তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৬
সেপারেশন কথাটা শুনে আমি যেনো সবকিছু ঝাপসা দেখছি।আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরেছে পরে দেখি শুভ্র ল্যাপটপে কাজ করছে।আমি উঠে বসলাম।শরীর নিস্তেজ লাগছে হয়তো সারাদিন না খাওয়ার কারনে।আর আজকে বাড়ি থেকে কেউ আসেনি। হয়তো শুভ্র জানায়নি। না জানানো কারণে ভালোই হয়েছে।আমি ওর সাথে খোলামেলা কথা বলতে পারবো।কারন এই মুহূর্তে কথা বলাটা খুবই দরকার।
শুভ্রকে দেখে আরেক দফা অবাক হলাম।মুখটা কেমন যেনো মলিন হয়ে গিয়েছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।নেভিব্লু কালার শার্ট পরা।এসি ওন থাকার পরও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।ওকে এরকম আপসেট আমি কখনো দেখিনি।আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে শুভ্র সোফা ছেড়ে বিছানায় এসে বসলো।আর আমাকে জিজ্ঞেস করল, এখন এখন কেমন ফিল করছো?
আমি যেনো এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলাম।প্রশ্নটা করার সাথে সাথে আমি শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম।কিন্তু এবার শুভ্র হাত ছাড়িয়ে দিল না।বরং আগলে নিল।আর বললো, নিরাপাখি কান্না থামাও।নয়তো শরীর খারাপ করবে।কিন্তু আমার কান্না যেন থামছেই না।অনেক কষ্টে কান্না থামালাম।
তারপর শুভ্রকে বললাম,আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।
শুভ্র বললো আগে খেয়ে নাও।তারপর উত্তর দিবো।
আমি ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিলাম।তারপর শুভ্র আমার সামনে এসে বসলো।বসে বললো, তো বলো কি বলবে?
আমি বললাম,আমি কাকে কি বলেছি তুমি বলো।
শুভ্র কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো,আচ্ছা নিরা তুমি কি কখনো আমাকে ভালোবাসোনি!নাকি সবটা অভিনয় ছিল।কেন আমার সাথে মিথ্যে নাটক করলে? কেন আমার ফিলিংস নিয়ে খেললে?
আমার চোখে পানি চিকচিক করছে। তাও নিজেকে শক্ত রেখে বললাম,আমার কাছে ভালোবাসা মানেই তুমি।আমার হ্যাপিনেস মানেই শুভ্র। শুভ্র নামের মানুষটাকে চাইলেও আমার লাইফ থেকে আলাদা করা যাবে না।আমার জীবন বদলানোর মূলে শুভ্র। আমার অস্তিত্তে মিশে আছো তুমি। তুমি পাশে নাই মানে আমার অস্তিত্ব নেই। তোমাকে ছাড়া আমি কখনো নিজেতে কল্পনা করিনা।
শুভ্র ঠান্ডা মাথায় বললো,তাহলে যুথিকে এগুলো কি বলেছো?আর এই ছবিগুলোর মানে কি?
আমি ছবি গুলো হাতে নিয়ে তো পুরো অবাক। অয়নের সাথে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি।বাট এমন কিছুই আমি করিনি।আমি কেন যে আমার অতীত থেকে বের হতে পারছি না!আর কি বলেছে যুথি আপু?
যুথি বলেছে,ওর সাথে তো তোমার সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই।তুমি নাকি বলেছো,আমাকে তুমি বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছো।এখনো নাকি অয়নকেই ভালোবাসো। তুমি নাকি অয়নের বিয়ে ভাঙতে গিয়েছিল।কারন তুমি নাকি অয়নকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবে না।আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি।কিন্তু পরে দেখি তুমি সত্যিই গিয়েছো।আর ছবিগুলো দেখে আমি আরো কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম।আমার কাছে এই চেনা পৃথিবী অচেনা মনে হচ্ছিল। আমি নাকি তোমার ভালোবাসার যোগ্যই না।
কিন্তু আমি তো এজন্য দেখা করতে যায়নি।আমি গিয়েছিলাম নয়নার বিয়ে ভাঙতে। কারণ নয়না বিয়ে করে রাজি না।ইভেন আমি জানতাম ও না যে নয়নার অয়নের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর কি বলেছে?
আর বলেছে,তুমি নাকি বাধ্য হয়ে আমার সংসার করছো।আমি সিংগাপুর গেলে তুমি অয়নের কাছে ফিরে যাবে।তুমি নাকি আমাকে কখনো ভালোই বাসোনি।কারন অয়নকে নাকি তুমি কখনোই ভুলতে পারবে না।
আমার অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।শুভ্রের কাছে আমাকে এতোটা ছোট করতে পারলো।তাই অভিমানী সুরে বললাম,আর তুমি এজন্য আমাকে অবিশ্বাস করলে।ডিভোর্স দিতে চাইলে!এই তোমার ভালোবাসা!আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে তো পারতে!
শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,সত্যি আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি।কিন্তু দেখা করতে যাওয়া, আর ছবিগুলো দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।আর তোমার থেকে সেপারেশন চেয়েছিলাম, কারন আমি চেয়েছিলাম তুমি হ্যাপি থাকো।তোমার হ্যাপিনেসই আমার কাছে সবকিছু। হয়তো আমি তোমাকে হ্যাপি করতে পারিনি যেটা অয়ন পারবে।তাই আরকি!
আমি বললাম,থাক আর বলতে হবেনা।কখনো কখনো নিজের জিনিস জোর করে আদায় করতে হয়।নয়তো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে দেখো সেদিন যদি তুমি আমাকে জোর করে বিয়ে না করতে তাহলে আমাকে হয়তো বা হারাতে হতো তোমার।তাই কিছু কিছু জিনিস জোর করে আদায় করতে হয় ।কথা দাও আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না কখনো না।
শুভ্র হেসে বললো,কখনো যাবো না।এখনতো দুপুর হয়ে গেছে । আর তুমিও অসুস্থ। জাস্ট কালকে সকালটা হতে দাও।যুথির ব্যবস্থা করবো আমি।ওকে বুঝাবো শুভ্র কি জিনিস!আর আই প্রমিস যুথি যদি যুথি জেনে শোনে মিথ্যে বলে থাকে তাহলে ওর জন্য আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।আমি ভুলে যাব যে ও আমার মামাতো বোন।কারন ওর জন্য আমার নিরাপাখিকে আমি কষ্ট দিয়েছি।আমার নিরাপাখি ওর জন্য শুধু কেঁদেছে। আর তোমার প্রতিটা চোখের পানি ফোটা যেনো আমার বুকে এসে তীরের মতো লাগছে।আমি ছাড়বো না ওকে।আমি আমার নিরাপাখির জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারি সেটা ও জানে না। বাই দা ওয়ে তুমি এখন সুস্থ না!
হঠাৎ এমন প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক।তাও বললাম,হুম সুস্থ।
শুভ্র শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,গেট রেডি ফর নাইট মিসেস শুভ্র নীল আহমেদ।
_____________ _________________
অয়নের ফোনে রিং বেজে উঠতেই দেখলো স্কিনে অচেনা নাম্বার। অয়ন ফোন রিসিভ করলো।
আসসালামু আলাইকুম, দিস ইজ অয়ন চৌধুরী।
নয়না গলা ঝেড়ে বললো,ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি নয়না।
অয়ন হেসে বললো,ওহ আসলে নাম্বার সেভ নেই তো তাই আরকি।তো বলুন কি বলবেন?
কেমন আছেন আপনি?
এইতো ভালো।আপনি?
ভালো।আসলে আপনি আমার থেকে বয়সে বড়।তাই তুমি করেই বলতে পারেন।
ওহ ওকে।তো কি করছো তুমি?
নয়না বললো,এইযে আপনার সাথে কথা বলছি।
অয়ন কিছুটা সংকোচ নিয়েই বললো,বিয়ের আগে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলে নেয়া ভালো।তুমি যদি পারমিশন দাও তাহলে প্রশ্নগুলো তোমাকে করব।
নয়না হেসে বলল,আরে বলুন সমস্যা নেই।
আচ্ছা তুমি কি কখনো রিলেশন করেছো?বা কাউকে ভালোবাসো!যদি ভালোবাসো তো আমাকে বলতে পারো।আমি প্রয়োজনে তোমাকে সাহায্য করব।
নয়না বললো,আরে না না।আমাকে দিয়ে ওইসব প্রেম ভালোবাসা হয়না।আর রিলেশন তো দুরের বিষয়। আপনি?
আসলে আমি আরো ৫ বছর আগে একজনের সাথে রিলেশন করেছিলাম মজা করে।বাট পরে বাহিরে চলে যাই।পরে বুঝতে পারি যে আমি ওই মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু পরে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়।কিন্তু এখন আর আমি ওকে ভালোবাসি না।চিন্তা করছি বিয়ের পর বউকে ভালোবাসবো যে কখনো হারিয়ে যাবে না।আর এই কথাগুলো যদি আগে তোমাকে না জানাই তাহলে তুমি নিজ থেকে জানলে বেশি কষ্ট পাবে।তাই জানিয়ে দিলাম।
প্রথম কথাগুলো শুনে নয়নার খারাপ লাগলেও পরের কথাগুলো শুনে নয়নার মন ভালো হয়ে গেল।নয়না কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো জানেন,আমার না বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু যখন শুনলাম আপনি নিরা আর শুভ্র ভাইয়ার ফুফাতো ভাই তখন আর না করতে পারলাম না।জানেন নিরানা অনেক লাকি যে শুভ্র ভাইয়ার মতো একজন মানুষকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে।আমারও খুব ইচ্ছে ছিল যে শুভ্র ভাইয়ার মতো একজন মানুষ আসুক যে আমার এতো কেয়ার করবে,ভালোবাসবে।আর যেহেতু আপনি শুভ্র ভাইয়ার কাজিন। তাই ১০০% শুভ্র ভাইয়ার মতো না হলেও ৭০% তো হবেন।
অয়ন কিছুটা কেঁশে বললো,আমার ও বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না।কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমি না করতে পারলাম না।সত্যি তুমি অনেক কিউট।বাই দা ওয়ে শুভ্রের চেয়েও যদি তোমার বর তোমাকে বেশি ভালোবাসে তাহলে কি হবে হুহ!
________________ _________________
ডিনার করে ঘুমাতে এসে দেখি শুভ্র বসে আছে।রুমে ফেয়ারি লাইট জালানো।আমি রুমে আসতেই শুভ্র ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিল।
কি ব্যাপার,তোমার আচার আচরন তো আমার কাছে সুবিধাজনক লাগছে না।দেখো আর এগোবে না।
আমার পা থেকো মাথা পর্যন্ত একনজর দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো আমি তো দেখছিই।আর কিভাবে দেখবো?
আমি কিছুটা রেগে বললাম,আমি জানতাম যে ছেলেরা কম লজ্জা পায়।কিন্তু ছেলেরা যে নিলজ্জ হয় তা তোমাকে না দেখলে জানতামই না।এতো লাগামহীন কথাবার্তা তুমি কিভাবে বলো?আর তোমার মতো লুচ্চু, ক্যারেক্টার লেস মানুষ আমি জীবনেও দেখি নাই।নিজের বউকে এমন কথা বলতে লজ্জা করে না!
শুভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,নিজের বউকে বলবো না তো কি অন্য কাউকে বলবো?আর আমি লুচ্চু, ক্যারেক্টার লেস মানুষ!তাহলে তো আমার সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা উচিত। তাই না মিসেস শুভ্র!
আমি এখন তোমার সাথে তর্কাতর্কি করতে চাই না।বাদ দাও এই টপিক।
শুভ্র বললো, আজকে আমি তোমাকে আমার মতো করে ভালোবাসতে চাই।দিবে আমাকে সেই অধিকার?
আমি লজ্জায় লাল হয়ে শুভ্রকে বললো,অনেক আগেই তোমাকে সেই অধিকার দিয়ে দিয়েছি।
তারপর দুজনে পাড়ি দিলো ভালোবাসার রাজ্যে।
(আরকি হুহ!যান নিজেদের কাজে যান)
সকালে চোখ খোলে…………..
চলব…….