তোমাকে পর্ব – ১০ ২

0
981

তোমাকে

পর্ব 10.2

ক্যাম্পাসে আজ সাজ সাজ রব I দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল আসছে আজ ব্যান্ড শো করতে I ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্য রকমের উত্তেজনা I যদিও অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল পাঁচটায় কিন্তু সকাল থেকেই উৎসবের আমেজI

সেপ্টেম্বর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে I কিন্তু এ বছর বর্ষা বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে I সকাল থেকেই আকাশের কোণে মেঘ জমেছে I আয়োজক থেকে শুরু করে ভলান্টিয়ার সবাই বেশ চিন্তার মধ্যে আছে I এ অনুষ্ঠানের জন্য সবাই অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে ছিল I হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সবটা পন্ড হয়ে যাবে I হাসিব সহ অন্যান্য ভলান্টিয়াররা চিন্তিত মুখে স্টেজের সামনে ঘোরাঘুরি করছে I

দোস্ত বৃষ্টি নামলে তো ধরা খাইয়া যামু

এত চিন্তা করছিস কেন I ব্যাকআপ ব্যবস্থা তো নিয়েছিস

আরে ব্যাকআপ তো স্টেজ আর পারফরমারদের জন্য I বৃষ্টি নামলে অডিয়েন্সের কি হইব ?

তুই এখনই অ্যানাউন্স করে দে সবাইকে ছাতা আর রেনকোট নিয়ে আসতে

এইটা ভালো বলছো I আরে মামু তুমি একটা জিনিয়াস I বৃষ্টিতে গান একদম জইমা যাইবো

মুনির একটা নিশ্বাস ফেলে বলল

আর কিছু লাগবে? আমাকে এবার যেতে হবে

আরে , তুমি কই যাইবা ?

তোকে আগেই বলেছি আমি পাঁচটা পর্যন্ত আছি I

তোমার ডার্লিং এর গান আছে তো ব্যান্ড শো এর পরে

ও এতক্ষণ থাকবে ? অনেক রাত হয়ে যাবে তো

আমি তো বলছি থাকতে I দরকার হইলে বাসায় পৌছায় দিমু

আমি চলে আসবো তার আগেই

মুনির তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেল I ও ইচ্ছা করেই থাকতে চায়নি I এসব লাউড মিউজিক ও একেবারে নিতে পারে না I প্রচন্ড মাথা ধরে যায় I তাই একটা অজুহাত করে বেরিয়ে গেল I রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ মনে হল অনিমাকে দেখল ডিপার্টমেন্টে দিকে যেতে I ওর তো এই সময় এখানে থাকার কথা না I মনির এগিয়ে গিয়ে ডাক দিল

অনিমা তুমি এখানে কি করছ ?

পালাচ্ছি

মানে ? তোমারতো পারফরম্যান্স আছে ব্যান্ড শো এরপরে

আরে কিসের পারফরম্যান্স , ব্যান্ড শো এরপর আমার বোরিং গান কে শুনবে ?

তোমার গান মোটেই বোরিং না

ঠিক আছে বোরিং না হলে না I আমি যাচ্ছি এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে আমার মাথা ফেটে যাবে
অনিমা দুইহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল

মাথা ব্যথা করছে? ওষুধ খাবে ?

তুমি সারাক্ষণ এত ওষুধ ওষুধ করো কেন ? মনে হয় তোমার কাছে সব কিছুর ওষুধ আছে ?

মুনির হেসে ফেললI বলল

তুমি ব্যান্ড শোর রাগ আমার উপর দেখাচ্ছ কেন? চলো তোমাকে রিক্সায় তুলে দি

তুমি কোথায় যাচ্ছ ? স্টুডেন্টের বাসায় ? চলো একসাথে পালাই

মুনির এবার বেশ অবাক হল মাথাব্যথায মেয়েটার মাথাই নষ্ট হয়ে গেছে I

অনিমা বলল তুমি না গেলে না যাও আমি একাই চললাম

অনিমা দাঁড়াও I এদিক দিয়ে গেলে কেউ তোমাকে দেখে ফেলবে তারপর আবার ধরে নিয়ে যাবে

কি বলো ? না না তাহলে এই দিক দিয়ে যাব না

চলো তোমাকে অন্য পথে নিয়ে যাচ্ছি

ওরা দুজন ডিপার্টমেন্ট এর পেছনে চলে গেল I এখানে দেয়াল ঘেঁষে একটা চায়ের দোকান I সব সময় ওরা এখান থেকে চা খায় I দোকানটা রেলিং এর বাইরের দিকে I দোকানের পাশে অনেকখানি রেলিং ভাঙ্গা I মুনির বলল

সাবধানে এসো

রেলিং পার হয়ে ওরা পিছনের দিকের রাস্তায় উঠে গেল I অনিমা আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো বলল

ওয়াও দারুন

ঔষধ খাবে এখন ?

না , এদিকে অত শব্দ নেই I মনে হয় এমনি মাথা ব্যথা চলে যাবে

তোমাকে রিকশা করে দেবো?

তোমার কি খুব তাড়া ?

না

তাহলে চলো হাটি একটু

ওরা দুজন পাশাপাশি সামনের দিকে হাটা শুরু করল I দুজনেরই খুব ইচ্ছা করছে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে কিন্তু কেউই প্রথম ধাপটা নিতে সাহস পাচ্ছে না I হঠাৎ ফুটপাত থেকে নামতে গিয়ে অনিমা হোচট খেলো I মুনির অনিমার হাতটা ধরে ফেলল তারপর বলল

কেয়ারফুল অনিমা এখনই তো পড়তে

অনিমে কিছু বলল না একটু হাসল শুধু I মুনির ওর হাতটা আর ছাড়লো না I হাত ধরাধরি করে দুজনে হটল অনেকক্ষণ I হাঁটতে হাঁটতে একসময় চারুকলার সামনে চলে এলো I মুনির বলল

ভেতরে যাবে ?

না এর ভেতর যেতে আমার ভয় লাগে I

সেকি ?

কেমন যেন গা ছমছমে একটা পরিবেশ I তারপর আবার এখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে

আমি সঙ্গে যাচ্ছি তারপর ও ভয় লাগবে ?

অনিমা মনে মনে বলল তুমি সঙ্গে থাকলে আমার কোথাও যেতে ই ভয় লাগবে না I কিন্তু সেটা বলার আগেই মুনির বলল

আচ্ছা থাক চলো তাহলে I

ওরা যখন শাহবাগের মোড়ে পৌঁছলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে I মোড়ের দিকে অনেকগুলি খালি রিকশা দাঁড়িয়ে আছে I মুনির একটা রিকশা নিয়ে নিল I অল্প বয়সি রিকশাচালক দাঁত বের করে হেসে বলল

হুড উঠায়া ইমু ?

মুনির খুব বিরক্ত হয়ে বলল তোমাকে আমি বলেছি হুড তুলতে ? যাও তাড়াতাড়ি যাও

অনিমা বলল তুমি ওর উপর রাগ করছো কেন ?

রিকশাচালক ছেলেটি পেছন ফিরে বলল

সবাইতো স্যার এই সময় হুড উঠিয়ে দিতে কয়

তুমি বেশি কথা বল I মুনির রাগ দেখালেও ওর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিল I অনিমা তো হাসি চাপতেই পারল না I বিপত্তিটা বাঁধলো কিছুক্ষণ পর I হঠাত করেই বৃষ্টিটা নামলো I মনির বলল

পর্দা নাই? আমরা নামবো ? পর্দা বের করবে ?

না স্যার I পর্দা নাই

মানে ? এখনও তো অনেকটা পথ বাকি I

অনিমার খুব মজা লাগছিল I আজকে কেমন করে যেন ওর সব ইচ্ছাগুলো পূরণ হয়ে যাচ্ছে I ওর খুব শখ ছিল মনিরের সঙ্গে একদিন রিক্সায় করে বৃষ্টিতে ভিজার I অনিমা বলল

বাদ দাও না I ওর কাছে না থাকলে কি করা যাবে ?

তুমি বুঝতে পারছ না আমাকে স্টুডেন্টের বাসায় যেতে হবে I এরকম ভিজে গেলে আমি যাব কি করে ?

সমস্যা নেই তুমি আমাদের বাসায় যেয়ে চেঞ্জ করে নিও I আমি ড্রায়ার দিয়ে কাপড় শুকিয়ে দেবো

তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে I এই তুমি সাইডে রাখ আমি অন্য রিক্সা নেবো I

অনিমার হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল I ও মনিরের হাতটা ধরে বলল প্লীজ

মনির কি বুঝলো কে জানে একবার অনিমার দিকে তাকালো তারপর বলল

আচ্ছা ঠিক আছে যাও

অনিমা হাতটা সরিয়ে নিতে চাইলে মনির বলল

ধরে বস , সামনে রাস্তা ভাঙ্গা

এরপর আর কোন কথা হল না দুজন হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে যেতে লাগলো I

চলবে ….

লেখনীতে
অনিমা হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here