#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব04+05(ধাামাকা)
এদিকে নিরার বাবা শুভ্র আর শুভ্রের বাবা মাকে ডাকিয়েছে।তারপর উনি বলল,শুভ্র আমাকে সবকিছু খুলে বলেছে।এখন আমি চাইছিলাম যে শুভ্র আর নিরার বিয়ের কাজটা খুব শিঘ্রই সেরে ফেলতে।এখন তোমরা কি বলো?অরিনের বিয়ের পরপরই বিয়েটা সেরে ফেললে ভালো হতো।সবাই ওনার কথায় একমত প্রকাশ করল।আর নিরাকে এখন জানানো যাবে না।ওকে অরিনের বিয়ের পর বুঝিয়ে বলতে হবে শুভ্রের বাবা বলল।
_______________ ____________
কেমন আছিস শুভ্র? ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন শুভ্রকে বলল।শুভ্রের কন্ঠটা চিনতে বিন্দুমাত্র ও অসুবিধা হয়নি।কারন কন্ঠটা তার খুব চেনা পরিচিত কাছের একজন মানুষের যাকে সে কখনোই ভুলতে পারবে না আর না ক্ষমা করতে পারবে কখনো।
শুভ্র তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,তোর ফোনের জন্যই ওয়েট করছিলাম।কিন্তু তুই যা চাইছিস তা কখনোই হবে না।কারন এই শুভ্র নীল আহমেদ খুব ভালো করেই জানে কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে প্রটেকশন দিতে হয়।বলে শুভ্র ফোনটা কেটে দিল।
এদিকে নিরার মনে চলছে তুমুল ঝড়।কারন সে শুভ্রের পাশে অন্যকাউকে কোনো ভাবেই মানতে পারছে না।কিন্তু কেন সে নিজেও জানে না।
আচ্ছা আমি কি তাহলে শুভ্র ভাইয়াকে ভালোবাসি?কারন মানুষ তো তার ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্য কাউকে মানতে পারে না।তাহলে কি আমার ওনাকে আমার ভালোবাসার কথা জানানো উচিত!না ওনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসে!তাহলে আমার ভালোবাসার কথা জানালেই বা কি হবে।
নিরা ওর ছোট চাচিমা মানে শুভ্রের মায়ের সাথে গল্প করছে ওনাদের রুমে যাতে নিজের মনটা একটু হালকা হয়।কিন্তু তার মন কিছুতেই শুভ্র নামক নেশা থেকে বের হতে পারছে না।এদিকে শুভ্র নিরাকে একটা নোট দিতে এসে নিরাকে রুমে না পেয়ে রুমটা ঘুরে দেখতে লাগলো।এরুমে শুভ্রের তেমন একটা আসা হয়না।কোনো দরকার হলে নিরাকে মেসেজ দিয়ে নিজের রুমে ডেকে নেয়।নিরার রুমটা খুব গোছালো।দেয়ালে নিরার ছোট বেলার কিছু ছবি টানানো।ছবিগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ গেল টেবিলের উপর রাখা ডায়রির দিকে।ডায়রিতে বড় বড় করে লিখা ডোনট টাচ মাই ডায়েরি। বেশ আগ্রহ নিয়ে শুভ্র ডায়েরিটা খুলেছে।খুলতেই নজর গেল ডায়েরির ভাঁজে রাখা চিঠিটার দিকে যেটা কিছুদিন আগে ভার্সিটিতে নিরাকে শুভ্র দিয়েছিল।চিঠিটা দেখে শুভ্র আনমনে হেসে উঠল।আর বলতে লাগল,
খুব তাড়াতাড়ি প্রেয়সী তোমাকে নিজের করে নিব।নিজের খাঁচায় তোমাকে বন্দি করে নিব।নিরাপরী তুমি কি আমার অনুভূতি কখনোই বুঝবে না!আর কত অপেক্ষা করাবে এই মুগ্ধ প্রেমিকটাকে।
তার কথায় মাঝে নিরা এসে বলল,কারো ডায়েরি তার অনুমতি ছাড়া পড়া নিষেধ আপনি জানেন না সেটা।শুভ্র কথা ঘোরানোর জন্য বলল,তোর কি মনে হয়,তোর ডায়রি পড়ার জন্য আমি তোর রুমে এসেছি!মোটেও না।তোর পড়ালেখার যা ছিড়ি এভাবে চলতে থাকলে ভালো রেজাল্ট তো দুরের কথা পাশ ও করতে পারবি না।তাই কাকাই বলেছে প্রতিদিন রাতে আমি তোকে পড়াতে(যদিও মিথ্যা কথা) যাতে পাশ কোনোভাবে করতে পারিস এটা বলতেই তোর রুমে এসেছিলাম। আর এই নে তোর হিসাববিজ্ঞান নোটস বলে নোটসগুলো টেবিলের উপর রেখে শুভ্র নিজের রুমে চলে গেল।
আমার রাগে-দুঃখে হাত-পা বিছিয়ে কাদঁতে ইচ্ছে করছে।একে তো এই মানুষটাকে আমি যতই এড়িয়ে যেতে চাই ততই ব্যর্থ হই।কেন শুভ্র ভাইয়া আমার পিছনে এতো সময় নষ্ট করে! এটাকি শুধুই দায়িত্ববোধ থেকে করেন!আর ২য় তো ওনার কাছে যদি নিয়মিত পড়ি পাবনার পাগলাগারদে সিউর সিট বুকিং দিতে হবে। কারন ওনি যেই লেভেলের অত্যাচার আমার উপর চালাবেন আমি নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবো।কারন ওনার মতো রাতের নয়টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না।তাই পাগল হয়ে পাগলাগারদেই যেতে হবে।
__________________ ______________________
দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৫ দিন।শুভ্র ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। কেন জানিনা আমি না চাইতে ও ওনার মায়ার জালে জড়িয়ে যাচ্ছি। যেখান থেকে কখনো ছোটা সম্ভব না।ওনার করা ছোট ছোট কেয়ার এখন আমার অনেক ভালো লাগে। ওনি বকা দিলে আগের মতো আর রাগ হয়না।
শুভ্র আজকে চিন্তা করেছে নিরাকে প্রপোজ করবে।তাই নিরার জন্য একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনেছে।কিন্তু কে জানত যে এই গোলাপ আর নিরাকে দেওয়া হবে না! গোলাপ রাস্তাই পড়ে থাকবে!হ্যাঁ,এমনই হয়েছে। শুভ্র প্রতিদিন এর মতো আজও গাড়ির সবকিছু চেক করে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। কিন্তু ফুল কিনে বাড়ি ফিরার সময় গাড়ি ব্রেক ফেইল করে।শুভ্রের গাড়ি ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করে।মুহূর্তের ভেতর গাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে গোলাপ ফুলগুলো আর শুভ্রের রক্তাত্ত দেহ।
আমি সহ সবাই অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে অপেক্ষা করছি।চাচিমা শুভ্র ভাইয়া এক্সিডেন্ট এর কথাশুনে দুবার জ্ঞান হারিয়েছে। সবার মুখে চিন্তার ছাপ।আমার চোখের পানি যেন বাঁধাই মানছে না।আমার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে। অপেক্ষা ওটি থেকে ডাক্তারের বেরিয়ে আসার।
অপরদিকে এই পরিবারের এই অবস্থা দেখে আনন্দ পাচ্ছে এক তরুণ। হাতে শুভ্রের হাসিমাখা একটি ছবি যে কিনা এখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তরুন ছেলেটি হেসে বলে উঠল,মি.শুভ্র নীল আহমেদ তুমি হেরে গেলে অয়ন চৌধুরী কাছে।আমি আমার জিনিস কীভাবে কেড়ে নিতে হয় তা খুব ভালো করেই জানি।এখন কে বাচাঁবে তোমার পরিবারকে,তোমার নিরাপাখিকে!
[ আচ্ছা, শুভ্রকে যদি ওপরে পাঠিয়ে নায়ক হিসেবে যদি অয়ন চৌধুরীকে দেই কেমন হবে গাইছ!!😁😁😁]
মাত্র ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে এসেছেন।মুখে চিন্তার ছাপ।কাকাই দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার ছেলে কেমন আছে? ডাক্তার নিশ্চুপ। প্লিজ বলুন ডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে?কাকাই বলল।আই এম স্যরি মি.আহমেদ……..
চলবে……
#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব৫
মাত্র ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে এসেছেন।মুখে চিন্তার ছাপ।কাকাই দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার ছেলে কেমন আছে? ডাক্তার নিশ্চুপ। প্লিজ বলুন ডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে?কাকাই বলল।আই এম স্যরি মি.আহমেদ।আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।এখন ৬ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে ওনি কোমায় চলে যেতে পারেন।আমাদের আর কিছু করার নেই।
ডক্টরের কথা শুনে আমার যেন পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। সবকিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে। কেন আমার সাথে এমন হয়? এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।তাই আমি ওজু করে নামাজ পড়তে বসলাম।
সময় যেন কিছুতেই কাটছে না।আর ১ ঘন্টা সময় বাকি।আমার নিঃশ্বাস যেন আর চলছে না।এই চেনা পৃথিবী আমার কাছে অচেনা লাগছে।মনে হচ্ছে শুভ্র ভাইয়ার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচাতে পারবো না। সবার মধ্যে বিরাজ করছে শুভ্র ভাইয়া কে হারাবার ভয়।চাচিমা কিছুক্ষন পর পর জ্ঞান হারাচ্ছে। আম্মু ও বসে বসে কাঁদছে। বাবা চাচ্চুকে সামলাচ্ছে।
এর মধ্যে নার্স এসে বলল,মি.শুভ্র নীল আহমেদ এর বাড়ির লোক কে আছেন?
বাবা এগিয়ে গিয়ে বলল,জি বলুন।
ডক্টর আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে।
কথাটা শুনে আমার বুকের ভিতর মুচড় দিয়ে উঠল।শুভ্র ভাইয়ার কিছু হয়ে যায় নি তো আবার!
বাবা ভিতরে গেল।
আপনাদের কপাল অনেক ভালো। মি. শুভ্র এর জ্ঞান ফিরেছে।আমরা তো আশা ও ছেড়ে দিয়েছিলাম। ঔই অবস্থায় তো কম পেশেন্টদেরই সেন্স ফিরে।
বাবা সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলল
_________________ _____________________
সবাই এক এক করে আমার সাথে দেখা করছে।কিন্তু আমার দুচোখ যে অন্য একজন কে খুঁজছে। সে কি আসবে না আমার সাথে দেখা করতে!আর কত অপেক্ষা করাবে আমাকে,শুভ্র মনে মনে ভাবছে।
আমি শুভ্র ভাইয়ার সেন্স ফিরে আসার কথা শুনে আগে দুরাকাত নফল নামাজ পড়ে নিয়েছি।এখন দেখা করতে যেতে হবে। আমি কেবিনে ঢুকতেই চাচিমা বলল,তোরা কথা বল বলে বেড়িয়ে গেল। আমি গিয়ে বেডের পাশে চেযার নিয়ে বসলাম।
এতক্ষনে পিচ্চির আমার খোঁজ নেয়ার সময় হয়েছে,শুভ্র ভাইয়া বলল।
আমি হালকা হেসে বললাম, তোমার জ্ঞান ফিরেছে শুনে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
শুভ্র ভাইয়া যে উত্তর শুনে বেশ খুশি হয়েছে তা ওনার মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম।
ওনি আবার বললেন, আমার জন্য এতো চিন্তা হয় তোর!আগে তো জানতাম না।বাই দা ওয়ে, আয়নাতে নিজেকে দেখিছিস!চেহারার কি অবস্থা করেছিস!কান্না করে চোখ লাল করে ফেলেছিস।লান্স করেছিস?
আমি বললাম,না।
উনি অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন আমার চোখের সামনে থেকে যা।খেয়ে তারপর আমার সামনে আসবি।
আমি ওনাকে বললাম, আমার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা করো।আর চেচামেচি করো না নিজের ক্ষতি হবে। আমি খেতে যাচ্ছি টেনশন করতে হবে না।
_________________ ___________________________
এক সপ্তাহ হলো শুভ্র ভাইয়া বাসায় এসেছে। ইদানীং আমার ভাইয়ার বেশ কাছাকাছি থাকা হয়।আর আম্মু ও আমাকে বলেছেন ভাইয়ার খেয়াল রাখতে। আমি ভাইয়াকে নিজের হাতে খাবার খাওয়ায় দেই কারন হাতে ব্যান্ডেজ করা।আবার নিজ দায়িত্বে ঠিক মতো ঔষধ ও খাওয়াই।বেশ ভালো সময় কাটছিলো।
তো কি কারনে ফোন দিয়েছিস?বেঁচে আছি কিনা দেখার জন্য, শুভ্র ফোনে বলল।
ফোনের ওপাশ থেকে যুবকটি বলল,ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছিস।
শুভ্র বলল,তাই নাকি! অবশ্য এক্সিডেন্ট করে ভালোই হয়েছে।আমার নিরাপাখি আমার খুব যত্ন নিচ্ছে।আমার খুব কাছাকাছি থাকছে। নিরাপাখির কাছাকাছি থাকার জন্য এমন এক্সিডেন্ট হাজার বার করতে রাজি এই মুগ্ধ প্রেমিক।আর অয়ন চৌধুরী তুই নিজেকে খুব চালাক ভাবিস।কিন্তু তুই তো জানিসই না যে,তুই ডালে ডালে চললে আমি পাতায় পাতায় চলি।এই শুভ্র নীল আহমেদ নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা তোর কল্পনার বাহিরে।তোর মতো দশটা অয়নকে সোজা করার ক্ষমতা শুভ্রের আছে।কিন্তু আমি এখন তা করব না।আমি দেখতে চাই যে তুই কতদূর যেতে পারিস!বলে ফোনটা কেটে দিল।
অন্ধকার ঘরে বসে আছে অয়ন। হাতে নিরা আর শুভ্রের ছবি।এমন সময় দরজায় একজন লোক নক করল আর বলল,স্যার আপনার বিডিতে যাওয়ার ফ্লাইট রেডি।রাত ৯ টায় ফ্লাইট। অয়ন দেরি না করে বিডিতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো। আর বলতে লাগল,বি রেডি শুভ্র। তোর কাছ থেকে আমার অনেক হিসাব নেওয়া বাকি।আমাকে দেওয়া তোর প্রতিটি যন্ত্রনার প্রতিশোধ নিব আমি।
এদিকে শুভ্রকে একজন ফোন করে বলল,অয়ন চৌধুরী বিডিতে ব্যাক করছে।আজ নয়টায় ফ্লাইট।
শুভ্র বলল,তাই নাকি।ওকে।
শুভ্র এক মুহূর্ত দেরি না করে ওর কাকাইকে ফোন দিল।আর বলল,আমি এখন এইমুহূর্তে…….
চলবে……