রাশ খাবো।”
“আমি চাইও না তুমি আমার ওপর ক্রাশ খাও।”
“কেন?”
ফাহাদ ঠোঁট কামড়ে বললো,
“আমি চাই তুমি আমায় ভালোবাসো।”
“আপনি যে এতটা নির্লজ্জ সবাই কি সেটা জানে? অবশ্য জানবে কি করে? সবার সামনে তো আপনি একদম রাগী বস। কিন্তু আপনার এই আসল চেহারার কথা তো সবাই জানেনা।”
“তাহলেই বুঝো তুমি কত স্পেশাল। দেখো, আমি শুধু তোমার কাছেই নির্লজ্জ। অন্য কোনো মেয়ের কাছে না। এর মানে কি? এর মানে হলো তোমার ইম্পোর্ট্যান্সই আমার কাছে সব। অন্য কোনো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাছাড়া বউয়ের কাছে নির্লজ্জ হবো না তো কি বাহিরের কারো কাছে নির্লজ্জ হবো নাকি? আমি হবো আমার বউয়ের পার্ফেক্ট স্বামী। যাতে সে গর্ব করে সবার সামনে বলতে পারে আমি তার ভালোবাসা।”
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তাই চুপ করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“কি হলো? এমন ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছো যে? কিছু বলো?”
“আপনি আর কলাগাছ একই কথা। বলে লাভ নাই।”
“আমার প্রচুর প্রচুর প্রচুর লাভ আছে। যা শুধু আমার পরীকে দিবো। লাগবে তোমার?”
“মানে?”
“আরে এটাই বুঝলে না? তুমি দেখছি ইংরেজিতে প্রচুর কাঁচা। লাভ মানে হচ্ছে ভালোবাসা। আমার কাছে অনেক ভালোবাসা আছে। নিবে তুমি?”
“আমি কি এই লাভের কথা বলেছি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“সব কথা বলেনা হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।”
প্রিয়া চোখমুখ খিঁচে বললো,
“কেন ডেকেছেন সেটা বলেন। আমার কাজ আছে।”
“আরিব্বাস! অফিসের বসকেই তুমি কাজ দেখাচ্ছো? অবশ্য হবু স্বামীর অফিসের লাভ-লোকসানের কথা বউই তো ভাববে। তুমি কত লক্ষী গো! কিন্তু এখন তোমার কাজ করতে হবেনা, আমার সামনে বসে থাকো।”
“উফফ! আপনি যে এরকম আমি ভাবতেই পারিনি। প্রথম প্রথম তো খুব বকতেন, রাগ দেখাতেন সেটাই তো ভালো ছিল। হঠাৎ করে কি হলো আপনার? এমন রোমান্টিক হয়ে গেলেন কেন?”
“কি করবো বলো? তাকে ঐদিন দেখেই যে আমি ফিদা হয়ে গেলাম। আমার উষ্ণ ভালোবাসাগুলো বারবার বলছে পরীর কাছে যাবো পরীর কাছে যাবো।”
“তো নিয়ে যান না পরীর কাছে। আমায় জ্বালাচ্ছেন কেন?”
“তুমি ছাড়া পরীকে আমার হাতে কেই বা তুলে দিবে?”
“কেন? আমি দিবো কেন? তাছাড়া আমি তো চিনিই না তাকে।”
“দেখবে তাকে?”
“কই দেখি।”
“দাঁড়াও।”
ফাহাদ ফোনটা বের করে সামনে ধরলো। ফোনের ওয়ালপেপারে প্রিয়া আর ফাহাদের ছবি। প্রিয়া ফাহাদের এক হাত পেঁচিয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। প্রিয়া চোখ দুইটা বড় বড় করে বললো,
“আরে….”
পুরো কথা বলার আগেই ফাহাদ বললো,
“এই এই এখন আবার বলো না এটা তোমার ছবি। এটা হচ্ছে আমার পরীর ছবি। আমার সাদা পরী।”
বলেই ফাহাদ ছবিটাতে চুমু খেলো।
প্রিয়া রাগি রাগি গলায় বললো,
“এটা তো আমারই ছবি। এই ছবিটা আপনি কখন তুললেন? আমি তো পৃথার সাথে ছিলাম।”
“এই ছবিটা তোমার বলছো?”
“অবশ্যই।”
“তুমি শিওর?”
“১০০% শিওর আমি।”
“তার মানে তুমি স্বীকার করছো তুমি আমার বউপরী?”
“আশ্চর্য! এটা আমি একবারের জন্যও বলিনি।”
“বলোনি কিন্তু বুঝিয়েছো।”
“কিভাবে?”
“আমি বলেছি এই ছবিটা আমার বউয়ের। আর তুমি বলতেছো ছবিটা তোমার। তাহলে এর ফলাফল কি দাঁড়ায়? তুমি আমার বউ?”
প্রিয়া হাত দুইটা মুঠোবন্দি করে ফাহাদের দিকে তেড়ে যায়। ফাহাদ প্রিয়ার হাত দুইটা পেছনে নিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে রাখে। অন্য হাত দিয়ে প্রিয়ার চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখে। প্রিয়া নিজেকে ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ফাহাদের শক্তির কাছে প্রিয়ার এই জোড়াজুড়ি কিছুই না। ফাহাদ প্রিয়ার চোখ দুইটা ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের পাতায় হাত বুলাতে বুলাতে ফাহাদ বললো,
“এই কাজল কালো চোখের প্রেমে হাজার বার মরতেও রাজি আছি আমি।”
প্রিয়া এবার জোরে ফাহাদের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো ফাহাদের মধ্যে এর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে আছে। একসময় প্রিয়া ফাহাদের হাত ছেড়ে দিলো। হাতে দাঁতের দাগ বসে গেছে। ফাহাদ চোখ খুলতেই দেখলো চোখ লাল হয়ে আছে। টলমল করছে পানি। ফাহাদ মুচকি হেসে প্রিয়ার দুই হাত ছেড়ে দিলো। নিজের দুই হাত দিয়ে চুলগুলোকে ঠিক করে হুট করেই প্রিয়ার এক হাত ধরে টেনে ফাহাদের কাছে নিয়ে আসলো। প্রিয়া ভয়ে কুঁকড়ে যায়। এক হাত দিয়ে প্রিয়াকে ধরে অন্য হাত প্রিয়ার গালে রাখে।
“তুমি কি ভেবেছো তুমি আমায় আঘাত করবে আর আমি তোমার হাত ছেড়ে দিবো? ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাত ধরেছি? হাত যখন ধরেছি সারাজীবনের জন্যই ধরেছি। যত পারো আঘাত করো। না তোমাকে ছাড়বো আর না তোমার হাত। তুমি এতকিছু বুঝো, আর এটা বুঝো না আমি তোমাকে ভালোবাসি? শোনো, এত ঘটা করে আমি প্রপোজ করতে পারিনা। আমি শুধু জানি আমি তোমায় ভালোবাসি।”
প্রিয়া কিছু বলছেনা। শুধু ফাহাদের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার ডান হাত ফাহাদের বুকের বামপাশে। যার কারণে ফাহাদের বুকের ধুকপুকানি স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে প্রিয়া। চোখের সামনে অস্পষ্টভাবে অতীতটা ভেসে আসছে। না আর সহ্য করতে পারছেনা। যেকোনো মুহুর্তে প্রিয়া পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। গায়ে এতটুকুও শক্তিই নেই। প্রিয়া পড়ে যেতে নিতেই ফাহাদ শক্ত করে ধরে রাখে। প্রিয়ার সম্পূর্ণ ভর এখন ফাহাদের ওপর। আস্তে আস্তে চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে আসে প্রিয়ার। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“আ..আমি আমি চাই ন…..”
পুরো কথা বলার আগেই সাথে সাথে প্রিয়া ফাহাদের বুকে লুটিয়ে পড়ে।..
চলবে….