তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব-২৮

0
1040

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৮.
~
মিথি যেন থতমত খেয়ে গেল। সে বিস্মিত চোখে মাহির দিকে তাকায়। ছেলেটার চোখগুলো লাল হয়ে আছে। মিথি এখন কি বলবে বুঝে পায় না। কোনো কথাও সাজিয়ে বলতে পারছে না। কত মিথ্যে বলা যায়? শুনেছে মিথ্যের পাহাড় যত বড়োই হোক না কেন সত্যের কাছে সবসময় তাকে হার মানতে হয়। অনেক ভেবেও মিথি কোনো উপায় না পেয়ে সে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ফেলে। মাহি বুঝে যায় তার সন্দেহ’ই সত্যি। সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মিথি ভড়কে যায়। ভাইকে ঝাপ্টে বুকে জড়িয়ে ধরে। মাহির কান্নার শব্দে তাদের মা বাবাও মিথির রুমে আসেন। পরিস্থিতির কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারেন না। মাহি মুখ তুলে বাবার দিকে তাকাল। কান্নারত অবস্থায় বললো,

‘বাবা, বুবুকে কেন তুমি কিডনী দিতে দিলে? বুবুকে এখন আমার জন্য আজীবন কষ্ট করে বাঁচতে হবে। কে বলেছিল আমাকে বাঁচাতে? এখন যে আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বুবুর জীবনটাও রিস্কে ফেলে দিয়েছ সেটার কি হবে? কেন বাবা, কেন তুমি বুবুকে আটকালে না?’

আতাউর সাহেব স্তব্ধ। চোখের পলক পড়ছে না তার। কি বলবেন এখন তিনি? সত্যিই তো মাহি যা বলছে সবই তো ঠিক। ছেলের জন্য মেয়ের জীবনটাও রিস্কে ফেলে দিলেন। এটা তো মারাত্মক অন্যায়। তবে কি তারা ভালো মা বাবা হয়ে উঠতে পারেন নি? পারেন নি নিজেদের সন্তানদের পর্যাপ্ত ভালোবাসা দিতে? জবাবহীন বাবার মুখপানে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মাহি চোখ সরাল। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল তারও একই অবস্থা। কোনো উত্তর নেই। মাহি নাক টানল। মিথির দিকে শক্ত চোখে তাকাল, ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

‘তুমি অন্যায় করেছো বুবু। খুব বড়ো অন্যায় করেছো। আমি তোমাকে তোমার এই অন্যায়ের জন্য কখনো ক্ষমা করবো না। ভুল করেছো তো করেছো আবার আমার থেকে সব লুকিয়েও গেছো। কি সুন্দর এত দিন মিথ্যে কথা বলে গিয়েছ আর আমি কিছু বুঝতেও পারেনি। আজ যদি তোমার ঐ ঔষধগুলো না দেখতাম তাহলে তো জীবনেও সত্যিটা জানতে পারতাম না। তুমি খুব খারাপ বুবু, খুব খারাপ।’

এই বলে বাচ্চা ছেলেটা আবারও কেঁদে ফেলল। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,

‘কি দরকার ছিল আমার জন্য তোমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করার? আমি তো এমনিতেই অসুস্থ ছিলাম, আগে হোক পরে হোক মরে তো যেতামই। কেন আমাকে বাঁচানোর জন্য তুমি তোমার কিডনী দিলে বুবু? কেন দিলে? এখন যে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে আমি আমার বুবুর সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি। তাকেও আমার মতো অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছি। এখন কি হবে বুবু? কিভাবে আমি নিজেকে বুঝাবো?’

মিথি আর থাকতে পারলো না। কাঁদতে শুরু করলো। খুব কাঁদলো দুই ভাই বোন। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের মা বাবাও কাঁদল। কিন্তু তাদের এই কান্না তাদের কষ্টকে বাড়াতে পারল না। কারণ এই কান্না তাদের ভালোবাসার প্রতীক। তাদের ভালোবাসার অঙ্গীকার। এই কান্নাতে কষ্ট থাকে না, থাকে এক গাদা সুখ। আর সেই সুখেরই শেষ পরিণতি হয় একটা সুখী পরিবার।

.

রাত ১ টা,

ভাইকে ঘুম পাড়িয়ে আস্তে করে বিছানায় শুলো মিথি। ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। অনেক বুঝিয়েছে, সবাই মিলে বুঝিয়েছে কিন্তু সে যে কতটুকু বুঝেছে একমাত্র সে’ই জানে। সব সময় সব কিছু মেনে নেওয়া যায় না। কষ্ট হয়। বুক কেঁপে উঠে। যন্ত্রণায় কাতরাতে হয়। তাও এক পর্যায়ে মেনে নেওয়া লাগে। জীবনের এই মেনে নেওয়া সত্যগুলো মানুষকে প্রচন্ড পীড়া দেয়। এখন তেমনই এক পীড়াই এই ছোট্ট মাহিটাও ভুগছে।

ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় মিথি। সেই ঘুম ভাঙ্গে পরদিন সকাল দশটায়। ঘুম থেকে উঠে বসে দেখল মাহি তার রুমে নেই। চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে বের হলো সে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল লিভিং রুমের দিকে। রুমের ভেতর ঢুকেই সে থমকে যায়। সোফার উপর নৈরিথকে বসারত অবস্থায় দেখে প্রথমে সে প্রচন্ড অবাক হলেও পরে তার মনে পড়ে যে নৈরিথ তো কাল বলেছিল সে আজকে তাকে নিয়ে কোচিং এ যাবে এইজন্যই হয়তো সে এসেছে। মিথি এবার বোকা বোকা হাসি দিয়ে একবার তার বাবার দিকে আরেকবার নৈরিথের দিকে তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। রুমে গিয়েই তার মনে পড়ল সে এমন ক্ষেত সেজেই নৈরিথের সামনে চলে গিয়েছে। উফফ, কি বিরক্তিকর ব্যাপার!

ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করতে বসলো মিথি। আতাউর সাহেব জোর করে নৈরিথকেও টেবিলে বসালেন। যদিও নৈরিথ বরাবরের মতোই বলে চলছে, ‘সে খেয়ে এসেছে। এখন কিচ্ছু খেতে পারবে না সে। ফেটে এক ফোটাও জায়গা নেই।’ কিন্তু শ্বশুর শাশুড়ি কি আর সেসব শোনার মানুষ? উনারা জোর করে হলেও নৈরিথ কিছু খাওয়াবেন। হলোও তাই। বেচারা নৈরিথ কিছু বলতে না পেরে পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও তাকে এক গাদা নাস্তা করে উঠতে হলো। কি আর করার জামাই আদর বলে কথা।

মিথি তার খাবার আস্তে আস্তে শেষ করলো। নৈরিথকে দেখে গেল ফাঁকে ফাঁকে। সেই ফর্মাল গেট আপ। মারাত্মক লাগছে তাকে। মিথি তপ্ত নিশ্বাস নিয়ে মনে মনে বললো,

‘আহা, এই সুন্দর পুরুষ মানুষটা একান্তই আমার।’

খাওয়া শেষ করে মিথিকে তৈরি হতে বলে নৈরিথ বাসার বাইরে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তার সাথে মাহিও আছে। মাহির মন খারাপ। নৈরিথ জানে সেই কারণ। আতাউর সাহেব তাকে সব বলেছেন। তাই মাহির মন ভালো করার জন্য তাকেও সাথে নিয়ে নৈরিথ বেরিয়েছে। নৈরিথ মাহিকে নিয়ে গাড়ির ভেতরে বসলো। মাহি চুপচাপ বসে রইল। নৈরিথ প্রসন্ন হেসে বললো,

‘এত রাগ করলে হয়, বলতো? তুমি না এখন বড়ো হয়েছো? বড়োরা কি এইভাবে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে? থাকে না তো। বড়োরা সবকিছু বুঝে। তারা সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। কখনও কষ্ট পেয়ে ভেঙে পড়ে না। আর তুমি তো হলে একজন সাহসী যোদ্ধা। যে কিনা তার জীবন যুদ্ধে জয় লাভ করেছে। তোমার মতো এমন সাহসী যোদ্ধার কি এমন হেরে যাওয়া মানায়? বি চল ম্যান। এত ডিপ্রেসড হওয়ার মতো কিছু হয়নি বুঝলে?’

মাহি নৈরিথের দিকে তাকাল। শুকনো তার চোখ মুখ। ক্ষীণ কন্ঠস্বরে সে নৈরিথকে বললো,

‘তুমিওও বুবুকে আটকাতে পারলে না ভাইয়া।’

নৈরিথ কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে,

‘প্রত্যেকটা মানুষকে না পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সময়ে তোমার বুবু ভয়ানক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আমাদের কারো ক্ষমতা ছিল না তাকে আটকানোর। সে কি বলেছিল জানো? বলেছিল, “তুমি নাকি তার প্রাণ। তুমি যদি না বাঁচো তবে সেও বাঁচতে পারবে না।” সে তো নিজেকে বাঁচিয়েছে, তোমাকে না। তাহলে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছো কেন? নিজেকে বাঁচানোর অধিকার তো প্রত্যেকটা মানুষেরই আছে, তাই না?’

মাহি কাঁদো কাঁদো মুখে মাথা নাড়াল। কিছু একটা হয়তো বুঝেছে সে। বাচ্চা মন, আঘাত সারতে তো সময় নিবেই। মাহি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বললো,

‘বুবু আমার সাথে অন্যায় করেছে। সে অন্যায়ের শাস্তি আমি বুবুকে দিবই। ভাইয়া, আমার সেইজন্য তোমার সাহায্যের প্রয়োজন।’

নৈরিথ খানিক অবাক হয়ে বললো,

‘কি শাস্তি দিবে?’

মাহি নৈরিথকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে। অনেক বেশি চমকে উঠে নৈরিথ। তার সাথে অবাকও হয় খুব। প্রথমে রাজি হতে না চাইলেও পরে মাহির জোরাজুরিতে বাধ্য হয় সে রাজি হতে। তবে সর্ত রাখে তার মা বাবাকেও তার এই বিষয়টা জানাতে হবে।

চলবে..

(আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? গল্পটা কেমন লাগছে? ভালো লাগছে না? বোরিং লাগছে? বলতে পারেন। আপনার ভালো খারাপ সবকিছু শেয়ার করার জন্যই তো কমেন্ট বক্সটা খোলা রয়েছে। মন্তব্য জানাতে হবে তো। আপনার ছোট্ট ছোট্ট মন্তব্যগুলো আমাকে এক আকাশ অনুপ্রেরণা দেয়। ভালোলাগে যখন কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে আমার গল্পটা পড়ে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়। আচ্ছা, এখন আসল কথায় আসা যাক। অনেক পাঠকই ইদানিং দুটো অভিযোগ করছেন, এক: আমি গল্প লেইটে দেই, আর দুই: আমি গল্প ছোট করে দেই। এই দুটি অভিযোগই আমি মাথা পেতে মেনে নিচ্ছি। কারণ আমি এমনটাই করছি। কিন্তু অবশ্যই সেটা অনিচ্ছাকৃত। গল্প আমি রাতে লিখি। বিকেলে লেখা কোনোভাবেই পসিবল না। কারণ সারাদিন ক্লাস করে ভার্সিটি থেকে এসে শরীর একদম ছেড়ে দেয়। আর এখন আবার রোযা। কষ্টটা দ্বিগুণ বেড়েছে। রাতে গল্প লিখতে লিখতে আবার প্রায় দুইটা বাজে। তারপর এক কি দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে সেহরির সময় উঠতে হয়। সেহরি সহ বাকি সবকাজ শেষ করে আবার শুই পাঁচটায় তারপর আবার সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে উঠতে হয়। কারণ রেডি হয়ে ভার্সিটির বাস ধরা লাগে। এক মিনিট এদিক ওদিক হলেই বাস মিস। তো এমতাবস্থায় আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি বড়ো করে গল্প লেখা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমি চাইলেও পারছি না। আর রোজ গল্প দিতে না পারার কারণও এটাই। যেহেতু আমি রাতেই গল্প লেখার সময় পায়। সেহেতু কোনোদিন যদি শরীর খুব বেশিই ক্লান্ত থাকে সেদিন আর আমি চোখ খুলে রাখতে পারি না। হাজার চেষ্টা করেও পারিনা। তাই সেদিন রাতে আমি আর গল্পও লিখতে পারি না। আর আপনারাও পরদিন গল্প পান না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এর জন্য আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত। তারপরও আপনারা অনেক ভালোবাসা দিচ্ছেন। এর জন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। আর হ্যাঁ, সরিও😢)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here