তোমাতে বিলীন পর্ব: ১২

0
11384

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—১২

বেচারি আশার তো যাওয়ার নামই নেই। সে ব্রেকফাস্ট করার জন্য আশিয়ানকে ডাকতে এসেছিলো। এসে এমন এট্রাকটিভ সিন দেখতে পাবে ভাবতেই পারে নি। গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে আশিয়ানের দিকে।আহা কী সুদর্শন পুরুষ সে।ভাবতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে আশার।আশিয়ান বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো;

আশিয়ান:-নির্লজ্জের মতো এরকম তাকিয়ে আছো কেন আজব?আর একটা ছেলের রুমে এভাবে পারমিশন না নিয়ে ঢুকে পড়া কোন ধরনের ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে শুনি?এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এখান থেকে। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।

আশা মনে মনে ভেঙচি কাটলো আশিয়ানকে।এহ,,ভাব কত ওনার। এই ঘুরে ফিরে আশাকেই বিয়ে করতে হবে দেখো। হুহ,,,(মনে মনে)

আশা:-ইয়ে,,আসলে আমি তোমাকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকতে এসেছিলাম।

আশিয়ান:-আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন গিয়ে খাবো। তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি বরং নিজের চরকায় তেল দাও গিয়ে যাও।জাস্ট ডিজগাস্টিং। (চরম বিরক্ত হয়ে)

আশা আর কিছু না বলে চলে গেল। মনে মনে হাজারটা গালি দিলো আশিয়ানকে।

আশিয়ান আরো কয়েক মিনিট পানিতে দাপাদাপি করে বিরক্ত হয়ে পানি থেকে ওঠে বাথরোব পড়ে রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগলো।পুরো মুডটাই খারাপ করে দিলো জোঁকটা।

একটা টি শার্ট আর টাওজার পড়ে নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করে নিলো সে।তারপর আবারও নিজের রুমে ফিরে এলো। ও রুমে আসার সাথে সাথে তাসকিন,তাজিম আর তাশজিদ ও এলো।৪ ভাই মিলে অনেকক্ষণ ধরে আড্ডা দিলো যাবতীয় বিষয় নিয়ে। তারা ঠিক করেছে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে সব ভাইয়েরা মিলে একটা ইংলিশ গানের সাথে ডান্স করবে।আশিয়ানকে বহুত কষ্টে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে অবশেষে ডান্স করার জন্য রাজী করাতে পারলো।আশিয়ান স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি লাইফে বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান এবং নাচের জন্য পপুলার ছিলো।তবে এখন সে এসব বাদ দিয়ে দিয়েছে পুরোপুরি।নিজের সব অভ্যাস পাল্টে ফেলেছে।এখন সে অন্য একটি আশিয়ানে রূপান্তরিত হয়েছে।আগের হাসিখুশি আশিয়ানের সাথে এখনের গম্ভীর আশিয়ানের কোনো মিল নেই।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেড়ে সবাই শপিংয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেল।আজ আশিয়ান একটা কালো আর সাদার মিশ্রণের চেক চেক ডিজাইনের একটা শার্ট ইন করে আর সাদা রঙের গ্যাবাডিন প্যান্ট পড়েছে। চুলে আজ জেল দেয়নি। নরমালি একপাশে সেট করে রেখে দিয়েছে।পায়ে কালো ব্রান্ডেড শু, হাতে প্লাটিনামের একটা ঘড়ি এবং একটা পাওয়ার ছাড়া কালো ফ্রেমের চশমা পড়েছে সে।এতে তাকে ভীষণ কিউট লাগছে দেখতে।কেন জানি নিজেকে আজ বেশি এট্রাকটিভ ভাবে প্রদর্শন করতে চাইছে সে সবার সামনে।পারফিউম স্প্রে করতে করতে বোতল প্রায় অর্ধেক খালি করে ফেললো।নিজেকে আরো একবার আয়নায় দেখে নিয়ে ফোনের কভার চেঞ্জ করে নিচে নেমে এলো সে।

তাকে দেখে সবাই হা হয়ে গেছে প্রায়। এত সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে যে মিসেস ইয়াসমিন তাকে কানের নিচে নজর টিকা লাগিয়ে দিলেন।আশিয়ান মুচকি হাসলো শুধু কিছু বললো না।আশার তো হার্ট অ্যাটাক হবার উপক্রম।বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। আশিয়ান তাকে পাত্তা না দিয়ে এনার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এলো।অতঃপর তার ব্ল্যাক BMW গাড়িটি গ্যারেজ থেকে বের করে সে, এনা, তার বড়ভাই এবং বড়ভাবী আর তার পিচ্চি ভাতিজীকে নিয়ে আলেয়াদের বাসার ঠিকানার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাতে লাগলো। বাকিরা অন্যান্য গাড়ি দিয়ে আসবে।আশা তো আশিয়ানের সাথে যেতে পারে নি বলে আফসোস করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।পরে তাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তারিন তার সাথে অন্য গাড়িতে করে রওয়ানা দিলো।

💙💙💙

ঊদিতা আগেই রেডি হয়ে বসে আছে।সে একটা কালো রঙের নরমাল খিমার সেট পরিধান করেছে।মুখে নেই কোনো প্রসাধনীর ছোঁয়া।সবসময় যেরকম বাইরে যাওয়া পড়ে সেরকম ভাবেই রেডি হয়েছে আজ।আলেয়া এবং আলেয়ার চাচাতো, ফুফুতো বোনেরা ওরা যেই হারে সাজগোজ করছে,, দেখে মনে হচ্ছে তারা কারো বিয়েতে যাচ্ছে।এসব দেখতেও ঊদিতার ভীষণ বোরিং ফিল হচ্ছে।অবশেষে একঘন্টা অপেক্ষা করার পর আশিয়ানরা এসে পৌঁছালো আলেয়াদের বাসায়।

আশিয়ান এই প্রথমবার এখানে এসেছে তাকে আপ্যায়ন করতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ঊদিতার বুক ধুকপুক করছে আশিয়ানের আসার খবর শুনে।আলেয়ার কাজিনরা তো ফিদা হয়ে গেছে আশিয়ানকে দেখে।কয়েকজন তো ঊদিতাকে নিয়ে হিংসা করতে শুরু করে দিয়েছে।ওরা এত সুন্দর করে সাজগোজ করলো অথচ আশিয়ান ফিরেও তাকালো না ওদের দিকে। এরথেকে বড় কষ্টের আর কী হতে পারে!

অবশেষে শপিংয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোর শুরু হলো।আলেয়া ওদের সামনে এসে হাত নাড়িয়ে স্মার্ট ভাবে হাই জানালো।আশিয়ান বাদে বাকিরাও তার হাই এর জবাব দিলো।তাসকিন আলেয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আলেয়া তাসকিনের হাসি দেখে কিছুটা লজ্জা পেল।

আশিয়ানের রুচি হচ্ছে না আলেয়ার দিকে তাকাতে।একটু বেশিই অভার স্মার্ট মেয়েটা।ওয়েস্টার্ন ড্রেসআপ পড়ে আর একগাদা মেকআপ মেখে নিজেকে সবার চাইতে সুন্দরী প্রমাণ করার চেষ্টা মাত্র করেছে সে।কী করে যে তাসকিন ওকে পছন্দ করেছে আল্লাহ জানেন।ভদ্রতার লেশমাত্র নেই ওর মাঝে। ওর মেয়ে কাজিন গুলোরও একি অবস্থা। আশা আশিয়ানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আশিয়ানের জাস্ট বিরক্ত লাগছে ওর ঘেঁষাঘেঁষি দেখে।

এমন সময় শাহরিয়ার ঊদিতার হাত ধরে তাদের সবার সামনে নিয়ে এলো৷ঊদিতার মুখে নেকাব লাগানো থাকায় চোখজোড়া ব্যতিত অন্যকোনো কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।আশিয়ান মুরাদের সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ মিহি স্বরে কারও সালাম দেয়ার আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সেদিকে।বোরকা পরিহিতা এক নারীকে দেখে ওর বুকের ভেতর কেমন যেন একটা অনুভূতির সৃষ্টি হলো। বুঝতে পারছে না এমন কেন হলো তার সাথে।তবে এটা বুঝতে পারলো সে যে এই মেয়েটাই তার হবু স্ত্রী ঊদিতা।কারন সবার থেকে একদম আলাদা সে।

ভয়েস শুনে একদফা ক্রাশ খেলো আশিয়ান।এত শান্ত, মিহি, সুরেলা আর সুন্দর কারও ভয়েস হতে পারে জানা নেই তার।ঊদিতার সালামের জবাব আশিয়ান বাদে বাকি সবাই দিলো।আশা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে।ঊদিতাকে গাইয়া, ক্ষ্যাত ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না সে।

অবশেষে আশিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। এবার তার পিছু পিছু আশা আছে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আশিয়ানের সাথে সে আজ গাড়ির সামনের সিটে বসবেই বসবে যে করেই হোক। কিন্তু কেয়া তাতে বাঁধ সাধলো।ঊদিতাকে আশিয়ানের সাথে সামনের সিটে বসিয়ে দিলো সে। আর পিছনে সে এনা তাহমিদ আর পুতুল বসে পড়লো। আশা তো জ্বলতে জ্বলতে শেষ। তার ইচ্ছা করছে ঊদিতাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে।এবারও তারিন তাকে বুঝিয়ে তার সাথে নিয়ে গেলো।

আশিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মাঝে মধ্যে আড়চোখে ঊদিতাকে দেখছে। যদিও এখনও তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়নি আশিয়ানের।ঊদিতার চেহারা দেখার জন্য বেশ কৌতুহল হচ্ছে তার।ঊদিতাকে নানা রকম প্রশ্ন করছে কেয়া এবং এনা।আর ধীর কন্ঠে তাদের জবাব দিচ্ছে ঊদিতা।মনে মৃদু ভালোলাগার হাওয়া বইছে আশিয়ানের,,,কারণটা অজানা।ঊদিতা ভয়ে একবারও আশিয়ানের দিকে তাকায় নি।কেন জানি মনে সংকোচ লাগছে তাকে দেখে।অবশেষে গাড়ি নিয়ে এসে বসুন্ধরা সিটির পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করলো আশিয়ান। গাড়ি থামার সাথে সাথেই এনা, কেয়া,তাহমিদ পুতুলকে নিয়ে শপিং সিটির দিকে চলে গেল।যাওয়ার আগে কেয়া আশিয়ানকে বললো ঊদিতাকে সাথে নিয়ে আসতে।আসলে তাদেরকে একটু আলাদা স্পেস দিতে চাইছিলো কেয়া।তাই তাদেরকে একা রেখে আসা।

আশিয়ান গাড়ির সিটবেল্ট খুললো। ঊদিতার দিকে একপলক তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-তুমি গাড়ি থেকে নামো,,আমি ডোর লক করি।

ঊদিতা আমতা আমতা করে বললো;

ঊদিতা:-আ,,,আসলে আমি একটু পানি খাবো।

আশিয়ান একটা পানির বোতল ঊদিতার দিকে বাড়িয়ে দিলো।ঊদিতা বোতলটা হাতে নিয়ে একটানে নেকাবটা খুলে ফেললো।

আশিয়ান একপ্রকার হা করে তাকিয়ে আছে ঊদিতার দিকে।ঊদিতা বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো।নেকাবের ঘষা লেগে ঊদিতার ফর্সা নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে।গরমের কারণে গালগুলোও পাকা টমেটোর মতো হয়ে গেছে। ঊদিতার খেয়ালই নেই যে কেউ একজন তাকে একধ্যানে পর্যবেক্ষণ করছে।আশিয়ান অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মনে হচ্ছে তার সামনে কোনো রাজ্যের পরী বসে আছে। এত সুন্দরী কোনো মেয়ে হতে পারে জানা নেই তার।তাহলে তার আম্মু ঠিকই বলেছেন,, মেয়েটা সত্যিই অনেক সুন্দর আর কিউট,,।কেউ বুঝতেই পারবে না যে এই নেকাবের ভেতরে এত সুন্দর গোলগাল নাদুসনুদুস ফর্সা ও মায়াবী গড়নের কোনো চেহারা লুকিয়ে আছে। একেই হয়তো ন্যাচারাল বিউটি বলে।একটু ভেসলিন অবধি ঠোঁটে লাগায়নি সে।প্রকৃতিকন্যার দেখা পেয়েছে আজ আশিয়ান। আশিয়ানের ঘোর কাটলো ঊদিতার ডাকে।

ঊদিতা:-এই যে,,,শুনছেন!

এমন ডাকে আশিয়ানের বুকের ভেতরটা পুরো তোলপাড় হয়ে গেল।থতমত খেয়ে বললো;

আশিয়ান:-হু,,হুম,,, বলো।

ঊদিতা:-ওনারা হয়তো আমাদের অপেক্ষা করছেন।

আশিয়ান:-হ্যা,,,চলো।

ঊদিতা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে নেকাবটা আবারও লাগিয়ে ফেললো।তারপর সিটবেল্ট খুলে বের হয়ে আসলো গাড়ি থেকে।আশিয়ান ডোর লক করে চাবি পকেটে নিয়ে একহাত বাড়িয়ে দিলো ঊদিতার দিকে। ঊদিতা একটু ইতস্তত করে আশিয়ানের হাতটা ধরলো।দুজনের মনেই এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করলো।বাকিরা সবাই নিচেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।আশা ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেল যেন।ঊদিতাকে সে আশিয়ানের সাথে সহ্য করতে পারছে না মোটেই। আশা,তারিন আর আলেয়া বাদে বাকিরা তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

কেয়া তখন বললো সবাইকে থার্ড ফ্লোরে যেতে।ওখানেই মেয়েদের বিয়ের লেহেঙ্গা শাড়ি এসব পাওয়া যায়।ওরা সবাই চলন্ত সিড়ি বেয়ে থার্ড ফ্লোরের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।আশিয়ান ও ঊদিতাকে নিয়ে চলন্ত সিড়িতে উঠতে চাইলে হাতে টান পড়ায় থমকে গেল সে। দেখলো ঊদিতা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশিয়ানের বুঝতে অসুবিধা রইলো না যে ঊদিতা চলন্ত সিড়িতে ভয় পায়।আশিয়ানের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে বললো সে;

ঊদিতা:-আমার ভীষণ ভয় লাগছে। আমি এরআগে কখনোই শপিংয়ে আসি নি।এধরণের সিড়িও চড়িনি।(অসহায় চেহারা নিয়ে)

আশিয়ানের ভালো লাগলো ঊদিতার সহজ সরল স্বীকারোক্তিটা।মেয়েটা কোনো দাম্ভিকতা ছাড়াই নিজের অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করে ফেললো।অন্যকোনো মেয়ে হলে ইজ্জত নষ্ট হবার ভয়ে জীবনেও এসব বলতো না।আশিয়ান কোনো কথা না বলে ঊদিতার হাতে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে এলো।ঊদিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আশিয়ানের দিকে। আশিয়ান এবার একহাতে দিয়ে ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চলন্ত সিড়িতে পা রাখলো।ঊদিতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আশিয়ান তাকিয়ে আছে তার চোখের দিকে।এভাবে প্রত্যেকটা সিঁড়িতেই আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।ওপর থেকে আশা তো এসব দেখে আবারও জ্বলেপুড়ে শেষ।

আশিয়ান ঊদিতার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে,,,
“মেয়েটা প্রথম দেখাতেই কেমন একটা মোহে ফেলে দিলো আমায়।অন্য কোনো মেয়েকে দেখলে জীবনেও এমন ফিলিংস আসে না।তাহলে কী এটাকেই ভালোলাগা বলে??আমি কী আবারও কাউকে ভালোবাসতে যাচ্ছি?”

এ প্রশ্নের কোনো জবাব পেলো না আশিয়ান।মনের ভেতরটা তার কেমন কেমন জানি করছে।হাসফাঁস করছে মনটা ঊদিতার সংস্পর্শে আসার পর।তিনতলায় আসার সাথে সাথেই ঊদিতার কোমড় ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে চোখ ফেরালো সে।আর এই মেয়ের চোখের দিকে ভুল করেও তাকানো যাবে না।চোখ তো নয় যেন হেরোইনের স্তুপ। একবার এতে ডুবে গেলে মাদকাসক্তের মতো নেশা লেগে যাবে।পরে চোখ ফেরানোটাও দায় হয়ে পড়বে তার পক্ষে।

তারপরও ঊদিতার হাত ছাড়লো না আশিয়ান।আগের মতোই ধরে রাখলো।শাহরিয়ার একপ্রকার মিনতি করে বলেছে ঊদিতার খেয়াল রাখতে এবং ভীড়ের মধ্যে যাতে ওর হাত ধরে রাখে আশিয়ান।মেয়েটা পথঘাট কিছুই চেনে না।যদি হারিয়ে যায়,,,তাই!

আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে বাকিদের পিছু পিছু সবথেকে বড় শাড়ি ও লেহেঙ্গার শো রুমটাতে ঢুকলো।আশিয়ানকে দেখে দোকানের লোকেরা স্যার স্যার বলে পুরোদস্তুর আপ্যায়ন করতে লেগে গেল।আশিয়ানকে চেয়ার এগিয়ে দিলো বসার জন্য।সবগুলো এসি এবং লাইট অন করলো।আশিয়ান তাদেরকে এত ব্যস্ত হতে বারন করলো।সে ঊদিতাকে সাথে নিয়ে দুটো চেয়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটাতে ঊদিতাকে বসিয়ে অন্যটায় নিজে বসে পড়লো। বাকিরাও অন্যান্য সিট দখল করে বসে পড়লো।ঊদিতা অবাক চোখে আশিয়ানের দিকে একপলক তাকালো। লোকটাকে সে চেনে না জানে না এর আগেও কখনো দেখে নি অথচ কী সুন্দর তার কেয়ার করছে।খারাপ নজরে একটুও তাকায়নি,,, নিশ্চই লোকটা ভীষণ ভালো মনের মানুষ। মনে মনে ভাবছে সে।

আশিয়ান দোকানের লোকেদের বললো বিয়ের লেহেঙ্গা দেখাতে।লোকেরা বিয়ের লেহেঙ্গার নতুন নতুন সব কালেকশন দেখাতে লাগলো তাদেরকে।আশিয়ান ঊদিতাকে পছন্দ করতে বললো। ঊদিতা চুপ করে সব দেখে যাচ্ছে।এদিকে আলেয়া সে ইচ্ছে মতো চুজ করছে কোনোপ্রকার সংকোচ ছাড়াই।বাকিমেয়েরাও তাদের যার যার পছন্দ মতো শাড়ি ও লেহেঙ্গা কিনছে।শুধু ঊদিতাই একমাত্র যে কীনা ড্যাবড্যাব চোখে সব দেখে যাচ্ছে। এমনকি হাত দিয়ে ধরে পর্যন্ত দেখছে না।আশিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ঊদিতার দিকে। সে ভেবেছিলাে ঊদিতা নিজে থেকেই কেনাকাটা শুরু করে দেবে কারণ আর যা-ই হোক মেয়েরা শপিং করতে অনেক পছন্দ করে।কিন্তু ঊদিতার নিরবতা দেখে সে গলা খাঁকারি দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-কী হলো?এভাবে না দেখে কোনটা পছন্দ হয়েছে সেটা নাও।বাকিরা কত কেনাকাটা করছে দেখো।

ঊদিতা অসহায় চোখে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে খুবই আস্তে করে বললো;

ঊদিতা:-আমি আসলে তাল হারিয়ে ফেলছি।এর আগে আমি কখনো এরকম কেনাকাটা করতে আসি নি মার্কেটে।আমার কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় জিনিস আব্বু নয়তো ভাইয়া কিনে এনে দিতেন।আমার এসবে অভ্যেস নেই।আমি বুঝতে পারছি আপনি হয়তো আমাকে গেঁয়ো এবং ক্ষ্যাঁত ভাবছেন,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এসব কেনাকটায় সত্যিই অভ্যস্ত নই।আপনার যেটা পছন্দ হবে সেটাই নাহয় কিনে ফেলুন,, আমার আপত্তি নেই।

আশিয়ান ঊদিতার এমন উত্তর মোটেও আশা করে নি।এমন মেয়েও দুনিয়ায় আছে বিশ্বাস করতে যেন কষ্ট হচ্ছে তার।এতো দেখা যায় বাইরের জগতের সাথে একটুও পরিচিত নয়।এতো আবাল মার্কা হলে এই কঠিন দুনিয়ায় চলবে কীভাবে সে!বুঝতে পারছে না আশিয়ান।একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে নিজেই লেহেঙ্গা চুজ করতে লাগলো সে।ঊদিতা আশিয়ানের কাজকর্ম দেখছে।

আশিয়ানের চয়েস বরাবরই ভীষণ ভালো।আগে আগে ইলিয়ানাকে নিয়ে শপিংয়ে এলে নিজেই কাপড় চোপড় চুজ করে দিতো সে।আর আজ নিজের হবু বউয়ের জন্য চুজ করছে।

টকটকে লাল একটা লেহেঙ্গা চুজ করলো আশিয়ান ঊদিতার জন্য।লেহেঙ্গাটির মধ্যে অন্য কোনো কালার এড করা নেই। লাল রঙা লেহেঙ্গাতে শুধু লাল স্টোনেরই গর্জিয়াস কাজ করা।ভীষণ সুন্দর দেখতে সেটি৷ আশিয়ান এটি প্যাক করতে বললো। আলেয়া দূর থেকে এই লেহেঙ্গাটি দেখতে পেয়ে অনেক পছন্দ করে ফেললো।সে তাসকিনকে এই লেহেঙ্গাটি নেয়ার জন্য চাপ দিতে লাগলো। তাসকিন সেলসম্যানকে বললো ওর ভাইয়ের হাতেরটার মতো সেইম লেহেঙ্গা দিতে।প্রতিত্তোরে সেলসম্যান বললো যে এই লেহেঙ্গাটি একপিসই এসেছে।উত্তর শুনার পরও তাসকিনকে আলেয়া চাপ দিতে লাগলো এই লেহেঙ্গাটি তার ভাইকে পটিয়ে নিয়ে নেয়ার জন্য। তাসকিন বিব্রত হয়ে আশিয়ানকে বললো;

তাসকিন:-আশু,,বলছিলাম কী তুই ভাবীর জন্য অন্য একটা লেহেঙ্গা নিয়ে নে না,,,। আসলে তোর হাতেরটা আলেয়ার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তাই,,,

আশিয়ান একবার আলেয়া ও একবার তাসকিনের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাসকিনকে থামিয়ে দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-তোর ফিয়ন্সে কে বলে দে আমি এটা আমার বউয়ের জন্য পছন্দ করেছি। এবং আমার পছন্দের জিনিস আমি অন্য কাউকে কখনোই দিই না।তুই যেহেতু আমার স্বভাব সম্পর্কে খুব ভালো করেই অবগত তাহলে তাকেও জানিয়ে দিস আমার একরোখা মনোভাবের কথা।এখন থেকেই আমাকে চিনে রাখলে ভালো।আশা করি ফারদার এমন কোনো কথা বলবে না যেটা আমার পছন্দ নয়।(শান্ত কন্ঠে)

আশিয়ানের কথা শুনে আলেয়া একদম ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। জীবনেও ভাবে নি আশিয়ান এমন ঘাড়ত্যাড়ার মতো উত্তর দিবে।আশিয়ানের কথা শুনে তাসকিন কিছু বললো না। কারণ সে জানে এমনটাই হওয়ার ছিলো।দুনিয়ায় কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেলেও আশিয়ানের ঘাড়ত্যাড়ামি এবং একরোখা মনোভাব জীবনেও যাবে না।তাসকিন আলেয়াকে বুঝিয়ে অন্যটা চুজ করতে বললো।আশিয়ানের পরিবার ব্যতিত বাকিরা আশিয়ানের এমন ত্যাড়া উত্তর শুনে পুরো হা হয়ে গেছে।তারা ভাবেও নি আশিয়ান এমন কোনো কথা বলবে।এনা,তাশজিদ আর তাজিম মিটিমিটি হাসছে এমন কান্ড দেখে।

আলেয়াকে জব্দ হতে দেখে ঊদিতা বেশ মজা পেয়েছে।ঊদিতা মনে মনে ভাবছে,, লোকটা একদম ঠাস ঠাস করে কথা বলে!!কাউকে পরোয়াও করে না।বেচারি আলেয়া এভাবে শরম পেল তাও বড় ভাসুরের কাছে। ঊদিতা ভেবেছিলাে চক্ষুলজ্জার কাছে হার মেনে আশিয়ান লেহেঙ্গাটা আলেয়াকে দিয়ে দেবে,, কিন্তু আশিয়ান যে তার উল্টোটা করবে তা কখনো ভাবতে পারে নি সে।

আশিয়ান তার মতো কাজ করতে লাগলো।সে এবার এনগেজমেন্টের জন্য লেহেঙ্গা চুজ করতে ব্যস্ত।এতসব লেহেঙ্গার মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পছন্দসই একটা লেহেঙ্গা খুঁজে পেল সে।এই দুইটা লেহেঙ্গাই ভীষণ দামী এবং হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন। এটা দেখেও আলেয়ার চোখ চকচক করছে।অবশেষে তাসকিনকে বলে এটার মতো দেখতে আরেকটা লেহেঙ্গা এনগেজমেন্টে পড়ার জন্য নিয়ে নিলো সে।

আশিয়ান এসব দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।যদিও আলেয়ারটার কালার কিছুটা ডিফরেন্ট।ঊদিতারটা ভীষণ এট্রাকটিভ দেখতে।ওদের এসব কীর্তি দেখে আশা পারে না ঊদিতা ও আশিয়ানকে খুন করে ফেলতে।রাগে গজগজ করতে লাগলো সে।

আশিয়ান তার বন্ধু তৌহিদ আর আসিফকে ফোন দিয়েছিলো আসার জন্য। ওরা রাস্তায় আছে।যেকোনো সময় এসে পড়বে।

আশিয়ান এবার ঊদিতাকে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম এবং মেহেদীর প্রোগ্রামের জন্য শাড়ি চুজ করছে একমনে।পছন্দসই দুটি শাড়ি নিয়ে বাকিগুলোর পাশে রাখলো।এমনসময় আসিফ আর তৌহিদ তাদের বউ বাচ্চাদের সাথে নিয়ে শাড়ির শো রুমটাতে এসে ঢুকলো।আশিয়ান তাদেরকে দেখে ওঠে দাঁড়িয়ে তার প্রাণের দোস্ত দুটোকে ঝাপটে ধরে হাগ করলো।

তৌহিদ:-কী রে,,,অবশেষে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়েই যাচ্ছিস!গুড,, গুড,,ভেরি গুড।এই না হলি আমাদের বেস্টু!(বাহবা দিয়ে)

তৌহিদের সাথে তাল মিলিয়ে আসিফও বললো;

আসিফ:-হ্যা,,,তোর ডিসিশনকে আমরা স্যালুট জানাই।তা আমাদের ভাবী কোথায়?পরিচয় করিয়ে দে বলদ!

আশিয়ান হেসে ফেললো তাদের কথা শুনে।এরা হচ্ছে নাম্বার ওয়ান বজ্জাত।কীভাবে পঁচানো যায় সেই বিষয়ে ওস্তাদ একেকটা।ঊদিতাকে ডেকে নিয়ে আসিফ এবং তৌহিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সে।তৌহিদের বউ মারিয়া এবং আসিফের বউ তূর্ণার সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো।ঊদিতা তাদেরকে বিনীত ভাবে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।

অচেনা কারও সাথে কথা বলতে ঊদিতার ভীষণ লজ্জা লাগে। এখনো তাই হচ্ছে।মারিয়া আর তূর্ণা ঊদিতার সাথে কথা বলতে লাগলো। দুজনেই বেশ মিশুক। কিছুক্ষন গল্প করতে করতে ঊদিতাও তাদের সাথে মিশে গেল।এখন আর কথা বলতে কোনো সংকোচ লাগছে না তার।

আবারও শপিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওরা সবাই। আশা ঊদিতাকে একমুহূর্তের জন্যও একা পাচ্ছে না।সুযোগটাই আসছে না। হয় আশিয়ান ওর সাথে থাকে নয়তো মারিয়া,তূর্ণা,এনা অথবা কেয়া ওর সাথে ছায়ার মতো লেপ্টে আছে।জাস্ট অসহ্য লাগছে আশার।সাহস করে আশিয়ানের সাথেও চিপকা চিপকি করতে পারছে না সে।যদি সবার সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করে তাহলে তো এত এত পাব্লিকের সামনে তার মানইজ্জত প্লাস্টিক হয়ে যাবে।তাই এখন ধৈর্য্য ধরে শপিংয়ে মনযোগ দিলো সে।ইচ্ছামতো কেনাকাটা করতে লাগলো।

(আমাকে বুঝিয়ে বললে আমি অবশ্যই বুঝবো।আপনাদের কথা অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করবো কারণ আমার উদ্দেশ্যই তো আপনাদের জন্য লিখা।কিন্তু তা না করে আপনারা কটাক্ষ করে কমেন্ট করছেন যা একদমই ঠিক নয়।শুধু আমি কেন যেকোনো লেখিকারই খারাপ লাগবে এসব।লেখিকা হবার আগেই আমি একজন পাঠক,, কারও লেখা পড়লে ভালো না লাগলে ইগনোর করি অথবা কমেন্টে উৎসাহমূলক মন্তব্য করে তাকে বুঝিয়ে দেই।কিন্তু আপনারা ডিরেক্ট মনে আঘাত দিয়ে মন্তব্য করেন।কেন ভাই?যাদের ভালো লাগবে না তারা জাস্ট ইগনোর করেন প্লিজ।এসব কটাক্ষ করে কথা বলতে আসবেন না দয়া করে।আর গল্পটা যেরকম আমি সেরকমই লেখার চেষ্টা করছি।আমার কথায় কষ্ট পেলে মাফ করবেন।😶)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here