#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। একদিন বাদেই যার সাথে বিয়ে তাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে এভাবে দেখা সত্যিই কষ্টকর। মৃন্ময়কে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। শুধু তাই নয়। মেয়েটা কাঁদছে। মৃন্ময় প্রিয়াকে দেখে মেয়েটাকে এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে দিলো। মেয়েটা তবুও মৃন্ময়ের হাত ধরে কাঁদছিল। মৃন্ময় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়ার কাছে আসলো।
“প্রিয়া তুমি?”
“মেয়েটা কে?”
“রিমি।”
এবার রিমি প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসলো। কাঁদতে কাঁদতে মৃন্ময়কে বললো,
“এই সেই প্রিয়া? যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
“হুম।”
প্রিয়া আর মৃন্ময়কে অবাক করে দিয়ে রিমি প্রিয়ার পা পেঁচিয়ে ধরলো। প্রিয়া তাড়াতাড়ি উঠানোর চেষ্টা করলো।
“আরে কি করছো? উঠো উঠো।”
“প্লিজ মৃন্ময়কে আমায় ভিক্ষা দাও প্লিজ আপু। আমি মৃন্ময়কে ছাড়া থাকতে পারবো না। তোমার পায়ে ধরে ভিক্ষা চাইছি আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”
প্রিয়া রিমিকে অনেক চেষ্টার পর উঠিয়ে দাঁড় করায়।
“ভালোবাসা কোনো ভিক্ষা দেওয়ার জিনিস নয় আপু। মৃন্ময় হয়তো তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিল কিন্তু সে এখন আমার হবু স্বামী। রাত পোহালেই বিয়ের সব আয়োজন শুরু হবে। অলরেডি বাড়িতে বিয়ের ধুম পড়ে গিয়েছে। আর তুমি এখন এসে ভিক্ষা চাইছো? ভালোই যখন বাসো তখন ছেড়ে কেন গিয়েছিলে?”
“আমি জানি আমি ভুল করেছি। কিন্তু অন্য কারো সাথে আমি ওকে মেনে নিতে পারবোনা।”
প্রিয়া কিছু না বলে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো।
“আপনি কিছু বলবেন না?”
মৃন্ময় অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। এরপর রিমিকে বললো,
“তুমি চলে যাও বাড়ি থেকে।”
মৃন্ময় অন্য রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। প্রিয়া আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। রিক্সা চলছে আপন গতিতে। প্রিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে সাথে ভয়। কি করা উচিত প্রিয়ার!
বাড়িতে যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার ফোন দেয় মৃন্ময়কে। কিন্তু রিসিভড করেনা। রাতে মৃন্ময় নিজেই ফোন দেয়। কিন্তু ছন্নছাড়া কথাবার্তা। মনোযোগ নেই। মোট কথা আগের থেকে চেঞ্জ। হয়তো কষ্ট থেকে এমন হচ্ছে।
.
.
গায়ে হলুদের দিনঃ
গাঢ় হলুদ একটা কাপড় পড়েছে প্রিয়া। মাথায়, গলায়, হাতে, কোমড়ে ফুল। খোঁপায় ফুল গুঁজানো। অদ্ভুত সুন্দর আর আনন্দ লাগছে। প্রিয়ার মা প্রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“কারো নজর না লাগুক আমার মেয়ের দিকে।”
উত্তরে প্রিয়া মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ পরই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। মৃন্ময় ফোন দেয় এরমধ্যে। প্রিয়া রিসিভড করতেই মৃন্ময় বললো,
“কোথায় তুমি?”
“বাসায়। কেন?”
“তোমার বাড়ির পেছনে আসো তো একটু।”
“কেন?”
“কোনো প্রশ্ন নয় প্লিজ। একা এসো। আর তাড়াতাড়ি আসো।”
“আচ্ছা দেখছি।”
প্রিয়া আশেপাশে ভালো করে দেখে নিলো। এরপর লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির পেছনে গেলো। হালকা আবছা আলোয় প্রিয়াকে এভাবে দেখে মৃন্ময়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। মৃন্ময়কে দেখে প্রিয়া মিষ্টি একটা হাসি দিলো। মৃন্ময় প্রিয়ার কাছে এসে হাত ধরে বললো,
“আমায় ক্ষমা করে দিয়ো প্রিয়া।”
“মানে? কিসের ক্ষমা?”
“আমি পারলাম না।”
“কি পারলেন না?”
“আমি রিমিকে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না প্রিয়া।”
“এসব কি বলছেন আপনি?”
“জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তোমায় বিয়ে করলে এরচেয়েও বেশি কষ্ট পাবে রিমি। আমি রিমিকে কষ্ট দিতে পারবো না প্রিয়া।”
প্রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে। পানিগুলো উপচে পড়তে চাইছে। গলাটা ধরে এসেছে। কথা বলতে গিয়েও কথা বের হচ্ছে না গলা থেকে। অনেক কষ্টে বললো,
“কিন্তু আমাকে ঠিকই ঠকাতে পারলেন তাই না?”
মৃন্ময় এবার প্রিয়ার পায়ে ধরলো।
“আমায় ক্ষমা করে দাও প্রিয়া প্লিজ। আমি জানি ক্ষমার যোগ্য হয়তো আমি না। আমি তোমার পায়ে ধরছি প্লিজ।”
এবার আর প্রিয়ার চোখের পানিগুলো আটকে রাখতে পারলো না। দু গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
“আমার পা ছাড়ুন।”
“আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
প্রিয়ার ডান হাতে হলুদ কাচের চুড়ি ছিল। পাশেই পেয়ারা গাছটার সাথে প্রিয়া জোরে হাতে বাড়ি দিলো। সাথে সাথে কাচের চুড়িগুলো ভেঙ্গে গেলো। কয়েকটা কাঁচের টুকরো হাতেও ঢুকেছে। যেই হাতে হলুদের স্পর্শ পাওয়ার কথা সেই হাত এখন লাল রক্তে রক্তাক্ত।
মৃন্ময় প্রিয়ার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। প্রিয়ার হাত ধরে বলে,
“এটা কি করলে তুমি?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“আমার হাত ছাড়েন।”
“না, ছাড়বো না।”
“কোন অধিকারে আপনি আমার হাত ধরেন? আপনার কিসের অধিকার আমার উপর? আমার তো নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে যে, আমি অন্য একটা মেয়ের ভালোবাসাকে নিজে ভালোবেসে বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম।”
মৃন্ময় প্রিয়ার কোমড় চেপে ধরে কাছে এনে বললো,
“নিজের ক্ষতি করা এগুলো কোন ধরণের পাগলামি?”
প্রিয়া মৃন্ময়কে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“একদম টাচ করবেন না আমায়। কিসের পাগলামি তাই না? আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন আপনি? আজ আমার গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিল আর সেখানে এখন বিয়েটাই হবেনা। জানেন, এটা কতটা অপমান আমার পরিবারের জন্য? কতটা লজ্জাজনক একটা মেয়ের জন্য?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে বললো,
“সবচেয়ে বড় কথা এটা কতটা কষ্টকর আমার জন্য জানেন সেটা আপনি? কেন এসেছিলেন আমার জীবনে? আমি তো যাইনি আমার জীবনে। জোর করিনি কখনো। পায়ে ধরেও আনিনি আমার জীবনে। তাহলে কেন এসেছিলেন বলেন? কেন এসেছিলেন? আমায় ঠকাতে? ঠকিয়ে সুখি হবেন তো আপনি?”
মৃন্ময় প্রিয়াকে ধরে দাঁড় করায়।
“প্লিজ এমন করো না।”
“কিচ্ছু করবো না আমি। কিচ্ছু করবো না। যা করার একজনই করবে। উনি দেখছে উপর থেকে সব। আমি ক্ষমা করলেও প্রকৃতি কখনোই ক্ষমা করবেনা। আরে এটাই যদি করার ছিল, তাহলে কেন বিয়ে করতে আসছিলেন? নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরে আসার জন্য সামান্য সময়টুকুও দিতে পারলেন না? শেষমেশ নষ্ট করে দিলেন আমার জীবনটা।”
মৃন্ময় কিছু বললো না। প্রিয়া চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে হাত ধরলো। প্রিয়া হাত ছাড়িয়ে নিলো। দুই হাত জোর করে বললো,
“দয়া করে এভাবে কখনো কাউকে ঠকিয়েন না। ভালো থাকবেন রিমিকে নিয়ে।”
মৃন্ময়কে আর কিছু বলতে না দিয়ে প্রিয়া দৌঁড়ে বাসায় চলে গেলো। বাড়িতে ঢুকেই বড় ভাবীর সাথে দেখা হয়। ভাবী বললো,
“আমরা সবাই তোমাকে খুঁজছি। কোথায় ছিলে তুমি?”
প্রিয়া কিছু বলছেনা। কেঁদেই চলেছে। বড় ভাবী প্রিয়ার গালে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?”
প্রিয়া কিছু না বলে সব চেয়ার, টেবিল, ফু্ল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিলো। প্রিয়ার দুই ভাই, ভাবী, আপু, দুলাভাই, মা সবাই দৌঁড়ে আসলো। বাকি আত্নীয়স্বজন, পাড়াপড়শি সকলেই চারপাশে জোরো হয়ে গেলো। সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। কিন্তু প্রিয়া কিছু বলতেই পারছেনা। একসময় প্রিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়। সবাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। কি থেকে, কি হয়ে গেলো।
প্রিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চোখ মেলে দেখলো মাথার উপর ফ্যানটা শো শো শব্দ করে ঘুরছে। পুরো বাড়ি যে নিশ্চুপ সেটা ফ্যানের এই আওয়াজই বলে দিচ্ছে। প্রিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ফ্লোরে বসে আছে। সবার চোখেই পানি আর চিন্তা। মা তো শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদেই যাচ্ছে। প্রিয়া মাকে ডাক দিলো।
“মা।”
প্রিয়াকে উঠতে দেখে মা চোখের পানি মুছে নিলো। প্রিয়ার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো। দুজনই একসাথে কেঁদে দিলো। মা কেঁদে কেঁদে বললো,
“আমায় ক্ষমা করে দিস রে মা। আমি তোর ভালো করতে গিয়ে তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে তুই সব কষ্ট ভুলে সুখে সংসার করবি। কিন্তু এখন যে আমি নিজেই তোকে কষ্টের সাগরে ফেলে দিলাম মা।”
প্রিয়ার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে।
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা। খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার কেন আমার সাথেই এমন হয় বলো তো?”
সবাই কাঁদছে ওদের সাথে। সত্যিই কি এই কষ্টটা সহ্য করার মত। মৃন্ময়ের পরিবারের সবাই প্রিয়ার কাছে এসে ক্ষমা চায়। উত্তরে প্রিয়া বলে,
“আপনাদের তো কোনো দোষ নেই। আপনারা কেন ক্ষমা চাচ্ছেন। আপনাদের উপর আমার কোনো রাগ নেই।”
রাতটা এভাবেই কেটে যায়। সকাল হতেই প্রতিবেশিদের আনাগোনা আর কানাকানি শুরু হয়। কিছু মানুষ শান্তনা দেয় নাকি বুকের কষ্টটা বাড়িয়ে দেয় বুঝা দ্বায়! সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে বসে ছিল। সন্ধ্যার দিকে প্রিয়া নিজেই মায়ের কাছে যায়।…
চলবে….