#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩৬.
~
কিছুটা সময় যাওয়ার পরই আতাউর সাহেব এলেন। সিফাত কে দেখে তিনিও চমকে গেলেন। তারপর এক বুক ভালোবাসায় আগলে নিলেন তাকে। অনেক গল্প করলেন সবাই। খুশিও হলেন খুব। মিথির চোখে মুখে আজ যে উৎফুল্লতা উনি দেখেছেন সেটা বিগত দু বছরও দেখতে পান নি তিনি। সকলে এক সাথে রাতের খাবার খেলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ সকলে বসে কথাবার্তা বললেন। ঘড়ির কাটায় এগারো’টা বাজতেই নৈরিথ বললো,
‘এবার তাহলে আমরা যাই বাবা?’
আতাউর সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন,
‘সে কি, এই সময় চলে যাবে। আজ রাত টা থেকে যাও।’
নৈরিথ বললো,
‘না না বাবা। থাকা যাবে না। কাল অফিস আছে। এখান থেকে অফিসে যেতে লেইট হয়ে যাবে। আমাকে যে করেই হোক যেতে হবে।’
নৈরিথের সমস্যার কথা শুনে আতাউর সাহেব আর বাঁধা দিলেন না। আমিরা বেগমের কাছে বিদায় নিয়ে নেহা আর নৈরিথ গাড়ির কাছে গেল। মিথিও তাদের পেছন পেছন এসেছে। নেহা গাড়িতে উঠে বসল। নৈরিথ গাড়িতে বসার আগে একবার মিথির কাছে গিয়ে মিহি কন্ঠে বললো,
‘যাই ম্যাডাম। এখন আবার সিফাত কে পেয়ে আমাকে ভুলে যেয়েন না যেন।’
মিথি ভেংচি কাটে। নৈরিথ মুচকি হেসে হাত দিয়ে মিথির নাক টেনে দিয়ে বলে,
‘পাগলী!’
মিথি বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। নৈরিথ হেসে গাড়িতে গিয়ে বসল। তারপর গাড়ি ছুটল নিজের গন্তব্যে।
.
বাসায় আসতেই সিফাত বললো সেও এবার উঠবে। যেহেতু পাশের বিল্ডিং এই থাকে সেহেতু মিথি এখনই তাকে উঠতে দিল না। গল্প করলো অনেকক্ষণ তারা। এই কটা বছরে জমানো হাজারো কথা আজ মন খুলে বলেছে মিথি। আবার খানিকটা কেঁদেছেও। সিফাত কিছু বলেনি। সে কেবল একজন নিরব দর্শক হয়ে কেবল সবকিছু শুনে গিয়েছে।
বারো টার কাছাকাছি সময়ে সিফাত তার বাসার দিকে রওনা দেয়। সবাই তারপর যার যার ঘুমের প্রস্তুতি নেয়। বিছানায় গা এলাতে না এলাতে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিল মিথির অক্ষিকোটরে। ঘুমিয়েও পড়ল সে। তার ঘুমের মাঝেই একবার তার ফোন বেজেছিল, কিন্তু এমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এই মেয়ের কর্ণকুহুরে সেই সুর পৌঁছায়নি।
.
.
আরেকটা সুন্দর সকালের দেখা মেলল। চোখ খুললো মিথি। তাকিয়ে দেখল ঘড়ির কাটায় দশটা বাজতে চলল। আস্তে আস্তে উঠে বসল সে। মোবাইল টা হাতে নিল। স্ক্রিনের উপর নৈরিথের একটা মিসড কল দেখতে পেল ঠিক বারোটা ত্রিশ এর দিকে। হয়তো রাতে পৌঁছানোর পর তাকে কল দিয়েছিল সেটা জানানোর জন্য। অথচ সে গাঁধার মতো পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে। নূন্যতম রেসপন্সিবিলিটি যদি থাকত তার মাঝে। নিজেকে নিজে কিছুক্ষণ ধিক্কার জানিয়ে মিথি ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। তারপর বেরিয়ে এসে নৈরিথকে কল করলো। নৈরিথ কল রিসিভ করতেই মিথি তাকে সালাম দিল। নৈরিথ সালামের জবাব দিয়ে বললো,
‘ঘুম শেষ হয়েছে?’
‘জ্বি। রাতে কল দিয়েছিলেন? আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তো তাই আর শুনেনি।’
‘হুম দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল তুমি ঘুমিয়ে পড়বে তাও একবার কল দিয়ে এনসিউর করলাম। কল রিসিভ না করাতেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার ধারনায় ঠিক।’
মিথি মৃদু হাসল। বললো,
‘খেয়েছেন?’
‘হ্যাঁ, তুমি খেয়েছো?’
‘না খাবো এখন।’
‘আচ্ছা তাহলে এখন গিয়ে আগে খাও, তারপর ঔষধও মনে করে খেয়ে নিও। পরে কথা হবে, রাখছি।’
‘ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।’
‘আল্লাহ হাফেজ।’
কল কেটে দিয়ে মিথি গিয়ে টেবিলে বসলো খেতে। নিত্যদিনের সেই খাবার। বাধ্য মিথি সেটা নিজের অভ্যাসে পরিণত করে নিল। খাবার খেয়ে ঔষধটাও খেয়ে নিল সে। অপারেশন হয়েছে সেই কবে অথচ এখনও ঔষধ চলছে, না জানি আরো কতদিন চলে?
.
.
আমিরা বেগম রুমে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন। মিথি গিয়ে তার পাশে বসলো। বললো,
‘মা, বাবা আর মাহি কোথায়, ওদের দেখছি না যে?’
আমিরা বেগম মোবাইল টা পাশে রেখে মিথির দিকে তাকালেন। বললেন,
‘ওরা একটু বাইরে গিয়েছে।’
মিথি অবাক হলো কিছুটা। বললো,
‘মা, কোনো কি সমস্যা হয়েছে? আজকাল বাবা আর মাহি একটু বেশিই বাইরে যাচ্ছে?’
আমিরা বেগম স্বাভাবিক গলায় বললেন,
‘আমি কি করে জানবো বলতো? ওদের বাপ ছেলের ব্যাপার ওরা জানে।’
মিথির মন খচখচ করছে। কিছু একটা তো তার অগোচরে হচ্ছে। কিন্তু কি সেটা? বাবা আর মাহি রোজ কোথায় যায়? মাও যে তাকে ইচ্ছে করে কিছু বলছে না সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। মিথি ভাবতে লাগল। মস্তিষ্ক তাকে সঠিক কোনো তথ্যের জানান দিতে পারছে না। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল সে, তাও কোনো আশানুরূপ উত্তর আওড়াতে পারলো না। এদিকে মার কাছ থেকেও কোনো উত্তর পাচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মিথি নাক মুখ কুঁচকে বসে আছে। তা দেখেও আমিরা বেগম না দেখার ভান করে নিজের মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে রেখেছেন।
অনেকটা সময় এইভাবে বসে বসে পাড় করলো মিথি। একসময় দরজায় বেল বাজল। মিথি দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলল। দরজার বাইরে বাবা আর ভাইকে দেখা মাত্রই হাজার টা প্রশ্ন জুড়ে দিল সে। আতাউর সাহেব ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললেন,
‘আস্তে মা আস্তে। আগে একটু জিরুতে দে, তারপর তোর সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।’
মিথির কি আর এত ধৈর্য আছে নাকি? সে বাবার সাথে না পেরে মাহি কে লাগাতার প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। কিন্তু মাহিও কিছু বলছে না। আজব তো! সবাই কি আজকে কথা না বলে চুপ থাকার কোনো ব্রত করছে নাকি? কেউই তাকে কিছু বলছে না কেন? মিথি এবার প্রচন্ড রেগে যায়। আমিরা বেগম তখন প্রশ্ন করেন,
‘কি গো, যেই কাজে গিয়েছিলে সেই কাজ টা হয়েছে তো?’
মিথি তাতে আরো বেশি বিচলিত হয়ে পড়ল। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
‘আমাকে কেউ কিছু বলছো না কেন? কি কাজ? কিসের কথা বলছো তোমরা?’
আতাউর সাহেব হাসলেন মিথির অস্থিরতা দেখে। বললেন,
‘মা আবার এত অস্থির হয়ো না। এখনই তুমি বুঝবে আমরা কোন কাজের কথা বলছি।’
এইটুকু বলে তিনি মাহির দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘মাহি, বাবা এবার সময় এসেছে তো। যাও তোমার বোনকে নিয়ে দেখাও আমরা কি কাজ করে এসেছি।’
মিথি কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। মাহি ঝলমলিয়ে হেসে উঠে দাঁড়াল। তারপর মিথির হাত ধরে বললো,
‘চল চল আপু, তোমার জন্য দারুণ একটা সারপ্রাইজ আছে।’
মিথি অত্যন্ত অবাক হয়ে বললো,
‘সারপ্রাইজ? কি সারপ্রাইজ?’
চলবে..
(ব্যস্ত থাকার কারণে কাল গল্প দিতে পারি নি। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত😔)