#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদকে ইগনোর করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় প্রিয়া। কিন্তু তাতে এতটুকুও লাভ হচ্ছে না। ফাহাদও আঠার মত লেগেই আছে। কখনো কখনো কোনো ফাইলের সাথে লাভ লেটার পাঠাচ্ছে তো কখনো কখনো গোলাপ। অফিসের কম বেশি সবাই জানে এখন ফাহাদ প্রিয়াকে ভালোবাসে। এটা নিয়েও নানান জনের নানান মতামত। কারো কারো মতে প্রিয়া খুব বোকা। নয়তো এমন ছেলেকে কি কেউ হাতছাড়া করে? আবার কেউ কেউ এটাই ভেবে পায় না যে, এত বড়লোকের ছেলে সাধারণ ঐ মেয়ের মধ্যে এমন কি খুঁজে পেলো! এসব কথা যে প্রিয়া কিংবা ফাহাদের কানে আসেনা বিষয়টা এমন নয়। সব কথাই ওদের কানে আসে। এইসব রাগ প্রিয়া ফাহাদের ওপর ঝাড়ে। আর ফাহাদ মিষ্টি হেসে প্রতিবারই উত্তর দেয়,
“লোকের কথায় আমার কি এসে যায়? আমি তো তোমায় ভালোবাসি।”
প্রিয়া জানতো, খুব ভালো করেই জানতো ফাহাদকে বোঝানো ওর কাম্য নয়।
দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে যায় ছয়টা মাস। এই ছয়টা মাসে প্রিয়ার এত অবহেলা পেয়েও ফাহাদের ভালোবাসা একটুও কমেনি। বরং দিনকে দিন ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে বেড়েই চলেছে। মাঝে মাঝে ফাহাদ নিজেও বুঝেনা এমন কি কম আছে যে কারণে প্রিয়া আমায় ভালোবাসেনা। আর কেনোই বা ও কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। ফাহাদও চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতেই কাঁচ ভেদ করে দেখতে পেলো প্রিয়া গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে। প্রিয়াকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে প্রিয়া কথা বলতে নারাজ। কিন্তু ঐদিকে ছেলেটাও কিছুতেই সরছে না। এমনকি প্রিয়ার হাত পর্যন্ত ধরে ফেলে। ফাহাদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। এত্ত বড় সাহস ফাহাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই ফাহাদের ভালোবাসার মানুষটিকে বিরক্ত করা। ফাহাদ দ্রুত বেগে লিফ্টে ওঠে। আজ মনে হয় লিফ্টও স্লো চলছে। ফাহাদ যখন বের হলো প্রিয়া তখন ছেলেটার বাইকে বসেছে। ফাহাদ কিছুই বুঝতে পারলো না। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে ফাহাদও পিছন পিছন ফলো করে ওদের। একটা বাড়ির সামনে বাইক থামতেই ফাহাদও গাড়ি থামায়। ফাহাদ দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে যায়। ছেলেটার শার্টের কলার ধরে বলে,
“হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়ট।”
ফাহাদের চোখেমুখে রাগে আগুন ঝড়ছে মনে হচ্ছে। ঘটনায় আকস্মিকতায় ছেলেটা চমকে যায় আর সাথে প্রিয়াও। কারণ ছেলেটা আর কেউই নয়। প্রিয়ার ছোট ভাইয়া। প্রিয়া বিশ্বাসই করতে পারছেনা এটা ফাহাদ। ফাহাদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়া রাগি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে কেন? আর আপনার সাহস কি করে হয় ভাইয়ার কলার ধরার?”
এবার যেন ফাহাদ আকাশ থেকে পড়ে। কি করবে কিছুই আসছেনা মাথায়। এক পলকে শুধু প্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছেনা। কোনোমতে থতমত খেয়ে বললো,
“ক কে কে? তো..ত..তোমার ভাই?”
“হ্যাঁ আমার ভাই। কিন্তু আপনি এখানে কেন?”
ফাহাদ এবার প্রিয়ার ভাইয়ার কাছে হাত জোর করে বললো,
“প্লিজ ভাইয়া প্লিজ মাফ করে দিবেন। আমি আসলে একদম বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম কোনো ছেলে হয়তো ওকে বিরক্ত করছে। আর তাই মাথা ঠিক ছিলো না।”
ছোট ভাইয়া কিছু বলার আগেই ফাহাদ প্রিয়াকে বললো,
“তুমি তো বলোনি যে তোমার ভাইয়ারা ফিরে এসেছে? তোমার ভুলের জন্য আজ আমি কি একটা ভুল করে ফেললাম।”
“ভাইয়ার সাথে আমি যোগাযোগ করতে চাইনি। তাই ভাইয়া আজ অফিসের সামনে গিয়েছিল। তাছাড়া আমার সব কথা আপনাকে বলবো কেন? কে আপনি?”
এবার ছোট ভাইয়া বললো,
“ছেলেটা কে?”
“আমার অফিসের মালিক প্লাস বস।”
ছোট ভাইয়া মাথা চুলকে বললো,
“বস! তাহলে এত রিয়াক্টের কি হলো?”
“ভাইয়া উনি একটা সাইকো।”
ফাহাদ মুখটা কাচুমুচু করে বললো,
“শুধু শুধু ভাইয়ার সামনে আমার বদনাম করছো কেন?
ভাইয়া আপনি ওর কথা রাখেন, আগে আমায় বলেন ক্ষমা করেছেন?”
“আপনি ওর বস! আপনার দোষ, ক্ষমা দেখি কি করে!”
“আমাকে আপনি তুমি করেই বলেন। আর ওর বস শুধু আমি অফিসে বাহিরে তো….”
ফাহাদ পুরো কথা বলার আগে প্রিয়া বললো,
“বাহিরে উনি একটা সাইকো। ভেতরে চলো মা নাকি অপেক্ষা করছে?”
“আরে উনাকেও নিয়ে চল। বাড়ির সামনে এসে খালি মুখে চলে যাবে নাকি?”
“গরীবের ঘরের খাবার উনার মুখে উঠবে না।”
“সোজা কথায় বললেই পারো যে, আমি খেলে তোমাদের বাড়ির খাবার কমে যাবে। অযথাই আমার দোষ দিচ্ছো কেন?”
“আপনি প্রিয়ার কথা কানে নিয়েন না। আমার সাথে আসেন।”
“আমি না তুমি করে বলতে বললাম ভাইয়া?”
“আচ্ছা সে বলবোনি। এখন আসো।”
“না ভাইয়া। যেদিন প্রিয়া মন থেকে চাইবে সেদিনই ভেতরে যাবো। আজ আসি।”
ফাহাদ আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলো। ফাহাদের এমন রিয়াক্ট, আচরণ সবই সন্দেহজনক লাগলো ছোট ভাইয়ার। কিন্তু এখন প্রিয়াকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করা যাবেনা। এমনিতেই প্রিয়ার রাগ ভাঙ্গাতে জীবন চলে যাবে তার ওপর যদি এসব কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বোনকে চিরদিনের জন্যই হারাতে হবে।
.
.
প্রিয়াদের বাড়িতে উৎসব উৎসব একটা আমেজ এসে পড়েছে। তার কারণও আছে। বাড়িতে যে নতুন একটা পুচকু আসবে। প্রিয়ার বড় বোন লামিয়া প্রেগন্যান্ট। তাই বড়বোনকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। যদিও লামিয়ার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ প্রথমে রাজি ছিলো না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে আনতে হয়েছে। কতদিন পর বোন বাড়িতে এসেছে। কিন্তু আসলে কি হবে! দুবোনের ঠুকরাঠুকরি লেগেই থাকে। প্রিয়ার নানু, খালামনি, কাজিনরাও এসেছে। দুই ভাইয়াও মাঝে মাঝে আসে। ভাইদের ওপর প্রিয়ার চাপা রাগ থাকলেও শুধুমাত্র মায়ের কথা ভেবে তা প্রকাশ করেনা। আগের মতই কথা বলে সবার সাথে। এরমধ্যেই ঘটে যায় আরেক অঘটন।সেদিন প্রিয়া অফিসে না গিয়ে বাড়িতে বসে বসে বোনের জন্য হরেক রকম আচার বানাচ্ছে। টেষ্ট করার জন্য ছোট্ট একটা বাটিতে করে একটুখানি আচার দেয় লামিয়াকে। লামিয়া আচার খেতে খেতে বললো,
“তোর বসটা কিন্তু হেব্বি দেখতে!”
প্রিয়া অবাক হয়ে বললো,
“তুই কি করে জানলি?”
“সবাই জানে আর আমি জানবো না?”
“সবাই কি জানে?”
“ন্যাকা! এখন কিছুই বুঝো না?”
“সিরিয়াসলি বুঝতে পারছিনা তুই কি বলছিস।”
“তোর বসের সাথে তোর কি চলে?”
“কেমন ধরণের কোশ্চেন এটা?”
“কেন কমন পড়েনি? নাকি বলবি না?”
“বলার মত হলে তো বলবো।”
“তোর বস ছোট ভাইয়াকে কি বলেছে জানিস?”
“কি?”
“সে তোকে ভালোবাসে।”
“কিহ্! এই ঠোঁট পাতলার পেটে কি কিচ্ছু থাকেনা? ডিরেক্ট ভাইয়াকে বললো?”
“পেটে পেটে রাখতে চাচ্ছিস কেন? আমরা জানলে কি সমস্যা?”
“এমন কিছুই নারে আপু।”
“ছেলে তো ভালোই। রাজি হয়ে যা।”
“আপু অন্তত তুই এটা বলিস না। আমার কোনো কিছুই তো তোর অজানা নয়।”
প্রিয়া চুলা নিভিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। লামিয়া মনে মনে বড় শ্বাস নিয়ে বলে,
“আমার বোনটাকে সুখ মিলিয়ে দাও আল্লাহ্।”
প্রিয়া চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে নিজের রুমে যায়। গিয়ে যা দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণী একটা হার্টএটাক হয়ে যাবে প্রিয়ার। এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি প্রিয়া বুঝতেই পারছেনা। হা করে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ পান ছেঁচে দিচ্ছে ওর নানীকে। সাথে রাজ্যের সব গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে। ফাহাদ একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। এমন একটা ভাব যেন প্রিয়াকে চিনেই না। ফাহাদের কথা শুনে নানী কখনো কখনো আবেগে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া কোমড়ে দুই হাত গুঁজে বললো,
“আপনি আমার বাড়িতে কেন? তাও আবার রুমে?”
ফাহাদ না চেনার ভান করে বললো,
“স্যরি? আমাকে বলছেন?”
“একদম ঢং করবেন না বলে দিলাম।”
“নানী কে এই মেয়ে? বউয়ের মত করে কেন কথা বলছে?”
নানী বললো,
“তুই ওকে চিনিস না? খুব ভালো রে ছেলেটা। ছোট নানুভাইর সাথে এসেছে। দেখেছিস কত আদর-যত্ন করছে আমার? ছেলেটার নানী নেই। নানীর ভালোবাসা কি জানেই না।”
বলেই নানী শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো। সাথে ফাহাদও কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“নানী তুমি প্লিজ মন খারাপ করো না। আমার এক নানী নেই তো কি হয়েছে? এইতো তুমি আছো আমার।”
দুইজনের কথাবার্তা শুনে প্রিয়া ঢের বুঝতে পারছে যে ফাহাদ খুব ভালো করে মালমসলা মাখিয়েছে। কি জিনিস রে বাবা! প্রিয়া নানীর কাছে গিয়ে বললো,
“ছোট ভাইয়া তাকে নিয়ে আসলো আর তুমি একজন অপরিচিত লোককে সোজা আমার রুমে নিয়ে আসলে?”
“এভাবে কেন বলছিস তুই? ছেলেটা কি চোর-ছেচ্চড় নাকি ডাকাত যে তোর ঘরের সব লুট করে নিয়ে যাবে। ওমন হলে ছোট নানুভাই কখনোই বাড়িতে আনতো না বুঝলি।”
“তা নয় নানু! ইনি আমার অফিসের বস।”
“কি? ফাহাদ তোর বস?”
“হ্যাঁ নানু হ্যাঁ।”
“তাহলে তোর তো আরো বেশি খাতির-যত্ন করা উচিত। যা যা তাড়াতাড়ি কিছু বানিয়ে আন।”
নানীর কথা শুনে প্রিয়ার ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। কিন্তু প্রিয়া এটাই বুঝতে পারছেনা যে ছোট ভাইয়াকে এমন কি যাদু করলো বস! প্রিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
“আমি পারবোনা।”
“তুই তো দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস রে।”
“থাক নানী ওকে কিছু বলো না। ছোট মানুষ তো বুঝেনা।”
প্রিয়ার একদম পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো। ছোট মানুষ বলা হচ্ছে এখন।
“তুমি বসো ফাহাদ। আমি ওর মাকে বলে আসি কিছু দেওয়ার জন্য।”
ফাহাদ নানীকে আটকায়নি। তার কারণ এটা নয় যে ফাহাদের ক্ষুধা লেগেছে। নানী গেলেই প্রিয়াকে একটু একা পাবে ভেবেই ফাহাদ চুপচাপ বসে থাকে। নানী চলে যেতেই ফাহাদ খপ করে প্রিয়ার হাত ধরে ফেলে। প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“এটা কেমন অসভ্যতা? আমার বাড়িতে এসে আমার রুমে বসেই হাত ধরছেন?”
“আমি কি তোমার হাত ধরেছি নাকি? আমি তো আমার বউয়ের হাত ধরেছি।”
“ঐ কে আপনার বউ হ্যাঁ?”
“কেন তুমি!”
“স্বপ্নই দেখে যান সারাজীবন।”
“হুম দেখিতো। তোমাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন দেখি। একদিন ইনশাআল্লাহ স্বপ্ন পূরণও করবো।”
“আপনি আমার বাড়িতে ঢুকলেন কি করে?”
“তোমার ভাইয়াকে হাত করে। এই শুনো তুমি আমায় কি ভাবো? তোমাকে পাওয়ার জন্য শুধু তোমার পিছনে ঘুরঘুর করে যাবো? অত বোকাও নই আমি। আর তাই তো তোমার পরিবারকে আগে হাত করেছি। সবাই রাজি। এখন শুধু বিয়ের আয়োজনটাই বাকি।”
প্রিয়ার মাথা রাগে যেন ফেঁটে পড়ছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
“এত্ত বড় সাহস ওদের! আমার মতামত ছাড়াই বিয়ে ঠিক করে? কার এত্ত বড় সাহস। কে দিয়েছে এই পারমিশন। তাকে তো আজ আমি দেখেই নিবো।”
ফাহাদ পেছন থেকে শক্ত করে প্রিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে। প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
“শান্ত হও! এত অল্পতেই রেগে যাচ্ছো? কেউ রাজি হয়নি তোমার বাড়ির। সবাই বলেছে তুমি রাজি হলেই বাড়ির সকলে রাজি হবে। আদারওয়াইজ তারা তোমাকে কোনো প্রেশার দিবেনা বা ফোর্স করবে না। আমার ধৈর্যও এত কম নয়। তুমি যেদিন আমায় ভালোবাসবে সেদিনই আমরা বিয়ের ব্যাপারে আগাবো। তার আগে নয়। তবে আমি তোমার পিছুও ছাড়ছিনা। যতবার ফিরিয়ে দিবে ততবারই বলবো ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।”
.
.
আজ পৃথার জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন। যাকে ভালোবাসে তার সাথেই আজ বিয়ে হবে পৃথার। প্রিয়া আজ সোনালি পাড়ের লাল জর্জেট একটা শাড়ি পড়েছে। তার সাথে মিলিয়ে হালকা মেকাপ। প্রিয়ার একদম ইচ্ছে ছিলো না এভাবে সাজার। বড় বোনের জোড়াজুড়িতে এভাবে সাজতে বাধ্য হয়েছে। পৃথার বিয়ের কারণে একদিকে প্রিয়া খুশি হলেও আবার মনও খারাপ হয়ে যায়। কারণ আজকের পর থেকেই পৃথা সম্পূর্ণ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। অফিসে গিয়েই কারো সাথে আর গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসা হবেনা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্যান্টিনে বসে কফির আড্ডা দেওয়া হবেনা। ভাবতেই প্রিয়ার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। পাশ থেকেই ফাহাদ এসে বলে,
“মন খারাপ?”
“না।”
“মিথ্যা বলছো কেন? আমি তো স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমার মন খারাপ।”
প্রিয়া মনে মনে বললো,
“এই লোকটা কি মন পড়তে পারে নাকি?”
প্রিয়াকে চুপ থাকতে দেখে ফাহাদ আবার বললো,
“পৃথার সাথে দেখা করেছো?”
“না।”
“কেন?”
“ওকে দেখলেই আমার কষ্ট লাগবে।”
“তাই বলে দেখবে না নাকি? পৃথা কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। চলো।”
ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে উপরের রুমে নিয়ে যায়। প্রিয়া কিছুই বললো না। মনটা যে আজ বেশিই বিষণ্ণ। একটা রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো প্রিয়াকে নিয়ে। প্রিয়া ওখান থেকেই দেখলো, পৃথাকে কি অপরূপ সুন্দর লাগছে। শ্যাম বর্ণের এই মেয়েটি প্রচুর মায়াবী। ইচ্ছে করছে গালে চুমু দিয়ে বলতে সারাজীবন সুখে থাক আমার মায়াবী। পরক্ষণেই খেয়াল করলো প্রতিদিনের তুলনায় পৃথা আজ অনেক বেশিই খুশি। চোখেমুখে হাসির ঝলক। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দটাই হয়তো অনেক। কিজানি! প্রিয়ার জানা নেই এর উত্তর। পৃথা এতক্ষণ অন্যদের সাথে কথা বলছিল তাই প্রিয়াকে খেয়াল করেনি। সামনে প্রিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই পৃথা দৌঁড়ে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। এবার আর প্রিয়া নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। কেঁদে দেয়। সাথে পৃথাও কাঁদছে। পরিচয়টা হয়তো অল্প সময়ের কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা অনেক। ফাহাদের নিজেরও অনেক খারাপ লাগছে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে বললো,
“এই এই কি করছো পৃথা? প্রিয়ার ফাঁদে পা দিয়ো না একদম। ও তোমাকে কাঁদাচ্ছে কেন জানো? যাতে তোমার মেকাপ চোখের পানিতে নষ্ট হয়ে যায় আর তোমাকে দেখতে বিচ্ছিরি লাগে।”
প্রিয়া দুম করে ফাহাদের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়।
“আমার পৃথা কি মেকাপ সুন্দরী নাকি? ওকে মেকাপ ছাড়াও অনেক অনেক সুন্দর লাগে।”
সবাই ওদের কাণ্ড দেখে হেসে দেয়। প্রিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
“তুই অনেক স্বার্থপররে পৃথা। আমাকে একা করে তুই বিয়ে করে নিচ্ছিস”
পৃথা উত্তর দেওয়ার আগে ফাহাদ বললো,
“আরে এই জন্য কষ্ট পাওয়ার কি আছে? চলো তুমি আর আমিও পৃথার সাথে বিয়ে করে নিই। তুমি তো লাল শাড়ি পড়েই আছো আর আমিও অফ-হোয়াইট কালার পাঞ্জাবি পড়েছি। হয়েই তো গেছে বিয়ের সাজ।”
“আমি মোটেও এই সাজে বিয়ে করবো না! আমার অন্যরকম ইচ্ছে আছে।”
“তাই? শুনি সেটা কি?”
“আপনাকে বলবো কেন? আমি কি আপনাকে বিয়ে করবো নাকি?”
“তো কাকে করবে?”
“আমি বিয়েই করবোনা।”…
চলবে….