তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব-৫২

0
1908

#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৫২(অন্তিম পর্ব)
জাফর মারা যাওয়ার পর তীব্র দেশে ফোন করে ডিপার্টমেন্টে জানায়।
আগে থেকেই মালদ্বীপে সরকারী প্রশাসনে আবেদন করা ছিলো। তাই একটা ফোনের পর পর ই মালে থেকে সৈন্য এসে রিসোর্টের চারপাশে যে গার্ড গুলোকে মেরে আলু বেগুনের চাশনাই বানিয়ে রেখেছে ওদেরকে তুলে নিয়ে যায়, আর জাফরকে আলাদা করে। জাফরের যে প্রাইভেট প্লেন আছে সেটাতে করেই দেশে পাঠানো হয় সব কটাকে ।

মিশান তীব্র নিজেদের রিটার্ন টিকিট দিয়েই দেশে ফিরে আসে।
বাংলাদেশে ফিরে এয়ারপোর্ট আসতেই দেখা হলো মোশারফ হোসেন স্যারের সাথে।
মোশারফ হোসেন স্যার তীব্রকে রেখে মিশানের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে , তীব্র এসে সালাম দিতেই উনার ঘোর কাটে।মিশানকে উনি না চেনার কারণ,তীব্র ওর মেডিকেল রিপোর্ট গুলো সিনিয়রদের কাছে চাওয়ার পর তাঁরা দেয়নি, সেজন্য তীব্রও মিশানের ব্যাপারটা তাদের জানায়নি।
-আসসালামু আলাইকুম স্যার।
-ওয়ালাইকুম আসসালা।তীব্র! ওয়েল ডান মাই বয়।যে কাজটা করলে আমরা প্রত্যেকেই অপ্রত্যাশিত ছিলাম,ভাবতেও পারিনি মিশনটাতে সফল হবে। ভেবেছিলাম এবারও হয়তো কোনো দুর্ঘটনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,যাকে দেশে থেকেই কিছু করা যায় নি, তাকে বিদেশ থেকে কিভাবে কি করবে।
-স্যার! এটা আমার পারসোনাল ম্যাটার ছিলো, তাই সফল না হয়ে ফিরতে পারিনি।
আমি তো বলেছি এই জাফর অভিজিৎ এরা কে আমি জানি না।আমি শুধু জানি ওরা আমার ভাইয়ের খুনি।
মোশারফ হোসেন মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-ওকে তো চিনতে পারলাম না?
তীব্র ঠোঁটে হাসি লাগিয়ে উত্তর দিলো,
-এটা আমার সেই বহুকথিত কল্পনার
বউ ।
-তুমি বিয়ে করেছো,এতো কিছু জানি এটা জানি না!
-কি করবো স্যার,আপনার মেয়ে তো দিলেন না, তাই পথে ঘাটে যাকে পেলাম বিয়ে করে নিলাম।

মোশারফ হোসেন মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-সত্যিই কি বিয়ে করেছো তোমরা?
মিশান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
-দেশে কি ছেলের এতোই অভাব পড়েছিলো? তুমি বিয়ে করার জন্য ওকেই পেলে? দেখো আমি তোমাকে সাবধান করে বলছি মা, যদি বিয়ে টা না হয় তাহলে এখনি কেটে পড়ো,আর যদি সত্যিই বিয়ে করে ফেলো তাহলে স্বাগতম তোমার নরক জীবনে।
তোমাকে একদম পুড়িয়ে ফেলবে।

মিশান ঠোঁট টিপে হাসি দিলো,তীব্র মোশারফ স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-স্যার আমার সামনে আমার দুর্নাম করেন, ঠিক আছে।কিন্তু আমার বউয়ের সামনেও কেনো?
-তোমার এই ব্যাপার টা নিয়ে পরে আলোচনা করছি সবাই।দেখা যখন হলোই তাহলে একটা উত্তর দাও তো।
এসবি তে ফিরছো কবে?
-আজকেই এপ্লিকেশন করবো অফিসে।
-তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে,এলেই বুঝবে।প্রস্তুত থেকো।

তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-সময় যখন খারাপ যায় তখন সব কিছুই এক গতিতে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে,আবার যখন ভালো যায় সব এক গতিতে সাফল্য টেনে আনে।

-তাহলে যাও তোমরা, দেখা হয়ে ভালো লাগলো।
-যাবো মানে, আপনি যাবেন না?আপনি কি আমাকে রিসিভ করতে আসেন নি?
-না আমি এসেছি আমার মেয়েকে রিসিভ করতে।
-হাইরে কপাল,কেউ এক পয়সার দাম দিলো না।আছিই যখন আপনার মেয়েটাকে দেখে যাই এক নজর।না পেলাম দূর থেকেই দেখবো।
-তীব্র তোমার মশকরা আমি নিতে পারলেও তোমার পাশের জন নিতে পারবে না,চোখ ফিরে তাকাও।

তীব্র মিশানের দিকে ঘুরতেই দেখে মিশান তীব্রর দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
-মজা করছিলাম তো। তুমি রাগ করো না।
চলো চলো আমরা বাড়ি যাই।

তীব্র মিশানকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
এয়ারপোর্টের বাইরে রহমান গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলো ওদের জন্য।
মিশানকে বাড়িতে দিয়ে, তীব্র নিজের কাজে চলে যায়। যেসব পেপারসে জাফরের সাইন নেয় সেসব কাগজে জাফরের সমস্ত কুকীর্তির স্বীকারোক্তি থাকে।জাফরের যেখানে যতো লিংক আছে এগুলো সব বের করে জাফরের সৎ ছেলেকে আটক করে।তীব্রর উদ্যম কেলানি খাওয়ার পর ওর ছেলে মুখ খুলে জাফরের কোন কোন উৎস থেকে কোন কোন রাস্তা দিয়ে টাকা আসে।ওর সৎ ছেলেকে রাখা হয়েছিলো শুধু টাকা পয়সা দেখভাল করার জন্য। ব্যাংক ডিটেইলস থেকে শুরু করে তীব্র সব রকম তথ্য নিয়ে, সেসব জায়গায় ফোর্স পাঠায় যেখানে অস্ত্র মাদকের আরদ। একে একে জাফরের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়।সুইচ ব্যাংকে জমানো সব টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে ট্রান্সফার করে দেয়। ওর সৎ ছেলে সহ ছোটো বড় যেসব দালাল ছিলো এই কাজের, তাদের সবাইকে জরিমানা সহ জেল দেয়া হয়।এখন জাফর নামের সমস্ত অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

ওদিকে সেদিন কোম্পানিতে Raid পড়ার পর ওদের জালিয়াতি কুকর্ম ধরা খাওয়াই এমডি সহ অই কাজে সংযুক্ত সেসব কর্মীদেরও পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়,যাদের মাঝে দ্বীপও ছিলো।
সবার পেছনে ল’এয়ার সেট করা হলেও দ্বীপের জন্য কোনো ল’এয়ার সেট করা হয় না।
কারণ দ্বীপের বাবা মা এতোটা আঘাত পেয়েছে ছেলের এমন কাজে, তাঁরা চায় না দ্বীপ তাদের জীবনে ফিরে আসুক।
দ্বীপকে দেখতে অব্ধি যায় না।
মিশান দেশে ফেরার পর দ্বীপের বাবা মাকে বলে কয়ে দ্বীপকে দেখতে নিয়ে যায়।
-নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে, আমাদের জীবনে এমন কুসন্তান জন্ম নিয়েছিলো। যাকে সারাজীবন শিখিয়ে এসেছি সব সময় অন্যের উপকারে আসতে, অনাহারকে খেতে দিয়ে,অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করতে, নির্যাতিতকে সঠিক বিচার এনে দিতে।জান বাঁচানো ফরজ,হোক সেটা নিজের জান কিংবা অন্যের।কিন্তু এমন কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছি যে সব শিক্ষার উল্টোটা ধারণ করেছে।দেখতে এসেছি বলে ভেবো না তোমাকে বাঁচাতে এসেছি।তুমি মরে পঁচে গলে গেলেও আমি আর দ্বিতীয় বার তোমার মুখ দর্শন করবো না।এখানে এসেছি শুধু তোমার উপর ঘৃণা প্রকাশের জন্য।আমি আদালতে আবেদন করে যাবো,যেনো কোনো ভাবেই তুমি এই লোহার ঘরটা থেকে বের হতে না পারো।এতো এতো মানুষের প্রাণ নিয়ে যে খেলতে পারে সে কোনো একদিন যে নিজের বাবা মাকেও মারতে আসবে না তাঁর কি গ্যারান্টি!

দ্বীপের বাবার সাথে সাথে দ্বীপের মাও কঠিন স্বরে বলে উঠলো,
-শুধু এইটুকুই না। ওকে তেজ্যপুত্র করার ব্যবস্থাও করবো। আমাদের মাত্র একটা ছেলেই আছে আর কোনো ছেলে নেই। যদি তাপসিনও একই কাজ করে কোনোদিন, তবে ওরও একই মাশুল দিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সন্তান শুন্য হয়ে বাঁচবো তবুও এমন কুলাঙ্গার অপকর্মে যুক্ত এমন ছেলের বাবা মা পরিচয় দেবো না।
ওর মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না। চলো এখানে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না আমার।

দ্বীপের বাবা মা দুজনেই চলে গেলো, পাশেই তাপসিন ছিলো, ভাইয়ের দিকে নিরবে তাকিয়েছিলো, বিশ্বাস হচ্ছে না ওর ভাই এমন কাজে জড়িত। দ্বীপ বাবা মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ভেতরে অনুশোচনার আবির্ভাব হলো।

মিশান তাপসিনকেও ওর বাবা মায়ের সাথে যেতে বললো।তাপসিন চলে যাওয়ার পর মিশান দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বললো।
-একটা হাদিস আছে মামাই শুনিয়েছিলো বহুবছর আগে।আমার মাথার ব্রেইন তো একটু এবনরমাল, শঠিক উক্তি মনে নেই,যতোটুকু মনে আছে ততোটুকুই বলছি।
ক্ষমা একটি মহৎ গুণ।সৃষ্টিকর্তা বলেছেন , কেউ যদি খুন করে তাকে যদি তুমি ক্ষমা করতে না পারো তবে তুমি খুনের বদলা খুন করো, সেই সম্মতি তোমায় দিয়ে দিলাম, তবুও তুমি ক্ষমা করো।
জানি না এটা সত্যি কিনা,সৃষ্টিকর্তা আদৌ এই কথা বলেছেন কিনা । তবে আমি আর খুন করবো না, হাঁপিয়ে গেছি খুন করতে করতে। যা শাস্তি উপরওয়ালাই দেবেন।
তোকে বলেছিলাম না তোকে আমি খুন করবো না, তাঁর কারণ কি জানিস?আমি তোর বাবার নুন খেয়েছি।তাঁর ছেলেকে আমি কিভাবে মারি? তোকে তো শাস্তি দেবেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা, একটু একটু করে মরবি, তুই পঁচে মরবি আমার বোনের অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপে। আর বাকি মানুষ গুলোর কথা বাদ ই দিলাম।

মিশানের গলা ধরে আসছিলো,আর কিছু ন। বলে মিশানও চলে গেলো।দ্বীপ কিছু বলতে পারছে না। ওর মাথায় ঘুরছে এখান থেকে বের হবে কি করে।কোনো ভাবে ওর এমডি বের হতে পারলে ওকে বের করার চেষ্টা তো দূর চিন্তাও করবে না,উল্টো এমন কাজ করে রাখবে যেনো কোনোদিন বের হতে না পারে।ওর জন্যই আজকের এইদিন দেখতে হচ্ছে তাঁর।

কিছু ঝড়ে সব কিছু এমন ভাবে উলটপালট হয় সব প্রশ্নরা থাকে এক প্রান্তে, উত্তর গুলো থাকে আরেক প্রান্তে, যার কারণে জীবনের অর্ধেক সময় কেটে যায় সঠিক প্রশ্নের সাথে সঠিক উত্তর মেলাতে গিয়ে ভুল প্রশ্নে ভুল উত্তর বসিয়ে রাখি।একটা পর্যায় যখন বুঝতে পারি এই প্রশ্নের এই উত্তর না, কিংবা এই উত্তরটার প্রশ্ন এটা না, তখন আবার ছুটতে শুরু করি সঠিক সমাধানের জন্য।

র‍্যাব থেকে ট্রান্সফার হয়ে তীব্র আবার এসবিতে ফিরে আসে।ফিরে আসতেই থাকে ওর জন্য চমক।
বেশ কয়েক মাস আগে তীব্র পদোন্নতির পরিক্ষা দিয়েছিলো, রেজাল্টও ভালো এসেছিলো, এত এত খারাপ সময়ের মাঝেও সব ক্যান্ডিডেটদের মাঝে থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলো,প্রমোশনটা পেন্ডিং ছিলো।
এখন সেই প্রমোশনটা লেগে গেছে। SP থেকে AIG পদে পদোন্নতি হয়েছে তীব্রর।
এই খুশির সময়েও তীব্রর মন খারাপ ভাইয়ের জন্য, ইচ্ছে ছিলো দুই ভাই একসাথে সাফল্য নিয়ে ঘরে ফিরবে।

-কংগ্রাচুলেশন স্যার !
-স্যার?
-আজকে স্যার বলতে দাও,তোমার ব্যাচটা চেঞ্জ হয়েছে,সিনিয়র থেকে আরেক ধাপ সিনিয়র হয়েছো।মুখ দিয়ে স্যার ই বেরুবে আজ!
আচ্ছা আপনার মুখ এমন গোমড়া লাগছে কেনো? এই খুশির সময়ে?
-তোমার কি মনে হয় এই দেশে কেবল একটাই জাফরের চক্র? আরো কত শত হাজার হাজার জাফর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের কালো ধান্দা নিয়ে। আমি জানি না আমি কতটা পারবো আমার ভাইয়ের মতো দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে।আমার ভাই তো ছিলো সুপার হিরো,আর আমি ফেইক।আমার ভাইয়ের রোল প্লে করা এক বান্দা মাত্র।চারদিকে বিশ্বাসঘাতকে ভরা,সাহায্য করার মতো একটা মানুষও নেই, যাকেই ভরসা করবো সেই ছুরি মারবে।

-চিন্তা করো না তীব্র।তোমার পাশে এই মিশান সর্বদা একটিভ আছে।তোমার লড়াই মানে আমার লড়াই। এই রক্তে যতদিন তেজস্ক্রিয়তা আছে ততোদিন আমি একটিভ থেকে যাবো।
-আমি জানি মিশান তুমি আমার পাশে থাকবে। কিন্তু সব সময় তোমাকে ব্যবহার করলে তো ভেতরে হারানোর ভয় চেপে আসবে। আরেকটা চিন্তা তো মাথায় আছেই,মাকে কিভাবে রাজি করায় বলোতো তোমার ব্যাপারে?
-তোমার বাবাকে আগে রাজি করাও।
-বাবা তো জানেই।কিন্তু বাবা মাকে অনেক ভালোবাসে যার কারণে মাকে কখনো কোনো কিছুতে জোর করে না।
-তৃপ্তি?
-তৃপ্তি জানে না ও মাকে বলে দেবে বলে ওকে জানাই নি,ওর একটু পেট পাতলা স্বভাব।

-নিজের বোনের নামে এভাবে একটা মেয়ের সামনে বদনাম করছো? হে খোদা কি ভাই দিয়েছো আমাকে!

কথাটা শুনেই তীব্র পেছনে ঘুরলো,ঘুরে তাকিয়ে দেখে তৃপ্তি আর ওর হাজবেন্ড।
এতোক্ষণ মিশান তীব্র একটা ক্যাফেতে বসে কথা বলছিলো, দুজনে একপাশে পাশাপাশি বসার কারণে ওদের পেছনে তৃপ্তিকে দেখতে পায়নি।তৃপ্তি পেছন থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বুঝে এটা তীব্র আর পাশে একটা মেয়ে,পেছন থেকে কান পাততেই এটুকু শুনে।
-কি স্বভাব তোমার!পাব্লিক প্লেসে এসেও আড়ি পাতছো? বেশ করেছি,তোমার যে স্বভাব সেটা তো বলবোই।
তৃপ্তি গোয়েন্দা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-উনি কে?
-আমার বউ,তোমার ভাবী।মাকেও বলে দিও কেমন?
যদি সে বরণ করতে রাজি হয় তাহলে আমি ওকে নিয়ে বাড়িতে যাবো।
না নিলে আমি ওকে নিয়ে আলাদা থাকবো।
– ইয়ার্কি করছো?
-না তৃপ্তি সিরিয়াসলিই বলছি।
আর কয় মাস গেলে আমাদের বিয়ের দু বছর চলে যাবে।

তৃপ্তি মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তীব্র তৃপ্তির হাজবেন্ড সুমনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-দাঁড়িয়ে থেকো না, বসো তোমরা।
ওরা দুজনেই বসলো
-আমাদের কেনো জানাও নি?
-এমনিই, পরিস্থিতিটা অমন ছিলো। এখন বলো না আবার ভাইয়ের বিয়ে আর বোন হয়েও আনন্দ আমোদ করতে পারলাম না, সবটা বুঝার চেষ্টা করো তৃপ্তি, কোনো কিছুই তো প্ল্যান মতো হলো না, দুই ভাই মিলে যেসব ভাবনা গুলো গুছিয়ে রেখেছিলাম, সব মিলিয়ে গেলো না পাওয়ার ভীড়ে।
-বুঝেছি ভাইয়া। কিন্তু আমাদের কেনো জানালে না একবার?
-বাবা জানে তো।শুধু তুমি আর মা জানো না।তোমরা তো দীপ্তিকে নিয়ে পড়েছিলে, তাই বলিনি।এরমধ্যে আরেক সমস্যা বেঁধেছে,মিশান আমার সাথে প্র‍্যাংক করার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলো মাতালের অভিনয় করে,কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত মিশান মায়ের সামনে পড়ে,
মা মিশানকে ভুল বুঝে। সেখান থেকে মা অনড় হয়ে আছে,মিশানকে হয়তো মেনে নেবে না ।
-তুমি আপসেট হইয়ো না ভাইয়া, মা হয়তো এখনো দীপ্তির ঘোরে আছে। দীপ্তি তো এখন আর নেই, তাই পিছুটানে না ফেরাই ভালো।মা আমাকে বলেছিলো” তীব্রর একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক, মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর কিন্তু উৎশৃঙখল টাইপের।নেশা করে একদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিলো।”
আমি ব্যাপার টা তেমন ভাবে মাথায় নিই নি।
কিন্তু সেদিন হসপিটালে দেখার পর থেকে মনে হলো আমি উনাকে চিনি কোথাও দেখেছি,এখনোও মনে পড়ছে না কোথায় দেখেছি।
-তুমি ওকে দেখো নি,ওর বোনকে দেখেছো।ওর বোনের সাথে ওর ৮০% ই চেহারার মিল আছে ।তুমি যে একদিন আমার মোবাইল নিয়েছিলো অই মোবাইল টা মিশানের ছিলো,আর স্ক্রিনে নিশানের ছবি ওয়াল পেপার দেয়াছিলো। ওটা দেখেই ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলেছো।নিশানকে বাস্তবেও দেখোনি, কারণ নিশান মারা গিয়েছে।
তৃপ্তি চুপ করে রইলো। সুমন তৃপ্তিকে বললো,
-তৃপ্তি,তুমি তো অনেক মা ভক্ত, তুমি মাকে যা বলবে মা সেটা পজিটিভ দিক দিয়ে মেনে নিতে পারে।আমার কি মনে হয়,তুমি কিছুদিনের জন্য মায়ের কাছে যাও,আর একটু একটু করে মায়ের কানে ভাবীর ব্যাপারটা তুলে ধরো,দেখো মা রাজি হয়ে যাবে।

তীব্র সুমনকে বললো,
-তুমি ঠিক বলেছো সুমন।আমারও তাই মনে হয়। মা আমাকে বেশি ভালোবাসলেও আমি তো কথা শুনি না মায়ের, তাই আমার কথা শুনে মা দশবার ভাবে,কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে তেমন হবে না তৃপ্তি, তুমি দেখো পারবে কাজটা।এক কাজ করো কিছুদিনের জন্য বাড়িতে আসো সুমন সহ আসো।
-ঠিক আছে দেখছি, কি করা যায়।

তৃপ্তি সুমনের সাথে কথাবার্তা শেষে তীব্র মিশানকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে থাকা অবস্থায় মিশানের ফোনে ওর মামা কল করে, তীব্রকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলে।

ওরা দুজনেই ক্যান্টনমেন্টে যায়।
সাদেক খান তাঁর নিজ অফিসেই ছিলো।
মিশান তীব্র যাওয়ার পর ওরা দুজন অফিসে বসে।
-মিশান!
-হ্যাঁ মামা।
মন ভারী করে মামা বলতে লাগলো,
-তুমি তো জানোই, নিশানের কত বড় স্বপ্ন ছিলো তোমাকে নিয়ে। তুমি একজন আর্মি অফিসার হবে, নিশান সেটা নিয়ে প্রাউড ফিল করবে।তুমি সেই স্বপ্ন টা পূরণ করেছো ঠিকি কিন্তু স্বপ্নটাকে জীবন্ত রাখতে পারোনি।আমি চাই না আমার নিশান মায়ের স্বপ্ন টা ওর সাথে সাথে মরে যাক।তাই তুমি যখন রিজাইন করো,লেটার টা এপ্রুভ করিনি।সিনিয়রদের অনেক রিকুয়েস্ট করে কিছু টাকা ইনভেস্ট করে তোমার জায়গাটা টিকিয়ে রেখেছি,এতোদিন তোমার দায়িত্ব অন্য একজন পালন করেছে তাই কোনো সমস্যা হয় নি।কিন্তু ইদানীং উপর থেকে চাপ আসছে হয় তোমাকে এর মধ্যেই তোমার জায়গায় জয়েন হতে হবে নয়তো তাঁরা তোমার জায়গাটা পার্মানেন্ট শুন্য করে দেবে।এতো কষ্ট করে বোনের জন্য এই অব্ধি এলে,এভাবে হেরে গিয়ে থেমে যাবে মা? বোনের স্বপ্নটাকে জীবিতো রাখবে না?

মিশান খানিকটা ভাবগাম্ভীর ভাবে বললো,
-মামা!
-প্লিজ মিশান! তোমাকে আর ছন্নছাড়া দেখতে পারছি না মা।প্লিজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসো অন্ততো নিশানের জন্য!

মিশান তীব্রর দিকে তাকালো,তীব্র চোখ দিয়ে ইশারা করলো প্রস্তাব মেনে নিতে।ভেতরে একটু সংকুচ রেখে মিশান উত্তর দিলো।
-ওকে মামা!আমি জয়েন করবো আবার।
-থ্যাংকস মা!
সাদেক খান মুখে হাসি নিয়ে মিশানকে কিছু পেপারস দিলো,মিশান তাতে সিগনেচারের মাধ্যমে নিজের রিজাইন লেটার গুলো প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় জয়েনিং পেপারসে সাইন করলো।
সাদেক খান তীব্রকেও ওর প্রমোশনের জন্য শুভেচ্ছা জানালো,যদিও ফোন করে একবার জানিয়েছে,এখন সামনা সামনি জানালো। কিছুক্ষণ পর তীব্র সাদেক খানকে প্রস্তাব দিলো মিশানকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য পাকিস্তান যাবে। সাদেক খান রাজি হয়ে গেলো।

মিশানকে নিয়ে দু এক দিনের মাঝেই পাকিস্তান যাবে ঘুরতে।

(এখানেই শেষ না, আরেকটুখানি বাকি আছে, বাকি অংশের জন্য অপেক্ষা করুন, ধন্যবাদ ।)
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো। গল্পকে গল্প হিসেবে দেখুন,বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে যাবেন না দয়া করে।
ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকুন,ভালো না লাগলে ইগনোর করুন,ধন্যবাদ!)

আগের পর্বের লিংক-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=426257135317797&id=100038005432100
পরের অংশের লিংক-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=428859805057530&id=100038005432100

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here