তোকে_ঘিরে ❤
পর্ব_৫৩.
#ফাবিয়াহ্_মমো
বিকট উত্তেজনায় জমকালো হলুদের আমেজটা পন্ড হলো। পূর্বের মাথা যেনো ঠিক নেই সে এমন ভঙ্গিতে চিল্লাচিল্লি করছে। আজ পূর্বকে এমন হালেও দেখবেন তা হয়তো আশা করেনি খোদেজা। এ যেনো পূর্ব নামধারী অন্য পুরুষ! সন্ধ্যার আকাশটাও যেনো পূর্বের গুমোটপূর্ণ অবস্থার সাথে গুমড়ে যাচ্ছে। বাড়ির প্রতিটি সদস্য নির্বাক, হতবাক, বাকরুদ্ধ! পূর্ব পাগলের মতো পূর্ণতাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে। আজ স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে গাড়ি চালাতেও পারেনি সে। প্রিয়তমাকে ওমন বীভৎস অবস্থায় দেখে ওর রূহ কেপে উঠেছে তৎক্ষণাৎ। প্রাণটা যেনো চলে যাওয়ার অপেক্ষা গুণছে পূর্বের। আয়মান গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে। চোখ বেয়ে টলটল করে অশ্রুধারা পরছে, বুকে যেনো উত্থাল-পাত্থাল ঝড়। পূর্ব গাড়ির পেছন সিটে বসে পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে চিৎকার করছে তাড়াতাড়ি চালানোর জন্য। আয়মানের বেগতিক স্পিডের পরেও গাড়ি যেনো রাস্তা শেষ করতে পারছেনা। গাড়িতে আরো একজনের উপস্থিতি ছিলো যার অশ্রুদৃষ্টি সম্পূর্ণ মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে দেখছে। পূর্বের দফায় দফায় চিৎকার শুনে খোদেজাও পূর্বকে রণচন্ডী রূপে অপমান করতে পারছেনা। আচলে মুখ ঢেকে হু হু করে ফুপিয়ে কাঁদছে। পূর্বের কোলের উপর বেঁহুশ পূর্ণতার মাথা। পূর্ণতার মুখের উপর কারো অশ্রুজল এসে ঠেকছে। পূর্ব কখনো চিন্তা চেতনা হারিয়ে এভাবে চিৎকার করবে পূর্ণতা সজ্ঞানে থাকলে অবাক হতো। গাড়ির জানালা খোলা থাকলে রাস্তার প্রতিটা মানুষ জানতো একজন ব্যথিত ব্যক্তি তার প্রিয় জিনিস হারানোর ভয়ে চারপাশ ভুলে উন্মাদগ্রস্ত হয়েছে। খোদেজা নিজের কর্মরত হাসপাতালে পূর্ণতাকে এডমিট করিয়ে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করে। এদিকে এসেও পূর্ব থেমে থাকেনি। হাসপাতালের প্রতিটা নার্সকে সে হাতজোর করে পূর্ণতার সেবার জন্য নিয়োজিত হতে বলেছে। কোনোরূপ গাফিলতি যেনো নাহয় পূর্ণতার চিকিৎসার দিকে। খোদেজা ডাক্তারের বেশভূষা গায়ে দিয়ে ওটিতে ঢুকতে নিলে পেছন থেকে পূর্ব ওকে আকুতির সুরে বলতে থাকে,
– মা আমাকে ভেতরে যেতে দিন, আমার পূর্ণ ভেতরে একা একা কষ্ট পাচ্ছে। আমি এখানে থেকে কি করবো মা? আমাকে ওর কাছে যেতে দিন। আমার উপর রহম করুন।
খোদেজার মাথায় চট করে রুমের মধ্যে পূর্ণতার সেই রক্তাক্ত অবস্থার কথা মনে পরে যায়। ক্রোধে তিনি সকলের সামনেই এতোক্ষন যা করেননি তাই করে ফেললেন। ঠাস করে উপস্থিত সবার সামনে থাপ্পর মারলেন পূর্বকে। রাগান্বিত দৃষ্টিতে মুখের মাস্ক থুতনিতে টেনে বললেন,
– আমার মেয়ে যদি আজ মরে যায় আমি তোমার সবকিছু শেষ করে দিবো পূর্ব!
পূর্ব থাপ্পর খাওয়ার পরে মুখটা খোদেজার দিকে ঘুরিয়ে অসহায় গলায় বলে,
– আমার সবকিছু ওকে ঘিরে মা। ওর কিছু হলে আমি এমনিতেও শেষ হয়ে যাবো। আমি তো বাঁচতে পারবো না। আমাকে দয়াকরে ওর কাছে যেতে দিন। আল্লাহ্ পাকের দোহাই দিচ্ছি মা!
খোদেজা চোখ রাঙানো অবস্থায় জোর গলায় বলে,
– সামনে থেকে তোমার জঘন্য মুখ সরাও পূর্ব! আর পারলে এই হাসপাতাল থেকে বিদেয় হও! আমি কোত্থাও তোমার চিহ্নটুকু দেখতে চাইনা!
খোদেজার কঠিন জবাব শুনেই পূর্বের পেছন থেকে ওয়াসিফ পরিবার হৈহৈ করে উঠলো! পূর্বিকা তেড়ে পূর্বের পাশ কাটিয়ে খোদেজার সামনে এলো। চোখদুটো কান্নায় ফুলে গেলেও এখন সেই চোখে স্পষ্ট রাগ। পূর্বিকা চেচিয়ে উঠলো,
– আপনি বড় বলে সম্মান করছি আন্টি! কিন্তু খবরদার আমার ভাইকে আপনি অপমান করতে যাবেন না! আপনার দৌড় যে মোল্লার মসজিদ পযর্ন্ত সেই সম্পর্কে আমাদেরও ধারণা আছে! পাওয়ারের কথা বললে আমার ভাই নিজেই সেটা যথেষ্ট দেখাতে প্রস্তুত! আপনি ওকে ভেতরে যেতে দিন বলছি!
পূর্বিকার ক্রোধপূর্ণ কথায় খোদেজার শরীর জ্বলছিলো। এদিকে পূর্বের ইচ্ছে করছিলো ঠাটিয়ে পূর্বিকার গালে মারতে! বড় বলে আজ পযর্ন্ত খোদেজার কটু কথার কোনো ভারি জবাব দিলো না, সেখানে বড়বোন এসেই অসম্মান করছে। পূর্ব রেগে গিয়ে ওর দিকে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
– তোকে আমার সাইড কথা নিয়ে বলতে বলেছি? সামনে থেকে যা!
পূর্বের গর্জে উঠা কন্ঠ শুনে পূর্বিকা কিছু বলতে যেয়েও বললো না। ঠোট ফুলিয়ে আবার কেদেঁ দিতেই পিছিয়ে গেলো। খোদেজা যেই পা ঘুরিয়ে থিয়েটারে ঢুকবে ওমনেই পায়ের কাছে ভার অনুভব হলো তার। মাথা নিচে ঝুকাতেই সাথে সাথে সে পা পিছিয়ে ফেললো। পূর্ব হাটু গুজে পা ধরে মিনতি করছে ভেতরে যাওয়ার জন্য। পেছন থেকে পুরো পরিবার সেটা অশ্রুচোখে আশ্চর্য দৃষ্টিতে দেখছে। পলাশ ওয়াসিফ ছেলের অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে বুকে চাপড় মারতে নিলে তাড়াহুড়ো করে আয়েশা সেটা থামিয়ে দেয়। খোদেজা সবার দিকে দৃষ্টি ফেলে শেষে ভেতরে ঢুকে গেলেন তিনি। পূর্ব তখনও ফ্লোরে হাটু মুড়ে ওটির বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়েছিলো। খোদেজার নিষ্ঠুর আচরণে বুকের ভেতরটা আরো দগ্ধ হচ্ছিলো ওর।
আয়মান পূর্ণতার বাবার সাথে পূর্ণতাকে রক্ত দেওয়ার জন্য অন্য কক্ষে গিয়েছিলো। এসেই তারা জানতে পারেন খোদেজা আরো একবার নিজের মেয়ের জামাইকে বিশ্রীভাবে অপমান করেছেন। পূর্ব সেই থেকে চুপচাপ। সবাই যার যার আসন নিয়ে সিটে বসে কাঁদলেও পূর্ব ওটির দরজায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। চোখদুটো বন্ধ থাকলেও দুইকোণা থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছিলো।আয়মান সবার অবস্থা একপলক চেয়ে দেখতেই পূর্বের পাশে গিয়ে সেও হেলান দিয়ে বসলো। পূর্ব চোখ খুলে বামে তাকিয়ে আয়মানকে দেখতেই আবার মূখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। খানিকক্ষন বাদে আয়মান পূর্বের কাধে হাত রেখে বললো,
– পূর্ব ভাই, টেনশন করবেন না। দুজনই ভেতরে দুজন সুস্থ থাকবে।
পূর্ব কান্নায় জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বললো,
– আমি শুধু ওকে চাই। আমার বুকটার মধ্যে ও ফিরে আসুক আমি আর কিচ্ছু চাইনা।
আয়মান আর কথা বাড়ালো না। পূর্ণতার অবস্থা স্বচক্ষে দেখার পর মনটা কোনোভাবেই শক্ত হতে চাইছেনা। আজ কতমাস পর চোখ উপচে পানি পরছিলো জানা নেই। শ্রেয়ার মৃত্যুর পর আজ পূর্ণতার জন্য বুকের ভেতরটা পুরে যাচ্ছিলো। কোনো অশান্ত আগুন যেনো সবকিছু ছাড়খার করে দিচ্ছিলো ওর। এদিকে সায়মা নিঃশব্দে কেদেঁ গেলেও সেটা শুধুমাত্র পূর্বের ভয়ের কারনে হচ্ছিলো। জাওয়াদের অবস্থা আরো করুণ! জীবনে এতোটা ভয় আগে কখনো পায়নি যতটা সে পূর্বের কারনে পাচ্ছে। পূর্ব যদি ভুলেও সত্যটা জানতে পারে হিংস্র শেয়ালের মতো ছিড়ে ফেলবে। সায়মা যখন পূর্ণতার দম আছে কিনা চেক করছিলো তখনই পূর্ণতার নিশ্বাস খুব কম পরছিলো। সায়মা সেটা দেখেই অনবরত কাঁদতে থাকলেও জাওয়াদ সেখানে দূধর্ষ একটা বুদ্ধি আঁটে। পূর্ণতার পায়ের কাছে পানি ঢেলে জগ ভেঙ্গে রাখে। সবাই যেনো রুমে এলে এটাই ভাবে পূর্ণতা পা পিছলে পরে গেছে। এরপর সায়মাকে সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে যেতেই কিছু সময় বাদে পূর্ব রুমে ঢুকে। ওর এক চিৎকারেই পুরো বাড়ির অবস্থা একদম নাস্তানাবুদ! কেউ আর লনসাইডে বসে থাকার সাহস জুটাতে পারেনি। একছুটে এসেই দেখে, পূর্ণতার মাথা বুকে চেপে পূর্ব পাগলের প্রলাপ করছে।
.
টিকটিক করে সময় পেরিয়ে গেলো দুঘন্টা। ওটি থেকে এখনো বের হয়নি খোদেজা। মাঝেমাঝে কিছু নার্স নানা সরন্ঞ্জাম নিয়ে আসা-যাওয়া করলেও পূর্ব ওদের ডেকে বিরক্ত করেনি। পলাশ ওয়াসিফ ছেলের কড়া আদেশের কাছে নিচু মুখ করে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হলেন। পরশ ও পলক ওয়াসিফ বড় ভাইকে নিয়ে মাইক্রো গাড়িতে রওনা হলেও পূর্বকে বারবার বলে গেছেন যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময় কল দিয়ে বলতে। পূর্ব সেটাই হ্যাঁ বোধকে ইশারা করে বিদায় জানায়। পূর্বিকা আর যেতে পারেনি পূর্ণতার জন্য। হাসপাতালে এখন শুধু আয়মান, পূর্বিকা, পূর্ব। সময় যতো এগুচ্ছিলো পূর্বিকার ফুপানো কান্না ততই পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা করছিলো। আয়মান অনেক বুঝিয়েও পূর্বিকাকে থামাতে পারেনি। হঠাৎ আয়মানের অশ্রুচোখ থম মেরে কোথাও আটকে যায়! পূর্বের পায়ের দিকে তাকিয়ে অস্থির কন্ঠে পূর্বের কাধ ধরে বলে,
– ভাই রক্ত পরছে। আপনি আর দাড়িয়ে থাকবেন না!
পূর্ব আয়মানের দৃষ্টি লক্ষ করে নিজের পায়ের দিকে তাকায়। ডানপায়ের ক্ষত থেকে আবার রক্ত পরছে ওর। দুটোদিন যাবৎ পায়ের উপর যেভাবে ধকল নিয়েছে হয়তো ক্ষত জায়গাটা আবার কাচা হয়ে রক্ত ঝরছে। পূর্ব শান্ত দৃষ্টিতে ব্যথিত গলায় বলে উঠে,
– তোমাকে অনুরোধ করছি আয়মান, দয়াকরে আমার শরীরের দিকে খেয়াল রাখা বন্ধ করো। ওটিতে যে মৃত্যুর জন্য যুদ্ধ করছে তাকে বলো আমার কাছে ফিরে আসতে। আমি তাকে পেলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আমি এখানে বসে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট পাচ্ছি। সে আমাকে বুঝতে চাইছেনা। ওকে বলো আয়মান। ওকে আমার কাছে ফিরতে বলো।
আয়মান স্থিরদৃষ্টিতে ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়েছিলো। এই ভাঙ্গাচুরা ব্যক্তিত্বের পূর্বকে সে চিনতেই পারছেনা। এই মানুষটার নাম শুনলেই চোখের পর্দায় এক বলিষ্ঠ চেতনার নেতৃত্বাধীন চেনামুখ ভেসে উঠে, আজ সেখানে তার মুখ কান্নায় জর্জরিত। পূর্বিকা দ্রুত উঠে গিয়ে পূর্বের পায়ের কাছে বসে পরলো। তার হাতে যে রুমালটা ছিলো সেটা দিয়ে তাড়াতাড়ি পূর্বের পা মুছতে লাগলো। পূর্ব হুলস্থুল আকারে চেঁচাচ্ছে, পূর্বিকা শুনছেনা। আয়মানও হঠাৎ দৌড়ে গেলো লিফটের দিকে। পূর্ব নিরুপায় হয়ে ফ্লোরে বসে খপ করে পূর্বিকার হাত ধরে আটকালো। রাগত স্বরে চোখ গরম করে বললো,
– ছোট ভাইয়ের পা ধরে পূন্য কামাতে চাচ্ছিস? থাপ্পর খেতে চাস? কেনো এমন করছিস? উঠ বলছি। এখুনি উঠবি।
পূর্বিকা হাত ঝাড়া দিয়ে পূর্বের উদ্দেশ্যে বললো,
– তুই যদি বড় বোনের গায়ে হাত তোলার স্পর্ধা দেখাতে পারিস, তো আমি কি পারবো না? পা দেখতে দে পূর্ব। রক্ত পরছে সেটা মুছতে দে। হাত সরা।
– তুই আমার উপর হুকুম করছিস আপি?
– আমি তোর একবছরের বড়! সাবধানে আমার সাথে কথা বলবি। পা দেখতে দে।
পূর্বিকা জোর করে রক্ত মুছে দিলেও আয়মানের আনা ঔষুধ সে লাগালো না। পূর্ণতার জন্য সেই একই ভঙ্গিতে পায়চারি করতে থাকলে কিছু সময় পর ওটি থেকে বেরিয়ে আসে খোদেজা। খোদেজার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে চোখের পাতা ভীষন ভারী, বয়সের ভারে কুঁচকে যাওয়া ফর্সা গালটা লাল। পূর্ব ছুটে গিয়ে খোদেজাকে অস্থির হয়ে বললো,
– মা.. মা ও কেমন আছে? ওকে একবার দেখা যাবে? আমি একটু ভেতরে যেতে চাই মা। আমাকে ওর অবস্থার ব্যাপারে বলুন!!
খোদেজার ক্রোধদৃষ্টি তখন পূর্বের দিকেই নিষ্পলক ছিলো। পূর্বের দিকে তাকিতে তিনি মাস্কটা টেনে খুললেন। ক্ষুদ্ধ গলায় বললেন,
– আজ থেকে ও তোমার কাছে মরে গেছে।আর কখনোই তুমি ওর কাছে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবেনা ওয়াসিফ পূর্ব! আমার একমাত্র সোনার টুকরোকে তুমি আর কোনোদিন দেখবেনা!
বলতে বলতেই হু হু করে কেদেঁ উঠলেন খোদেজা। কান্নার উচ্চাশব্দে পূর্ব পাথরের মতো তাকিয়ে থাকলে আয়মান ও পূর্বিকা সাথেসাথে দৌড়ে আসে। আয়মান উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– আন্টি, পূর্ণতা কেমন আছে? আন্টি কাদবেন না প্লিজ! পূর্ণতার খবরটা বলুন! ও কেমন আছে?
খোদেজা কাদতে কাঁদতেই নাক টেনে আয়মানের দিকে তাকালেন। আয়মানের বুকে মাথা রেখে ফের কেদেঁ উঠলেন তিনি। আয়মান হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো! হাত পায়ে কাটা দিচ্ছিলো ওর। ঢোক গিলতেও পারছেনা সে। খোদেজার মাথাটায় হাত রেখে স্তব্ধ কন্ঠে উচ্চারণ করলো,
– আন্টি, পূর্ণতা..?
খানিকটা সময় বাদে মুখ খুললেন খোদেজা। চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন,
– পূর্ণতার বাচ্চাটা পেটেই মরে গেছে আয়মান। বাচ্চাটা বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাচ্চাটা পূর্ণতার শরীরের সব শক্তি নিয়ে চলে গেছে। আমার কলিজার টুকরাটার শরীরে একটুও রক্ত রাখেনি। জীবনে এই দিনও যে দেখতে হবে আমি মা হয়ে ভাবতে পারিনি গো আয়মান। আমার মেয়েটা অবচেতন অবস্থায় কি পরিমাণ কাতরাচ্ছিলো…আমার বুকটা ছিড়ে যাচ্ছিলো ওই অবস্থা দেখে। এই জানোয়ার আমার মেয়েটাকে বিয়ের পর শান্তি দেয়নি। ওকে একটুও শান্তি দেয়নি।
খোদেজা আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। পূর্ণতার বিবরণ শুনে পূর্বের বুকটা ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছিলো। সে না পারছিলো চিৎকার করে কাঁদতে, না পারছিলো নিজেকে শেষ করতে। ভাগ্য এমনভাবে পরিহাস করলো অকল্পনীয় ছিলো পূর্বের কাছে। পূর্ব বহুকষ্টে নিজের ভেতর শক্তি জুগিয়ে বললো,
– আমাকে একবার ওকে দেখতে দিন মা। আমি শুধু একবার ওর মুখটা দেখবো। এরপর আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মেনে নিতে প্রস্তুত। আমার মতো অধমের উপর শেষবার কৃপা করুন মা।
খোদেজা ইচ্ছে করছিলো আরো কয়েকটা চড় বসিয়ে গলাধাক্কা দিয়ে পূর্বকে বের করে দিতে। কিন্তু আয়মানের অনুরোধে তিনি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেও সেখানে শর্ত জুড়ে দিলেন শাস্তিস্বরূপ যা বলবেন তা পূর্ব যেনো মেনে নেয়। পূর্ব আপাতত সেটাতে রাজি হয়ে গেলে পূর্ণতাকে দেখার সুযোগ পায় রাত একটার দিকে। পূর্ণতাকে নরমাল প্রাইভেট কেবিনে শিফট করলে পূর্ব কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে যায়। সাদা বেডের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে পূর্ণতা। হাতে নানাপ্রকার নল লাগানো। অন্যহাতে স্যালাইনের তীক্ষ্ম সূচের নল ঢুকানো। সাদা রঙের পাতলা কাথাটা পেট পযর্ন্ত ঢেকে দেওয়া। পায়ে পায়ে হেঁটে এসে বেডের উপর বসলো পূর্ব। লালবর্ণের অশ্রুপূর্ণ চোখদুটো পূর্ণতার বেহুশ মলিন মুখের উপর আটকে আছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে পূর্ব। তার শ্বাস নিতে বুকে ভার অনুভব হচ্ছিলো। পূর্ণতার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে পেটের উপর দৃষ্টি আটকে গেলে মাথা নুয়ে মুষড়ে কেদেঁ দেয় পূর্ব। সন্ধ্যায় পূর্ণতা কতকিছু শোনালো এই ফোলা অবস্থার জন্য। কোথায় গেলো সেই অনাগত মানুষটা? চার দেয়ালের কেবিনের ভেতর পূর্ব নিজেকে সামলাতে পারছিলো না। চিৎকার করে কেদেঁ বলছিলো,
– কেনো আমার সাথে এই কাজ করলে খোদা? কি দোষ আমার? দুনিয়ায় কি পাপ করেছিলাম যার খেসারত আমার প্রিয়তমাকে এভাবে চুকাতে হলো? আমার সন্তানটার কি অপরাধ ছিলো এই দুনিয়ায়? ওকে কেনো সহ্য করতে হলো? আমাকে শরীরের সবকিছু নিয়ে যেতে তবুও আমার দুজন মানুষকে সহি-সলামত ফিরিয়ে দিতে? আমি কি মুখ নিয়ে পূর্ণর সামনে দাড়াবো?
পূর্ব নিজেকে সামলাতে সক্ষম হচ্ছিলো না। গম্ভীর, রাশভারী চেহারার আদল বদলে গিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ, দিশেহারা চেহারা বেরিয়ে আসছিলো।। পান্ঞ্জাবীর হাতায় চোখ ডলে পূর্ণতার পেটের উপর হাত রাখলো পূর্ব। স্ফীত হয়ে আসা পেটটা আগের মতো হয়ে গেছে। পূর্ব সেখান থেকে হাত সরিয়ে পূর্ণতার বিষণ্ণ মুখটার কাছে গেলো। গালে হাত রেখে কপালে, বদ্ধ চোখের পাতায়, গর্তময় থুতনিতে ঠোঁটে ছুঁয়িয়ে দিলো। পূর্ণতার শুষ্ক চৌচির ঠোঁটে নিজের ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিবে হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো। পূর্ব মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে খোদেজা। পূর্ব দ্রুত বেড থেকে উঠে দাড়ালো। খোদেজা মেয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে পূর্বকে ইশারা করলো রুমের এককোণায় আসতে। পূর্ব কিছুই পারছিলো না খোদেজা কেনো এখন কথা বলতে চাইছে। পরক্ষনে খেয়াল হলো, হয়তো শাস্তির কথা বলবে। খোদেজা শক্ত চাহনিতে পূর্বের মুখোমুখি দাড়িয়ে বার্তা পেশ করলো,
– আশাকরি আমার মেয়েকে মন ভরে দেখেছো। ও একদম সুস্থ নেই। মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে। সামনে তোমার ইলেকশনের প্রচার শুরু হবে। তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে দেশের জন্য কিছু করার। কিন্তু ওয়াসিফ পূর্ব, একজন মা-কে তুমি আশ্বাস দিতে পারবে? তুমি যে সামনে ইলেকজনের জন্য লড়াই করবে সেখানে আমার মেয়েটা কি তোমার কাছ থেকে সুখটা পাবে? আজ আমি একজন মেয়ের মা হয়ে কথাগুলো বলছি পূর্ব। একজন ডাক্তার হয়ে বলছিনা। আমি ওর উপর কড়াকড়ি করলেও কখনো এমন হালে ফেলে দেইনি যাতে ও মরে যাবে। কিন্তু তোমার কাছে যাওয়ার পর আমার মেয়েটা বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। কি করেছো তুমি ওকে বলো? আজ তুমি কিভাবে ওর প্রতি অযত্ন করলে?
পূর্ব হাত ভাঁজ করে সব কথা চুপচাপ শুনলো। এরপর শান্ত মেজাজে বললো,
– মা আপনি আমাকে উত্তম শাস্তি দিতে পারেন। আজ আমি এটাও স্বীকার করছি ওকে আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। কি শাস্তি আমার জন্য উপযুক্ত আপনি বলুন,
– তোমার প্রচারণার কাজ কবে থেকে শুরু?
– হাতে কিছুদিন সময় আছে মা।
খোদেজা একটু চুপটি থেকে কিছু ভাবলেন। এরপর পূর্বের দিকে কঠিন গলায় বললেন,
– তুমি এমপি পদপ্রার্থীটা ছেড়ে দাও। যদি তুমি আমার মেয়েকে নিজের জীবনে আগের মতোই ফিরে পেতে চাও তাহলে তোমার রাজনীতি ছাড়তেই হবে।।
পূর্ব হকচকিয়ে যায় খোদেজার কথায়। আশ্চর্য দৃষ্টিতে তীব্র উৎকন্ঠায় বলে উঠে,
– অসম্ভব মা! আপনি আমায় এ কেমন শাস্তি দিচ্ছেন? আপনি নিজে একজন সমাজসেবিকা হয়ে আরেকজনকে সেবা ছাড়তে বলছেন?
– আমি তোমার পেশায় নিয়োজিত নই পূর্ব। নিজের কর্মের সাথে আমার পেশা তুলনা করতে আসবেনা।
– ঠিক বলেছেন। তুলনা হয়না। আপনারটা শুধু রোগের চিকিৎসা হয়। কিন্তু আমারটা অন্নকষ্টের চিকিৎসা, রাস্তার চিকিৎসা, জলাবদ্ধতার চিকিৎসার সহ সমাজের সকল চিকিৎসা করা লাগে। আপনি খুবই নিচুমনের শাস্তি দিচ্ছেন মা! আমার শত্রুদের তুলনায়ও আপনার শাস্তি গর্হিত! আপনি আমার কাছ থেকে আমার স্ত্রীকে আলাদা করতে চাইছেন না?
পূর্ব জোর গলায় প্রশ্নটা ছুড়েই পূর্ণতার বেডের দিকে একপলক তাকালো। এরপর মুখ ঘুরিয়েই আগের সেই বলিষ্ঠ রূপে জবাব দিলো,
– আমি আপনার শাস্তি মেনে নিলাম মা। পারিবারিক এবং রাজনৈতিক দুটোর মধ্যে আমি রাজনীতিটাই পছন্দ করলাম। আজ আপনি আমার কাছ থেকে জিতে গেলেন অবশ্য। কিন্তু আপনাকে আমি এটুকু নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পূর্ণতা আমাকে ছাড়া আপনার কাছে শান্তি পাবেনা।
খোদেজার প্রতিক্রিয়াটুকু পূর্ব আর দেখলো না। পা চালিয়ে পান্ঞ্জাবীর হাতায় চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। খোদেজা ওর যাত্রার দিকে অপলকে তাকিয়ে থেকে মনেমনে বললো, হায় পূর্ণতা! তুই হুঁশে থাকলে বুঝতি, এই মানুষটা আবারও তোকে ধূলো দেখিয়ে চলে গেলো। তুই কার জন্য পাগলামি করেছিলি? ও তোকে কখনো ভালোই বাসেনি। সময়ের উত্তেজনায় তোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে।
.
সময়টা বিকেল। কোনো সাড়াশব্দ নেই আশেপাশে। কয়েকটা কাক কুৎসিত গলায় ‘কা কা’ করে উদাস ভঙ্গিতে আকাশে উড়ছে। সেই শব্দটাই কানে তীব্রভাবে এসে ঢুকছে। পূর্ণতা অনেক কষ্টে চোখের পাতা টেনে খুললো। আশেপাশের সবকিছু দেখে বেশ সময় নিয়ে বুঝতে পারলো সে এখন হাসপাতালে। চারধার থেকে হাসপাতালের ভ্যাপসা গন্ধ নাকে লাগছে। মাথাটা ডানে কাত করে থাই জানালার দিকে তাকালো। মাথাটা এখনো ঝাকুনির মতো লাগছে। শরীর অত্যধিক মাত্রায় দূর্বল। হাতের আঙ্গুল নাড়াতেও শরীরে ধকলের মতো ঠেকছে। হঠাৎ একজন নার্স এসে বেডের কাছে দাড়িয়ে বললো,
– ম্যাম আপনি কেমন বোধ করছেন? খারাপ লাগছে?
পূর্ণতা মাথাটা না বোধকে মৃদ্যু নাড়াতেই চোখের কোটর থেকে একফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। ঠোঁটে নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে পূর্ণতা কিন্তু দূর্বলতার জন্য শব্দের জোরটা হচ্ছেনা। নার্স ওর মুখের কাছে ঝুকতেই শুনলো,
– পূর্ব কোথায়? আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।
নার্স পূর্ণতার মুখের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। এরপর উঠে দাড়িয়ে চুপচাপ খোদেজাকে ডেকে কেবিনে পাঠালো। খোদেজা এসে পূর্ণতাকে প্রথমে কিছুই বললেন না। কিন্তু সময় যত যাচ্ছিলো পূর্বকে না দেখতে পেয়ে পূর্ণতার বেচেইন মন তত উদগ্রীব হয়ে যাচ্ছিলো। ইচ্ছা করেই খোদেজা কিছুদিন ওকে ঘোরের মাঝে রাখলেও পূর্ণতা যখন একটু সুস্থ বোধ করে সেদিনই জানিয়ে দিলেন পূর্বের ব্যাপারে।
– ও তোকে ছেড়ে এমপির ইলেকশন লড়ছে পূর্ণতা। তুই এখানে মরে গেছিস কিনা এতোদিন সেটাও খোঁজ করেনি। আশাকরি তুই বুঝে গেছিস তুই কেমন মানুষকে নিজের জীবনে জড়িয়েছিলি। তোর থাকা না-থাকা ওয়াসিফ পূর্বের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না। তুই ওকে যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবি তৌর জন্য মঙ্গল। আর যদি পাগলামি করতে চাস, করতে পারিস। আমি কোনো বাধা দেবো না।
পূর্ণতা সেই সত্যটা শুনে স্তব্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে পারছিলো না। পূর্ব ওকে ছেড়ে রাজনীতিতে পরিপূর্ণভাবে যুক্ত হয়েছে শুনে কাউকে আর প্রশ্নবিদ্ধ করলো না। পূর্ণতা নিজের মনে ভেবে নিলো হয়তো পূর্বের রাজনৈতিক কার্যকলাপে এতোদিন কাটার মতো বিদ্ধ ছিলো, যেটা এই ঘটনার জন্য সরে গেছে। নিজের কপালের উপর তাচ্ছিল্যরূপে হাসলো পূর্ণতা। পূর্বের সিদ্ধান্ত শুনে সেও আর পূর্বের জীবনে বিশৃঙ্খলা করতে চাইলো না। পূর্ব যদি শান্তিমতো থাকতে পারে তাহলে পূর্ণতা ওর দিকে ফিরেও তাকাবেনা! কখনোই না!
পূর্ণতা দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠলে একদিন খোদেজাকে না জানিয়ে আয়মানের সঙ্গে ওয়াসিফ ভিলায় যায়। পূর্ব এতোদিনের মধ্যে একটাবারও পূর্ণতাকে একনজর দেখতে আসেনি। প্রত্যেকটা রাত পূর্ণতা ছটফট করে নির্ঘুম কাটাতো পূর্বের জন্য। আশার প্রদীপ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতো এইতো পূর্ব আসছে। কিন্তু পূর্ব কখনো আসতো না। ধীরে ধীরে পূর্ণতার নরম মনে অভিমানের স্তরটা পুরু ও মোটা হতে থাকে। সে নিজেই আর পূর্বের জন্য আশা রাখার পাগলামি করলো না। নিজের আত্মগরিমা নিয়ে প্রচণ্ড কঠোর হতে শুরু করলো সে। আবেগ, আহ্লাদ, শখ, আশাকে সে পূর্ববিহীন করতে লাগলো ধীরেধীরে। যেখানে পূর্বই ওকে ছাড়া ভালো থাকছে সেখানে পূর্ণতা আর দ্বিতীয়বার যাওয়ার মতো ভুল করবেনা।
পূর্ণতা ওয়াসিফ ভিলায় প্রবেশ করলে সেখানকার পরিবেশ দেখে আর বুঝতে বাকি রইলো না এখানেও কারো মনে শান্তি নেই। পলাশ আরেকদফায় যে হার্ট এ্যাটাক করেন এতে চিরকালের জন্য প্যারালাইসিস হয়ে গেছেন। আয়েশা আর্থাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শায়িত। চাকর ছাড়া তিনি ফ্লোরে পা পযর্ন্ত রাখতে পারেন না। পূর্বিকা এতোদিনে শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি জমিয়ে স্বামীর সাথে বিদেশে গমন করেছে। এদিকে চাচীরা কেউ বাড়িতে নেই। তারা কোথায় আছেন জানতে সেটা চাকরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় জাওয়াদ দীর্ঘ একমাস যাবৎ হাসপাতালে। সেখানেই চাচীরা আছেন। জাওয়াদকে কাঁচের চূর্ণিত মোটা চাবুক দিয়ে কে যেনো পিটিয়েছে। কোন ব্যক্তি পিটিয়েছে সে সম্পর্কে কেউ জানেনা আজো। সায়মা মেন্টাল হসপিটালে এডমিট হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। এতোদিন সাইক্রিয়াটিস্ট দেখিয়েও ওকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি বাড়িতে। একের পর এক চান্ঞ্চল্যকর খবর শুনে শিউরে উঠছিলো পূর্ণতা। অজান্তেই ওর বুকে ধুকপুক ধুকপুক করছিলো ঘটনা শুনে। সব ঘটনার সমীকরণ মিলিয়ে যেটা আচঁ করতে পারলো সেটা বুঝার পর থেকে আর একসেকেন্ডও সেখানে থাকলো না। ওয়াসিফ ভিলা থেকে একপ্রকার পালিয়ে এলো পূর্ণতা। আয়মান অনেকবার জোর করলো কি হয়েছে সেটা খুলে বলতে। কিন্তু পূর্ণতা কোনোভাবেই সেটা বললো না। মায়ের কাছে সেই নয়তলার বিল্ডিংয়ে ফিরে এলো সে। পূর্ব সারাদিন বাসায় ছিলো না। রাতে যখন বাসায় ফিরলো তখন পূর্ণতা এসেছে শুনে কোনো বিশেষ ভাবাবেগ দেখা গেলো না। ‘কিছুই হয়নি’ ভঙ্গিতে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো। চাকররা অবাক হয়েও পূর্বের কর্মকাণ্ড দেখে ভাবতে পারলো না, এই কি সেই পূর্ব? যে শুধুমাত্র পূর্ণতার কথা চিন্তা করে অসুস্থ বাবাকেও একা ফেলে দূরে পাড়ি জমিয়েছিলো?
রাতের খাবার খেয়ে পূর্ণতা বিছানায় শুতেই আয়মানের কল এলো। সে বালিশে মাথা হেলিয়ে কল রিসিভ করে বললো,
– কিরে কল দিলি যে? কিছু বলবি নাকি?
আয়মানের নিষ্প্রভ উত্তর,
– তুই কিছু শুনেছিস পূর্ণতা?
পূর্ণতা কিছুটা কৌতুহল গলায় বললো,
– কিসের ব্যাপারে?
আয়মান হঠাৎ চুপ করে গেলো। পূর্ণতা সাথেসাথে বিছানায় উঠে বসে ওকে প্রশ্নের ফোয়ারা ছুড়লো,
– তুই কিছু বলবি? কোন ব্যাপারে বলতে চাচ্ছিস? কি হয়েছে সেটা বলতে হিমশিম খাচ্ছিস কেন?
আয়মান এবার অপ্রসন্ন ভঙ্গিতে বেশ উদ্বেলিত কন্ঠে বললো,
– জাওয়াদ কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে। খবর পেলাম।
– ‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO