#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়ার মাথা ফাহাদের কোলে রেখে সমানে ডাকছে প্রিয়াকে। কিন্তু প্রিয়ার কোনো হুশ নেই। আলতো করে গালে চাপড় দিচ্ছে আর বলছে,
“এই প্রিয়া কি হলো তোমার? চোখ খোলো। প্রিয়া, প্রিয়া!”
চোখেমুখে পানির ছিটাও দিলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না। ভয়ে ফাহাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ফোনটা নিয়ে পৃথাকে কল দেয়,
“হ্যালো”
“হ্যাঁ স্যার বলুন।”
“দ্রুত আমার রুমে আসো।”
বলেই ফাহাদ কল কেটে দিলো। পৃথাও সাথে সাথে চলে আসলো। এই অবস্থা দেখে পৃথা বললো,
“প্রিয়ার কি হয়েছে?”
“জানিনা। হুট করেই সেন্সলেস হয়ে গেলো।”
পৃথা এবার চোখে-মুখে পানি দিলো। বেশকিছুক্ষণ পর প্রিয়ার জ্ঞান ফিরে। প্রিয়া তখনও ফাহাদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ফাহাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিবে সেই শক্তিটুকুও নেই। প্রিয়ার জ্ঞান ফিরতেই ফাহাদ অস্থির হয়ে বললো,
“এই কি হয়েছিল তোমার হঠাৎ করে? জানো কত টেনশন হচ্ছিলো!”
প্রিয়া উত্তর না দিয়ে বললো,
“বাসায় যাবো আমি।”
ফাহাদও আর কিছু বললো না। পৃথার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তুমি ওকে বাড়িতে দিয়ে আসো।”
“জ্বী স্যার।”
ফাহাদের কথামত পৃথা প্রিয়াকে নিয়ে বাড়িতে গেলো। প্রিয়ার শরীর খুব দূর্বল লাগছিল তাই পৃথা ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। দরজা খুলে দেয় প্রিয়ার মা। মা ভয় পেয়ে বললো,
“কি হয়েছে ওর? এভাবে নিয়ে আসছো কেন?”
“আন্টি শান্ত হোন। তেমন কিছু হয়নি। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল।”
পৃথার সাথে মাও প্রিয়াকে ধরে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়। মা প্রায় কান্না করে দিবে এমন ভাব। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“দিনদিন মেয়েটার ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে। একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। আল্লাহ্ জানে আমার মেয়ে কবে একটু সুখের দেখা পাবে।”
“আন্টি প্লিজ কাঁদবেন না। রেস্ট নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে।”
“কি করবো বলো মা! মা হয়ে মেয়ের এত কষ্ট আর সহ্য হয়না।”
“আমি বুঝতে পারছি আন্টি।”
কথা বলার ফাঁকে ফাহাদ পৃথাকে কল দিলো।
“হ্যালো পৃথা।”
“জ্বী স্যার বলুন।”
“বাসায় গিয়েছো?”
“হ্যাঁ।”
“প্রিয়া কোথায়?”
“শুয়ে আছে।”
“আচ্ছা ওকে রেস্ট নিতে বলো। আর বলে দিয়ো যে কয়দিন পর থেকে যেন অফিসে আসে।”
“ওকে স্যার।”
“রাখছি।”
মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে পৃথা বিদায় নিলো। আসার আগে ফাহাদের বলা কথাগুলোও বলে আসলো।
সন্ধ্যার দিকে ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। মা কফি নিয়ে এসে বললো,
“ধর কফি খা।”
“রাখো।”
“মন খারাপ?”
“না।”
“তাহলে?”
“কিছুনা।”
“কি লুকাচ্ছিস?”
“কি লুকাবো?”
“সেটা তো তুই জানিস।”
“কিছুই লুকাচ্ছি না।”
মা প্রিয়ার দুই বাহু ধরে বললো,
“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো।”
“এভাবে ফোর্স করো না। ভালো লাগেনা।”
“কি হয়েছে বল আমায়।”
“কি বলবো বলো তো? যেইসব অতীত থেকে আমি দূরে থাকতে চাই সেগুলোই আমাকে বারবার তাড়া করে।”
“আবার মৃন্ময়ের সাথে দেখা হয়েছে?”
“না।”
“তবে?”
“বস আজ আমায় ভালোবাসার কথা বলেছে।”
“কিহ্!”
“হ্যাঁ। ভালো লাগে না আর। আর কিছু জিজ্ঞেস করিয়ো না। আমি একটু একা থাকবো। যাও তুমি।”
মা আর কিছু বললো না। চলে গেলো। মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ফাহাদ ফোন দেয়। প্রিয়ার একদম ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। তবুও ফোনটা রিসিভড করলো। ওপাশ থেকে ফাহাদ বললো,
“এখন কেমন আছো?”
“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্।”
“কি হয়েছিল তোমার? হুট করে সেন্সলেস হয়ে গেলে কেন?”
“জানিনা।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
“না।”
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ। আমি পরে ফোন দিবো কেমন।”
“হুম।”
ফাহাদ ফোনটা রেখে দিলো। এই মেয়েটাকে বুঝা বড্ড কঠিন। আনমনে হাজারও কথা ভাবছিল তখন ফাহাদের মা রুমে আসে।
“কি করছিস?”
“কিছু না মা।”
“কিছু কি ভাবছিস?”
“হুম। তবে তেমন কিছুনা।”
“নিশ্চয় প্রিয়াকে নিয়ে ভাবছিস?”
ফাহাদ হাসলো।
“জানোই তো।”
“ভালোবাসার কথা জানিয়েছিস?”
“আজ তো জানালাম। কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি।”
“বলার সাথে সাথে কি হ্যাঁ বলে দিবে নাকি? লেগে থাক আঠার মত। ভালো না বেসে যাবে কোথায়?”
ফাহাদ ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমার লক্ষী মা!”
.
পরেরদিন ফাহাদ অফিসে গিয়ে প্রিয়াকে দেখতে পেলো। প্রিয়াকে দেখেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো। মনে মনে বললো,
“এতবার করে বললাম রেস্ট নিতে। তা না করে অফিসে এসে পড়েছে। কি এত কাজ মহারাণীর!”
ফাহাদের রুমে প্রিয়ার ডাক পড়লো। হিমি বললো,
“আসতে না আসতে তোর ডাক পড়ে গেছে। যা তাড়াতাড়ি, নয়তো দেখবি তোকে দেখতে না পাওয়ার পিপাসায় গলা শুকিয়েই মারা যাবে।”
“সবসময়ই শুধু আজেবাজে কথা।”
ফাহাদ প্রিয়ার রুমে গেলো।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
“ইয়েস।”
প্রিয়া ভেতরে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ হাতে একটা কলম নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর প্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছে। ফাহাদ কিছু বলছেনা দেখে প্রিয়াই বললো,
“আমায় ডেকেছিলেন?”
“কি এত কাজ তোমার অফিসে?”
“মানে?”
“আমি তোমাকে রেস্টে থাকতে বলেছিলাম না? তাহলে অফিসে কেন আসছো?”
“আমার কোনো রেস্টের প্রয়োজন নেই। আমি একদম ঠিক আছি।”
ফাহাদ টেবিলের ওপর হাত দিয়ে বাড়ি দিলো। চেয়ার ছেড়ে প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসতেই প্রিয়া দুই পা পিছিয়ে গেলো।
“স্যার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে আমি আপনার অফিসের সামান্য একজন ওয়ার্কার। আর আপনি আমার বস। হুটহাট এভাবে কাছে আসাটা মানায় না। আদারওয়াইজ আমি তো আপনার ওয়াইফ নই।”
ফাহাদ ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুঁটিয়ে বললো,
“বউ হবে বুঝি?”
প্রিয়া সিরিয়াস মুডে বললো,
“কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আর একটা কথা, আপনি আমার বস তাই আমাকে ডাকতেই পারেন তবে অবশ্যই কাজের জন্য ডাকবেন। অযথাই অকারণে ডাকবেন না প্লিজ। এতে আমার ওপর ইফেক্ট পড়ে। নানান জন নানান কথা বলে।”
এতটুকু বলেই প্রিয়া চলে যাওয়া ধরলো ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে বলল,
“তুমি কি আমায় ইগনোর করছো?”
ফাহাদের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়া বললো,
“আপনি কি ইগনোর করার মত কেউ? ইগনোর তাকেই করা যায় যার সাথে এমন কোনো রিলেশন থাকে যাতে তাকে ইগনোর করা যায়। আপনার সাথে আমার এমন কোনো রিলেশন নেই।”
প্রিয়া চলে গেলো। হ্যাঁ ফাহাদকে ইগনোর করা শুরু হয় এখান থেকেই। বেশি কিছু ঘটার আগে এখন থেকেই সবকিছু এমনকি ফাহাদকে এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যান্য অফিসে জবের এপ্লাইও করেছে অলরেডি। জব হলেই এখান থেকে, ফাহাদের জীবন থেকে সরে যাবে প্রিয়া। মিছেমিছি ভালোবাসা নামক কোনো বন্ধনো আটকাতে চায় না প্রিয়া।
এভাবে প্রতিনিয়তই প্রিয়া ফাহাদকে এড়িয়ে চলছে। ফাহাদ যতই প্রিয়ার কাছে যেতে চাইছে, প্রিয়া ততই দূরত্ব বজায় রাখছে। ফাহাদও মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেয়, “যত পারো ইগনোর করো। আমিও পিছু ছাড়বো না। দেখবো তোমার ইগনোর করার ধৈর্য কত আর আমার ভালোবাসার ধৈর্য কত!”
.
.
অফিস থেকে বাড়ি এতটুকুতেই প্রিয়া নিজেকে আটকে রেখেছে। কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কথা বলছেনা। অনেক জোড়াজুড়ির পর পৃথার সাথে শপিং-এ যেতে রাজি হয় প্রিয়া। পৃথা শপিং করছে আর প্রিয়া ঘুরে ঘুরে সব দেখছে চুপচাপ। আজ ততটাও ভিড় নেই শপিংমলে। আবার এত কমও নয়। আচমকা কেউ প্রিয়ার হাত ধরে টান দেয়। প্রিয়া পেছন ঘুরে দাঁড়াতেই থমকে যায়। কি করবে বা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। প্রিয়ার সামনে মৃন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়াকে অবাক করে দিয়ে মৃন্ময় প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। যেটার জন্য প্রিয়া একদমই প্রস্তুত ছিলো না। প্রিয়া এক প্রকার জোর করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে অনেকেই উৎসুক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে মৃন্ময়কে কিছু বলা মানেই সিনক্রিয়েট করা। আর একটু চেঁচামেচি হলেই মৃন্ময়ের আস্ত বাড়িতে ফেরা লাগবেনা যেটা প্রিয়া একদমই চাচ্ছিলো না। তাই বেশি কিছু না বলে শুধু বললো,
“আপনি লেকে যান আমি আসছি।”
“না, না একদম না। আবার আমার থেকে লুকিয়ে যাওয়ার জন্য? এটা একদম হবেনা। গেলে আমার সাথেই যেতে হবে।”
প্রিয়া উপায় না দেখে পৃথাকে নিয়ে মৃন্ময়ের গাড়িতে করে লেকে গেলো। প্রিয়া আর মৃন্ময়ের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে পৃথা। প্রিয়া কিছু বলার আগেই মৃন্ময় বললো,
“জানো তোমাকে কত কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছি। সেদিন কেন আমার থেকে পালিয়ে গেলে? আমার ওপর রাগ করে? আমি জানি, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
বলতে বলতেই মৃন্ময় প্রিয়ার পা পেঁচিয়ে ধরে। প্রিয়া মৃন্ময়কে ধরে দাঁড় করায়। না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। উহু যেকোনো হাসি নয় এটা। এটা তাচ্ছিল্যর হাসি।
“ভাগ্য মানুষকে কোথায় এনে দাঁড় করায় তাই না? যেদিন আপনি আমাকে ছেড়ে যান সেদিনও ঠিক একইভাবে আমার পা ধরে মাফ চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্থক্য এটাই যে, সেদিন মাফ চেয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। আর আজ মাফ চাইছেন ফিরে আসার জন্য।”
“আই এম স্যরি প্রিয়া।”
“আমাকে আপনার কি মনে হয় বলেন তো? পুতুল? যেভাবে নাচাবেন সেভাবেই নাচবো?”
“না প্রিয়া। আমি কি করতাম বলো? রিমির কান্নাকাটি আমি তখন সহ্য করতে পারিনি। তাই আবেগে পড়ে ভুলটা করে ফেলেছি।”
“আপনার এই ভুলটা যে আমার জীবনটা তছনছ করার জন্য যথেষ্ট ছিল সেটা কি আপনি জানেন? সে যাই হোক, নিজের ভালোবাসার কাছে গিয়েছেন ভালো কথা। এখন কেন এমন হন্যে হয়ে খুঁজছেন আমায়?”
“আমি আমার ভু্লটা বুঝতে পেরেছি। আমি তোমায় ভালোবাসি।”
“হাহ্! হাসালেন। আপনি কি ভালোবাসা কি সত্যিই জানেন? তখন আপনার মনে হয়েছিল রিমিকে ঠকাতে পারবেন না আর এখন বলছেন আমায় ভালোবাসেন? আপনি যদি তখন একটাবার সময় নিয়ে ভাবতেন তাহলে হয়তো এইদিনটা আমাদের দেখতে হতো না। রিমির সাথে যখন আপনার ব্রেকাপ হয় তখনও একবার উচিত ছিল নিজের একটু সময় নেওয়া এবং রিমিকে সময় দেওয়া। এরপর বিয়ের ব্যাপারে আগানো উচিত ছিল। কিন্তু আপনি সেটা করেননি। এমনকি আমায় দেখার পরও আপনি আমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন। পরমুহূর্তে রিমি ফিরে আসায়,সেটা আবার ভ্যানিশ হয়ে যায়। রিমি যখন ব্যাক করলো, তখন যদি ঠান্ডা মাথায় ভাবতেন। একবার আমায় জানাতেন তাহলেও হতো। কিন্তু আপনি এমন কিছুই করেননি। সবকিছু আপনি এলোমেলো করে দিয়েছেন।”
“আমার মাফ চাওয়ার মুখ নেই। তবুও বলবো একটাবার মাফ করো। ভুল তো মানুষই করে। ভালোবেসে না হয় ভুলটা মাফ করে দাও।”
“সেই ভুলের ক্ষমা হয় যেটা অনিচ্ছাকৃত হয়। ইচ্ছাকৃত ভুলের কোনো মাফ হয়না। সেদিন আপনার অনেক কিছু করার ছিল কিন্তু আপনি কিচ্ছু করেননি। নিজ স্বার্থে আমায় ঠকিয়ে গিয়েছেন।”
“আমি জানি তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো।”
“আপনি ভুল জানেন। আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসিনি।”
“তাহলে বিয়ের ব্যাপারে?”
“হ্যাঁ বিয়ের ব্যাপারে এগিয়েছিলাম। যেকোনো সম্পর্ক গড়ার আগে সবচেয়ে বেশি কোন জিনিসটা দরকার জানেন? বিশ্বাস! আমি তো কাউকে বিশ্বাসই করিনা। কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। আপনি আমার চোখে আঙ্গু্ল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আপনি আমার বিশ্বাসের যোগ্য নন। সেখানে ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা।”
“প্রিয়া প্লিজ….”
“কোনো কিছু বলেই কোনো লাভ হবেনা। জানিনা আপনার সাথে আবার রিমির কি হয়েছে। তবুও বলছি যাই হোক মিটিয়ে নিন। জানেন তো,একটা কাঁচের বা মাটির জিনিস ভেঙ্গে গেলে সেটা কখনো জোড়া লাগেনা। আর যদিও জোড়া লাগে তাহলে সেটার গায়ে দাগ থেকে যায়। আপনার আর রিমির ব্রেকাপের পর একটা দূরত্ব এসে গেছে মাঝখানে যে কারণে ভাঙ্গা কাঁচ বা মাটির বস্তুর গায়ের দাগের ন্যায় আপনাদের কারো না কারো অনীহা এসে পড়েছে। আবেগের বশে আর কোনো ভুল না করে ঠান্ডা মাথায় এবার ভাবেন। সময় নিন। আমি মনে করি রিমির সাথেই আপনার জীবন জড়ানো উচিত। আশা করি কারণটাও আপনি জানেন। আর হ্যাঁ, আপনার আর আমার সম্পর্ক কখনোই আর হওয়া সম্ভব নয়। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। তাই দয়া করে আমায় আর বিরক্ত করবেন না। ভালো থাকবেন।”
প্রিয়া আর কিছু বললো না। পৃথাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে আসে। মৃন্ময়ের চোখে পানি টলমল করছিলো। যেকোনো মুহুর্তেই পানিগুলো উপচে পড়বে। মৃন্ময় এখন উপলব্ধি করতে পারছে, সেদিন অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে যার ফলস্বরূপ প্রিয়াকে হারাতে হলো। না পাওয়ার কষ্ট দারুণ কিন্তু পেয়েও হারানোর কষ্ট নিদারুণ। যেটা সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই থাকে।
প্রিয়া কাউকে ভালোবাসেনা। কেন জানি মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেছে। তবে ভালোই হয়েছে। মৃন্ময় অন্তত নিজের মনকে এটা বলে বোঝাতে পারবে যে, প্রিয়া এখন অন্য কারো। কিছু কিছু ভালোলাগা, ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। যখন মানুষটি জীবনে থাকে তখন তার মূল্য কেউই দিতে পারিনা। কিন্তু যখন মানুষটা দূরে সরে যায়, হারিয়ে যায় তখনই আমরা বুঝতে পারি সে কি আর কতটা ছিল আমাদের জীবনে। তখন বুকের এই শূন্য হাহারগুলো নিজেকেই বয়ে বেড়াতে হয়।
সেদিনের পরই মৃন্ময় বাংলাদেশ থেকে চলে যায় ব্যাংকক। যে দেশে ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েও নিজের দোষে হারাতে হলো সে দেশে থাকাটা বড্ড কষ্টের। তাছাড়া এখানে থাকলে বেহায়া মনটা বারবার চাইবে প্রিয়ার কাছে যেতে। যতই প্রিয়াকে দেখবে ততই কষ্ট পাবে। যদি কখনো নিজের মনকে আটকাতে পারে তবেই বাংলাদেশে ফিরে আসবে মৃন্ময়।
মৃন্ময় প্লেনে বসে নীলচে আকাশে সাদা সাদা মেঘগুলো দেখছিলো। সাথে এক বুক হাহাকার। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো….
চলবে….