তুমি নামক প্রাপ্তি’ পর্ব-৩২ শেষ পর্ব

1
4888

#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#অন্তিম_পর্ব
#Suraiya_Aayat

” আরিশের প্রতি আমার একটা রাগ ছিলো, যেদিন তোমার সাথে ধানমন্ডি লেকে প্রথম দেখা করতে যাই সেদিন আরিশ আমাকে মেরেছিলো সকলের সামনে , সকলের সামনে মেরেছিলো তাতে আমার দুঃখ নেই কিন্তু সেদিন ওর কারনে তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম সেটাই আমার কষ্টের কারন ৷ তুমিই ছিলে আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা আর এটা নিশ্চয়ই জানবে যে মানুষ চাইলেও তার প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে যেতে পারে না ৷ সেদিন আরিশের হাতে মার খেয়ে আমি বিছানায় সয্য৷শায়ী ছিলাম দীর্ঘ একবছর, নিজের কাজ নিজে করতে পারতাম না তাই একজন লোক ও রেখেছিলাম , সে বেশি টাকা নিতে চেয়েছিলো তাই তাকেও ছাড়িয়ে দিই, তারপর যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার আন্টির দূর সম্পর্কের মেয়ে ছিলো মৃন্ময়ী , ও পেশায় একজন নার্স ছিলো ৷ আমার কথাতে আন্টি মৃন্ময়ীকে আমার কাছে পাঠালেন, মৃন্ময়ী কে চোখের সামনে থাকতে দেখেও আমি তোমাকে ভুলিনি, মনের মাঝে তোমার জায়গা টুকু তোমার ই ছিলো ৷ কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো তোমার প্রতি রাগ আর আভিমান দুটোই তীব্রতর হতে লাগলো কারন আমি তোমাকে বারন করেছিলাম আমার সাথে দেখা করতে না আসতে তাহলে আরিশ যদি তোমার ক্ষতি করে আর দেখো তুমিও কেমন স্বার্থপর হয়ে গেলে সময়ের সাথে, তুমিও আমার আর কোন খোঁজ রাখলে না ৷ মৃন্ময়ী সব জানতো, ও তোমার বাসায় তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল কিন্তু তখন শোনে যে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আরিশের সাথে, এটা শুনতে প্রস্তুত ছিলাম না আমি, মৃন্ময়ীর ও আমার জন্য কোন একটা অনুভুতি ঠিকই কাজ করতো কিন্তু মেয়েটা বলতে পারতো না ৷ তোমার প্রতি রাগ দ্বিগুন হলো , ভাবতাম তুমিই বা কীভাবে স্বার্থপরের মতো আরিশকে বিয়ে করে নিতে পারো ৷ তাই আমি নিজে মৃন্ময়ীকে বিয়ের প্রপ্রোজাল দিই আর ওউ রাজি হয়ে যাই খুব সহজেই ৷ তারপর কয়েকমাস যাই, মৃন্ময়ীর প্রতি আমার যে কোন অনুভুতি ছিলো না তেমনটা ঠিক নই, তবে হঠাৎ একদিন জানতে পারি যে তোমার আর আরিশের বৈবাহিক জীবন সুখের নয় আর সেখানে আমার সুযোগ নিতে দোষ কোথায় ! তাই আমিও পরিকল্পনা করে ফেলি তোমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আলাদা করার জন্য ৷ আর কাজ ও হয়, কিন্তু আমার এই কাজের জন্য যে আরিশ এভাবে নিঁখোজ হয়ে হারিয়ে যেতে পারে ভাবিনি তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুসূচনার শেষ ছিলো না, যার দরুন হয়তো আল্লাহ মৃন্ময়ীকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে , মৃন্ময়ী আমাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যাই ৷
কথাটা বলতেই ইলমাজ কেঁদে ফেলল, ইলমাজের কথা শুনেও আরুর ভাবাবেগের কোন পরিবর্তন নেই ৷ ও যেন ইলমাজের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না ৷
ইলমাজ নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো
” হঠাৎ একদিন ম্যাগাজিনে আরিশের ছবি দেখে আরিশের সাথে যোগাযোগ করে ওর কাছে ক্ষমা চাই, আরিশ জানাই যে সে ক্ষমা করতে রাজী যদি আমি ওদের সাহায্য করি ৷ আরিশের কথামতো আমিও রাজী হয়ে যাই ৷ আমার কাজ ছিলো আরমান সাহেবের সাথে থেকে সব খবরাখবর জানা, আর ওনার সাথে থেকে আমি কিছুটা হলেও জানতে পেরেছি যা আরিশ আর ওদের পুরো টিমের কিছুটা হলেও সাহায্যে এসেছে ৷
আজ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তুমি আমাকে মাফ করে দিও ৷ সেদিন আমি যদি এমনটা না করতাম তাহলে তোমার আর আরিশের মাঝে পাঁচ বছরের এই দীর্ঘ বিচ্ছেদ আসতো না ৷
পারলে ক্ষমা করে দিও ৷
কথাগুলো বলে ইলমাজ চলে গেল ৷ ও জানে যে আরুর কিছু মনে নেই আর চাইলেও আরু কিছু বলতে পারবে না তাই আরু কি বলে তা শুনতে চাওয়া বৃথা ৷

আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো ৷ হাতের ভারী ভারী চুড়িগুলো খুলে আয়নার সামনে রাখলো আর নিজেকে দেখতে লাগলো আর মনে মনে ভাবলো
” কই আমিতো এতো সুন্দরী নয় আর আমার মাঝে আকৃষ্টকর কোন জিনিস ও নেই তাহলে ওই আরিশ নামক মনুষটা আমাকে কেন এতো ভালোবাসে, কিসের এতো আসক্তি তার আমার প্রতি ! আমি তার আরুপাখি বলে ?”

কথাটা ভাবতে ভাবতে আরু কানের বড়ো দুলগুলো আর গলার ভারী হারটা খুলতে লাগলো ৷ মুখে চড়া মেকআপ ,আর সারা শরীর ছিলো সাজসরজ্ঞামে পূর্ণ ৷
আবিরের বিয়েতে গিয়েছিলো গোটা পরিবার , আরিশের সাথে ঝামেলা করে চলে এসেছে আরু ৷ আরিশ বারবার আরুকে রাগানোর জন্য এই মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো কখনো ওই মেয়ের দিকে , যা আরুর মোটেই ভালো লাগেনি ৷ তাই না বলে আরিশকে কিছু না জানিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে, এসে দেখে ইলমাজ ওদের ড্রয়িরুমে বসে আছে ৷ এত রাতে ইলমাজকে দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না ৷ এতদিন আরিশকে বিরক্ত করার জন্য আর অবিরাম জ্ঝালানোর জন্য আরু এমনটা করেছে ৷ পাঁচ বছরে আরিশের থেকে দুরে থাকার কষ্ট ও যা পেয়েছে আরিশ ও পেয়েছে তাই অল্পের মধ্যে আরিশকে শাস্তি দিতে চেয়েছে ‌৷

তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আরু , এখন শাওয়ার নেবে , ফ্রেশ হওয়ার প্রয়োজন তাছাড়া আরিশ বাসয় ফিরলে আরিশের সাথে আবার কোমর বেধে ঝগড়াও তো করতে হবে তাইনা !
আজকে মিনহাজ সাহেব ও গিয়েছিলেন বিয়ে বাড়ি, উনি কালকে এ বাসায় আসবেন এসে বেশ কয়েক দিন থাকবেন জানিয়েছেন , তা শুনেই আরুর মনটা খুশি খুশি হয়ে গিয়েছিলো ৷

কয়েক মিনিটের মধ্যে চটপট শাওয়ার নিয়ে আরু একটা থ্রিপিস পরে বেরিয়ে এলো, চুলগুলো ভিজে, মুখে জলের বিন্দুবিন্দু কনা লেপ্টে আছে ৷
তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে আরু ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ দোয়েল পাখিটাও খাঁচার ভিতর ঝিম মেরে আছে ৷ আরু খাঁচাটা হাতে নিয়ে বলল
” তোরা যে পাখি, জীবন্ত একটা প্রান,তোদেরকে এভাবে খাঁচার আবদ্ধ জীবনে বড্ড বেমানান লাগে রে, তোদের কে উড়তে দেওয়াই ভলো, যাহ আজ তুই ও স্বাধীন , এই রাতের আকাশে খুঁজে নে নিজের পথ চলার সঙ্গীকে ৷ জীবনটাকে উপভোগ কর ৷

আরু খাঁচার দরজাটা খুলে দিতেই দোয়েল পাখিটা হাটতে হাটতে ব্যালকনির রেলিং এ দাড়ালো, বারবার আরুর দিকে আর এদিক ওদিক চাইছে তা দেখে আরু বলল
” জানি তোর প্রতি আমার মায়া জড়িয়ে গেছে তেমনি ঠিক তোর ও , তাই আর বেশি অপেক্ষা না করে তুই চলে যা নাহলে আমি এখানেই কিন্তু হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে শুরু করবো ৷”

আরুর ভষা বুঝে যেন পাখিটা উড়ে গেল, দুরের কোন রাজ্যে পড়ি জমালো নিজের প্রিয়তমাকে খুজতে ৷
আরুর চোখের জলটা মুছে রেলিং ঘেষে দাঁড়ালো ৷
মনটা কেমন ভার ভার লাগছে , আরিশের অনুপস্থিতি জানান দিচ্ছে বড্ড ৷ তাকে হয়তো একবার বলে আসলেই পারতো ৷

চোখটা বন্ধ করে দাড়ালো আরু ৷ পিঠে কারোর আঙুলের স্পর্শ অনুভব করছে আর কাধে আর গলার সমগ্র অংশ জুড়ে গরম বাতাস ৷ আরু মুচকি হাসলো , আরিশ এসেছে ৷

আরুর ভেজা চুলগুলোকে সরিয়ে আরুর কাধে মুখ রেখে বলল
” এভাবে কি পাগল না করলেই নয় আরুপাখি !”

” পাগলরাও বুঝি পাগল হওয়ার চেষ্টা করে !”

“পাগল হয়েও আবার বউয়ের প্রমে পাগল হতে দোষ কি ?”
আরিশের কথার মাঝে অবাক হওয়ার কোন চিন্হ নেই ৷ আরু অবাক হলো , কই ওকে কথা বলতে দেখে আরিশ তো অবাক হলো না, এতখন তো খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার কথা ৷”

আরু আরিশের দিকে ঘুরে কথা না বলে মুখে ইশারা করে বলল
” আপনি কি পাগল ?”

আরিশ আরুকে ছেড়ে পাগলের মতো হসতে হাসতে বলল
” উইইমা কি সুপার টুইটুইমার্কা একটিং আরুপাখি আই লাক ইট ৷”

আরু এখনো কথা বলল না, ও ভাবছে আরিশ ঘোরের মাঝে আছে তাই ওর অভিনয় ওকে চালিয়ে যেতে হবে তাই ইশারা করে বলল
” না আমি একটিং করছিনা ৷”

আরিশ আরুর ইশারা পেয়ে আরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে আরুর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
” তুমি না বললেও আমি বুঝি, আর তুমি কি ভাবলে আমি তোমাকে বুঝবো না মানে তুমি কি করো কি না করো, কি করতে চাইছো আমি সেগুলো বুঝবো না ৷ লাইক সিরিয়াসলি আরুপাখি ! আমি তো জানতাম যে তোমার কিছু হয়নি,তুমি তোমার টুইটুই মার্কা জ্বালানোর জন্য এমনটা করছো, আর আমিও তোমাকে আটকাইনা আমিও বেশ মজা পেয়েছি আমার আরুপাখির এরকম একটা লুক দেখে ৷”

আরু আরিশের কথা শুনে নিজেকে পৃথিবীর মস্ত বড়ো আহাম্মক মনে করতে লাগলো
” উফফফ ! উইইইমা নট সো টুইটুই😞৷”

আরিশ হো হো করে হাসতে হাসতে বলল
“বাট জোশ একটিং , তোমাকে একটিং স্কুলে ভর্তি করলেও জোশ হবে ৷”

আরু আরিশে বুকে কিল মেরে আরিশের বুকে মাথা রেখে বলল
” এটাও কিন্তু নট সো টুইটুই ৷”

আরিশ আরুকে বুকে জড়িয়ে বললো
” আচ্ছা আরুপাখি তোমার এই উইইমা টুইটুই এর মানে কি ?”

” জানিনা ৷😞”

তখন হুঠ করে আর্শিয়ান রুমে ঢুকে আরু আর আরিশকে এমন ভাবে দেখে হাত দিয়ে চোখদুটো ঢেকে বলল
“. টুকি , আমি কিন্তু কিছু দেখিনি ৷”

আরু অবাক হয়ে গেল, আর্শিয়ান ও দেখে ফেলেছে তাই আরিশের থেকে সরে যেতে নিলেই আরিশ আরুকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল
” একদম ছঠফঠ করবে না , একদম শান্ত থাকো ৷
আর্শিয়ান পাপা কাম হেয়ার ৷”

আরিশের ঢাক শুনে আর্শিয়ান ছুটে গেল ওদের কাছে, আরিশ আরুকে এখনো ছাড়েনি, আর্শিয়ান তা দেখে দাঁত বার করে হিহি করে হাসছে, তা দেখে আরু বলল
” স্টুপিড কোথাকার, ছাড়ুন ,দেখুনতো আর্শিয়ান কীভাবে হাসছে ৷”

“হাসছে কারন ওউ শিখে নিচ্ছে যে বউকে কীভাবে আদর করতে হয় ভালোবাসতে হয় তাইনা আর্শিয়ান !”

” ইয়েস পাপা ৷😉”

আরিশ আরুকে ছেড়ে দিয়ে আর্শিয়ান কে কোলে তুলে নিলো ৷
আর এক হাতে আরুকে জড়িয়ে ধরে বলল
” ভালোবসি দুজনকেই এততগুলো ৷ তোমারাই আমার সেই #তুমি_নামক_প্রাপ্তি যা আমি আজীবন এভাবেই আগলে রাখবো আর এভাবেই ভালোবেসে যাবো ৷”

আরু আরিশের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে ,এ হাত কখনো ছাড়বার নয় ৷ আরিশ একবার আর্শিয়ানের দিকে তাকিয়ে আর একবার আরুর দিকে তাকিয়ে আরুকে বুকে টেনে নিলো ৷

এভাবেই আজীবন চলুক ওদের ভালোবাসা ৷

সমাপ্ত.

জানি না কতোটা ভালো লেগেছে আপনাদের , বাট চেষ্টা করেছি অনেক গল্পটাকে ভালো মান দেওয়ার জন্য ৷ আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবেন সবাই ৷

1 COMMENT

  1. 🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰Ei golpota ajk purota porte parlam er age ekdin porechilam❤️❤️❤️❤️❤️❤️ but only 7 part porjonto ajk last part porjonto porlam .😘😘😘😘😘….khub valo hoyeche golpota didivai🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here